আজঃ সোমবার ১০ নভেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করবে না : সমন্বয় সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বন্দর ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়াবে কেন? অন্তর্র্বতী সরকারের এত জবাবদিহি নেই যে, বন্দরের ট্যারিফ বাড়াতে উঠে পড়ে লাগতে হবে! তাদের শনাক্ত করতে হবে। রোববার দুপুরে রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে চিটাগং চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী এ কথা বলেন। সভায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ শিডিউল স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ না করা পর্যন্ত স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা ২০০৩ সালে বাফার সঙ্গে গার্মেন্টসের সমস্যা হয়েছিল। আমি চেম্বারের সভাপতি ছিলাম। বিজিএমইল, বিকেএমইএসহ একসঙ্গে প্রতিরোধ করতে পেরেছিলাম। এবার বন্দরের নতুন ট্যারিফ সাধারণ মানুষকে দিতে হবে। দেশে ভালো ব্যবসায়ী আছে বলেই প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বন্দর নিয়ে যে খেলা শুরু হয়েছে তা খেলতে দেওয়া হবে না। বন্দরে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে একজন প্রতিনিধিকে পরিচালক বানাতে হবে। তিনি বলেন, বন্দর ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়াবে কেন? অন্তবর্তী সরকারের এত জবাবদিহি নেই যে, বন্দরের ট্যারিফ বাড়াতে উঠে পড়ে লাগতে হবে! তাদের শনাক্ত করতে হবে।
সভায় চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, বন্দরের মাশুল ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করবে না। এটা জনগণকে পেমেন্ট করতে হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক আছে, বন্দরে নেই কেন? আমরা কারও গোলাম না। আমার টাকায় আপনারা চালান। ট্যারিফ বাড়ানো ষড়যন্ত্র। মোংলা, পায়রায় বাড়াননি। আমি ৪০ বছর ব্যবসা করছি। কচি খোকা নই। বন্দর বাঁচাতে হবে। বন্দরকে কস্ট বেইজড ট্যারিফ করতে হবে। আমরা কি গোলাম? কলুর বলদ? অন্তবর্তীকালীন কেন ট্যারিফ বাড়াবে? আর কোনো টাকা বন্দরের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। এনসিটির পর একটি পতেঙ্গা টার্মিনাল হয়েছিল, সেটি দিয়ে দিয়েছেন!
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, আরএমজি ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি দুটোই করে। ভিয়েতনাম, ভারত ও মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বেশি। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় বন্দরকে লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে? মেট্টোপলিটন চেম্বারের সহ সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা ট্যারিফ বাড়ানোর বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দর জনগণের টাকায় তৈরি সেবার জন্য। ২০২৩ সালের বন্দর আইনে উপদেষ্টা পরিষদ বাতিল করেছে। স্বাধীনতার সময় বন্দরে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার বন্দর আছে। আড়াই হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বাড়াতে হলে জাতীয় সংসদ বাড়াবে। এ দেশের গার্মেন্টস থেকে বায়ার পোশাক কিনবে না। ভিয়েতনাম, ভারতে চলে যাবে বায়ার। বন্দর আমাদের কাছে নেই। আমাদের চুষে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করছে। আমদানি খরচ বাড়লে রপ্তানি খরচ বাড়বে। সব শিপিং এজেন্টদের সমভাবে নির্ধারণের দায়িত্ব চিটাগাং চেম্বারের।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, দেশে প্রধান বন্দর নদীনির্ভর। বন্দরের মাশুল বাড়ানো নিয়ে আমাদের ক্ষোভ আছে। আমরা বলেছি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়াতে। ১৯৮৬ সালে ডলার ছিল ৩০ টাকা। এখন ডলারের দাম চারগুণ বেড়েছে। শিপিং এজেন্ট ফ্রেইট বাড়িয়েছে। ৪১ শতাংশের মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ২০ ফুটের কনটেইনারে ১২-১৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে। আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ চাই, আমরা স্বনির্ভর দেশ গড়ে দেব।
