আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করবে না : সমন্বয় সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বন্দর ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়াবে কেন? অন্তর্র্বতী সরকারের এত জবাবদিহি নেই যে, বন্দরের ট্যারিফ বাড়াতে উঠে পড়ে লাগতে হবে! তাদের শনাক্ত করতে হবে। রোববার দুপুরে রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে চিটাগং চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী এ কথা বলেন। সভায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ শিডিউল স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ না করা পর্যন্ত স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা ২০০৩ সালে বাফার সঙ্গে গার্মেন্টসের সমস্যা হয়েছিল। আমি চেম্বারের সভাপতি ছিলাম। বিজিএমইল, বিকেএমইএসহ একসঙ্গে প্রতিরোধ করতে পেরেছিলাম। এবার বন্দরের নতুন ট্যারিফ সাধারণ মানুষকে দিতে হবে। দেশে ভালো ব্যবসায়ী আছে বলেই প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বন্দর নিয়ে যে খেলা শুরু হয়েছে তা খেলতে দেওয়া হবে না। বন্দরে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে একজন প্রতিনিধিকে পরিচালক বানাতে হবে। তিনি বলেন, বন্দর ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়াবে কেন? অন্তবর্তী সরকারের এত জবাবদিহি নেই যে, বন্দরের ট্যারিফ বাড়াতে উঠে পড়ে লাগতে হবে! তাদের শনাক্ত করতে হবে।
সভায় চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, বন্দরের মাশুল ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করবে না। এটা জনগণকে পেমেন্ট করতে হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক আছে, বন্দরে নেই কেন? আমরা কারও গোলাম না। আমার টাকায় আপনারা চালান। ট্যারিফ বাড়ানো ষড়যন্ত্র। মোংলা, পায়রায় বাড়াননি। আমি ৪০ বছর ব্যবসা করছি। কচি খোকা নই। বন্দর বাঁচাতে হবে। বন্দরকে কস্ট বেইজড ট্যারিফ করতে হবে। আমরা কি গোলাম? কলুর বলদ? অন্তবর্তীকালীন কেন ট্যারিফ বাড়াবে? আর কোনো টাকা বন্দরের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। এনসিটির পর একটি পতেঙ্গা টার্মিনাল হয়েছিল, সেটি দিয়ে দিয়েছেন!
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, আরএমজি ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি দুটোই করে। ভিয়েতনাম, ভারত ও মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বেশি। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় বন্দরকে লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে? মেট্টোপলিটন চেম্বারের সহ সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা ট্যারিফ বাড়ানোর বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দর জনগণের টাকায় তৈরি সেবার জন্য। ২০২৩ সালের বন্দর আইনে উপদেষ্টা পরিষদ বাতিল করেছে। স্বাধীনতার সময় বন্দরে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার বন্দর আছে। আড়াই হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বাড়াতে হলে জাতীয় সংসদ বাড়াবে। এ দেশের গার্মেন্টস থেকে বায়ার পোশাক কিনবে না। ভিয়েতনাম, ভারতে চলে যাবে বায়ার। বন্দর আমাদের কাছে নেই। আমাদের চুষে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করছে। আমদানি খরচ বাড়লে রপ্তানি খরচ বাড়বে। সব শিপিং এজেন্টদের সমভাবে নির্ধারণের দায়িত্ব চিটাগাং চেম্বারের।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, দেশে প্রধান বন্দর নদীনির্ভর। বন্দরের মাশুল বাড়ানো নিয়ে আমাদের ক্ষোভ আছে। আমরা বলেছি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়াতে। ১৯৮৬ সালে ডলার ছিল ৩০ টাকা। এখন ডলারের দাম চারগুণ বেড়েছে। শিপিং এজেন্ট ফ্রেইট বাড়িয়েছে। ৪১ শতাংশের মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ২০ ফুটের কনটেইনারে ১২-১৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে। আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ চাই, আমরা স্বনির্ভর দেশ গড়ে দেব।
