আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে শিশুকন্যা বর্ষা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তকে তলব

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর’ চট্টগ্রাম মহানগরীর জামালখান এলাকায় ৭ বছরের শিশু কন্যা বর্ষা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দু’বছরেও আসেনি চার্জশীট। মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশন – বিএইচআরএফ বুধবার বিষয়টি দরখাস্ত মূলে আদালতের দৃষ্টিতে আনলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট- ৬ কাজী শরিফুল ইসলামের আদালত দরখাস্তটি সংশ্লিষ্ট আই.ও. এর উপস্থিতিতে শুনানীর নির্দেশ দেন। মানবাধিকার সংস্থাটি উক্ত মামলা বিনা খরচে পরিচালনা ও ভিকটিম পক্ষকে আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বুধবার কন্যাসহ ভিকটিমের মাতা ঝর্ণা বেগম (৫০) আদালতে উপস্থিত ছিলেন ।
মামলার একমাত্র আসামী লক্ষণ দাশ (৩০) ইতিপূর্বে ঘটনার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এস.আই. নওসের কোরাইশী ডি.এন.এ রিপোর্ট হাতে না পাওয়ায় চার্জশীট দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন । শিশু বর্ষা মাছুয়া ঝর্ণা এলাকার মৃত আব্দুল হকের মেয়ে। আব্দুল হক ২০১৮ সালে মারা যান। মোমিন রোডে ইকো প্যাকেজিং নামে তার একটি প্রেস ছিল। মা ঝর্ণা বেগম চাঁদপুরের শাহরাস্তি এলাকার বাসিন্দা। সৎ বাবা ইউসুফ আলী ও মা ঝর্ণা বেগমের সাথে সিকদার হোটেলের পাশের গলিতে শাওন ভবনের নিচ তলায় বসবাস করতো বর্ষা। পড়তো কুসুম কুমারি স্কুলের প্রথম শ্রেণীতে। গত সোমবার ২৪ শে অক্টোবর সোমবার বিকেল ৪ ঘটিকার সময় মায়ের কাছ থেকে ২০ টাকা চেয়ে নিয়ে বাসা থেকে বের হয় বর্ষা। এরপর গলির মুখে সিকদার হোটেলের পাশের আজাদ স্টোর থেকে চিপস ও বিস্কুট কিনে বাসার উদ্দেশ্যেই গিয়েছিল সে। কিন্তু বাসায় না গিয়ে নিখোঁজ হয়ে পড়ে। এরপর তাকে খুঁজতে বের হয় বাসার লোকজন। আশপাশেসহ নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে বিষয়টি প্রথমে স্থানীয় কাউন্সিলরকে ও পরে থানায় অবহিত করা হয়। তাকে খুঁজে পেতে নগরজুড়ে মাইকিংও করা হয়। নিখোঁজের তিনদিন পর ওই বছরের ২৭ অক্টোবর’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টায় নগরীর জামালখানের সিকদার হোটেলের পিছনের একটি নালা থেকে ৭ বছর বয়সী মারজানা হক বর্ষা নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশুটির বাসার অদূরে শ্যামল স্টোর নামের একটি দোকানের কর্মচারী লক্ষণ দাশ (৩০) এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। একই বছরের ২৮ অক্টোবর রাত ১ টায় শ্যামল স্টোর থেকে কর্মচারী লক্ষণ দাশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। লক্ষণ দাশ লোহাগাড়ার উত্তর পুদয়া ৩ নং ওয়ার্ডের মনি মিস্ত্রির বাড়ির ফেলোরাম দাশের ছেলে। সে সিকদার হোটেলের পেছনের গোপাল মুহুরীর গলির একেএম জামাল উদ্দিনের বিল্ডিংয়ের নিচতলায় শ্যামল স্টোরের গোডাউনে থাকতো। নিহত শিশুটির মৃতদেহ যখন বস্তা থেকে বের করা হয় তখন বস্তাতে টিসিবি’র সীল দেখতে পাওয়ায় যায়। পুলিশ টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তায় মালামাল বিক্রয়ের দোকান ও আশেপাশের বিভিন্ন রেস্তোরার গোডাউনে টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তা খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে শ্যামল স্টোর নামের দোকানের গোডাউন চেক করার সময় একটি খালি টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তা খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ওই দোকানের মালিক ও কোন কোন কর্মচারী কাজ করে তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয় । একইসাথে ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। টিসিবির সীলযুক্ত বস্তা ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় আসামি লক্ষণ দাশকে শনাক্ত করা হয় ।
পরবর্তীতে শ্যামল স্টোরের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে দিবাগত রাত দেড়টায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে লক্ষণ দাশ জানায় সে বিভিন্ন সময় শিশুটিকে দোকান থেকে চিপস, চকলেট দিত। ঘটনার দিন ২৪ অক্টোবর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সে ১০০ টাকার লোভ দেখিয়ে ডাক দিয়ে দোকানের গোডাউনে নিয়ে যায়। গোডাউনে নেওয়ার পর নাক, মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ফলে রক্তপাত হওয়ায় লক্ষণ দাশ ভয় পেয়ে যায়। এক পর্যায়ে সে শিশুটির শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং গোডাউনে রাখা টিসিবি’র সীলযুক্ত প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে মরদেহ ভরে নালায় ফেলে দেয়। কিছুক্ষণ পরে সে ভিকটিমের কাপড়চোপড় ও ব্যবহৃত স্যান্ডেল পেঁয়াজের খোসার বস্তার ভিতর খোসাসহ ঢুকিয়ে নালায় নিক্ষেপ করে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