বিজিপিএমইএ’র সহসভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বন্দরে পর্যাপ্ত জায়গা না অফডকে নিতে চাপ দিচ্ছে। অফডক আপটুডেট হয়নি। নানা অজুহাতে দু-তিনগুণ খরচ নিতে হচ্ছে। তাই নীতিমালা করতে হবে।
বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করে আসছিল। আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিপিং এজেন্ট ফি বাড়াবে। ভিয়েতনামের তিনগুণ খরচ হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। আজকের দিনে ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলার কোনো সংগঠন নেই। ব্যবসায়ী সমাজ বিচ্ছিন্ন, হতাশাগ্রস্ত। সরকারি আমলারা এখন চট্টগ্রাম চেম্বার চালাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতি, রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বেপজিয়ার সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভির বলেন, আমরা সাফার করছি বিভিন্ন কারণে। অনেক সিদ্ধান্ত আসছে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য আরএমজি। বায়াররা খরচ কমাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। কস্ট মিনিমাইজ করছে। বাংলাদেশ আরও কস্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা হতাশার। বন্দরের নতুন ট্যারিফ রপ্তানি প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে যাব। আমরা এখনো আমদানিনির্ভর দেশ। আমদানি করে রূপান্তরের মাধ্যমে রপ্তানি করি আমরা। ভুলে গেলে চলবে না বন্দর অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ১০-১৫ বছর ধরে বে টার্মিনালের কথা শুনে আসছি। আমি আশা করবো সরকার বন্দরের মাশুল বাড়ানোর বিষয়টি স্থগিত করবে।
স্বাগত বক্তব্যে এশিয়ান গ্রুপের প্রধান এমএ সালাম বলেন, সংকট নিয়ে আজকের সভা। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। এটা প্রশংসার দাবি রাখে। বন্দর ব্যবসা করে না, সেবা দেয়। বন্দরের মাশুল এক মাসের জন্য পিছিয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে নেই। আমরা চাই না বন্দর লস করুক। আমরা এটাও চাই না বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।
বারভিডার হাবিবুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ ড. ইউনূস। তাঁর কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। লাভে থাকার পরও কেন চট্টগ্রাম বন্দর ট্যারিফ বাড়াচ্ছে। চিটাগং চেম্বারে নির্বাাচিত নেতৃত্ব নেই বলে ব্যবসায়ীদের নানা সংকট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। তারা ব্যাংকঋণ পাচ্ছে না। ট্যারিফ দিচ্ছি ডলারে। ৮০ টাকার ডলার এখন ১২২ টাকা। এখানেই তো ট্যারিফ বেড়ে গেছে। কাউকে লাভ করানোর জন্য অর্থনীতি ধ্বংস করা যাবে না। প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি বিবেচনা করবেন আশাকরি।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম বলেন, আমরা বসে নেই। কাজ করছি। বিজিএমই, চেম্বারে যখন নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিল না তখন আমরা কাজ করেছি আপনাদের পক্ষে। ডুয়েল ডেলিভারির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি চট্টগ্রাম চেম্বারে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আসবেন। চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী, ব্যবসায়ীদের সমস্যা নেই। সাড়ে পাঁচশ টন ডাল এনে বাজারে বিক্রি করতে পারেনি। ডিপোতে অনৈতিক চার্জ বাড়ানো হচ্ছে। বন্দর, বার্থ, শিপিং, ডিপোতে যেন চার্জ বাড়ানো না হয়। সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে না।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, বাংলাদেশ আমদানি রপ্তানিকারকের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করি আমরা। কাজেই ব্যথা আপনাদের চেয়ে আমাদের বেশি। পোশাকশিল্পে অর্থনৈতিক চাপ আসলে লাখ লাখ নারী বেকার হবেন। আপনি বিদেশে কর কমাতে তদবির করছেন, দেশের বন্দরে কেন ট্যারিফ বাড়াবেন? আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি লাভ করেছে বন্দর। এইচএস কোডের অনেক ঝামেলা আমরা সমাধান করিয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান অনেক কালো আইন বাতিল করেছেন। চট্টগ্রাম লাইফ লাইন। চট্টগ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে। আড়াইশ বিলিয়ন রিজার্ভ থাকত যদি লুটপাট না হতো।

