
চট্টগ্রাম মহানগরীতে এক বাসায় আগুনের ধোঁয়ায় শ্বাসবন্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে নগরীর কোতোয়ালী থানার বলুয়ার দিঘীর পাড় এলাকায় এ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাদের ছেলে-মেয়েসহ আরও তিন জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত দুজন হলেন- মোহাম্মদ ইলিয়াস (৫২) ও তার স্ত্রী পারভিন আক্তার (৪৫)। ইলিয়াস পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান বলে জানা গেছে। তাদের ছেলে শাহীন (২১) ও মেয়ে সোহান (১৯) এবং নিকটাত্মীয় ফয়সালকে (৩৫) গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুনের ধোঁয়া থেকে বাঁচতে ৫ জন একই বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই শ্বাসবন্ধ হয়ে সবাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাসায় না থাকায় ইলিয়াস-পারভিনের আরেক মেয়ে তাহসিন (১৪) অক্ষত আছে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভোর ৬টা ৪২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পৌঁছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি স্টেশন থেকে চারটি ইউনিটে কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। সকাল ৮টার দিকে আগুন পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হন তারা। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে সূত্রপাত হওয়া এ আগুনে নগরীর বলুয়ার দিঘীর পশ্চিম পাড়ে হাজী জাফর সওদাগর কলোনিতে টিনের ৫টি বসতঘর পুড়ে গেছে।
ঘটনাস্থলে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, বস্তির মতো একটি কলোনিতে আগুন লাগে। খুবই ঘনবসতিপূর্ণ ও ঘিঞ্জি এলাকা। অবশ্য আমাদের পৌঁছাতে এবং আগুন নেভানোর কাজ করতে সমস্যা হয়নি। তিনি বলেন, আগুনে ৫টি বসতঘর পুড়েছে। সামনের আরেকটি বসতঘরে থাকা পাঁচজন ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের আমরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে দুই জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। তিন জন বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত আগুন লাগে হাজী জাফর সওদাগর কলোনিতে এড.মকসুদ মিয়া নামে একজনের মালিকানাধীন টিনশেড সারিবদ্ধ ভাড়াঘরে। সেখানে পাঁচটি ঘর পুড়ে গেছে। তবে এসব বসতঘরের বাসিন্দাদের কারও ক্ষতি হয়নি। সবাই নির্বিঘ্নে বসতঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন। যে পাঁচ জনকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, তারা ওই টিনশেড বসতঘর সংলগ্ন সেমিপাকা একটি ভাড়াঘরের বাসিন্দা। সেই বসতঘরে আগুন
লাগেনি। তবে টিনশেড ঘরে লাগা আগুনের ধোঁয়ার কুণ্ডলি প্রবেশ করে সেমিপাকা কয়েকটি বসতঘরে।
স্থানীয়রা জানান, টিনশেড ঘরে আগুন লাগার পর সেমিপাকা ঘরগুলোর বাসিন্দারাও প্রায় সবাই বেরিয়ে রাস্তায় চলে যান। কিন্তু আগুন নিভিয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থল ছাড়ার আগমুহূর্তে জানা যায়, একটি সেমিপাকা ঘরের বাথরুমে পাঁচজন আটকে আছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করেন।
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, আগুনের ধোঁয়া থেকে বাঁচতে সম্ভবত পাঁচজন একসঙ্গে একই বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে পানি ছিল। সম্ভবত নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন ভেবেছিলেন। আমরা তাদের অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করি। যদি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতেন, তাহলে শ্বাসরোধ হতো না বলে তিনি জানান।