আজঃ শুক্রবার ৭ নভেম্বর, ২০২৫

রূপগঞ্জে অবৈধ গ্যাসে চলে ডাইনিং কারখানা।

মাহাবুবুর রহমান রনি,রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

রুপগন্জে অবৈধ গ্যাস সংযোগে চলছে এসকল ডাইং কারখানা। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় যত্রতত্র গড়ে উঠা ছোটবড় প্রায় অর্ধশত ডাইং কারখানা কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চালিয়ে আসছে। একদিকে কারখানার বর্জ্যের পানি এলাকার আবাদি জমিতে ফসলে ব্যাপক

ক্ষতি সাধন করছে অআরাক দিকে পরিবেশ দূষন করে প্রায় ৭ শত একর ফসলি জমির আবাদ নষ্ট করে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার বসবাসরত মানুষ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছে নিরব ভূমিকায়। ডাইং কারখানায় অবৈধভাবে দেয়া সংযোগ প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতা না থাকায় এলাকাবাসী ফুঁসে উঠছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলে কারখানাগুলো সরকারের কোন প্রকার অনুমোদন বা লাইসেন্স না থাকায় কারখানাগুলো থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে রূপগঞ্জে এ রকম শতাধিক ডাইং কারখানায় অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল সাওঘাট কাতরারচক এলাকায় রয়েছে ফুজি ডাইং কারখানা, মিতা ডাইং কারখানা, গোলাকান্দাইল হাট সংলগ্ন পূর্বপাড়া রয়েছে হাসান ডাইং কারখানা, উত্তর পাড়া এলাকায় জামান ডাইং কারখানাসহ ইউনিয়নের হরগাও ও ডহরগাঁও এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড় ঘেষে গড়ে উঠেছে শতাধিক ডাইং কারখানা। এসকল কারখানার বর্জে পানিতে ব্রাহ্মপুত্রের পানি ও এলাকার পরিবেশ দূষনে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষ করে গোলাকান্দইল পূর্ব পাড়া হাসান ডাইং ও উত্তরপাড়ার জামান ডাইং কারখানার বিরুদ্ধে অবৈধ গ্যাস সংযোগের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে মালিকপক্ষের সাথে বারবার যোগাযোগ করো তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এসব ডাইং কারখানা পরিবেশ দূষনের জন্য যেমন দায়ী তেমনি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি করছে। এদের দূষিত বর্জ্যের পানি একদিকে নদীতে ফেলায় নদীর পানি নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে কয়েকটি কারখানার বর্জ্য ফসলী জমিতে সরাসরি গিয়ে পড়ছে। এতে করে গোলাকান্দাইল, সাওঘাট, মাহনা, আধুরিয়া ও দড়িকান্দি এলাকার প্রায় ৭শ একর জমির ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। এসব জমিতে সারা বছর কালো পানি জমে থাকার কারনে কোন প্রকার ফসল ফলাতে পারছেনা কৃষকরা। এতে করে কম মূল্যে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

গোলাকান্দাইল পূর্বপাড়া ও উত্তরপাড়া এলাকায় গ্রামের ভিতরে হাসান ডাইং ও জামান ডাইং কারখানা গড়ে উঠার ফলে এলাকাবাসী পড়ছে স্বাস্থ্য ঝুকিতে। এলাকার অনেকেই বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারখানার বর্জ্যের পানি সরাসরি টাটকী খালে গিয়ে পড়ছে। এতে গোলাকান্দাইল ও দড়িকান্দি মৌজার কয়েকশ একর জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও কোন কর্ণপাত করছেনা কারখানা কর্তৃপক্ষরা। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ডাইং কারখানা বন্ধের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে হাসান ডাইং কারখানার মালিক ও জামান ডাইং কারখানার মালিক পক্ষকে জানালেও কোন প্রতিকার না পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী।
গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সুইটি জানান, এলাকায় বিভিন্ন ডাইং কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্যের পানি পুকুর, ডোবা, খাল-বিলে জমা হচ্ছে। আর এই পানিতে রোগবাহী মশা মাছি সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে চুলকানি ও ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু বৃদ্ধসহ সববয়সী মানুষ। এসকল রোগিদের স্থানীয় হাসপাতালগুলো চিকিৎসা দিতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিয়াকত আলী জানান, শিশুশ্রম বেআইনী। তাছাড়া জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের কারখানা নির্মাণ করে পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না। খুব শীঘ্রই হাসান ডাইং কারখানা ও জামান ডাইং কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এছাড়া শুধু ডাইং কারখানা নয় রূপগঞ্জের সাওঘাটে গড়ে উঠছে অবৈধ কেমিক্যালের দোকান। সেখানে বিস্ফোরক কেমিক্যাল বিক্রি করা হচ্ছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে সাওঘাটে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। আব্দুল্লাহ কেমিক্যাল নামের দোকানে অবৈধ কেমিক্যাল বিক্রি করা হয়। তার কোন লাইসেন্স নেই। সরকারকে কর ফাঁকি দিচ্ছে সাওঘাটে অবস্থিত আব্দুল্লাহ কেমিক্যালের পরিচালক ফজলুল হক।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন আমরা দু একদিনের মধ্যেই এ সকল অবৈধ গ্যাস সংযোগকারী কারখানা গুলোতে অভিযান চালাবো।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