সঞ্চালক এসএম আবু তৈয়ব বলেন, যুদ্ধসহ নানা টানাপোড়েনে অর্থনীতিতে ধকল যাচ্ছে। দেশে সেবাখাত ট্যারিফ বাড়িয়ে ব্যবসা দুর্বিসহ করছে। প্রতিবাদ হিসেবে আশাদের এ আয়োজন। নতুন ট্যারিফ কার্যকরের পর এ অঞ্চলের সবচেয়ে কস্টলি বন্দর হবে চট্টগ্রাম। বন্দরে আমদানি বন্ধ হলে রপ্তানিও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বন্দর কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দিতে হবে। ট্যারিফ বাড়িয়ে বন্দরকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

বোয়ালখালীতে আমনের বাম্পার ফলন

চট্টগ্রামে বোয়ালখালী উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে সবুজে বিস্তৃত হয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। যা দেখলে যেমন মন জুড়ে যায় তেমনটায় আশা করছেন বাম্পার ফলনের জন্য প্রান্তিক চাষীরা। বাংলাদেশে কৃষি প্রধান দেশ, ধান আমাদের প্রধান খাদ্য । এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তিস্বরূপ। দেশের শ্রমশক্তির মোট ৪০.৬০ শতাংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত। তাছাড়া রপ্তানি আয়েও কৃষি খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তাই এদেশের অর্থনীতি অনেকাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বোয়ালখালীতে আমন মৌসুমের ধান উৎপাদনে বন্যা, মধ্যম খরা প্রবণ, আকস্মিক বন্যা প্রবণ, তীব্র ঠান্ডা এসব দিক লক্ষ্য করে তিনটি পর্যায়ে ধান চাষ হয়, যেমন মাঝারি উঁচু, মাঝারি নিচু ও নিচু মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালি ধান আমন। ক্ষেতজুড়ে এখন দুলছে সোনালি ধানের শীষ। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক।
ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’ কথাটির স্বার্থকতা দেখা গেছে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে। উপজেলার সারোয়াতলী, আমুচিয়া, করলডেঙ্গা ও জৈষ্টপুরা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিগন্ত জুড়ে আমন ধানের মনকাড়া সোনালী রঙের অপরূপ সৌন্দর্য্য নজর কাড়ছে যে কারোই। বাতাসে ছড়াচ্ছে আমনের মৌ মৌ গন্ধ। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা খুশি।

এবার বোয়ালখালীতে আগাম জাতের ব্রি ধান ৪৭-৪৯, ৯৩, ৯৬, সাদা পাই জাম ও কাটারী ধানের চাষ করেছেন কৃষকেরা। আগাম জাতের ধান বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে , প্রতি ৪০ শতকে এবার আমন ধান চাষে খরচ পড়েছে প্রায় ১৪- ১৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়ায় খরচ পুষিয়ে লাভের আশা করছেন তারা।

কৃষকরা ক্ষেতের ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছেন। অনেক কৃষক আবার বেশি ধান পাওয়ার আশায় জমিতে সার প্রয়োগ করছেন। কেউ আবার ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন। তবে কখন নতুন ধান ঘরে তুলবেন এ স্বপ্নে বিভোর কৃষকরা। ফসল ঘরে তোলার আশায় প্রতিটি কৃষক পরিবারের চোখে মুখে সোনালি স্বপ্নের ছাপ। ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকরা বেশ খুশি। কদিন পরেই মনের আনন্দে সোনালি ধান ঘরে তুলবেন কৃষক-কৃষাণীরা ।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, বোয়ালখালীতে এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে আমন ধান আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌরসভাসহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে প্রান্তিক কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ সারসহ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ফলন দেখে কৃষকদের মনে বিরাজ করছে যেন উৎসব।

