আজঃ মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে ভোটার বেড়েছে সাড়ে তিন লাখ, কমছে ৬৪টি ভোটকেন্দ্র ।

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

৮৬টি ভোটকেন্দ্র নিয়ে আপত্তি নিস্পত্তিতে শুনানি ৯ অক্টোবর

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ভোটার বাড়লেও বাড়েনি ভোট কেন্দ্র। উল্টো ৬৪টি ভোটকেন্দ্র ও ১০৭৬টি ভোটকক্ষ কমছে। ভোটার বাড়লেও সেই তুলনায় ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ বাড়েনি। বরং কমেছে। এদিকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮৬টি ভোটকেন্দ্র নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। আপত্তি নিষ্পত্তিতে শুনানির তারিখও নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৩ জন। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খসড়া তালিকায় ভোটার সংখ্যা ৬৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫১৭ জন। দুই বছরের কাছাকাছি সময়ে ভোটার সংখ্যা বাড়ছে তিন লাখ ৫৪ হাজারের বেশি।

এর আগে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ)। এর পরবর্তী সময়ে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে। ২০১৪ সালে দশম, ২০১৮ সালে একাদশ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। কোনটি একতরফা,

দিনের ভোট রাতে ও সর্বশেষ আমি আর ডামি নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পায়। দেশ-বিদেশে এসব নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।এদিকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার নির্বাচনব্যবস্থায় সংস্কার ও বাংলাদেশের ইতিহাসে মডেল নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর তিনটি নির্বাচন ছিল আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন। এসব নির্বাচনে দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে সাধারণ মানুষ ভোটবিমুখ হয়ে পড়েন। আগামী নির্বাচনে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মধ্যে ভোটপ্রদানের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

অন্যদিকে ভোটকেন্দ্র কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমদ বলেন, গত সরকার আমলে দলীয় প্রার্থীদের চাপে-মতামতের ভিত্তিতে কিছু ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি তাদের বাড়ির আশপাশেও ভোটকেন্দ্র বসানো হয়েছে। আমরা সরেজমিন তদন্ত করে দেখেছি, এসব ভোটকেন্দ্র রাখার প্রয়োজন নেই। তাই এসব অবাঞ্চিত কেন্দ্র বাদ দিয়ে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন ভোটারের মধ্যে তিন লাখের বেশি তরুণ ভোটার। আগামী নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছেন এসব ভোটাররা।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকা, ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছেন।

চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমদ বলেন, ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া তালিকার কয়েকটিতে আপত্তি পড়েছে। ৯ অক্টোবর আপত্তি-শুনানি শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন তালিকায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৯৫৯টি। ভোটকক্ষের সংখ্যা ১২ হাজার ৬৫৬টি। গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে ভোটকেন্দ্র ৬৪টি ও ভোটকক্ষ ১০৭৬টি কম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমদ আরো বলেন, নতুন নীতিমালায় ৬০০ জন পুরুষ ভোটারের জন্য একটি ও ৫০০ জন মহিলা ভোটারের জন্য একটি ভোটকক্ষ স্থাপন করতে হবে। সেই অনুযায়ী ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে,।

জানা গেছে,মোট কেন্দ্রের মধ্যে ৮৬টি ভোটকেন্দ্র নিয়ে আপত্তি তুলেছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবরে আপত্তি দাখিল করেছেন। চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসন এবং চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতাকনিয়া আংশিক) নিয়ে কোনো আপত্তি না আসলেও অন্যান্য আসনগুলো নিয়ে আপত্তি আসে।

সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি আপত্তি জমা পড়েছে চট্টগ্রাম-১২(পটিয়া) আসনে ১৮টি। এরপর চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর-পাহাড়তলী-খুলশী) আসনের আপত্তি জমা পড়েছে ১০টি। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও) আসনের আপত্তি জমা পড়েছে ১০টি। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও চসিকের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড) এবং চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের আপত্তি জমা পড়েছে ১টি করে। আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ২০ অক্টোবর চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

পাবনা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবীতে চাটমোহরে জন সমুদ্রে..

