আজঃ বুধবার ১৯ মার্চ, ২০২৫

ঠাকুরগাঁও সদর থানায় আটক ১৬টি গরুর মধ্যে ৩টির মৃত্যু, মালিকদের আহাজারি

রেজাউল ইসলাম মাসুদ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:

জব্দের পর থানা পুলিশের অবহেলায় লালন পালনকৃত ১৬টির মধ্যে ৩টি গরু মারা গেছে। গরু মালিকদের অভিযোগ, চুরি যাওয়া ১৬ টি গরু উদ্ধারের পর পুলিশ গরুর মালিকদের কাছে টাকা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় গরুগুলোকে পর্যাপ্ত খাবার ও পরিচর্যা দেওয়া হয়নি। যার কারণে ৩ টি গাভীর মৃত্যু হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর থানায় গরুর মালিকেরা একত্রিত হয়ে জীবিত গরুগুলো দ্রুত ফেরত চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সেই সাথে মৃত গরুগুলোর ক্ষতিপূরণ চান তারা। যা গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত মাসের ২২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের ফেরারি ১৬টি গবাদিপশু (গরু) জব্দ করে সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয় এলাকাবাসি। পরবর্তিতে সদর থানা পুলিশ গরুর মালিক চিহ্নিত করতে ২৩ জানুয়ারি আদালতের দারস্ত হন। আদালত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক মালিকানা নিশ্চিতে সদর উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমানকে দায়িত্ব দেন। একই সাথে জেলা শহরে কোন খোয়ার না থাকায় জব্দকৃত গরুগুলো দেখভালের জন্য একজন লোক নিয়োগ দিতে তদন্তকারি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল -১ আদালতের বিচারক মোঃ মাহবুবুর রহমান।

নিখোঁজ হওয়া গরুর সন্ধানে এরই মধ্যে সদর থানা পুলিশের কাছে আবেদন করেন অনেকেই।

গরুর মালিকদের অভিযোগ, পুলিশ নিশ্চিত হয়ে তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই নুর জামাল গরুর মালিকের বাড়িতে গিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করেন। তবে উৎকোচ দিতে অস্বীকার করলে ক্ষুদ্ধ হয় তদন্তকারি কর্মকর্তা। শুরু হয় গরু ফেরতে কালক্ষেপন।

অন্যদিকে আদালতের নির্দেশে সদর উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান ১৬টি গরুর তিনজন মালিকানা নিশ্চিত করে ১৩ই ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

মালিকরা হলেন- জেলা শহরের ঘোষপাড়ার বাসিন্দা সচীন্দ্র নাথ ঘোষ এর ছেলে মহাদেব চন্দ্র ঘোষ। এই গ্রামের মৃত-ইলিয়াস এর ছেলে নজরুল ইসলাম, সরকারপাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রহমানের ছেলে বাবুল।

প্রতিবেদন দাখিলের দিন আদালত থানা পুলিশকে আরেকটি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। আর সেই প্রতিবেদন দাখিলেই শুরু হয় পুলিশেরে তালবাহানা। ফলে দিনের পর দিন খোলা আকাশের নিচে অবহেলা আর অযন্তে রুগ্ন হয়ে পরে গরুগুলো। একে একে মারা যায় তিনটি গুরু। যার বাজার মুল্য প্রায় সাত লাখ টাকা। বাকি গরুগুলোও মৃত্যুর কোলে ঢলে পরছে।

এমন খবরে বার বার পুলিশে দারস্ত হয়েও সমাধান মিলেনি। উপায় না পেয়ে আজ শনিবার দুপুরে গরুর মালিক ও স্থানীয়রা সদর থানায় হাজির হয়ে বিষয়টি নিরসনের পাশাপাশি তিনটি মৃত গরুর মুল্য হিসেবে সাত লাখ টাকা ক্ষতিপুরন দাবি করেন। দেখা দেয় ক্ষুদ্ধতা।

গরুর মালিক সাবিনা খাতুন বলেন,  তার একমাত্র বিদেশি ক্রস জাতের গাভীটি ছিল তাদের সংসারের একমাত্র অবলম্বন। প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ লিটার দুধ দিতো গাভীটি। গত মাসের ২২ তারিখে পুলিশ সেটি বেওয়ারিশ হিসেবে থানায় নিয়ে আসে।

তিনি আরো বলেন, আমার অসুস্থ স্বামী আর দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ এই গাভী থেকেই চলত। এখন সব শেষ হয়ে গেল। অনেকবার পুলিশের কাছে গেছি, কিন্তু তারা বিভিন্ন অজুহাতে আমার কাছে অনেক টাকা দাবি করেছে। প্রথমে গরুর খাবার বাবদ ৫০ হাজার, পরে দেড় লাখ এবং সর্বশেষ তিন লাখ টাকা দাবি করে। আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা কোথায় পাবো?

