
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করেছে। সে যুদ্ধের কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা শিশু তারেক রহমান। বাবা তৎকালীন সেনা ব্যারেক থেকে দেশের প্রতি অঘাড় প্রেমে “বিদ্রোহ” ঘোষণার মাধ্যমের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে মেজর জিয়াউর রহমান যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিে যাদ্ধা মেজর জিয়ার স্বপরিবার কারাবন্দী ছিল। সে হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের শিশু বন্দী তারেক রহমানকে নিয়েই আমার অভিজ্ঞতায় ও দর্শনে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।

তারেক রহমান এর সাথে আমার প্রথম স্বাক্ষাত ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরবর্তীতে চট্টগ্রামে এনেসল ম্যানশন মাঠে। বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহ সভাপতি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, মেয়র ও রাষ্ট্রদূত মীর মোঃ নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ইফতার মাহফিলের আলোচনা সভায়। আমি সে সময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এর রাজনীতি শেষ করে হাটহাজারী থানা জাসাসের সভাপতির দায়িত্বে এবং হাটহাজারী থানা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সাংগঠনিক সচিব এর দায়িত্ব পালন করছিলাম। ইফতার মাহফিলে আজকের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আলোচনা সভায় ১৭ মিনিট অত্যন্ত বিনয়ী বক্তব্য রেখেছেন যা অনেকাংশে আবেগঘন ছিল। দোয়া ও মুনাজাত শেষে মাগরিবের আযান হল। আমি খুব নিকটেই ছিলাম। আগত প্রচুর নেতাকর্মীরা বসে-দাঁড়িয়ে আছেন। আমি লক্ষ্য করলাম তারেক রহমান ইফতার রত অবস্থায় নিজে ২টি খেজুর ও পানি পান করেই আগত নেতাকর্মীদের ইফতারের খবর নিতে নিজ আসন ছেড়ে সকলের মাঝে ঢুকে পড়ে।
উনার পাশে নেতৃবৃন্দ বিষয়টা প্রথমে কেউ খেয়ালই করলেন না। “ভোরের সূর্য উদয় হলে বুঝা যায় দিন কেমন যাবে” এ কথাটিই আসলেই যথার্থ। এটাই দেশপ্রেমিক ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি একজন আদর্শ নেতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। ১৯৯৬-২০০১ সালের বিএনপির রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো সাংগঠনিক কর্মকান্ড তিনি সুচিন্তিতভাবে রপ্ত করেছেন। তাই তো সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ২০০১ সালের বিএনপির ভূমিধস বিজয় কেউ ঠেকাতে পারে নি। মূলত: এ ভূমিধস বিজয়ই আজকের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র পর্যায়ক্রমে শুরু হতে থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে, আমাদের দলের মধ্যেও অন্য দলের ও দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র তৈরী করে ফেলেছেন। যার ফলে ১/১১ সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৭-২০০৮ সালের এ অবৈধ সরকারের রোষানলে শহীদ জিয়াউর রহমান এর পরিবারকে শেষ করার মিশন শুরু হয়েছিল।

যার জন্য আমাদের দলের চেয়ারপার্সন জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করা হয়। বাদ পড়েনি রাজনীতির সাথে সক্রিয় না থাকা আরাফাত রহমান কোকো পর্যন্তও। তৎকালীন ১/১১ সরকারের আমলে সবচেয়ে নির্যাতনের স্বীকার তারেক রহমান। যে নির্যাতন করা হয়েছে তা আজীবনের জন্য পঙ্গুঁ করে দিয়েছিলেন। “রাখে আল্লাহ মারে কে”- আমাদের রব বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণের জন্য শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত “ দেশের কল্যাণে ১৯ দফা কর্মসূচী এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ এর কাজ আরো যুগ-উপযোগী করার লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সকল গণতন্ত্রকামী দল, দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের পরামর্শের ভিত্তিতে “রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা” রূপরেখা বাস্তবায়নের জন্য ২০২৩ সালেই বিএনপি’র পক্ষে ঘোষণা করেছেন।
