আজঃ সোমবার ১০ নভেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে তিন সাংগঠনিক জেলায় কমিটি নেই বিএনপি’র, তৃণমূলে ক্ষোভ

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রামে তিন সাংগঠনিক জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলেছে ঢিমেতালে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে জেলাগুলোতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি নেতাদের বিরোধ আরও চাঙা হয়ে উঠেছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।

বিশেষ করে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ তিন সাংগঠনিক জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন থানা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে দলটি। এ নিয়ে তৃণমূলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এর আগে ১৪ মাসে সম্মেলন করে চট্টগ্রামে একটি কমিটিও গঠন করতে পারেনি বিএনপি।

সাংগঠনিক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরে আগে ৪১টি ওয়ার্ড ও ২টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড মিলে মোট ওয়ার্ড ছিল ৪৩টি। এবার আরো ৫টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড বৃদ্ধি করে মোট ওয়ার্ড হয়েছে ৪৮টি। ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর নগরের ১৫ থানা ও ৪৩ ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দেয় নগর বিএনপি। এরপর গত ৩ জুন দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে এসব ওয়ার্ডের তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

ওই কমিটিতে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ছাড়াও একজন করে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। এরপর নগরীতে আরো ৫টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড বৃদ্ধি করে ওয়ার্ড বাড়ানো হয় ৪৮টি। এর মধ্যে গত ২৪ জুন ৩১টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলেও অবশিষ্ট ১৭ ওয়ার্ডের এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত ৩১ ওয়ার্ডকে তখন ৪৫ দিনের মধ্যে সম্মেলন করে ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ৭৮ দিনেও একটি ওয়ার্ডেরও সম্মেলন করতে পারেনি ওয়ার্ড কমিটি। একইসাথে গত ১১ মাসেও নগরের ১৫ থানার কমিটি ঘোষণা দিতে পারেনি দলটি। একারণে হতাশায় ভুগছেন দলের নেতাকর্মীরা।

বিএনপি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা কমিটি। এ তিন সাংগঠনিক জেলায় সবমিলে উপজেলা ও থানা কমিটি রয়েছে সমান সংখ্যক ১৫টি করে ৩০টি, সাংগঠনিক ইউনিট ১টি এবং পৌরসভা ১৫টি। এর মধ্যে উত্তর জেলার ৭ উপজেলা ও ৯ পৌরসভা বিএনপির কমিটি থাকলেও নগরের ১৫ থানা এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার ৮ উপজেলা, ১ সাংগঠনিক ইউনিট এবং ৬ পৌরসভার কোন কমিটি নেই। এমন কি গত আড়াই মাস ধরে নেই উত্তর জেলা বিএনপির কমিটিও। গত ২৯ জুলাই রাউজানে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর কেন্দ্র থেকে এ কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় যেখানে কমিটি নেই সেখানে স্থবির হয়ে পড়েছে দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।

এদিকে চলতি বছরের ২২ মে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভায় জেলার আওতাধীন মেয়াদোত্তীর্ণ সকল উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। দলের সাংগঠনিক গতিশীলতা ও পুনর্গঠনের লক্ষ্যে জেলা কমিটি এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

কিন্তু গত সাড়ে ৪ মাসেও কমিটি ছাড়াই চলছে দক্ষিণ জেলার আওতাধীন ৮ উপজেলা, ৬ পৌরসভা ও ১ সাংগঠনিক ইউনিট। তবে উপজেলা, পৌরসভা ও সাংগঠনিক ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কমিটি। যে কোন সময় কমিটি ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বর্তমানে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত এসব কমিটি ঘোষণা দেওয়া হবে।

