আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

১০ এপ্রিল বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান’র ২৭০ তম জন্মবার্ষিকী

লেখক:কলাম লেখক ও গবেষক প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ,জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি চেম্বার :-ন্যাশনাল হোমিও রিসার্চ সেন্টার অলংকার শপিং কমপ্লেক্স চট্টগ্রাম ই-মেইল. [email protected]

ডা: মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ।

আজ বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস ২০২৫।প্রতিপাদ্য— হোমিওপ্যাথি এক স্বাস্থ্য, এক পরিবার।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান’র ২৭০ তম জন্মবার্ষিকীর দিনে পৃথিবীব্যাপী এ দিবসটি পালন করা হয়।২০০৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী হ্যানিমেনের জন্মদিন ‘বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে ২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশে যাত্রা শুরু বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবসের এবং বিশ্ব হোমিওপ্যাথি আন্দোলনে যুক্ত হয় বাংলাদেশ।আমরা সবাই জানি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্ম জার্মানিতে। বিজ্ঞানী ডা: স্যামুয়েল হানেমানের আবিষ্কারক (১০ এপ্রিল ১৭৫৫ থেকে ২ জুলাই ১৮৪৩ ছিল তার জীবনকাল)। তিনিই প্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানী যিনি ভেষজ বস্তুকে শক্তিকরণ করে তা সুস্থ মানবদেহে পরীক্ষার মাধ্যমে ওষুধের রোগজ শক্তির আবিষ্কার করেন, যা তার আগে কোনো বিজ্ঞানী করেননি। তাই আমরা তাকে শ্রদ্ধা করি বিপ্লবী বিজ্ঞানী হিসেবে। বিপ্লবী এ বিজ্ঞানীর জন্মবার্ষিকী বিশ্বব্যাপী পালিত হয়,এই দিনে পৃথিবীর আর কোনো বিজ্ঞানীর জন্মদিন এভাবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় না। ২০০৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী হানেমানের জন্মদিন পালিত হচ্ছে বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস হিসেবে।

বিজ্ঞানে কৃত্রিম রোগ আবিষ্কার স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৭৯০ সালে পৃথিবীর মানুষ প্রথম জানতে পারে তার আবিষ্কারের কথা।হানেমান নিজের নিজের দেহে ১৩০টি মেডিসিন প্রুভ করেছেন।সর্ব প্রথম মানবদেহে হোমিওপ্যাথি মেডিসিন পরিক্ষা করা হয়েছে।পেরুভিয়ান কফি বা সিষ্কোকা গাছের বাকল নিয়ে গবেষণা করতে করতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার উদ্ভব হয়।পৃথিবীর কনিষ্টতম চিকিৎসা পদ্ধতি হলো হোমিওপ্যাথি।ঔষধ পরীক্ষার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার নিয়ম নীতি প্রকাশ করেন ১৮১০সনে।অর্গানন নামে যার পরিচিতি চিকিৎসক মহলে।তার জীবনের শেষ পর্যায়ে অর্গানন ৬ষ্ঠ সংস্করন সমাপ্ত করেন।বইটির আধুনিক ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৮৮২ সালে হানেমান ফাউন্ডেশন,আমেরিকা থেকে।

হোমিওপ্যাথির জন্ম জার্মানীতে।বিকাশ ফ্রান্সে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বৃটেন ১৮০৫ সনে। আর সারাবিশ্বে এ্যালোপ্যাথির পরেই দ্বিতীয় প্রধান এবং অল্টারনেটিভ চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে হোমিওপ্যাথি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিটি জার্মান বিজ্ঞানী ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান কর্তৃক ১৭৯৬ সালে আবিষ্কৃত হয়। এটি বিগত ২৩০ বছর ধরে মানবসেবায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু এর জন্মলগ্ন থেকেই এটি নানা প্রতিকুলতা ও ভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে আছে। হোমিওপ্যাথি নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন সমালোচনা করে থাকেন যে, এটি ধীরে কাজ করে, জটিল রোগে ব্যর্থ, প্লাসিবো ইফেক্ট, এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই ইত্যাদি। কিন্তু আমরা যারা সমালোচক তারা বেশিরভাগই গবেষণা বা সঠিক ধারণা না নিয়েই হোমিওপ্যাথির ওপর বিষেদগার প্রকাশ করি।

