আজঃ সোমবার ১০ নভেম্বর, ২০২৫

দামোদর মাসের মাহাত্ম্য **************************

সবুজ দেব নাথ

দামোদর মাস বা কার্তিক মাস সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাস ভগবান বিষ্ণুর মাস বলে খ্যাত। এই মাস ত্যাগের মাস হিসেবে ও পরিচিত।এই মাসে ভগবান বিষ্ণুর সেবা একগুণ করলে সহস্রগুণ ফল লাভ করা যায় । এই মাসে প্রত্যেক মন্দিরে বা তুলসী গাছের নীচে বিষ্ণুর প্রীতি লাভের জন্য দীপ দান করা হয়। এই পূণ্য মাস সম্পর্কে পদ্মপুরাণ,ভাগবতপুরাণ,স্কন্ধপুরাণ ও শ্রীহরিভক্তিবিলাস শাস্ত্রে অসংখ্য তথ্য বলা আছে। পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে,এই পূণ্য মাসে ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে কেউ যদি একটি প্রদীপ দান করে তবে, তার সমস্ত পাপ নাশ হবে এবং তার পুনর্জন্ম আর হবে না।

তিনি সংসারে অজেয় ও অক্ষয়কীর্তি স্থাপন করবেন। নিরন্তন প্রদীপ জ্বালানো উচিত। প্রদীপটি মাটির হলে উওম হয়। প্রদীপটি জ্বালাতে সলিতা ও ঘি, তিলের তেল বা কর্পূর ব্যবহার করা হয়।কৃত্রিম ঘি ব্যবহার করবেন না।প্রদীপের আলোতে যেমন, চারদিক আলোকিত হয়ে সমস্ত অন্ধকার দূর করে;তেমনি ভক্তি ও জ্ঞান দ্বারা সকলের পাপ দূরীভূত হয়। অর্থাত্,প্রদীপের আলোর শিখা যত উজ্জ্বল হতে থাকবে,ততই তার পাপ ক্ষয় হতে থাকবে। স্কন্ধ পুরাণে বলা হয়েছে,এই মাসে যে প্রদীপ দান না করে তারা ব্রহ্মঘাতী,গোঘাতী,স্বর্ণ অপহারী ও সদা মিথ্যাবাদী। দামোদর মাসে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তার মাতৃ স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ হন। পৌরাণিক কাহিনী মতে, কলিপ্রিয়া তার স্বামীকে বধ করেছিল এবং তার ভুল বুঝতে পেরে সে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য এই দীপ দান করেন। এই পবিত্র মাসে দীপ দানের জন্য তিনি দেহান্তে বিষ্ণুলোক প্রাপ্তহন। আবার,এক স্ত্রী ইঁদুর প্রদীপের তেল খেতে এসে নিজের অজান্তেই প্রদীপের সলিতাকে উস্কে দেয় বা জ্বলতে সাহায্য করে;আর যার ফলশ্রুতিতে দেহান্তের পর সে ও বৈকুন্ঠলোক প্রাপ্ত হোন।পূজা দেয়ার সময় ভগবান বিষ্ণুর চিত্রপট বা বিগ্রহের চরণে চার বার,নাভি কমলে দুই বার,মুখমন্ডলে তিনবার ও সর্বাঙ্গে সাত বার (ডানদিক থেকে আরম্ভ করে) প্রদীপ প্রদক্ষিণ করাতে হয়। দামোদর মাসে সম্পূর্ণ ভক্তি ,বিশ্বাস ও প্রেম দ্বারা ভগবান বিষ্ণুর পূজা করলে দেহান্তে বৈকুন্ঠ লাভ বা মুক্তি লাভ হয়। তাই, আপনারা অন্তত পক্ষে একটি প্রদীপ ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে অর্পণ করুন।

(দামোদর মাস) মাশকলাই,বেগুন, বরবটি,শিম বর্জন। দমোদর মাসের ব্রতপালন করুন ভগবান দামোদরের বিশেষ কৃপা লাভ করে আপনার জীবনকে ধন্য করুন।

