
চট্টগ্রামে দেশী মুরগীর উৎপাদন অনেকটা শূন্যের কোঠায় হওয়ায় সরবরাহ একেবারেই খুব কম। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় সুস্বাধু এ মুরগীর দামও আকাশচুম্বি। সাধারণত ব্রয়লার মুরগির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি থাকে দেশি মুরগির দাম।
পুষ্টিবিদদের মতে, পুষ্টিগুণ কিংবা খনিজ উপাদানে খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও ব্রয়লার মুরগির চেয়ে দেশি মুরগিকে এগিয়ে রাখেন সবাই। এর কারণ হিসেবে তুলনামূলক বেশি স্বাদ ও মুরগিটিতে থাকা বাড়তি ওমেগা থ্রি ফ্যাটের কথা বলেন পুষ্টিবিদরা। সবমিলিয়ে আমিষ হিসেবে চাহিদার শীর্ষে দেশি মুরগি হলেও চাইলেই যেখানে সেখানে পাওয়া যায় না এই মুরগি।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি রিটন প্রসাদ চৌধুরী বলেন, এখনও রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি এলাকায় কিছু খামারি দেশি মুরগি উৎপাদন করেন। তবে সংখ্যায় খুবই কম। মূলত মাইন্ডসেটের কারণে এটার বাণিজ্যিক উৎপাদন হয় না। বাণিজ্যিক উৎপাদন হলে এটাও লাভজনক হতে পারে। আবার এখন যে বাজারে দেশি মুরগির দাম ৫০০ টাকার নিচে নামে না, বাণিজ্যিক উৎপাদন হলে তখন দাম ৩০০ টাকার আশপাশে চলে আসবে। সবাই সহজে কিনতে পারবে।
তার মতে, দেশি মুরগির বাণিজ্যিক উৎপাদন হলে শুধু মুরগি নয়, ডিমের উৎপাদনও বাড়বে। বাজারে দেশি মুরগির ডিমের চাহিদাও তুলনামূলক বেশি।
বন্দরনগরীর বাজারে রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, ৫৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে মুরগিটি। যেখানে কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। অর্থাৎ, ব্রয়লার মুরগির চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি দাম দেশি মুরগির। বাড়তি দামের কারণে চাইলেই এই মুরগির নাগাল পান না নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষ।

খামারি ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোক্তার পছন্দের শীর্ষে থাকা মুরগিটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে বদলে যাবে পরিস্থিতি। চাহিদার বিপরীতে একদিকে যেমন যোগান বাড়বে, তেমনি কমতে পারে দামও। তাতে সব শ্রেণির মানুষের কাছে তুলনামূলক সহজলভ্য হবে দেশি মুরগি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ডেইরি ও পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসাইন জানান, ব্রয়লার মুরগির চেয়ে তুলনামূলক বেশি সুস্বাদু দেশি মুরগি। তুলনামূলক বেশি জনপ্রিয় হলেও সহজে পাওয়া যায় না। তাই দাম বেশি।
সাধারণত এটার উৎপাদন ব্রয়লার মুরগির চেয়ে একুট কম। তাই উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে। আবার উৎপাদন খরচ বেশি পড়লেও দাম কিন্তু ব্রয়লার মুরগির চেয়ে অনেক বেশি। দেশি মুরগি উৎপাদন করেও প্রফিট করা সম্ভব। বাণিজ্যিকভাবে এটার উৎপাদন শুরু হলে বাজারে ঘাটতি থাকবে না, তাই দাম সাধারণ মানুষের নাগালে আসতে পারে।