বৃদ্ধা তুলন বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “গরুটি কয়েকদিন আগে একটি বাছুর জন্ম দিয়েছে। এখন মায়ের দুধ ছাড়া সেই বাছুরটিও হয়ত মারা যাবে।” তারা এর বিচার চান।

শুধু সাবিনা খাতুন নন, শহরের সরকার পাড়ার বাসিন্দা বাবলু জানান, তার পরিবারের ৫টি গরু পুলিশ হেফাজতে আছে। এর মধ্যে আজ ১টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। পাশের ঘোষপাড়ার শ্রী মহাদেব চন্দ্র ঘোষ জানান, তার দশটি গরুও পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। গরু দুটির বাজার মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকার বেশি।

খবর পেয়ে ছুটে যান জেলার গণমাধ্যকর্মীরা, ছবি ধারণ করা মাত্রই ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন সদর থানার ওসি সহিদুর রহমান। প্রশ্ন করতে গেলে অসৌজন্যমুলক আচরন শুরু করেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিথুন সরকার ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং আশস্ত করেন বিষয়টি সমাধানের।

এসময় পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিথুন সরকার জানান, পুলিশের অবহেলায় পশুগুলো মারা যাওয়ার বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। পরবর্তিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান,  “আমরা ১৬টি গরুর প্রকৃত মালিক যাচাই করে গত ১৩ তারিখে প্রতিবেদন দিয়েছি। গরুগুলোর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি।

এবিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। দ্রুত গরুর মালিককে গরুগুলো বুঝিয়ে দিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গরুগুলো চিকিৎসা দেয়া হয়েছে তবুও মারা গেছে বলে স্বীকার করেন। অন্যদিকে সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ বিষয়টি ওসির একান্ত ব্যাক্তিগত বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

নেত্রকোনায় ৩৫ কেজি গাঁজাসহ ৩ মাদক কারবারি আটক

নেত্রকোনার পূর্বধলা থেকে ৩৫ কেজি গাঁজাসহ তিন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। এ সময় মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস জব্দ করেছে।

সোমবার (১৭ মার্চ) দিবাগত রাত জেলার পূর্বধলা উপজেলার গোহালাকান্দা ইউনিয়নের ময়মনসিংহ টু নেত্রকোনা গামী মহাসড়কে জম জম ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ময়মনসিংহ র‍্যাব-১৪ এর সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার মো. আশরাফুল কবির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আটক ব্যক্তিরা হলেন, হবিগঞ্জ সদরের মো. জসিম উদ্দিন (৪৩), ময়মনসিংহের নান্দাইলের মো. সুমন মিয়া (৩৫), গৌরিপুরের মো. জুয়েল (৩৮)।

র‌্যাব জানায়, গোপন সংবাদে নেত্রকোনার পূর্বধলায় ময়মনসিংহ -নেত্রকোনাগামী মহাসড়কে জম জম ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে একটি মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালায় র‍্যাব। এসময় ৩৫ কেজি গাঁজাসহ ওই তিনজকে আটক করা হয়। এসময় মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত ওই মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়। উদ্ধারকৃত মাদকের বাজার মূল্য প্রায় ৭ লাখ টাকা বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

পুঠিয়ায় দেড় বছরের শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা।

রাজশাহীর পুঠিয়ায় মাত্র দেড় বছরের শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক বৃদ্ধার বিরুদ্ধে। গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তি উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামের মৃত, সইমুদ্দিনের ছেলে আব্দুর রশিদ (৫৫)। ১৭ মার্চ দুপুর ১ টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে। জানা যায়, অভিযুক্ত আব্দুর রশিদ, দেড় বছর বয়সী ওই শিশুর সম্পর্কে প্রতিবেশী ও আত্মীয় হয়। সারেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী আরো জানা যায় অভিযুক্ত আব্দুর রশিদ তিনি এর আগে বেশ কয়েকবার তার নিজ এলাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার গরু, ছাগল এমনকি কুকুরের সঙ্গেও শারীরিক যৌন চাহিদা মিটিয়েছেন বলে অনেকেই বলছেন। ওই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকা বাসিন্দা আরো বলেন,অভিযুক্ত আব্দুর রশিদের প্রতিবেশী জোসনা বেগম সহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, আব্দুর রশিদের স্বভাব চরিত্র খুবই খারাপ এর আগে পার্শ্ববর্তী সৈয়দপুর গ্রামে গরুর সাথে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে জুতার মালা গলায় দিয়ে এলাকায় ঘুরেছে। এছাড়াও মানুষের নানান রকম জিনিসপাতি চুরি করে ঐ ব্যক্তি।

ভুক্তভোগী শিশুর দাদী বলেন, বাচ্চাটা খেলতে খেলতে ওর বাসায় চলে গেছে আমি বুঝতে পারিনি। চারদিকে আমি খোঁজাখুঁজি করছিলাম। হঠাৎ রশিদের বাসায় কেঁদে উঠলে সেখানে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ভিতরে গিয়ে দেখি আমার নাতনির প্যান্ট খোলা এবং রশিদ উলঙ্গ অবস্থায় ঘরের মধ্যে। বাচ্চাটা কান্না না করলে হয়তো আজ সে মারা যেত। অপরদিকে ওই শিশুটির মা তিনি বলেন, আমি আমার বড় মেয়েকে চিকিৎসার জন্য নাটোরে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এসে শুনছি এই ঘটনা। আমার শাশুড়ি রশিদের ভাতিজার বউ এর কাছে ওই অবস্থায় নিয়ে গিয়ে সবকিছু দেখিয়েছেন এবং বলেছেন কেউ যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর আর সাহস না পায় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিশেষ আবেদন রইল। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

এ বিষয়ে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন জানান, থানায় একটি ধর্ষণ চেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত থেকে কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