আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে টানা ভারী বষর্নে ভোগান্তি চরমে

এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে রাতভর ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সড়কে কোমরপানি জমায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী, শ্রমজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কে। এ ছাড়া নিচু এলাকার বাসাবাড়িতে প্রবেশ করেছে পানি। নগরের ব্যবসা-বাণিজ্যে ছন্দপতন হয়েছে। নগরের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে সৃষ্টি হয়েছে যানজট।

১ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জলাবদ্ধতা ও যানজটের কারণে চরম ছন্দপতন নেমে আসে জনজীবনে। এর আগে বুধবার দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। তবে রাত ১১টার পর থেকে শুরু হয় টানা বর্ষণ। সেই ধারা বুধ বৃহ: ও শুক্রবার অব্যাহত থাকে। এ কারণে নগরের চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ, দুই নম্বর গেট, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, বড়পোল, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকায় সড়কে হয়েছে কোমরপানি। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল করিম বলেন, ‘বৃষ্টির এ ধারা আর ও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। থেমে থেমে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্র অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের অধিকাংশ সড়কে কোমরপানি। ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামীরা। কিছু কিছু সিএনজি চললেও পানিতে কয়েকটি সিএনজির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে দেখা গেছে। সড়কের ওপর প্রাইভেট কার ও নষ্ট হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাড়তি ভাড়া গুনে রিকশায় ভর করে অনেকে রওনা দিয়েছেন অফিসের পথে। নিচু এলাকার অনেক বাসাবাড়িতে ঢুকেছে পানি। তা সেচের মাধ্যমে নিষ্কাশন করতে হয়েছে। অনেকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে পানি প্রবেশের কারণে। চট্টগ্রাম নগরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের কারণে দ্রুত নগরের পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধ চট্টগ্রাম দেখতে পান নগরবাসী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দুর্ভোগ। এদিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের বড়দিঘীরপাড় এলাকায় সড়কে পানি জমায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া এই সড়কে যাতায়াতকারী ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজানের যোগযোগ দীর্ঘ ২ ঘণ্টা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দুপুরের দিকে। পরে ২টার দিকে আবার সড়ক যোগাযোগ সচল হয়েছে।

পতেঙ্গা আবহা অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আলী আকবর খান জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে বেলা ৩টা থেকে পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি আরও দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রামে স্কুল ও দোকানে আগুন

চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড থানাধীন কলসি দিঘির পাড় উত্তর রেল গেট এলাকায় একটি কেজি স্কুল ও পাশের দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে হযরত শাহ আলী কেজি স্কুল ও দোকানে আগুন লাগে।

সিইপিজেড ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহাদাত হোসেন জানান, ভোরে খবর পেয়ে সোয়া ৬টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। প্রায় ৪০ মিনিটের চেষ্টায় সকাল পৌনে ৭ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। তবে দ্রুত পদক্ষেপে প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তা জানা যায়নি।

মশা নিধনে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহার শুরু চসিকের।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রথমবারের মতো মশা নিয়ন্ত্রণে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু করেছে। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্দেশক্রমে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মো. আশরাফুল আমিন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ শরফুল ইসলাম মাহি, কীটতত্ত্ববিদ রাশেদ চৌধুরী এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মশা নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর আগে গত ২৬ মার্চ নগরীর ১৭ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ডের সৈয়দ শাহ রোডের সামনের খালে পরীক্ষামূলকভাবে বিটিআই লার্ভিসাইড প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে আজ থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিটিআই প্রয়োগ শুরু করল চসিক।

চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ফগিং, লার্ভিসাইড ছিটানো, নালা–নর্দমা পরিষ্কার, আবর্জনা অপসারণ এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের আমেরিকান প্রযুক্তির বিটিআই ব্যবহারে মশার লার্ভা ধ্বংসে আরও কার্যকর ফল পাওয়া যাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

বিটিআই হলো একটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ব্যাকটেরিয়াভিত্তিক লার্ভিসাইড, যা বিশেষভাবে মশা, ব্ল্যাক ফ্লাই ও ফাঙ্গাস গ্ন্যাটের লার্ভা দমনে ব্যবহৃত হয়। এটি পানিতে প্রয়োগ করার পর লার্ভা খাদ্যের সঙ্গে বিটিআই গ্রহণ করে এবং ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদিত ক্রিস্টাল প্রোটিন টক্সিন লার্ভার পরিপাকতন্ত্রে কার্যকর হয়ে তাদের দ্রুত নিধন ঘটায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিটিআই মানুষের শরীর, গৃহপালিত প্রাণী, মাছসহ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর নয়; এমনকি উদ্ভিদ ও জলজ বাস্তুতন্ত্রেও কোনো বিষাক্ত প্রভাব ফেলে না। বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়ার মতো বাহক–বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে এটি একটি নিরাপদ ও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত সমাধান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