
শোভাযাত্রা, সভা-সমাবেশ, লাল পতাকা মিছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে চট্টগ্রামে মহান মে দিবস পালিত হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলেছেন, শ্রমিকদের তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।দিবসটিকে ঘিরে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হয়ে ওঠে মিছিলের নগরী।
বৃহস্পতিবার (১ মে) সকালে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে বাংলাদেশ সিএনজি অটোরিকশা হালকাযান পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন মে দিবসের সমাবেশ করে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সমাবেশের পর র্যালি বের হয়।
সমাবেশে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামকে শ্রমিকবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। শ্রমিকদের অধিকার, ন্যায্য মজুরি ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।মেয়র আরও বলেন, শ্রমিকদের হয়রানি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে একসঙ্গে। সিটি করপোরেশন শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থরক্ষায় পাশে থাকবে।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবুল হোসাইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, নগর মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি, যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জমির উদ্দিন নাহিদ, জিয়াউর রহমান জিয়া, হালকা মোটরযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বক্তব্য দেন।

সকালে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, চট্টগ্রাম মহানগরী শাখা নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন চত্বর থেকে র্যালি বের করে। এর আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শ্রমিকরাই সম্মুখযুদ্ধ করেছে, জীবন দিয়েছে। বুকের রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমার ভাই উমর ফারুকসহ দুই শতাধিক শ্রমিক শাহাদাত বরণ করেছে। উমর ফারুক হত্যার প্রধান আসামি ফ্যাসিবাদের জননী হাসিনার বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আমাদের দেশ গড়ার এক ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। হাজারো শহিদ ও অসংখ্য তরুণ, শ্রমিক-জনতার আত্মত্যাগকে কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ গড়ার ও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিক-জনতাকে এখনই প্রস্তুতি গহণ করতে হবে।
ফেডারেশনের নগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে নহর জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমীনও বক্তব্য দেন।এদিকে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে নগরীর দুই স্থানে সমাবেশ হয়েছে। নগরীর কাজির দেউড়ির মোড়ের সমাবেশে চা শ্রমিক, পোশাক শ্রমিক, জাহাজ ভাঙা শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে যোগ দেন।

টিইউসি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, শ্রমিকনেতা ইফতেখার কামাল খান ও ফজলুল কবির মিন্টু এতে বক্তব্য রাখেন। ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আরেকটি সমাবেশ হয়েছে নতুন রেলস্টেশন চত্বরে। এতে সড়ক পরিবহণ, পোশাক, বিভিন্ন কলকারখানা, রেস্তোঁরা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং নাভানা ব্যাটারিজ শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যোগ দেন।
সমাবেশে টিইউসি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, স্বৈরাচারের পতনের পরও শ্রমিকদের ওপর দমন-পীড়ন, নির্যাতনের ঘটনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। ন্যায্য অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। শ্রমিকদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।
বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে বিকেলে সমাবেশ করেছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।শ্রমিক দলের বিভিন্ন ইউনিট নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, পাটকল শ্রমিক ইউনিয়নসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন নগরীতে মিছিল সমাবেশ করে।