বিএনপির কয়েকজন ত্যাগী নেতা জানান, যেখানে অন্য দল ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে চষে বেড়াচ্ছে, সেখানে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা দূরে কথা- উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিও করতে পারেনি বিএনপি। বর্তমানে কমিটি না থাকায় মাঠে বিএনপির মধ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বিগত সরকারের ১৫ বছরে ঠিকমতো সম্মেলন করতে পারেনি দলটি। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পর মুক্ত পরিবেশের ১৪ মাসে সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি চট্টগ্রামে একটিও জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও মহানগর কমিটি করতে পারেনি। মূলত অভ্যন্তরীণ কোন্দল, শৃঙ্খলার অভাব, নেতৃত্বের মধ্যে আস্থার সংকট এবং যোগ্য ও ত্যাগীদের কাঙ্খিত পদ না দেওয়ার কারণে দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চলে আসছে।

তাছাড়া বর্তমান দলে প্রভাব বেড়েছে কিছু সুবিধাবাদী নেতাকর্মীর। তাদের প্রতাপে অনেকটা কোণঠাসা অতীতে দলের দূসময়ে হাল ধরা, আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় থাকা এবং মামলার শিকার হওয়া অনেক নেতাকর্মী। এ অবস্থায় সম্মেলন করে কমিটি গঠন না করার কারণে সুবিধাবাদীরা নানা উপায়ে পদ ভাগিয়ে নিচ্ছেন।

এছাড়াও ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ নিয়ে দলের মধ্যে জবাবদিহিতার চর্চা কম থাকায় এসব কমিটি কৌশলে বছরের পর বছর সময় পার করে দিচ্ছে। এ কারণে তিন মাস কিংবা ৬ মাস মেয়াদের আহ্বায়ক কমিটি সময় পার করে দিচ্ছে দুই থেকে তিন বছর। এতে দলের মধ্যে উঠে আসছে না নতুন নেতৃত্ব।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে প্রার্থী হতে নারাজ চিত্রনায়ক মেগাস্টার উজ্জ্বল ।

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কোনো কারণ দেখেন না বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক মেগাস্টার খ্যাত চিত্রনায়ক ‘আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল’। একান্ত আলাপনে মেগাস্টারের কাছে আসন্ন নির্বাচনে কেন প্রার্থী হলেন না ও মনোনয়ন পেলে কী করতেন’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলীয় মতামতের ভিত্তিতে দল পরিচালনা করেন।

তা ছাড়া দীর্ঘ পথচলায় বিএনপির রাজনীতির ভেতর ও বাহির তাঁর নখদর্পণে। নমিনেশনই নির্বাচনের সবকিছু নয়। এত বড়ো দলকে বিজয়ের মঞ্চে সংবর্ধনা দিতে হলে কিছু রাজনীতিককে ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। কারণ ঘাম ও ত্যাগের উপরই সাফল্যের পতাকা উড়ে। মনে রাখতে হবে জনাব তারেক রহমানের একটি পরিকল্পনা আছে। সতেরো বছরের ক্রান্তিকালে অনেক ত্যাগী নেতা আছেন। একথাও আমাদের মনে রাখতে হবে।’ সাফল্যের জন্য দলীয় প্রার্থীদের বাইরে একটি গুরুত্বপূর্ণ মেধাবী টিম দরকার। যারা দলীয় প্রচারণায় কাজ করবেন।

‘আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল,’ তৎকালীন বৃহত্তর পাবনা জেলা শহরে ও সিরাজগঞ্জের দুই জায়গাতেই পৈতৃক ভিটা থাকলেও তাঁর শৈশব কেটেছে সান্তাহারে। কারণ তাঁর আব্বা ডা: মো. ইয়াছিন উদ্দিন রেলওয়ের ডাক্তার হিসেবে শান্তাহারে কর্মরত ছিলেন। মা সাবেরা বেগম একজন গৃহিণী। নায়ক উজ্জ্বল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে আইআর-এ মাস্টার্সডিগ্রী লাভ করেন।
স্কুলে পড়াকালীন সময়ে কবিতা আবৃত্তি দিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলেও একই সময়ে স্কুলের মঞ্চনাটকে অভিনয়ের সুযোগ পান। সেই থেকে শুরু।