যা একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, কৃষি-শিক্ষা বিপ্লব, স্বাস্থ্যসেবা ও শিল্প উন্নয়ন সহ বিভিন্ন বিষয়ের উন্নয়ন ও সংস্কার কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। এবার আসা যাক ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিপ্লব পর্যন্ত। তারেক রহমানের প্রতি পতিত সরকারের আক্রমণমূলক কর্মকান্ডের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। ১/১১ সংস্কারের সাজানো সকল মামলায় সাজা দিয়ে তারেক রহমান কে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।
দেশের সকল গণমাধ্যমে তাঁর সংবাদ প্রচারে বাধা দেওয়া হয়েছে। পতিত সরকার ও বিদেশী অপশক্তি গুলো ধরে নিয়েছিল বিএনপিকে শেষ করলেই তারাই দেশের মালিক এবং তারাই ক্ষমতাই। বাংলাদেশে জনগণ ঐতিহাসিক ভাবেই গণতন্ত্রপ্রিয় এবং প্রকৃত স্বাধীনতাই বিশ্বাসী। তাই সকল অশুভ শক্তিকে, বুলেটকে ভয় না করেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সর্বস্তরের জনগণ ঐতিহাসিক অধ্যায়ে সূচিত হয়েছে “জুলাই বিপ্লব”। সূদুঢ় প্রবাস থেকে বাংলাদেশের আন্দোলন রত জনগণকে তারেক রহমান রাত দিন সাহস যুগিয়েছেন। দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান ভিত্তিক আন্দোলনের পরিকল্পনা। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীলদের সজাগ দৃষ্টি রেখে আন্দোলন তীব্র করার এবং আন্দোলনরত অপরাপর বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীসহ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার নির্দেশনাই জুলাই-বিপ্লব সফল হয়েছিল।
জুলাই বিপ্লব পরবর্তী দশদিনেই দেশের জনগণের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের যে বার্তা “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেক কঠিন নির্বাচন হবে” -এ উক্তিটিই তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয়কে অনেকাংশে সামনে নিয়ে আসছে। দলের নেতাকর্মীদেরকে সর্তক করেছেন ও সাহসিকতার সাথে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৫ বছরেও জনগণ এখনও হতাশায় নিমজ্জিত। অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসবেন ঘোষণা দেয়ার পূর্ব মুহুর্তেই দেশে ভয়-ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে জুলাই যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের সমন্বয়ক ওসমান হাদিকে হামলা করলো এবং পরে শহীদ হল। এটিও ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষ থেকে একটি বার্তা।
এ বার্তাটাই আমাদের দলের এবং অপরাপর সকল গণতান্ত্রিক দলের কর্মকান্ডে প্রতিফলন ঘটাতে হবে এবং সকলকেই সর্তক থাকতে হবে। ১৭ বছর পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আগামী দিনের বিএনপির কর্ণধার শহীদ জিয়া ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য সন্তান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সমগ্র দেশের জন্য আনন্দের এবং এই আনন্দ দেশপ্রেমিক জনগণের। তারেক রহমান শুধু দলের সম্পদ নয়, তারেক রহমান সমগ্র বাংলাদেশের সম্পদে পরিণত হয়েছে। যার জন্যই ষড়যন্ত্র আরো তীব্র হচ্ছে।
বিএনপি ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লব, ১৯৯০ সালের গণ আন্দোলন এবং ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে বাংলাদেশে রাজনীতি করেছে, করছে এবং করবে। শহীদ জিয়ার বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে আপোষহীন নেত্রী হিসেবে দেশের প্রথম জনপ্রিয় মহিলা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালন এই ধারাবাহিকতায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আধুনিক রাষ্ট্র বির্নিমাণে আগামী দিনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক, বাক-স্বাধীনতা, গণ-মাধ্যমের স্বাধীনতা, বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি, সুনির্দিষ্ট প্রকৃত শিক্ষানীতি, উন্নত চিকিৎসা সেবা। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সকল ধর্মের বর্ণের সহ অবস্থান নিশ্চিত সহ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকার রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী তারেক রহমান। এটাই স্বাধীনতার ৫৫ বছরে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর আশা ও প্রত্যাশ্যা।