আজঃ শনিবার ২২ মার্চ, ২০২৫

বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হারিকেন

প্রভাষক গিয়াস উদ্দিন সরদার, পাবনা প্রতিনিধিঃ

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হারিকের স্থান (জায়গা) দখল করে নিয়েছে বিদ্যুৎ ও সোলার লাইট। কালের স্রোতে হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময়ের আদরের লালিত হারিকেন। গ্রাম বাংলার ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল পরিবারের মাঝেই ছিল হারিকেন, সেই আলোকিত বাতি এখন বিলুপ্তির পথে। সন্ধ্যার পর হতেই রাতের অন্ধকার দূর করতে একটা সময় দেশের প্রতিটি গ্রামের মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল হারিকেন, দোয়াত ও কুপি বাতি।

৯০ দশকের পূর্বে ও কিছুকাল পর দেশে বিদেশি চাকরিসহ নানা পেশায় উচ্চপর্যায়ে কর্মরত থাকাদের মধ্যে অনেকেই পড়ালেখা করেছেন এই হারিকেনের মৃদু আলোয়। গৃহস্থালি এবং ব্যবসার কাজেও হারিকেনের ছিল ব্যাপক চাহিদা। বিয়ে জন্মদিন বা পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে লোকের সমাগম হলে ব্যবহার হতো হ্যাজাক, পাশাপাশি জমা রাখা হতো এই হারিকেন। যুগের পরিবর্তনের পাশাপাশি হারিকেনের স্থান দখল করেছে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক, রিচার্জার বাতি। বৈদ্যুতিক ও চায়না বাতির কারণে গ্রাম ও শহরে হারিকেনের ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। সেই আলোর প্রদীপ হারিকেন এখন গ্রাম থেকেও প্রায় বিলুপ্ত হচ্ছে।

জানা যায়, হারিকেন জ্বালিয়েই বাড়ির উঠানে বা বারান্দায় পড়াশোনা করত শিক্ষার্থীরা। রাতের বেলায় পথ চলার জন্য ব্যবহার করা হত হারিকেন। হারিকেনের জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন তৈল (ডিজেল) আনার জন্য প্রায় বাড়িতেই থাকত কাচের বিশেষ ধরনের বোতল। সেই বোতলে রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো বাড়ির নিদিষ্ট স্থানে। গ্রাম গঞ্জের হাটের দিনে সেই রশিতে ঝোলানো বোতল হাতে নিয়ে যেতে হতো হাট-বাজারে। এ দৃশ্য বেশি দিন আগের নয়। পল্লী বিদ্যুতায়নের যুগে এখন আর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না। বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য দোয়াত, কুপি ও হারিকেন এখন শুধুই স্মৃতি হিসেবে অনেকের বাড়িতেই দেখা যাচ্ছে। তবে অনাদর আর অবহেলার পাত্র হিসেবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের লোগোটি এখনএ হাতে হারিকেন ও বস্তাবন্দি চিঠিসহ লাঠি নিয়ে ছুটে চলে তার কর্ম পালনে।
নিত্য নতুন প্রযুক্তি মানুষকে উন্নত করছে তাই হারিকেন ছেড়ে মানুষ এখন সৌর বিদ্যুৎ সহ বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে। তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুত, সৌরবিদ্যুৎসহ জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নয়নে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন বিলুপ্তির পথে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার , যেমন চার্জলাইট, সৌরবিদ্যুৎসহ বেশ কিছু আলোর জোগান থাকায় এখন আর কেউ-ই ঝুঁকছেন না হারিকেন, দোয়াত, কুপি বাতি বা হ্যাজাকের দিকে। দেশের নতুন প্রজন্ম হয়তো জানবেও না হারিকেন কী ও হারিকেনের ইতিহাস!

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষার বাসিন্দা নব্বই বছর বয়সী অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী নারায়ন চন্দ্র পাল (নারু পাল) জানান, আমাদের বাড়িতে দেশ স্বাধীনের পূর্ব হতেই কেরোসিনের বাতি এবং পরবর্তীতে হারিকেন ব্যবহার করা হতো। দিনদিন প্রযুক্তির উন্নতি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য এখন আর হারিকেন, দোয়াত, কুপি বাতি বা হ্যাজাকের ব্যবহার না করলেও স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে সবকিছুই পরিবর্তন ঘটেছে।

উপজেলার বিভিন্ন বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা র্দীর্ঘ দিন যাবৎ বাবসা করছি সেই ১৯৯০-৯৫ সালের কথা দোকানে হারিকেন, কুপি, হ্যাজাক, দোয়াত বাতি বিক্রি করতাম। আজ ৩০/৩৫ বছর পর এখন আর হারিকেন, কুপি বেচা কেনা নেই। অনেকেই বলেন বাংলার ঐতিহ্য ও অতীতের চিতি হারিকেন কালের স্বাক্ষী তা স্মৃতি চারণ করে রাখা দরকার। কালের পরিবর্তনে দেশ এগিয়ে চলছে তাই অতীতের চিত্র হারিকেন হারিয়ে যাচ্ছে। বাপ দাদার আমলের স্মৃতি হারিকেনের আলোতে আলোকিত হয়েছি পড়াশোনা করে, সেই আলোর হারিকেন ও কুপী বাতি আজ বিলুপ্তির পথে, অতীতের স্মৃতি হারিকেন নতুন প্রজন্মের জন্য ধরে রাখা দরকার।