স্কন্দপুরাণে ব্রহ্মা-নারদ সংবাদে বলা হয়েছে :-
হে মুনিবর! যে মানব কার্তিক ব্রত না করে, সে ব্রহ্মঘাতী,গোঘাতী,স্বর্ণচোর,ও সর্বদা মিথ্যাবাদী।
হে বিপেন্দ্র! বহু পূজা করে এবং শতবার শ্রাদ্ধ করেও কার্তিকে ব্রত না করার ফলে স্বর্গ প্রাপ্ত হয় না।
কার্তিকে ব্রত না করলে যে উৎকৃষ্ট দান,সুমহান তপস্যা ও জপ সকলই বিফল হয়।
হে নারদ! কার্তিক মাসে উত্তম বৈষ্ণব ব্রত না করলে সপ্ত জন্মার্জিত পুণ্য বৃথা হয়।
দামোদর_ব্রতের_মাহাত্ম্য স্কন্দ ও পদ্মপুরাণে দামোদর ব্রতের মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :-
সর্বতীর্থে যে স্নান,সর্বদানের যে ফল,কার্তিক মাসের কোটি অংশের একাংশেরও সমান হয় না।
কার্তিকের সমান মাস নাই, সত্যযুগের সমান যুগ না,বেদের সমান শাস্ত্র নাই,গঙ্গার সমান তীর্থ নাই।
যে মানব কার্তিকে শ্রীবিষ্ণু মন্দির প্রদক্ষিণ করে সে পদে পদে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফলভাগী হয়।
যে মানব কার্তিকে শ্রীহরির সম্মুখে নৃত্য,গীত,বাদ্য,ভক্তিসহ করে,সে অক্ষয়পদ বিষ্ণুধাম প্রাপ্ত হয়।
হে মুনিবর! কার্তিকে যিনি হরিকথা শ্রবণ করেন,তিনি শতকোটি জন্মের আপদসমূহ থেকে নিস্তার পান।
কার্তিকে নিমেষার্দ্ধকাল দীপদান ফলে সহস্রকোটিকল্প অর্জিত বহু পাপ বিলুপ্ত হয়।
মেরু ও মন্দর পর্বত সদৃশ অশেষ পাপ করলেও কার্তিকে দীপদান প্রভাবে সর্বপাপ দগ্ধ হয় –এতে সন্দেহ নাই।

এছাড়া আরো অনেক মাহাত্ম্য পুরাণে বর্নিত আছে:-
বন্ধুদের অনুরোধ করব,আপনারা দামোদর ব্রত পালন করুন এবং মানব জীবন ধন্য করুন। এই মাসে বেশি করে হরিনাম জপ করুন এবং প্রতিদিন।
দামোদর মাসে দীপ দানের মাহাত্ম্য

একবার এক ইঁদুর দামোদর মাসের একাদশী তিথিতে এক ভক্তের শ্রী ভগবানের সম্মুখে প্রজ্বলিত করা প্রদীপের ঘি খাওয়ার জন্য তার জিহ্বা দ্বারা প্রদীপের ভিতর নাড়াচাড়া করছিল। এর ফলে প্রদীপের আলো টি আরো প্রজ্বলিত হয়, এবং ভগবান দামোদর অত্যন্ত প্রীত হন!!!
সেই ইঁদুরটি ভগবদ্ধাম প্রাপ্ত হয়!!!
হরিভক্তিবিলাস (১৬/১২৬/১২৮) “যাঁরা অন্যর দানকৃত প্রদীপের ক্ষীণ আলো প্রজ্বলিত করেন অর্থ্যাৎ আলো বাড়িয়ে দেন, তাঁর প্রতি ভগবান অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন।
স্কন্দপুরাণে বলা হয়েছে,”কেউ যদি এই দামোদর মাসে ভগবানের উদ্যেশ্য দীপদান করেন তিনি যদি নিমেষের অর্ধেক সময়েরও অর্থ্যাৎ চোখের পলক ফেলতে যতটুকু সময় লাগে, সেই সময়ের অর্ধেক সময়েরও যদি তিনি দীপদান করেন , তাহলে তাঁর সহস্র কোটি কল্পের পাপ বিদূরিত হয়ে যায়।
এই মাসে দীপ দান করলে সর্ব যজ্ঞের এবং সর্ব তীর্থের ফল লাভ হয়।
পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে,”কেউ যদি ভগবানকে নিবেদনকৃত প্রসাদী প্রদীপ তাঁর পূর্বপুরুষের উদ্যেশ্য দান করেন, তাহলে সেই পূর্বপুরুষেরা পবিত্রতা এবং শান্তি লাভ করেন।
এছাড়া এই মাসে এক বিশেষ কৃপা রয়েছে।
ভগবানের মন্দির আলো দ্বারা সজ্জিত করলে, সেই ব্যক্তি ভগবদ্ধাম তো প্রাপ্ত হন ই, তিনি যখন ভগবদ্ধামে প্রবেশ করবেন তখন দেবতারা প্রদীপ হাতে সেই মহাত্মাকে বরণ করবেন।
তো, প্রদীপ দান করুন শ্রী দামোদর কে এবং অশেষ কৃপা লাভ করুন।
জয় শ্রী দামোদর

