
২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর’ চট্টগ্রাম মহানগরীর জামালখান এলাকায় ৭ বছরের শিশু কন্যা বর্ষা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দু’বছরেও আসেনি চার্জশীট। মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশন – বিএইচআরএফ বুধবার বিষয়টি দরখাস্ত মূলে আদালতের দৃষ্টিতে আনলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট- ৬ কাজী শরিফুল ইসলামের আদালত দরখাস্তটি সংশ্লিষ্ট আই.ও. এর উপস্থিতিতে শুনানীর নির্দেশ দেন। মানবাধিকার সংস্থাটি উক্ত মামলা বিনা খরচে পরিচালনা ও ভিকটিম পক্ষকে আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বুধবার কন্যাসহ ভিকটিমের মাতা ঝর্ণা বেগম (৫০) আদালতে উপস্থিত ছিলেন ।
মামলার একমাত্র আসামী লক্ষণ দাশ (৩০) ইতিপূর্বে ঘটনার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এস.আই. নওসের কোরাইশী ডি.এন.এ রিপোর্ট হাতে না পাওয়ায় চার্জশীট দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন । শিশু বর্ষা মাছুয়া ঝর্ণা এলাকার মৃত আব্দুল হকের মেয়ে। আব্দুল হক ২০১৮ সালে মারা যান। মোমিন রোডে ইকো প্যাকেজিং নামে তার একটি প্রেস ছিল। মা ঝর্ণা বেগম চাঁদপুরের শাহরাস্তি এলাকার বাসিন্দা। সৎ বাবা ইউসুফ আলী ও মা ঝর্ণা বেগমের সাথে সিকদার হোটেলের পাশের গলিতে শাওন ভবনের নিচ তলায় বসবাস করতো বর্ষা। পড়তো কুসুম কুমারি স্কুলের প্রথম শ্রেণীতে। গত সোমবার ২৪ শে অক্টোবর সোমবার বিকেল ৪ ঘটিকার সময় মায়ের কাছ থেকে ২০ টাকা চেয়ে নিয়ে বাসা থেকে বের হয় বর্ষা। এরপর গলির মুখে সিকদার হোটেলের পাশের আজাদ স্টোর থেকে চিপস ও বিস্কুট কিনে বাসার উদ্দেশ্যেই গিয়েছিল সে। কিন্তু বাসায় না গিয়ে নিখোঁজ হয়ে পড়ে। এরপর তাকে খুঁজতে বের হয় বাসার লোকজন। আশপাশেসহ নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে বিষয়টি প্রথমে স্থানীয় কাউন্সিলরকে ও পরে থানায় অবহিত করা হয়। তাকে খুঁজে পেতে নগরজুড়ে মাইকিংও করা হয়। নিখোঁজের তিনদিন পর ওই বছরের ২৭ অক্টোবর’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টায় নগরীর জামালখানের সিকদার হোটেলের পিছনের একটি নালা থেকে ৭ বছর বয়সী মারজানা হক বর্ষা নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশুটির বাসার অদূরে শ্যামল স্টোর নামের একটি দোকানের কর্মচারী লক্ষণ দাশ (৩০) এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। একই বছরের ২৮ অক্টোবর রাত ১ টায় শ্যামল স্টোর থেকে কর্মচারী লক্ষণ দাশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। লক্ষণ দাশ লোহাগাড়ার উত্তর পুদয়া ৩ নং ওয়ার্ডের মনি মিস্ত্রির বাড়ির ফেলোরাম দাশের ছেলে। সে সিকদার হোটেলের পেছনের গোপাল মুহুরীর গলির একেএম জামাল উদ্দিনের বিল্ডিংয়ের নিচতলায় শ্যামল স্টোরের গোডাউনে থাকতো। নিহত শিশুটির মৃতদেহ যখন বস্তা থেকে বের করা হয় তখন বস্তাতে টিসিবি’র সীল দেখতে পাওয়ায় যায়। পুলিশ টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তায় মালামাল বিক্রয়ের দোকান ও আশেপাশের বিভিন্ন রেস্তোরার গোডাউনে টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তা খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে শ্যামল স্টোর নামের দোকানের গোডাউন চেক করার সময় একটি খালি টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তা খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ওই দোকানের মালিক ও কোন কোন কর্মচারী কাজ করে তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয় । একইসাথে ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। টিসিবির সীলযুক্ত বস্তা ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় আসামি লক্ষণ দাশকে শনাক্ত করা হয় ।
পরবর্তীতে শ্যামল স্টোরের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে দিবাগত রাত দেড়টায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে লক্ষণ দাশ জানায় সে বিভিন্ন সময় শিশুটিকে দোকান থেকে চিপস, চকলেট দিত। ঘটনার দিন ২৪ অক্টোবর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সে ১০০ টাকার লোভ দেখিয়ে ডাক দিয়ে দোকানের গোডাউনে নিয়ে যায়। গোডাউনে নেওয়ার পর নাক, মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ফলে রক্তপাত হওয়ায় লক্ষণ দাশ ভয় পেয়ে যায়। এক পর্যায়ে সে শিশুটির শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং গোডাউনে রাখা টিসিবি’র সীলযুক্ত প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে মরদেহ ভরে নালায় ফেলে দেয়। কিছুক্ষণ পরে সে ভিকটিমের কাপড়চোপড় ও ব্যবহৃত স্যান্ডেল পেঁয়াজের খোসার বস্তার ভিতর খোসাসহ ঢুকিয়ে নালায় নিক্ষেপ করে।