
দেশের সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়কারী রাষ্ট্রীয় শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৫ হাজার ৯০৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তবে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১ হাজার ৫২৪ কোটি ৮৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫ হাজার ৬২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর ছয় মাস) রাজস্ব আয়ে এই চিত্র ওঠে আসে।সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসেও লক্ষ্যের চেয়ে ৮৯২ কোটি ৩৯ হাজার টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। তবে আশার কথা হলো গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম ৬ মাসের তুলনায় এ বছরের প্রথম ৬ মাসে দুই হাজার ৩৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করতে পেরেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এতেই গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেশ কয়েকদিন পণ্য শুল্কায়ন থেকে খালাস প্রক্রিয়া পুরোদমে ব্যাহত হয়। যার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। যে কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৩ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৫ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬ হাজার ৩১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আদায় হয়েছে।
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ডলার সংকটে বিলাসী পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহী করা হলেও চলতি অর্থবছরে সেটি অনেকাংশেই কমে গেছে। ফলে আয় বেড়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন এন্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার তৎপরতা বাড়ানোর কারণে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি কমেছে। আবার খালাসেও রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নিতে পারেনি সুযোগসন্ধানীরা। ফলে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আয়ে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
মূলত নতুন বছরের প্রথম মাস হওয়ায় আগের মাসের বকেয় রাজস্ব আদায় হওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আদায় দেখা গেছে, যা প্রকৃত চিত্র নয়। প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় আগস্ট মাস থেকে। আগস্ট মাসে ৬ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৪২ কোটি ১১ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
অক্টোবরে ৭ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৬১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। নভেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৭ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা, আদায় হয় ৫ হাজার ২৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, আদায় হয় ৫ হাজার ১০৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়। আবার ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ও বাড়ে। তবে বেশিরভাগ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যায় না। এবার লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা সহনীয় ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উচ্চ শুল্কে পণ্য আমদানি কমে যাওয়ার কারণে এই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারিনি। তবে আমাদের টার্গেট থাকবে অর্থবছরের বাকি ৬ মাসে রাজস্ব আদায়ে ধারা ইতিবাচক থাকবে।