উপজেলার সারোয়াতলী ইমামুল্লার চর গ্রামের রাখাল দাশ এবার ৪ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বোরো ধানের ভালো দাম পেয়েছি। আর সে কারণেই আমন ধান চাষ করছি। আশা করি বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়া যাবে। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে আমনের বাম্পার ফলন আশা করছেন তিনি।

আহল্লা প্রকাশ ধলঘাটে কৃষক জামাল ২০ একর আমন চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ব্রি-ধান ৯৩, ৯৬, ৪৯ ও আগাম জাতের ১০৩ চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাটা শুরু হবে। পোপাদিয়ার কৃষক মোহাম্মদ রফিক বলেন আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বছরে ধান তুলতে পাবর।

বোয়ালখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, চলতি মৌসুমে ধান চাষের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ধানের রোগবালাইও কম। এখন পর্যন্ত ফসলের মাঠ ভালো রয়েছে। উপজেলার কোন কোন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে আগাম জাতের ধান কাটা হচ্ছে। আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যে কৃষকরা পুরোদমে ধান কাটতে পারবেন। কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে এবার উপজেলার কৃষকরা ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করছি। এছাড়া আগাম জাতের আমন ধান কাটার পর ওইসব জমিতে অনেকে শীতকালীন শাকসবজি ও ডাল জাতীয় ফসল আবাদে জমিও প্রস্তুত করছেন বলে জানান তিনি।

বাচা চেয়ারম্যান নিখোঁজের ১৫ বছর সন্ধান মিলেনি আজও।

বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাচা নিখোঁজ হয় ৮ ই নভেম্বর ২০১০ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহীনীর পরিচয়ে গুম করা হয় গাজীপুর চৌরাস্তার মোড় থেকে এই বলে অভিযোগ পরিবার এর, আজ ১৫ বছরেও মিলেনি বাচার খোজ। সেই বাচার গুম হওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের ন্যায় আজ ৮ ই নভেম্বর শনিবার বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপি, পৌরসভা বিএনপির ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ৮ নভেম্বর উপজেলার একটা কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিবাদ সমাবেশ ও দোয়া মাহফিলে অনুষ্ঠিত হয়।

এতে ।প্রধান অতিথি আবু সুফিয়ান,সাবেক আহ্বায়ক চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা। প্রধান বক্তা হাজী ইসহাক চৌধুরী, সাবেক আহ্বায়ক বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপি, বিশেষ অতিথি হামিদুল হক মান্নান চেয়ারম্যান, গিয়াস উদ্দিন সাবেক সাধারণ সম্পাদক চান্দগাঁও থানা বিএনপি, আনোয়ার হোসেন লিপু সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক দক্ষিণ জেলা বিএনপি, বাহাউদ্দীন ফারুক মুন্না বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জাসাস,শাহ আলম যুগ্ম আহ্বায়ক উপজেলা বিএনপি,

হাজী সেলিম চৌধুরী সাবেক আহ্বায়ক পোপাদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির, সোলাইমান মেম্বার সাবেক সভাপতি আহল্লা করলডেঙ্গার ইউনিয়ন বিএনপির, আবু ছিদ্দিক সাবেক সভাপতি আমুচিয়া ইউনিয়ন বিএনপির, আবুল বশর চৌধুরী সাবেক সাধারণ সম্পাদক করলডেঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির, ইউচুপ সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমুচিয়া ইউনিয়ন বিএনপির, সাজ্জাদ হোসেন সাদ্দাম সদস্য সচিব বোয়ালখালী উপজেলা কৃষক দল। বক্তারা বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবি জানান অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে গুম হওয়া বাঁচা চেয়ারম্যানের সন্ধান দিতে।প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্বে করেন বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন আহবায়ক ইঞ্জিনয়ার ইকবাল হোসেন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