বাবার বদলির চাকরি হওয়াতে তাঁকে বেশ কয়েকটি জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে হয়েছে। হার্ভে গার্লস স্কুল শান্তাহার, বগুড়া, লালমনিরহাট হাইস্কুল, লালমনিরহাট, কারমাইকেল কলেজে, রংপুর ও সৈয়দপুর কলেজ, সৈয়দপুর, খুলনা জেলা স্কুল, খুলনা। মঞ্চগুলোতে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে অভিনয় করেন। অভিনয় নেশা হয়ে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তিনি এসএম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। সেই সুবাদে হলের বাৎসরিক নাটক ও টিএসসির মঞ্চে প্রধান চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় চর্চা চালাতে থাকেন। সেই সময়ে টিএসসি’র মঞ্চে অধ্যাপক আসকার ইবনে শাইখের লেখা ‘লালন ফকির’ নাটকের লালন চরিত্রে অভিনয় করলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনুরোধে নাটকটি পরপর তিনদিন মঞ্চস্থ হয়।

চারিদিকে সুনাম ছড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে অভিনেতা ও সঙ্গীত শিল্পী নাজমুল হুদা বাচ্চু তাঁকে রেডিও ও টেলিভিশনে অডিশনের মাধ্যমে নাট্যশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে সহযোগিতা করেন। মঞ্চ, রেডিয়ো ও টেলিভিশনে দুর্দান্ত অভিনয়ের কারণে নাট্যাঙ্গনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। এরই ফাঁকে তিনি ফ্লাই ক্লাবের সদস্য হন। বিমানেও কিছুদিন সংযুক্ত ছিলেন।
নাটকের জনপ্রিয়তার ঢেউ গিয়ে পৌঁছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। ১ জানুয়ারি ১৯৭০ খ্যাতিমান পরিচালক সুভাষ দত্ত উজ্জ্বলকে নায়ক ও কবরীকে নায়িকা হিসেবে কাস্ট করে ‘ বিনিময় ‘ ছবির মহরত করেন। একই বছর সিনেমাটি প্রদর্শিত হলে চলচ্চিত্রাঙ্গনে সাড়া পড়ে যায়।

ব্যাবসায়িক ভাবে অত্যন্ত সফল হয়। সিনেমা প্রেমিক দর্শকের কাছে রোমান্টিক হিরো হিসেবে সমাদৃত হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের পর একে একে মুক্তি পায় অরুণোদয়ের অগ্নি সাক্ষী, কাচের স্বর্গ, লালন ফকির, সমাধান, ইয়ে করে বিয়ে, শনিবারের চিঠি, গরমিল, সমাধি, অনুভব, রুপালি সৈকতে, অগ্নিশিখা, অচেনা অতিথি, দাবি, বন্ধু, ফকির মজনু শাহ, মহেশখালীর বাঁকে, অনুরাগ, জনতা এক্সপ্রেস, কুদরত, লাল কাজল ইত্যাদি। সিনেমার মাস্টার মেকার চলচ্চিত্র পরিচালক মমতাজ আলি, নায়ক উজ্জ্বলের রোমান্টিক নায়কের পর্দা-ইমেজ ভেঙে প্রতিবাদী নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তৎসময়ের দর্শকের কাছে তার জনপ্রিয়তা এতই তুঙ্গে ওঠে যে তিনি ভক্তদের কাছে মেগাস্টার উজ্জ্বলে রূপান্তরিত হন।

একে একে মুক্তি পায় নালিশ, নসিব, উসিলা, আমি উস্তাদ, নিয়ত, বিশাল, বীরাঙ্গনা সখিনা, দোস্তি, নিয়তির খেলা ও জান আমার জান। তিনি সবমিলিয়ে প্রায় শতাধিক সিনেমায় নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে বেশ কয়েকটি সিনেমা পরিচালনা ও প্রযোজনা করেন।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি গঠনের পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন চিত্রনায়ক উজ্জ্বল। তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সদস্য। তিনি সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নির্বাচিত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বও পালন করেছেন। চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনার জন্য এখনো সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। চব্বিশের আন্দোলনে চলচ্চিত্রাঙ্গনের ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