আমি জানি না, মানি না বা মানবো না তাই বলে ব্যাপারটি যে সত্য ও ফলপ্রসূ নয় এমনটি ধারণা করা নিছক বোকার স্বর্গে বসবাস করারই নামান্তর নয়কি? যে ব্যবস্থাটি বিগত ২৩০ বছর ধরে মানবসেবায় নিয়োজিত আছে সেটি যে অবৈজ্ঞানিক এমনটি ধারণা করা কি ঠিক? ফল না থাকলে কিভাবে মানুষ ফল ভোগ করছে এবং কিভাবে সেটি এখনও টিকে আছে পৃথিবীর বুকে?

হোমিওপ্যথি নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত ধারণা এটি ধীরে কাজ করে। এটি নিয়ে অনেকেই একটা কথা বলে থাকেন “যার নাই কোনো গতি সে খায় হোমিওপ্যাথি”। এই ধারণা থেকে বোঝা যায় মানুষ কখন হোমিওপ্যাথির কাছে যায়। একটা রোগী যখন সব চিকিৎসা শেষ করে আর কোনো উপায় খুঁজে পায় না, যখন সে স্টেরয়েড, এন্টিবায়েটিক ইত্যাদি খেয়ে নিজের রোগটি আর রোগের পর্যায়ে রাখে না, যখন সে নিজেই একটা মেডিসিনাল রোগে পরিণত হয় তখনই হোমিওপ্যাথ খোঁজে। কিন্তু এমতাবস্থায় হোমিওপ্যাথির তেমন কি বা করার থাকে। তবু অনেক ক্ষেত্রেই সফলতার সাথে এসব জটিলরোগীকে চিকিৎসা দিয়ে আসছে। কিন্তু এই রোগীরাই যদি রোগের প্রারম্ভে হোমিওপ্যাথির শরণাপন্ন হতেন তাহলে রোগটি অল্প সময়ে তুলনামূলক কম খরচে ভালো হয়ে যেত। বিভিন্ন রকম জটিল সমস্যা যা প্রচলিত চিকিৎসায় সার্জারি করতে হয় অথবা সারাজীবন ওষুধ খেতে হয় যেমন, টনসিলাইটিস, পলিপাস, বিভিন্ন ধরনের টিউমার এমনকি ব্রেন টিউমার, লিম্ফোমা, একজিমা, সোরিয়াসিস, এ্যাজমা, অষ্টিওআর্থাইটিস, হাড় বৃদ্ধি, হাড় ক্ষয় যাওয়া, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, বাতজ্বর, হার্ট, কিডনি, লিভারের জটিল সমস্যা ইত্যাদি। সে ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথরা যদি কয়েকবছরেও রোগীকে সুস্থ করতে সক্ষম হয় সেটিকে কি বেশি সময় লাগে বলা হবে? নাকি বলা হবে হোমিওপ্যাথি ধীরে কাজ করে? যেখানে প্রচলিত চিকিৎসাই ব্যর্থ।

অনেকেই ভাবেন হো্মিওপ্যাথরা ব্যাকডেটেড। তারা ডায়াগনোসিস নির্ভর চিকিৎসা করে না, টেস্ট করায় না ইত্যাদি। কিন্তু তারা হয়তো জানেন না বাংলাদেশেই ঢাকা ইউনিভার্সিটির অধীনে বি,এইচ,এম,এস (ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারি) নামক একটি কোর্স চালু হয়েছে ১৯৮৯ সালে। কোর্সটিতে ৫ বছরের একাডেমিক এবং ১ বছরের ইন্টার্নি করতে হয়। এমবিবিএস কোর্সের সিলেবাসের এনাটমি, ফিজিওলজি, প্যাথলজি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফরেনসিক মেডিসিন, গাইনি, অবস ও সার্জারি বিষয়গুলো এখানে এমবিবিএসদের মাধ্যমেই অধ্যায়ন করানো হয়। এই কোর্সে বিভিন্ন টেস্ট ও রোগের ডায়াগনোসিস, প্রোগনোসিস গুরুত্ব সহকারে অধ্যায়ন করানো হয়। বিভিন্ন জটিল রোগের ক্ষেত্রে যেমন, কিডনি ও পিত্ত পাথরের অবস্থান, সাইজ ইত্যাদি দেখার জন্য আলট্রাসোনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি করে সঠিকভাবে ডায়াগনোসিস করা হয়। এছাড়া ক্যান্সারের স্টেজ নির্ণয়, হরমোনের পরিমাণ, ইনফারটাইল পুরুষ ও মহিলাদের কি কারণে সমস্যা হচ্ছে সেগুলো নির্ণয়ের জন্য আধুনিক ইনভেস্টিগেশনের সহায়তা নিয়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু একথা সত্য অনেক হোমিওপ্যাথ এখনো এগুলোকে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু তাদের কারণে সকলকে দোষারোপ করা বা হোমিওপ্যাথিকে অভিযুক্ত করা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
> হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা ব্যবস্থা