বিজিপিএমইএ’র সহসভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বন্দরে পর্যাপ্ত জায়গা না অফডকে নিতে চাপ দিচ্ছে। অফডক আপটুডেট হয়নি। নানা অজুহাতে দু-তিনগুণ খরচ নিতে হচ্ছে। তাই নীতিমালা করতে হবে।
বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করে আসছিল। আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিপিং এজেন্ট ফি বাড়াবে। ভিয়েতনামের তিনগুণ খরচ হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। আজকের দিনে ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলার কোনো সংগঠন নেই। ব্যবসায়ী সমাজ বিচ্ছিন্ন, হতাশাগ্রস্ত। সরকারি আমলারা এখন চট্টগ্রাম চেম্বার চালাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতি, রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বেপজিয়ার সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভির বলেন, আমরা সাফার করছি বিভিন্ন কারণে। অনেক সিদ্ধান্ত আসছে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য আরএমজি। বায়াররা খরচ কমাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। কস্ট মিনিমাইজ করছে। বাংলাদেশ আরও কস্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা হতাশার। বন্দরের নতুন ট্যারিফ রপ্তানি প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে যাব। আমরা এখনো আমদানিনির্ভর দেশ। আমদানি করে রূপান্তরের মাধ্যমে রপ্তানি করি আমরা। ভুলে গেলে চলবে না বন্দর অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ১০-১৫ বছর ধরে বে টার্মিনালের কথা শুনে আসছি। আমি আশা করবো সরকার বন্দরের মাশুল বাড়ানোর বিষয়টি স্থগিত করবে।
স্বাগত বক্তব্যে এশিয়ান গ্রুপের প্রধান এমএ সালাম বলেন, সংকট নিয়ে আজকের সভা। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। এটা প্রশংসার দাবি রাখে। বন্দর ব্যবসা করে না, সেবা দেয়। বন্দরের মাশুল এক মাসের জন্য পিছিয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে নেই। আমরা চাই না বন্দর লস করুক। আমরা এটাও চাই না বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।
বারভিডার হাবিবুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ ড. ইউনূস। তাঁর কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। লাভে থাকার পরও কেন চট্টগ্রাম বন্দর ট্যারিফ বাড়াচ্ছে। চিটাগং চেম্বারে নির্বাাচিত নেতৃত্ব নেই বলে ব্যবসায়ীদের নানা সংকট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। তারা ব্যাংকঋণ পাচ্ছে না। ট্যারিফ দিচ্ছি ডলারে। ৮০ টাকার ডলার এখন ১২২ টাকা। এখানেই তো ট্যারিফ বেড়ে গেছে। কাউকে লাভ করানোর জন্য অর্থনীতি ধ্বংস করা যাবে না। প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি বিবেচনা করবেন আশাকরি।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম বলেন, আমরা বসে নেই। কাজ করছি। বিজিএমই, চেম্বারে যখন নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিল না তখন আমরা কাজ করেছি আপনাদের পক্ষে। ডুয়েল ডেলিভারির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি চট্টগ্রাম চেম্বারে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আসবেন। চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী, ব্যবসায়ীদের সমস্যা নেই। সাড়ে পাঁচশ টন ডাল এনে বাজারে বিক্রি করতে পারেনি। ডিপোতে অনৈতিক চার্জ বাড়ানো হচ্ছে। বন্দর, বার্থ, শিপিং, ডিপোতে যেন চার্জ বাড়ানো না হয়। সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে না।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, বাংলাদেশ আমদানি রপ্তানিকারকের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করি আমরা। কাজেই ব্যথা আপনাদের চেয়ে আমাদের বেশি। পোশাকশিল্পে অর্থনৈতিক চাপ আসলে লাখ লাখ নারী বেকার হবেন। আপনি বিদেশে কর কমাতে তদবির করছেন, দেশের বন্দরে কেন ট্যারিফ বাড়াবেন? আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি লাভ করেছে বন্দর। এইচএস কোডের অনেক ঝামেলা আমরা সমাধান করিয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান অনেক কালো আইন বাতিল করেছেন। চট্টগ্রাম লাইফ লাইন। চট্টগ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে। আড়াইশ বিলিয়ন রিজার্ভ থাকত যদি লুটপাট না হতো।