জামালপুরে অপহরণ মামলায় চারজনকে যাবাজ্জীবন

জামালপুরে অপহরণ মামলায় চারজনকে যাবাজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার (৫ নভেম্বর ) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ এর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল -১ এর বিচারক মুহাম্মদ আবদুর রহিম এ রায় প্রদান করেন। তারা হলেন, জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার ভাংগুনী ডাংঙ্গা গ্রামের মুন্না@মোনাফ এর মজনু মিয়া(২৫), রান্ধনীগাছা গ্রামের মরহুম হাতেম আলী খন্দকারের ছেলে হানিফ খন্দকার (৫৯), মো: আবুল কাশেম এর ছেলে মো: মমিন মিয়া(৪০), ভাংগুনী ডাংঙ্গা গ্রামের মো: ইমান আলীর ছেলে জহুরুল ইসলাম (৩৭)।

রায়ে সন্তুষ্ট হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল -১ এর পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি)মো: ফজলুল হক সাংবাদিকদের জানান, ২০২২ সালের ০৯ ফেব্রুয়ারী বিকাল সাড়ে পাচ টায় ভিকটিম স্বামীর বাড়ী থেকে বাবার বাড়ীতে আসার সময় জামালপুর সদর উপজেলার রশিদপুর বাজারের পশ্চিম পার্শে থেকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামীরা ভিকটিম মোছা: হাবিবা আক্তার চৈতিকে জোর পুর্বক অপহরণ করে নিয়ে গেলে ১১ ফেব্রুয়ারী ভিকটিমের বাবা হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে জামালপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে ২৭ এপ্রিল মজনু মিয়ার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ এর ৭ ধারায় মমিন মিয়া এবং একই আইনের ৭/৩০ ধারায় হানিফ খন্দকার,মমিন মিয়া, জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। তিনি আরো জানান, আমরা রাষ্ট্র পক্ষ ৪ জন স্বাক্ষী উপস্থাপন করেছি । প্রায় ৪ বছর আইনী লড়াই শেষে মামলায় আসামীরা দোষী প্রমানিত হওয়ায় আদালত ৪জনকেই যাবজ্জীবন এবং ৫০ হাজার করে টাকা জরিমানা করেছে। জরিমানার টাকা ভিকটিম পাবে।

চট্টগ্রামে প্রবাসীর ১৯ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট, আসামি গ্রেফতার

চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে ডাকাতি মামলার পলাতক আসামি মো. সাদ্দাম হোসেনকে (৩২) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭। চান্দগাঁও থানাধীন নুরুজ্জামান নাজির বাড়ি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার সাদ্দাম হোসেন ভোলার লালমোহন থানার দুলা মিয়া এলাকার মো. ফারুকের ছেলে।

র‌্যাব-৭’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এ আর এম মোজাফ্ফর হোসেন জানান, গত ২১ জুলাই সাড়ে ৮টায় দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ সামসুদ্দিন চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে এ কে খান বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে লিংক রোড় এলাকায় ডাকাতদল নগদ টাকাসহ ১৯ লাখ ৮২ হাজার ২০০ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি ৩/৪ জনকে আসামি করে হালিশহর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গোপন খবরের ভিত্তিতে চান্দগাঁও থানাধীন নুরুজ্জামান নাজির বাড়ি এলাকা থেকে এ মামলার আসামি সাদ্দামকে গ্রেফতার করা হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