ঐক্যমতের বাইরে কথা বললে বিভেদ বাড়বে: আমীর খসরু


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন- দীর্ঘ আলোচনার পর যে ঐক্যমতে পৌঁছানো হয়েছে, সেটি আমাদের মেনে নিতে হবে। ঐক্যমতের বাইরে গিয়ে কথা বললে রাজনীতি ও সমাজে বিভেদ বাড়বে, যা গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়।


শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নবনির্মিত ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


আমীর খসরু বলেন, আজ একটি ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে। এটি গণতন্ত্রকে যেমন এগিয়ে নেয়, তেমনি সমাজকেও সামনে নিয়ে যায়। আমরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলা থেকে অনেক দূরে সরে গেছি, বিশেষ করে গত ১৫ বছরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। সংলাপের মাধ্যমে সেই ভাঙন কাটিয়ে উঠতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সংলাপ করবো, ঐক্যমতে পৌঁছব, যতটুকু সম্ভব। যেটুকু ঐক্যমতে পৌঁছানো যাবে না, সেটি সহনশীলতার সঙ্গে মেনে নিতে হবে। নতুন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, কোনো সরকার একা নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারে না। এজন্য সবার অংশগ্রহণ ও দায়বদ্ধতা জরুরি। প্রত্যেকে নিজের অবস্থান থেকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেই দেশ এগিয়ে যাবে।


বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ছিলেন এমন একজন দূরদর্শী মানুষ, যিনি দৈনিক আজাদীর মাধ্যমে বিশ্বাস করতেন, একদিন এই দেশ স্বাধীন হবে। আজ আমরা সেই স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে পেরে গর্বিত।


তিনি আরও বলেন, মানবিক মর্যাদা, আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনা এই আদর্শের ভিত্তিতেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। এখন গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সেই আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আমাদের দেশে একটি অদ্ভুত বিভাজন আছে, ঢাকা থেকে পত্রিকা বের হলে সেটি ‘জাতীয় পত্রিকা’, আর ঢাকার বাইরে থেকে প্রকাশিত হলে ‘মফস্বল পত্রিকা’। আমার কাছে এটি একটি বৈষম্যমূলক ধারণা।

তিনি আরও বলেন, অনেকে বলেন, আজাদী যদি ঢাকায় গিয়ে প্রকাশ হয়, তাহলে জাতীয় পত্রিকা হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। কিন্তু আমার বাবা দৈনিক আজাদী বের করেছিলেন চট্টগ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং সমস্যার কথা সরকারের সামনে তুলে ধরার জন্য, ঢাকায় বসে জাতীয় স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য নয়। কারণ আমরা চট্টগ্রামের মানুষকে ভালোবাসি। এই
ভালোবাসার বন্ধন থেকেই আমরা চট্টগ্রামবাসীর পাশে থাকতে চাই।


দৈনিক আজাদীর অর্থায়নে ও পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে মিলনায়তনটি সংস্কার ও ডিজাইন করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি। সঞ্চালনা করেন অন্তর্র্বতী কমিটির সদস্য গোলাম মওলা মুরাদ। অনুষ্ঠানে আরও বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদী পত্রিকার পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (সিজেএ) বাংলাদেশ চাপ্টারের চেয়ারম্যান ওসমান গণি মনসুর।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত, দৈনিক আজাদীর নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক, প্রেসক্লাব অন্তর্র্বতী কমিটির সদস্য মুস্তফা নঈম, বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার, এ্যাবের সভাপতি জানে আলম সেলিম, বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি মিয়া মোহাম্মদ আরিফ।


অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মোহাম্মদ হোসাইন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, রাজনীতিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