সঞ্চালক এসএম আবু তৈয়ব বলেন, যুদ্ধসহ নানা টানাপোড়েনে অর্থনীতিতে ধকল যাচ্ছে। দেশে সেবাখাত ট্যারিফ বাড়িয়ে ব্যবসা দুর্বিসহ করছে। প্রতিবাদ হিসেবে আশাদের এ আয়োজন। নতুন ট্যারিফ কার্যকরের পর এ অঞ্চলের সবচেয়ে কস্টলি বন্দর হবে চট্টগ্রাম। বন্দরে আমদানি বন্ধ হলে রপ্তানিও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বন্দর কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দিতে হবে। ট্যারিফ বাড়িয়ে বন্দরকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।


চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গাঙ্গেয় বদ্বীপের সংগীত ব্যক্তিত্ব যোগী স্বপন কুমার দাশ’র রচিত আধ্যাত্মিক ও দেহতত্ত্ব বিষয়ক গান নিয়ে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাংবাদিক কিরন শর্মার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলক ও প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম এর পরিচালক মো.মাহফুজুল হক। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর প্রখ্যাত সাধক শ্রীমৎ স্বামী সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী’জীকে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ‘খুঁজি তাঁরে’ অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয়।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র ঘোষ (যুদ্ধকালিন কমান্ডার), আব্দুর রহিম (লোক ও মরমি শিল্পী), রূপম ভট্টাচার্য (সাংবাদিক), স ম জিয়াউর রহমান(সাংবাদিক), দিদারুল ইসলাম (সংগীত পরিচালক ও কন্ঠ শিল্পী), তন্দ্রা দাশগুপ্তা, সংগীত শিল্পী সঞ্জয় রক্ষিত সহ প্রমুখ। সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত

ছিলেন পাপিয়া আহমেদ (সংগীত প্রযোজক বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম), অপু বর্মন (সংগীত শিল্পী বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন এবং সংগীত শিক্ষক জেলা শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রাম), অপু সেনগুপ্ত (বিশিষ্ট গীতিকার বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন), দীপ্ত দত্ত সংগীত শিল্পী (বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন)।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন, খ্যাতনামা মরমি কন্ঠ শিল্পী শিমুল শীল, বাউল শিল্পী বাবুল শীল, অভিষেক দাশ, বাউল জুয়েল দ্বীপ, শিউলী চৌধুরী, আনন্দ প্রকৃতি(মো:তৌহিদুল ইসলাম), আধাত্মিক শিল্পী সুরনাথ, কাওয়ালী শিল্পী মেঘলা। ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি প্রতিযোগিতার সেরা কন্ঠ শিল্পী বাঁধন ঘোষ, ইন্দ্রিলা ঘরজা, মিম দাশ, অধরা চৌধুরী রাত্রি, আরাধ্যা মজুমদার, সৈয়দ রাসতিন, অরূপ কুমার শীল, ঊর্মি নাগ সংগীত পরিবেশন করেন।

যন্ত্র সংগীত শিল্পীতে ছিলেন- কীবোর্ডে রুবেল ঘোষ, অক্টোপ্যাডে পাপন, তবলায় উৎস, বাংলা ঢোলে হৃদয় বাঁশিতে নিলয়। সংগীত তত্বাবধানে যোগী স্বপন কুমার দাশ, অনুষ্ঠান তত্বাবধানে মো: মোহসীন(সাধারণ সম্পাদক, ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি সংসদ)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মো: সাইফুর রহমান ও ববিতা ইসলাম।

তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে : জামায়াত আমির।

ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরদিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অব্যাহত রেখেছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে।

