
অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নির্মাণকাজ চলছে রাজশাহীতে। নানা সমালোচনার মধ্যেই চলতি বছরের শুরুতে শুরু হয় রাজশাহীর পাঁচ ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় সেই নির্মাণ কার্যক্রম। যন্ত্রপাতি গুটিয়ে লাপাত্তা হন ঠিকাদার ও শ্রমিকরাও। তবে মাসখানেক বিরতি দিয়ে আবারও শুরু হয়েছে নির্মাণকাজ। কিন্তু এখন সেই ফ্লাইওভার নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক আর সমালোচনা। এবার নির্মাণকাজে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর বিলসিমলা রেলক্রসিং এলাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কাজ করছে মেসার্স মজিদ অ্যান্ড সন্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি দিনে ও রাতে প্রকাশ্যে সরাসরি বিদ্যুতের লাইন থেকে তার সংযুক্ত করে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে নিজেদের যন্ত্রপাতি পরিচালনা করছে। রাতে কাজ করার জন্য রাখা হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগও। নগরীর বিলসিমলা রেলগেট পার হয়ে নির্মাণাধীন চার নম্বর পিলারসংলগ্ন বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে দেখা গেছে। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে ওয়েল্ডিং মেশিন চালাতেও দেখা গেছে। একই সময় নগরীর বহরমপুর রেলক্রসিং এলাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারেও একই চিত্র দেখা গেছে। এদিকে নগরীর হড়গ্রাম রায়পাড়া রেলক্রসিং এলাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কাজ করছেন মেসার্স ডেনকো লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটিও দিনে-রাতে প্রকাশ্যে সরাসরি বিদ্যুতের লাইন থেকে তার সংযুক্ত করে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে নিজেদের যন্ত্রপাতি পরিচালনা করছে। রাতে কাজ করার জন্য সেখানেও রাখা হয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটের সংযোগ। সেখানে গিয়ে দেখা য়ায়, প্রতিটি বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকেই পৃথক সংযোগ লাইন নিচে নামানো আছে। এমনকি একটি লাইন থেকে সরাসরি লোহা কাটতে ও ঝালাই করতেও দেখা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেসার্স মজিদ অ্যান্ড সন্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক জার্জিসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সেখানে দুটি সংযোগ নেওয়া আছে। অবৈধভাবে কোনো বিদ্যুৎ আমরা ব্যবহার করছি না। তবে বিলসিমলা এলাকার অবৈধ লাইনের ব্যাপারে জানানো হলে তিনি এক প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। সেই প্রকৌশলী অবশ্য অবৈধ সংযোগের ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’ এদিকে মেসার্স ডেনকো লিমিটেডের প্রকৌশলী সঞ্জয় বলেন, ‘আমরা বিদ্যুতের লাইন নামিয়ে রেখেছি। আমরা ওই লাইন ব্যবহার না করে জেনারেটর ব্যবহার করি। মূলত এগুলো সিটি করপোরেশনের রোড লাইটের লাইন থেকে নামানো।’ অবৈধ লাইনে সরাসরি লোহা কাটা ও ঝালাইয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমনটি হওয়ার কথা না। আমি কাল পরিদর্শনে গিয়ে বিস্তারিত জানাব।’ এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আল মঈন পরাগ বলেন, ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কোনো বিদ্যুৎ তারা ব্যবহার করতে পারে না। যদি ব্যবহার করে থাকে, তবে এর দায়ভার তাদের নিতে হবে। আমি এক্ষুনি আমার অফিসারদের খোঁজ নিতে বলছি।’ কিছুক্ষণ পরই রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী ফোন করে জানান, মজিদ অ্যান্ড সন্স দুটি বৈদ্যুতিক মিটার সংযোগ ব্যবহার করছে। তাদের প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল আসছে। আর ডেনকো লিমিটেডের বিদ্যুৎ লাইন নেই। তারা জেনারেটরের মাধ্যমে কাজ করে। অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। রাসিকের প্রশাসক ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই সিটি করপোরেশন বা অন্য কারও বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার করতে পারে না। অবৈধভাবে কিছু করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।