বাংলাদেশে
বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সমন্ধে জ্ঞান অর্জনের জন্য সরকারি দুইটি কোর্স প্রচলিত আছে। একটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৬ বছর ( ১ বছর ইন্টার্নি সহ) মেয়াদী ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারী (বিএইচএমএস) কোর্স এবং অন্যটি হলো বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের অধিভুক্ত ৪ বছর ৬ মাস (৬ মাস ইন্টার্নি সহ) মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথি মেডিসিন এন্ড সার্জারী (ডিএইচএমএস) কোর্স। বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃত হোমিওপ্যাথির ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রদানকারী ২টি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ এবং বোর্ড স্বীকৃত ৬৩টি ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রদানকারী মেডিকেল কলেজ/ইন্সটিটিউট রয়েছে।

> অন্যান্য দেশে

লন্ডন, জার্মানি এবং পার্শ্ববর্তীদেশ ভারত, পাকিস্থান, শ্রীলংকা,মালয়েশিয়া সহ বিশ্বের নানান দেশে হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা অর্জনের জন্য বিভিন্ন স্বীকৃত কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যুক্তরাজ্যে রয়েল লন্ডন হোমিওপ্যাথিক ইউনিভার্সিটি নামে একটি হোমিওপ্যাথিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রিসার্চে বের হয়েছে, এখন বাংলাদেশের ৪০ ভাগ মানুষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণার ফল আমেরিকার একটি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে আমেরিকাতেই ১৫% হোমিওপ্যাথির ব্যবহার বেড়েছে। সম্প্রতি সুইচ গভর্নমেন্ট তাদের দেশে ১৫০০০ কোয়ালিফাইড হোমিওপ্যাথকে সরকারিভাবে তাদের স্বাস্থ্যখাতে অন্তর্ভূক্ত করেছে। এই উদ্যোগকে সুইজারল্যান্ডের জনগণ চিকিৎসার বিপ্লব হিসাবে দেখছে। এছাড়া আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালি, বেলজিয়াম, আয়ার্ল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফ্রিকাসহ বিশ্বের ৪৩ টি দেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক রয়েছে এবং এসব দেশে প্রচুর পরিমাণে মানুষ হোমিওপ্যাথির উপর নির্ভর করছে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের ২৪৬৭৭২ জন্য কোয়ালিফাইড রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ রয়েছেন। আমেরিকা-ব্রিটেনেও উন্নত মানের মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। সেখানে উচ্চতর ডিগ্রিধারী চিকিৎসকগণ চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। এখনও ব্রিটেনের রানির ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসাবে একজন হোমিওপ্যাথ রয়েছেন। সম্প্রতি ভারতের একটি রিসার্চে বের হয়েছে সেদেশে ৫৫% মানুষ হোমিওপ্যাথির দিকে অগ্রসর হয়েছে।

২০০১ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলেছে, ৪৩টি দেশে হোমিওপ্যাথি ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্রিটিশ জার্নাল ও টাইমস অব লন্ডন জার্নালে যথাক্রমে প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটেনে ৪২% ও ৪৮% চিকিৎসকরা জটিল রোগে ও অপারেশনের বিকল্প হিসাবে হোমিওপ্যাথির কাছে রোগী রেফার করে।

ফ্রান্সে একটি গবেষণায় বের হয়েছে সেখানে ১১০০০ এর বেশি হোমিওপ্যাথ রয়েছে এবং ২৫% লোক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করছে। এছাড়া সারা বিশ্বে ২০০০০ এর মতো ফার্মাসিউটিক্যালস হোমিওপ্যাথি মেডিসিন উৎপাদন করছে।

যেখানে উন্নত বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো হোমিওপ্যাথি ব্যবহার করছে এবং এর ব্যহারের হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে আমাদের কি হয়েছে? আমরা কি ভ্রান্তির মধ্যেই থাকবো? কোন জিনিসের ইফিকেসি না থাকলে সেটি কিভাবে ২৩০ বছর ধরে চলে আসছে?