শুক্রবার দুপুর ২টায় ৮ দলের উদ্যোগে আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি আরও বলেন, আমরা ৮ দলের বিজয় চাই না, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। সেই আকাঙ্খার বিজয় হবে কুরআনের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম থেকে ইসলামের বিজয়ের বাঁশি বাজানো হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে কুরআনের বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, গাড়ি দিয়ে পালানোর সাহস তারা হারিয়ে ফেলেছিল। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিকে এই অপকর্মে লাগানোর চেষ্টা করেছিল। দেশের সবকিছু তারা ধ্বংস করেছিল। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ফ্যাসিবাদকে নতুন করে রুখে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।

জামায়াতের আমির বলেন, তারা নিজেদের উন্নয়ন করেছিল। রাস্তাঘাট তৈরি করেছিল রডের বদলে বাঁশ দিয়ে। বাংলাদেশের টাকা লুট করে সিঙ্গাপুরে গিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। শাপলা চত্বরে অসংখ্য মাওলানাকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বলেছিল রঙ দিয়ে শুয়ে ছিল। তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে।
আন্দোলনরত ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে ঘোষণা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ঐক্য আমাদেরকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

৮ দলের প্রধানদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের ইসলামি শক্তিকে কেউ নিস্তব্ধ করতে পারবে না। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামপন্থীদের। এখানে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা কবে না।তিনি বলেন, আসুন আমরা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে চট্টগ্রামকে ইসলামের ঘাঁটি বানাই। চট্টগ্রামের মাটি ইসলামের ঘাঁটি। ৮ দলের এই শক্তি ক্ষমতায় গেলে আপনারই দেশ শাসন করবেন। কারও দাদার শক্তিতে এ দেশ আর চলবে না।

এটিএম আজহার বলেন, বাংলাদশ এমন পর্যায়ে দাঁড়াবে বিদেশিরা এখানে পড়ালেখা করতে আসবে। আসুন আমরা সবাই মিলে সেই দেশ গড়ি।খেলাফতে মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, আগামীতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বিজয়ের মাধ্যমে কোরআনের শাসন শুরু হবে। সোনার বাংলাদেশ দেখা শেষ, ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখা শেষ- এবার আল কোরআনের বাংলাদেশ দেখতে চাই, ইসলামের বাংলাদেশ দেখতে চাই।

তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশে আমাদের অধিকার চাই, মালিকানা কায়েম করতে চাই। গরিব মেহনতী মানুষকে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। ইসলাম যে বৈষম্যহীনের কথা বলা হয়েছে। পুঁজিবাদর অর্থ ব্যবস্থা করব দিয়ে কোরআনের অর্থ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।

মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশে কোরআনের অর্থ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নিজেদের অধিকার ও মালিকানা কায়েম করতে। পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার কবর তৈরি করে সেই ধ্বংস স্তূপের ওপর আল্লাহর কুরআনের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের বিগত দিনগুলো শুধু উন্নয়নের গল্প শুনানো হয়েছে। কিন্তু নিজেরাই হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছে।

সাধারণ কেটে খাওয়া মানুষের কোন পরিবর্তন হয়নি। এই তো উন্নয়ন। বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি হ্যাঁ ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে। এসময় তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
সমাবেশে ৮ দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমির আলহাজ¦ মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম

সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মুন্সি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আলাউল্লাহ আমিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব আল্লামা মুফতি মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আলী উসমান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, খেলাফত মজসিলের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসানুল্লাহ ভূঁইয়া, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আলহাজ¦ শাহজাহান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি রেজাউল আববার, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরী আমির মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চট্টগ্রাম মহানগরী সহ-সভাপতি এডভোকেট আব্দুল মোতালেব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু মুজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা এমদাদ উল্লাহ সোহাইল, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি অধ্যাপক খুরশিদ আলম এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা জিয়াউল হোসাইন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