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

রাণীশংকৈলে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ‘র ১৪৩ তম প্রয়াণ দিবস পালিত

আমরা অসত্যকে ত্যাগ করে, সত্যকে ধারণ করি এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বারা বৈদিক আর্য সমাজের আয়োজনে বলিদ্বারা দূর্গা মন্দির চত্বরে মহর্ষিদয়ানন্দ সরস্বতী’র ১৪৩ তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে স্মৃতি তর্পণ শ্রদ্ধান্জলী ওশুভ দীপাবলির প্রদীপ প্রজ্বলন এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৈদিক আর্য সমাজের সভাপতি বিনোদ চন্দ্র বর্ম্মনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, শুনিল চন্দ্র আর্য,শ্যামল চন্দ্র আর্য, বলিদ্বারা বৈদিক আর্য সমাজের সম্পাদক ধনেশ্বর রায়, মাষ্টার ছবিকান্ত দেব, ডাঃ কৃষ্ণ চন্দ্র রায়, মাষ্টার কৃষ্ণ রায়,ললিত মহন রায় প্রমূখ।

অনুষ্ঠান সার্বিক তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করেছেন সহকারী কৃষি অফিসার দিপংকর রায় ও প্রাসাদী
বর্ম্মন।মহর্ষি দয়ানন্দের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে ৪টি হোম যোগ্যের মাধ্যমে মহর্ষির মঙ্গল কামনায় প্রায় ৫শতাধিক ভক্ত অংশ গ্রহণ করেন।

শ্রী শ্রী দক্ষিণেশ্বরী মাতৃশক্তি কালী মন্দিরে দীপাবলীতে বস্ত্র বিতরণ

নগরীর পাঁচলাইশ হরিপুরস্থ ডা. নলিনীর বাড়ির হরিপুর শ্রী শ্রী দক্ষিণেশ্বরী মাতৃশক্তি কালী মন্দিরের উদ্যোগে ২৪ অক্টোবর, শুক্রবার দীপাবলী উপলক্ষে এলাকার অসচ্ছল পরিবারের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেবায়েত পণ্ডিত অরূপ আচার্য্য। প্রধান অতিথি ছিলেন লায়ন ডা. বরুণ কুমার আচার্য্য বলাই। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শ্রীমতি রুমা আচার্য্য। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্দিরের ট্রাস্টি সভাপতি নন্দিতা আচার্য্য। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন পণ্ডিত জনি আচার্য্য, অর্পিতা আচার্য্য, অন্বেষা আচার্য্য, অনুপমা আচার্য্য। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিপ্রা পাল, শিল্পী আচার্য্য, ঝুমুর সর্দার, রুমা পালিত, নারায়ণ আচার্য্য, রাজীব শীল, ছোটন শীল। উক্ত অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত হন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী শিক্ষিকা সোমা সরকার।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