কেন হোমিওপ্যাথি?
হোমিওপ্যাথি ওষুধ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত, সাশ্রয়ী এবং জটিল রোগে এন্টিবায়োটিক ও অপারেশনের বিকল্প হিসাবে কাজ করে থাকে। মা ও শিশুদের জন্য সহজে ব্যবহার উপযোগী ও জটিলতামুক্ত। বর্তমানে বিশ্বে দুইটি কারণে মানুষ চিকিৎসায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একটি এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার আরেকটি অপারেশন। মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনার প্রফেসর ডাঃ মাইকেল ফ্রাস-এর মতে ‘হোমিওপ্যাথি একমাত্র এন্টিবায়োটিকের বিকল্প এবং পাশ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত কারণ এটি দেহের প্রধান অঙ্গগুলিকে আক্রমণ না করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যেখানে এন্টিবায়োটিক জীবনীশক্তিকে দূর্বল করে’।

এছাড়া সম্প্রতি অষ্ট্রেলিয়ার একটি রিসার্চে বলা হয়েছে, ফুসফুসের ইনফেকশনজনিত রোগে এন্টিবায়োটিকের চেয়ে দ্রুত আরোগ্য করতে পারে হোমিওপ্যাথি ওষুধ। তারা ৪টি দেশের ৫০০ জন রোগীর ওপর এই পরীক্ষা চালিয়েছেন।

যে সকল রোগ সার্জারি করতে হয় সে সব রোগে বিকল্প হিসাবে হোমিওপ্যাথি ব্যবহার হয়ে থাকে। ফিস্টুলা, পাইলস, টনসিলাইটিস, এপেন্ডিসাইটিস (গ্যাংগ্রিনাস ব্যতিত), বিভিন্ন রকম টিউমার, সিস্ট, ব্রেষ্ট টিউমার, ব্রেন টিউমার, আঁচিল, হাড় বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অপারেশনের অল্টারনেটিভ হিসাবে হোমিওপ্যাথির সফলতা প্রশংসনীয়। তবে ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে অবশ্যই রোগের গতিবিধি, বিস্তৃতি ইত্যাদি বিবেচনা করতে হবে।

এছাড়া শিশুদের কমন কোল্ড, কফ, জ্বর, বমি, এ্যাজমা, এ্যালার্জী, ডায়রিয়া, আমাশয়, এডিনয়েড, হাম, জলবসন্ত, মাম্পস, ব্রঙ্খাইটিস, হাইড্রোসেফালাস, মানসিক খর্বতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অল্প সময়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা সম্ভব।সাইকোসোমাটিক রোগেও যেমন মাইগ্রেন, এ্যাজমা, এসিটিডি, পেপটিক আলসার, এ্যালার্জী, মানসিক রোগেও সফলতার সহিত হোমিওপ্যাথি কাজ করে যাচ্ছে।

তবে হোমিওপ্যাথরা অনেক রোগেই গড়পড়তা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন যেটা দুঃখজনক। কারণ চিকিৎসক হিসাবে প্রথমে বোঝা উচিত তার কোন রোগ চিকিৎসা করবো আর কোনটা করবো না। কোন রোগটি ভালো হতে পারে এবং কোনটি সার্জারি করতে হবে। এখানেই হোমিওপ্যাথদের ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়। এর জন্য দায়ী কিছু হোমিওপ্যাথ, কিন্তু হোমিওপ্যাথি নয়।

হোমিওপ্যাথিতেই জটিল ও কঠিন রোগ আরোগ্য সম্ভব। সেটি প্রমাণের জন্য নিজেই কোনো ভালো হোমিওপ্যাথের শরণাপন্ন হউন। হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে কোয়ালিফাইড কোন হোমিওপ্যাথির পরামর্শ গ্রহণ করুন তাহলে ভ্রান্তি থাকবে না। নিজেও উপকৃত হবেন, জাতিও দেখবে চিকিৎসার নতুন দিগন্ত। তবে হোমিওপ্যাথি তখনি আরো একধাপ অগ্রসর হবে যেদিন বিজ্ঞান ন্যানোটেকনোলজিতে প্রবেশ করবে। সেদিনের জন্যই অপেক্ষা করছি!

