
চট্টগ্রামের রাউজানে চুয়েটের শিক্ষার্থীরা চতুর্থ দিনের মতো শান্তিপূর্ণ অবরোধ পালন করছেন।
গত রবিবার সন্ধ্যার দিকে দুই সহপাঠীর মৃত্যুতে পুরো চুয়েট এলাকা এখন থমথমে অবস্থা। চতুর্থ দিনের মতো চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এদিকে ঘাতক বাসচালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সকাল ১০টা থেকে চুয়েটের মূল ফটকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। তারা ১০ দফা দাবি আবার তুলে ধরে বলেন, বাস মালিক সমিতি ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা বলেছে। এ টাকা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা হলো। নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে দুই কোটি টাকা করে চার কোটি টাকা দিতে হবে। কারণ, শাহ আমানত পরিবহন সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জিয়ানগর এলাকায় ওভারটেক করতে গিয়ে বাসের চালক দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা পাঁচটি নতুন বাস ও চারটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি বাস ও একটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য হলো, তারা চারটি অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত ক্যাম্পাসে দেখতে চান। আর বাস কেনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে দ্রুত চিঠি পাঠানো এবং এসব চিঠি নোটিশ আকারে শিক্ষার্থীদের মেইলে পাঠাতে হবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম পুননির্ধারণ করে নোটিশ আকারে জানানোর দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নে চুয়েট ক্যাম্পাস অবস্থিত। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের একটি অংশ পড়েছে চুয়েট ক্যাম্পাসে।
ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত সড়কে গাছের গুঁড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে চুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার জিয়ানগরে বাসের ধাক্কায় মারা যান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইন। এ ছাড়া আহত হন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু। দুর্ঘটনার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন সন্ধ্যা সাতটায় প্রথম দফায় সড়ক অবরোধ করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস। পাশাপাশি আরো দুটি বাস ভাঙচুর করা হয়। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে রাত নয়টার দিকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেদিন রাত তিনটায় নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবারও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক বাসের চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার নগরীর কোতোয়ালী এলাকা থেকে রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার তাজুল ইসলাম চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার চিকদাইর ইউনিয়নের আবদুল খলিলের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে চলাচলকারী শাহ আমানত পরিবহনের বাসের চালক। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, চুয়েট শিক্ষার্থীদের চাপা দেওয়া বাসের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ঘটনার পর থেকে এখনো পর্যন্ত চুয়েটের উভয় পাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে মালবাহী ট্রাক। দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ জনগণ। চট্টগ্রাম শহর থেকে সিএনজি করে এসে চুয়েটের গেইট এর আগেই নেমে চুয়েট এলাকা পার হয়ে আবার গাড়িতে উঠতে হয় সাধারণ জনগণের এতে করে দুর্ভোগে পড়েছে অনেক দূরযাত্রীর মানুষ ।
অন্যদিকে দেখা যায়, চুয়েটের শিক্ষার্থীরা সিএনজি করে আসা বিভিন্ন যাত্রীদের সাথে থাকা মালামাল নিজ দায়িত্বে পারাপার করে দিতে। তারা বলে আমরা এখানে শান্তিপূর্ণ ভাবে অবরোধ পালন করতেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের দিকনির্দেশনা আসলেই আমরা অবরোধ উঠিয়ে নিব। তবে এখনও পর্যন্ত আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার কোন ধরনের আশ্বাস পাই নাই।
সাধারণ জনগণ বলেন, আমরা এই প্রখর রোদের মধ্যে এক গাড়িতে করে নিজের গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতাম। কিন্তু এখন চুয়েটে এলাকায় এসে মালামাল সহ গাড়ি চেঞ্জ করতে হয়। ঘটনার আজ চতুর্থ দিন চলতেছে এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই। সাধারণ জনগণ সরকারকে দুষছেন। আমরা জানি না প্রশাসন কেন নীরব। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মেনে নিলেই শিক্ষার্থীরা অবরোধ উঠে নিতে পারত। মধ্যে স্থানে আমরা সাধারণ জনগণই দুর্ভোগে পড়ছি। আমাদেরও দাবি অতি দ্রুত সাধারণ মানুষের চলাচলের পথ বিপদ ও ভয়মুক্ত হোক।