আজঃ সোমবার ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

চমেক হাসপাতাল আরও ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল তৈরি করতে প্রস্তুত।

জুয়েল বড়ুয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর সেবা কার্যক্রম চালু হয় ১৯৬০ সালে। এ হাসপাতালের আসন সংখ্যার দ্বিগুণ রোগীর কারণে মেজেতে চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা যায় সব সময়। একদিকে রোগীর চাপ অন্যদিকে ডাক্তার ও নার্স সংকট। এসব বিষয় বিবেচনা করে নতুন করে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট্য ’চমেক -২ হাসপাতাল করার প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে ৫০০ শয্যা, ১৯৯৬ সালে ৭৫০ শয্যা, ২০০১ সালে ১ হাজার ১০ শয্যা, ২০১৩ সালে ১৩১৩ শয্যা এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে এ হাসপাতালকে ২২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। মাত্র ৫০০ শয্যার অবকাঠামোতে নির্মিত এ (চমেক) হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা দফায় দফায় বাড়ানো হলেও বাড়েনি জনবল। বর্তমানে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে (আউটডোরে) প্রতিদিন আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ ন। আর প্রতিনিয়ত প্রায় ৩ হাজার রোগী ভর্তি থাকছে গরিবের হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে (ইনডোরে)।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে বর্তমান নার্স সংখ্যা ১ হাজার ১৯৭ জন। এছাড়া সরকারি পর্যায়ে হাসপাতালে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি রয়েছেন ৪১৭ জন। এর মধ্যে ৩য় শ্রেণির ১১০ পদে রয়েছেন ৮৫ জন। আর ৪র্থ শ্রেণির ৫৬৬টি পদে কর্মরত রয়েছেন ৩৩২ জন। হিসেবে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদে আরো প্রায় আড়াইশ পদ শূন্য রয়েছে। অবশ্য আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ৪র্থ শ্রেণির আরো ১৯৩ জন কর্মচারী রয়েছে হাসপাতালে। চিকিৎসক ও নার্স সংখ্যা মোটামুটি চলনসই হলেও হাসপাতালে কর্মচারি সংকট প্রকট বলে জানান হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন, এমপিল, এমপিএইচ।

পরিচালকের দাবি- হাসপাতালে বিশেষ করে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী বেশি প্রয়োজন। কিন্তু এ জায়গাতেই সংকট বেশি। পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মচারী পাওয়া গেলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় আরো সন্তোষজনক পরিবর্তন আনা সম্ভব। এর বাইরে প্রশাসনিক কার্যক্রমে সহকারী পরিচালক পদ মর্যাদায় আরো কিছু সংখ্যক জনবল জরুরি জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন।
শয্যা বেড়ে এখন ২২০০ হয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে জনবল বাড়েনি। সেই

পুরনো জনবলেই সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। এত অপর্যাপ্ত জনবলে বিশাল সংখ্যক রোগী সামলানো আসলেই কঠিন। সীমিত জনবলে সেবা দিতে গিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই হিমশিম অবস্থা বলেও মন্তব্য করেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন।

এদিকে, কর্মচারি সংকটের পাশপাশি ৪৬টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট চমেক হাসপাতালে স্থান সংকটও চরম পর্যায়ে। শয্যা ছাড়িয়ে মেঝে, বারান্দা, করিডোর এমনকি সিঁড়িতেও রাখতে হচ্ছে রোগীকে। জনবল ও স্থানের এমন চরম সংকট নিয়ে এতদঞ্চলের বিশাল সংখ্যক রোগীর চাপ যেন আর নিতে পারছে না হাসপাতালটি। সবমিলিয়ে গরিবের এ হাসপাতালটি রোগীর ভারে বিপযস্ত বলা চলে। এমন পরিস্থিতিতেও এ হাসপাতালে তুলনামূলক কম খরচে বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন গরীব–অসহায় রোগীরা। বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চড়া ফি বহনে অক্ষম অসহায় রোগী মাত্রই ছুটে যান চমেক হাসপাতালে।

চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও নগরে সব মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি লোকের বসবাস। এর অর্ধেক অংশ সেবা গ্রহণ করে থাকেন একমাত্র ভরসার এই চমেক হাসপাতালে। এই হাসপাতালে চিকিৎসার মান ভালো হওয়ায় রোগীর চালপও বেড়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় রোগীকে পর্যাপ্ত সেবা প্রদানের দিক বিবেচনা করে চমেক – ২ নামে আরো একটি এক হাজার শয্যার হাসপাতাল করার প্রস্তাবনা দিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রামে যেভাবে হত্যা করা হয় মোবাইল মেকানিককে, গ্রেফতার-৩।

চট্টগ্রামে যেভাবে হত্যা করা হয় মোবাইল
চট্টগ্রাম মহানগরে পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে মোবাইল মেকানিক আকাশ ঘোষ হত্যায় প্রধান অভিযুক্তসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।কোতোয়ালী থানাধীন এনায়েত বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছিল। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-মো.সানি (২৪), মো.ইউছুফ (৩৫) ও শাকিল আলম ফয়সাল (২৬)।শনিবার দুপুরে র‌্যাবের চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দেন র‌্যাব-৭ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাওহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গত ১৪ নভেম্বর এনায়েত বাজার এলাকায় আকাশ ঘোষকে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় ভিকটিম আকাশকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরও বলেন, আকাশ ঘোষ গোয়ালপাড়া পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা এবং পেশায় মোবাইল মেকানিক। একমাস পূর্বে অভিযুক্ত সানি ভিকটিম আকাশের দোকানে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে পরিবর্তন করা জন্য নিয়ে গেলে ভিকটিম মোবাইলের ডিসপ্লে পরিবর্তন করেন। মেরামতের ১৫শ’ টাকা পরিশোধের জন্য বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত সানি তাকে কিছু টাকা পরিশোধ করে। গত ১৪ নভেম্বর আকাশ বাকি পাওনা টাকা আদায়ের জন্য অভিযুক্ত সানিকে চাপ দেয়।

সানি তাকে টাকা দেওয়ার জন্য রাতে কসাইপাড়া এলাকায় একটি গলিতে নিয়ে যায়। সেখানে অভিযুক্ত সানি ও তার সহযোগীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে আকাশ ঘোষকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে চসিকের বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু

: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্দেশে নগরজুড়ে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে বিশেষ সমন্বিত ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে শনিবার চসিকের ১৮ নং ওয়ার্ডের কালা মিয়া বাজার ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক মশক নিধন, লার্ভা ধ্বংস, বর্জ্য অপসারণ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়।

চসিক কর্তৃপক্ষ জানায়, বছরের এই সময় ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়ায় নগরের ২৫টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল চিহ্নিত করে সেখানে সক্রিয় মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পৃথক দল মাঠে কাজ করছে। তারা শুধু প্রাপ্তবয়স্ক মশা ধ্বংসই নয়, বাসাবাড়ি, ড্রেন, নালা, দোকানপাট ও বাজার এলাকার জমে থাকা পানিতে থাকা লার্ভা নিধন ও অবরুদ্ধ পানি অপসারণ কার্যক্রমও পরিচালনা করছেন।

এ ছাড়া জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে চসিকের পক্ষ থেকে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, ব্যক্তিগত সতর্কবার্তা প্রদানসহ এলাকায় এলাকায় বিশেষ নির্দেশনা প্রচার করা হচ্ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। যেখানে অনিয়ন্ত্রিত পানি জমে থাকা, পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন রাখা, বাসাবাড়ির ছাদে পানি সংরক্ষণসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চসিক কর্মকর্তারা জানান, এই ক্রাশ প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য— মশক ঘনত্ব কমানো, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখা, নগরবাসীকে পরিচ্ছন্নতার অভ্যাসে সম্পৃক্ত করা।

অভিযান চলাকালে উপস্থিত ছিলেন চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহি, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী (মারুফ), স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্ষা মৌসুমে বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন গলিতে পানি জমে থাকায় মশার উপদ্রব বেড়ে গিয়েছিল। চসিকের এই ক্রাশ প্রোগ্রাম চালুর ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ভবিষ্যতেও চসিকের নির্দেশনা মেনে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেন তারা।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