পাবনা প্রতিনিধিঃ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে ঘিরে ৭০,পাবনা-০৩ (চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। প্রার্থী পরিবর্তন এবং স্থানীয় নেতৃত্ব থেকে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নের দাবিতে সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশাল জনসমাবেশ। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে উপজেলা ও পৌর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। মাঠজুড়ে সৃষ্টি হয় জনসমুদ্রের মতো এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।


সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিএনপির কঠিন সময়েও চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরের নেতাকর্মীরাই দলকে টিকিয়ে রেখেছেন। মামলা, জেল, নির্যাতন সবকিছু মোকাবিলা করে তাঁরা বিএনপির পতাকা উড়িয়েছেন। অথচ এখন যদি বহিরাগত কাউকে ধানের শীষের প্রার্থী করা হয়, তা স্থানীয় নেতাকর্মীরা মেনে নেবেন না। তারা বলেন, এই এলাকার রাজনীতি এই এলাকার মানুষই ভালো জানে। বাইরে থেকে কাউকে এনে জনগণের ভোট চাওয়া সম্ভব নয়।

বক্তারা আরো সতর্ক করে বলেন, যদি স্থানীয়তার ভিত্তিতে যোগ্য, গ্রহণযোগ্য ও ত্যাগী নেতাকে প্রার্থী করা না হয়, তবে নির্বাচনের ফলাফল দলের জন্য শুভ হবে না। মাঠ পর্যায়ে যারা বছরের পর বছর লড়াই করেছেন, তাদের উপেক্ষা করলে আন্দোলন-সংগ্রামের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ আসনে যেন স্থানীয় এবং ত্যাগী নেতারই মনোনয়ন দেওয়া হয়।

চাটমোহর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তায়জুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন,
চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কে.এম আনোয়ারুল ইসলাম,চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা, ভাঙ্গুড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাড. মজিবুর রহমান, ভাঙ্গুড়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মতিন রাজু, চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল আজিজ, ফরিদপুর পৌর যুবদলের সদস্য সচিব কাকন হোসেন, ভাঙ্গুড়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম, চাটমোহর পৌর বিএনপি নেতা আবু তালেব, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম হৃদয় সহ আরও অনেকে।

সমাবেশে বক্তারা এক কণ্ঠে বলেন, যারা দুঃসময়ে বিএনপির পতাকা ধরে রেখেছেন, যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদেরই প্রার্থী করা হোক। বহিরাগত চাপিয়ে দিলে মাঠে কোনো সাড়া মিলবে না। তবুও যদি বহিরাগত প্রার্থী কি রাখা হয় তবে এ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর পরাজয়ের দায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের নয়, দলের উচ্চ পর্যায়কে নিতে হবে।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চাটমোহর উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান হোসেন।

সমাবেশ শেষে স্থানীয় নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল বের করে চাটমোহর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। মিছিল শেষে তারা আবারও ঘোষণা দেন “চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া- ফরিদপুরের জনগণ স্থানীয় প্রার্থীই চায়; এই দাবির প্রতিফলন না ঘটলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে: চট্টগ্রাম এখন আতংকের নগরী

অন্তভর্তিকালীন সরকারের ঘোষণা ২০২৬ সালের ফ্রেরুয়ারিতে জাতীয় সাংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে আতংকিত হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম সম্প্রতি রাউজান,রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী সহ চট্টগ্রাম জুড়ে খুনের মহোৎসব চলছে। ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট সন্ধ্যা। পাঁচলাইশ এলাকার কুয়াইশ রোডের নাহার গার্ডেন নামে একটি রেস্তোরাঁর সামনে হঠাৎ একটি অটোরিকশা ঘিরে গুলির ঘটনা ঘটে। রিকশায় থাকা আনিস ঘটনাস্থলে মারা গেলেও মাসুদ নামে অন্যজন আহত অবস্থায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

এর কিছুক্ষণ বাদেই দেড় কিলোমিটার দূরে মাসুদকে তার বাড়ির সামনেই গুলি করে হত্যা করে মোটরসাইকেল আরোহী কয়েকজন। এই ধরনের টার্গেট কিলিং একসময় চট্টগ্রামে প্রায়ই ঘটত। আবারও পুরনো স্ট্যাইলের হত্যা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, সরোয়ার হোসেন বাবলার বাড়ি থেকে মিটিং করে ফেরার পথে ওই দুজনকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় দুই থানায় পৃথক দুটি মামলায় সাজ্জাদ হোসেনসহ চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

সেদিনই প্রথম সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে সরোয়ার হোসেন বাবলার দ্বন্দ্ব সামনে আসে। সরোয়ার হোসেন ছিলেন চট্টগ্রামের আলোচিত এইট মার্ডারের প্রধান আসামি ‘শিবিরের ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সাজ্জাদ হোসেন খান ও হাবীব খানের অনুসারী। পরে সাজ্জাদ হোসেন খানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান সরোয়ার হোসেন। সরোয়ারকে শায়েস্তা করতে আরেক সাজ্জাদ হোসেনকে দলে ভেড়ান সাজ্জাদ হোসেন খান। এই সাজ্জাত পরিচিতি পায় ছোট সাজ্জাদ হিসেবে। গত ১৬ মাসে চট্টগ্রাম শহরেই শুধু ৬টি টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে। যার প্রতিটি ঘটনায় ভিক্টিমরা সরোয়ার হোসেনের অনুসারী। ৫ নভেম্বার বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ঘরের সামনেই টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন সরোয়ার হোসেন বাবলা।