তাই মহাত্মা হ্যানিম্যান ও তার পরবর্তী গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে হোমিওপ্যাথি ওষুধ স্নায়ুর মাধ্যমে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে জীবনীশক্তি জীবের সব ক্ষমতার উৎস এটা উপলব্ধি করে হোমিওপ্যাথিকে চিকিৎসাক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গভাবে যতই ব্যবহার করা যাবে জনস্বাস্থ্যের ততই উন্নতি হবে।আর আজকের এই দিনে হানেমানের কথা স্বরন করে, হানেমানের অতিতের সব গুন গুলা মাথায় রাখতে পারলে সেই হল প্রকৃত হোমিওপ্যাথ। হানেমান একটি কথা বলতেন; আমি বৃথা জীবন ধারন করিনি, যা ভাল তা শক্ত করে ধরব” সব কিছুই প্রমাণ করব।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

মশা নিধনে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহার শুরু চসিকের।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রথমবারের মতো মশা নিয়ন্ত্রণে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু করেছে। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্দেশক্রমে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মো. আশরাফুল আমিন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ শরফুল ইসলাম মাহি, কীটতত্ত্ববিদ রাশেদ চৌধুরী এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মশা নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর আগে গত ২৬ মার্চ নগরীর ১৭ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ডের সৈয়দ শাহ রোডের সামনের খালে পরীক্ষামূলকভাবে বিটিআই লার্ভিসাইড প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে আজ থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিটিআই প্রয়োগ শুরু করল চসিক।

চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ফগিং, লার্ভিসাইড ছিটানো, নালা–নর্দমা পরিষ্কার, আবর্জনা অপসারণ এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের আমেরিকান প্রযুক্তির বিটিআই ব্যবহারে মশার লার্ভা ধ্বংসে আরও কার্যকর ফল পাওয়া যাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

বিটিআই হলো একটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ব্যাকটেরিয়াভিত্তিক লার্ভিসাইড, যা বিশেষভাবে মশা, ব্ল্যাক ফ্লাই ও ফাঙ্গাস গ্ন্যাটের লার্ভা দমনে ব্যবহৃত হয়। এটি পানিতে প্রয়োগ করার পর লার্ভা খাদ্যের সঙ্গে বিটিআই গ্রহণ করে এবং ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদিত ক্রিস্টাল প্রোটিন টক্সিন লার্ভার পরিপাকতন্ত্রে কার্যকর হয়ে তাদের দ্রুত নিধন ঘটায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিটিআই মানুষের শরীর, গৃহপালিত প্রাণী, মাছসহ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর নয়; এমনকি উদ্ভিদ ও জলজ বাস্তুতন্ত্রেও কোনো বিষাক্ত প্রভাব ফেলে না। বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়ার মতো বাহক–বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে এটি একটি নিরাপদ ও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত সমাধান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

অধস্তন আদালতও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন।

অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করণের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম বিভাগ। ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রাম ই ফ্যামিলি কোর্ট উদ্বোধন করতে এলে আইন সচিব লিয়াকত আলী মোল্লাএর সাথে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন,

চট্টগ্রাম বিভাগ ও চট্টগ্রাম জজশীপ কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ এর নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎকালে তাদের দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানান।তারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় এর ন্যায় পদ -পদবী পরিবর্তন ও বেতন স্কেল নির্ধারণের ও দাবি জানান।নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ বিচার বিভাগ আইনের ধারক ও বাহক।
Pp

কিন্তু অধস্তন আদালতের কর্মকর্তাও কর্মচারীগন বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই বৈষম্য দূরীকরণের জোর দাবি জানান।আইন সচিব অবিলম্বে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা জজ মোহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন, মহানগর দায়রা জজমোঃ হাসানুুল ইসলামও চট্টগ্রামের সকল স্তরের বিচারক মন্ডলী।উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এনামুল হক আকন্দ ।বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন পারভেজ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোহাং শামসুল হক, , চট্টগ্রাম জজশীপ কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ এর সভাপতি বিপ্লব কান্তি দাশ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