অষ্টমনিষা হাসিনা-মোমিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, হারিকেন আমাদের পরম বন্ধু ছিল, হারিকেন জ্বালিয়ে আমরা লেখাপড়া করেছি। এখনকার ছাত্রছাত্রীদের কাছে হারিকেন এর কথা কাল্পনিক মনে হবে। ঘরে বিদ্যুৎ, সোলার থাকায় আজ হারিকেন এর কোন প্রয়োজন বা কদর নেই, তবে ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য হারিকেন এর বিষয়ে ইতিহাসে স্থান দেওয়া উচিত।

ভাঙ্গুড়ার প্রবীণ সাংবাদিক বিকাশ চন্দ্র চন্দ বলেন, হারিকেন এর ঐতিহ্য বাংলার মানুষের অন্তরে মিশে আছে এবং থাকবে। সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা করেছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে হারিকেন ধরে রাখার কোন ব্যবস্থা নেই, এই হারিকেন এর ঐতিহ্য যুগের পর যুগ ধরে রাখার জন্য জাতীয় যাদুঘরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন সরকার।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

পাইকগাছায় কোর্ট নির্দেশনা অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণ; সংঘর্ষের আশংকা।

পাইকগাছায় বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১৪৪ ধারা অমান্য করে জোর পূর্বক পাকা বাড়ি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রাখায় যে কোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্ট তথ্য সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের মৃত বক্তাউজ্জামান সানার ছেলে মোঃ আশারফ সানাদের সহিত পারিবারিক কবরস্থানের জায়গা জমি নিয়ে একই এলাকার লিয়াকত গাজীর ছেলে ওমর আলী গাজীদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে মামলা মোকদ্দমা সহ বিবাদ চলে আসছে।

সর্বশেষ গত ইং-২৬/০২/২৫ তারিখ উল্লেখিত পারিবারিক কবরস্থানের জায়গা নিয়ে আব্দুল আজিজ সানা পাইকগাছা বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওমর আলী গংদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন, মামলা নং-এম, আর ৬০/২৫। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে উক্ত জমিতে ১৪৪ ধারার জারী করেন। যা বর্তমানে বলবদ রয়েছে।

এদিকে ইং ২১/০৩/২০২৫ তারিখ শুক্রবার সকালে ওমর আলী গংরা উল্লেখিত জমিতে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১৪৪ ধারা অমান্য করে ঘর বাড়ি নির্মাণের কাজ করছিলো। এ ঘটনা জানতে পেরে আজিজ সানারা পাইকগাছা থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করলে, তাৎক্ষণিক থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আদালতের নির্দেশ মান্য সহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সকল প্রকার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করে আসেন।

এবিষয়ে ওমর আলীর পরিবারের কাছে জানতে চাইলে তাহারা বলেন, আশরাফ সানাদের এখানে জমি নাই, তাহলে আবার কিসের ১৪৪ ধারা।

এছাড়াও আশারফ সানা উল্লেখিত ঘটনা পরবর্তী থানায় ওমর আলী সহ চার জনকে বিবাদী করে একটি সাধারণ
ডায়েরি করেন, জিডি নং১১২১।তাছাড়া আশারফ সানার পরিবার জানান, এ জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কোর্টে দেওয়ানি মামলা চলমান রয়েছে, মামলা নং-৩০/২০২৪।

রূপগঞ্জে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার,থানায় অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাংবাদিকের ছবি ব্যবহার করে অসত্য ও অপপ্রচার ছাড়ানোর ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সাংবাদিক রনি আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সকালে ভুক্তভোগী শ্বশরীরে থানায় উপস্থিত হয়ে সাধারণ ডায়েরি জিডি করেন। যাহার জিডি নং ১১/৪৩। তিনি ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া সিএসবি নিউজ ইউএসএ এবং অনলাইন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দৈনিক আলোর সকালে রূপগঞ্জ উপজেলা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।

জিডির সূত্র ধরে জানা যায়, উপজেলা পূর্বাচল উপশহর কাঞ্চন ব্রীজ টু নিলা মার্কেট ৩০০ ফিট সড়কে অস্থায়ী টং দোকানে কতিপয় অসাধু চোরাই তেল ব্যাবসায়ী জ্বালানি তেল বিক্রি করিয়া আসিতেছে মর্মে প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেয়ে ভিডিও চিত্র সহ দৈনিক আলোর সকাল অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করেন। এই নিউজকে কেন্দ্র করে “somoy khobor” নামিয় ফেইসবুকের একটি ফেইক আইডি থেকে সাংবাদিক রনির ছবি ব্যবহার করে মানসম্মান হানিকর বিভিন্ন পোস্ট করে অসত্য ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। জিডিতে এই আইডির বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য পোস্ট করার মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করার অভিযোগ করা হয়েছে।

সাংবাদিক রনি আহমেদ বলেন, টং দোকানে চোরাই তেলের রমরমা ব্যাবসা, প্রশাসনের নজরদারি নেই এমন শিরো নামে একটি অনলাইনে প্রমানসহ ভিডিও চিত্রে সংবাদ প্রকাশ করলে কতিপয় অসাধু চোরাই তেল সিন্ডিকেট ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য আমার ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মানহানি করার লক্ষেই এ ধরনের অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর সাথে স্থানীয় নামধারি কয়েকজন সংবাদ কর্মীও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে অনুসন্ধানি রিপোর্টের মাধ্যমে এই চোরাই তেল সিন্ডিকেট সম্পর্কে বিস্তারিত জাতীর সামনে তুলেদরা হবে জানিয়ে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ অপপ্রচারের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তিনি।

রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. লিয়াকত আলী বলেন, “সাংবাদিক রনি আহমেদের ছবি ব্যাবহার করে তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে অসত্য ও অপপ্রচার মুলক পোস্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন তিনি। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