এর আগে গত বছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁওয়ে মাইক্রো বাসে এসে আফতাব উদ্দিন তাহসিন নামে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। চলতি বছরের ৩০ মার্চ বাকলিয়া এক্সেস রোডে প্রাইভেটকার ঘিরে গুলি করে সরোয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সেদিন গাড়িতে থাকা সরোয়ারের দুই সহযোগী মারা গেলেও ভাগ্যচক্রে বেঁচে যায় সরোয়ার। ২৫ মে সরোয়ারের আরেক অনুসারী ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে হত্যা করা হয় পতেঙ্গা এলাকায়। প্রতিটি ঘটনায় সাজ্জাত হোসেন ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী রায়হানের নাম এসেছে বারবার। চট্টগ্রাম মহানগরের বাইরেও গত দেড় বছরে আরও অন্তত ১০টি টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ঘটনায় ঘুরে-ফিরে এই চক্রের নাম এলেও আসামিরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, একটি অঘোষিত গ্যাংওয়ারের শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। যার জের ধরে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটছে। আর এর নেপথ্যে ভারতের পাঞ্জাবে থাকা একসময়কার শিবির ক্যাডার সাজ্জাত হোসেন খানই মূল চরিত্র।

সাজ্জাত হোসেন খানের দুই শিষ্য ছিলেন সরোয়ার আর ম্যাক্সন। দুজনেরই পরিচিতি ছিল ছাত্রশিবির ‘ক্যাডার’ হিসেবে। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা ছিল। বিদেশ বসে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকার শিল্প-কারখানা, মোটর পার্টসের দোকান, ভবন নির্মাণে চাঁদা আদায় করত এই চক্র। ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ফেরার পথে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সারোয়ার আটক করেছিল ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ তাকে নিয়ে বায়েজিদ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি একে-২২ রাইফেল এবং গুলি উদ্ধার করেছিল। ২০২২ সালে রহস্যজনকভাবে কলকাতায় মৃত্যু হয় ম্যাক্সনের। কারাগারে থাকাকালে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বাবলার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মুক্তির পর আসলাম চৌধুরী ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। মাত্র এক মাস আগে বাবলা বিয়ে করেন। সেই বিয়েতে এরশাদ উল্লাহ ও আবু সুফিয়ানসহ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর থেকে বাবলাকে এই বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও দেখা গেছে। এ সময় নিজেকে জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দিতেন সরোয়ার হোসেন বাবলা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গেও তার ছবি দেখা গেছে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরোয়ার হোসেন বলেছিলেন, বড় সাজ্জাদ ভারতে বসে চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি করছে। টোকাই পোলা নিয়োগ দিয়ে যখন তখন যে কাউকে গুলি করাচ্ছে। পুলিশ বড় সাজ্জাদের টোকাই বাহিনীকে ধরে না। আবার ছোট সাজ্জাদেরও একই অবস্থা। বড় সাজ্জাদের হয়ে সব কাজ করে। পুরো চট্টগ্রামে দুই সাজ্জাদ সন্ত্রাস করছে। আমি এসবের প্রতিবাদ করি। তাই আমাকে তারা শত্রু মনে করছে। পুরো বিষয়টা যে পুলিশ বিভাগ জানে, সেটি অবশ্য গোপন করেনি। বুধবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে এরশাদ উল্লাহকে দেখে বের হয়ে সাংবাদিকদের সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন ‘এরশাদ উল্লাহ নয়, টার্গেট ছিলেন সরোয়ার। সরোয়ারের অপরাধের ইতিহাস আছে।

ধারণা করা হচ্ছে, হামলার মূল টার্গেট ছিলেন সরোয়ার। ঘটনার মূল যারা, তাদের অনেকেই জেলে আছেন এবং দেশের বাইরে থেকে এর ইন্ধন আছে।’চট্টগ্রাম এখন আতঙ্কের নগরী। গত এক বছরে চট্টগ্রামে ৪৯টি খুন, রহস্যজনক মৃত্যু বা ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ নির্বাচনী প্রচারণায় গত বুধবারের হামলা নতুন করে অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। নির্বাচনের আগে এমন প্রতিহিংসা আর খুনের ঘটনা রাজনৈতিক মহলেও তৈরি করেছে শঙ্কা। নির্বাচনী প্রচারণায় এই হামলাকে শুধুই আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখতে রাজি নন রাজনৈতিক কর্মীরা। তাদের মতে, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বিএনপিকে মাঠের শক্তির একটি বার্তাও দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

সরোয়ার হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (উত্তর) উপপুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী গণসংযোগের সময় গুলির ঘটনায় পরিবার অভিযোগ দিলে আমরা মামলা হিসেবে রেকর্ড করব। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে মাঠে পুলিশ কাজ করছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