আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

পটিয়ায় বিচার চলাকালীন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

  1.  পটিয়া উপজেলার ১১নং কেলিশহর ইউনিয়ন পরিষদে বিচার চলাকালীন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ফটো সাংবাদিক সুরঞ্জিত শীল নামের এক ব্যক্তির ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিক সুরঞ্জিত শীল ওই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মৃত সুজন কৃষ্ণ শীলের ছেলে এবং তিনি দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকায় কর্মরত রয়েছে। হামলার ঘটনায় পটিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যায়।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফটো সাংবাদিক সুরঞ্জিত শীলের সাথে তার বড় ভাই বিশ্বজিৎ শীলের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিষয়ে বিরোধ চলছিলো। তারই প্রেক্ষিতে বিশ্বজিৎ পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্য ১১নং কেলিশহর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ এপ্রিল পরিষদ কার্যালয়ে সালিসি বৈঠকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে উভয়কেই যথা সময়ে পরিষদ কার্যালয়ে হাজির থাকার নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান। নির্দেশ অনুযায়ী উভয় পক্ষই হাজির হন। এসময় আবেদনকারীর পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার নিখিল দে। পরবর্তীতে বিচারকার্য আরম্ভ হলে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে বিশ্বজিৎ শীলের পক্ষের প্রতিনিধি মেম্বার নিখিল দে উত্তেজিত হয়ে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সুরঞ্জিত শীলের ওপর হামলা করে তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করে এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে নষ্ট করে ফেলে। এসময় পরিষদের ভিতর উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে সাংবাদিক সুরঞ্জিত শীল বাদী হয়ে মেম্বার নিখিল দে ও তার বড় ভাই বিশ্বজিৎ শীলের নাম উল্লেখ করে পটিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন বলে জানা যায়, যাহার জিডি নং-২৫৯।

ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মেম্বার নিখিল দে’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সুরঞ্জিত আর আমি একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাদের সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। তাদের মধ্যে জমি জমা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ চলছিলো। বিরোধের জের ধরে গত ৫ এপ্রিল চেয়ারম্যানের নির্দেশে পরিষদে সালিসি বৈঠকে দুই ভাইকে ডাকা হয়। তখন আমি ছিলাম ওই বৈঠকে বিশ্বজিৎ শীলের পক্ষের প্রতিনিধি। বৈঠক চলাকালীন সুরঞ্জিত তার বড় ভাই বিশ্বজিৎ শীল এবং আমার ওপর উত্তেজিত হয়ে অশালীন আচরণ করতে থাকলে অনেক চেষ্টা করে থামাতে না পেরে রাগের মাথায় তাকে আমি ধাক্কা দেই। এর সূত্র ধরে আমাদের উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি ঘটনা ঘটে।

পরিষদে বিচার চলাকালীন মারামারির বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পরিষদের চেয়ারম্যান সরোজ কান্তি সেন নান্টু বলেন, বাদী বিশ্বজিৎ শীল আর বিবাদী সুরঞ্জিত শীল তারা আপন দুই ভাই। তাদের মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি ও আরও অন্যান্য বিষয় নিয়ে অনেক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছিলো এবং অনেকবার সামাজিক ভাবে সালিসি বৈঠকও হয়েছে। তবুও তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশ্বজিৎ পরিষদে আবেদন করলে গত ৫ এপ্রিল বিকাল ৫টায় তাদের দুই ভাইকে পরিষদে ডেকে আনা হয়। এসময় বাদী বিশ্বজিৎ শীলের পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার নিখিল দে। বিচারকার্য শুরু হলে এক পর্যায়ে সুরঞ্জিত ও বিশ্বজিৎ তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এসময় প্রতিনিধি নিখিল মেম্বারের সাথে সুরঞ্জিতের কথা কাটাকাটির জের ধরে নিখিল সুরঞ্জিতের ওপর হামলা করলে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি ঘটনা ঘটে। এসময় আমি তাদের আমি অনেক বাঁধা দিয়েছিলাম, তারা কেউ আমার কথা শুনেনি। পরবর্তীতে ওইদিন সালিসি বৈঠক স্থগিত করে আগামীতে আরেকটি সালিসি বৈঠকের দিন ধার্য্য করে বৈঠক স্থল সমাপ্তি করি। অন্যদিকে থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের বিষয়ে তদন্তে দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসার উপপরিদর্শক মোঃ বিল্লল হোসেন বলেন, পরিষদে বিচার চলাকালীন মারামারির ঘটনায় সাংবাদিক সুরঞ্জিত শীল বাদী হয়ে লিখিল দে ও বিশ্বজিৎ শীল নামের দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ঘটনা বিষয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি। তদন্ত শেষে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে জানান তদন্ত অফিসার মোঃ বিল্লাল।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রামে কাস্টমস কর্মকর্তাদের গাড়িতে হামলার সময় ‘গুলি কর, গুলি কর’ শব্দ

P চট্টগ্রাম মহানগরের কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার উপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডবলমুরিংয় থানাধীন সিডিএ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কে চৌধুরী সুপারশপের সামনে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা হঠাৎ প্রাইভেটকার থামিয়ে চাপাতি দিয়ে গাড়ির গ্লাস ভাঙে এবং ‘গুলি কর, গুলি কর’ চিৎকার করে প্রাণনাশের ভয় দেখায়।হামলার শিকার হলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বদরুল আরেফিন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে হামলার শিকার রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, অফিস যাওয়ার পথে হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে একটি মোটরসাইকেলে তিনজন এসে আমাদের গাড়ির গতিরোধ করে। তারপর তারা চাপাতি দিয়ে গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলে। এসময় একজন আরেকজনকে বলতে থাকেন, ‘গুলি কর, গুলি কর’। পরে প্রাণ বাঁচাতে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়াতে থাকি। তিনি আরও বলেন, হামলাকারীদের তিনজনের মধ্যে দুজন হেলমেট পরিহিত ছিল, আকেরজন হেলমেট পরেনি। হামলার পর তারা মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, গত অক্টোবরে তার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে হুমকি দেয়া হয়। পরে বন্দর থানায় নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। এর একমাস পরেই এই হামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পশ্চিম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূঁইয়া বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ফুটেজ পর্যালোচনা করে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। একটি মোটরসাইকেলে তিনজন এসে হামলা চালিয়েছে। প্রাথমিক ধারণা, এটি পূর্ব শত্রুতার জেরে ভয়ভীতি দেখানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। যদিও হামলার সময় ‘গুলি কর, গুলি কর’ চিৎকার করা হয়েছিল, কোনো গুলি করা হয়নি। আমরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। এই ঘটনায় এখনও মামলা দায়ের হয়নি; কাস্টমস কর্মকর্তারা চাইলে মামলা করতে পারেন, নতুবা পুলিশ মামলার প্রক্রিয়া শুরু করবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার এইচ এম কবির বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আমাদের দুজন কর্মকর্তা কাস্টমস গোয়েন্দা অফিস থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে যাওয়ার পথে তাদের উপর হামলা হয়েছে। তাদের গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। এ ধরনের হামলা আমাদের জন্য শঙ্কার বিষয়। আমরা আশা করি রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দিবে।

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