আজঃ সোমবার ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে মহান মে দিবস পালিত।

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

শোভাযাত্রা, সভা-সমাবেশ, লাল পতাকা মিছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে চট্টগ্রামে মহান মে দিবস পালিত হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলেছেন, শ্রমিকদের তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।দিবসটিকে ঘিরে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হয়ে ওঠে মিছিলের নগরী।
বৃহস্পতিবার (১ মে) সকালে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে বাংলাদেশ সিএনজি অটোরিকশা হালকাযান পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন মে দিবসের সমাবেশ করে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সমাবেশের পর র‌্যালি বের হয়।

সমাবেশে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামকে শ্রমিকবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। শ্রমিকদের অধিকার, ন্যায্য মজুরি ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।মেয়র আরও বলেন, শ্রমিকদের হয়রানি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে একসঙ্গে। সিটি করপোরেশন শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থরক্ষায় পাশে থাকবে।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবুল হোসাইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, নগর মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি, যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জমির উদ্দিন নাহিদ, জিয়াউর রহমান জিয়া, হালকা মোটরযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বক্তব্য দেন।

সকালে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, চট্টগ্রাম মহানগরী শাখা নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন চত্বর থেকে র‌্যালি বের করে। এর আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শ্রমিকরাই সম্মুখযুদ্ধ করেছে, জীবন দিয়েছে। বুকের রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমার ভাই উমর ফারুকসহ দুই শতাধিক শ্রমিক শাহাদাত বরণ করেছে। উমর ফারুক হত্যার প্রধান আসামি ফ্যাসিবাদের জননী হাসিনার বিচার করতে হবে।

তিনি বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আমাদের দেশ গড়ার এক ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। হাজারো শহিদ ও অসংখ্য তরুণ, শ্রমিক-জনতার আত্মত্যাগকে কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ গড়ার ও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিক-জনতাকে এখনই প্রস্তুতি গহণ করতে হবে।
ফেডারেশনের নগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে নহর জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমীনও বক্তব্য দেন।এদিকে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে নগরীর দুই স্থানে সমাবেশ হয়েছে। নগরীর কাজির দেউড়ির মোড়ের সমাবেশে চা শ্রমিক, পোশাক শ্রমিক, জাহাজ ভাঙা শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে যোগ দেন।

টিইউসি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, শ্রমিকনেতা ইফতেখার কামাল খান ও ফজলুল কবির মিন্টু এতে বক্তব্য রাখেন। ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আরেকটি সমাবেশ হয়েছে নতুন রেলস্টেশন চত্বরে। এতে সড়ক পরিবহণ, পোশাক, বিভিন্ন কলকারখানা, রেস্তোঁরা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং নাভানা ব্যাটারিজ শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যোগ দেন।

সমাবেশে টিইউসি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, স্বৈরাচারের পতনের পরও শ্রমিকদের ওপর দমন-পীড়ন, নির্যাতনের ঘটনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। ন্যায্য অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। শ্রমিকদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।
বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে বিকেলে সমাবেশ করেছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।শ্রমিক দলের বিভিন্ন ইউনিট নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, পাটকল শ্রমিক ইউনিয়নসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন নগরীতে মিছিল সমাবেশ করে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

সাঘাটায় নবযোগদানকৃত ইউএনও আশরাফুল কবীরকে সাংবাদিকদের ফুলেল শুভেচ্ছা

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় নবযোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুল কবীরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। বৃহস্পতিবার সকালে ইউএনও কার্যালয়ে এ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।

সাংবাদিকরা ইউএনওকে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানান এবং সাঘাটার সার্বিক উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁর সাফল্য কামনা করেন। এসময় ইউএনও আশরাফুল কবীর সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা গ্রহণ করে বলেন,
“সাঘাটার উন্নয়ন ও জনসেবার মানোন্নয়নে প্রশাসন ও গণমাধ্যম পরস্পরের পরিপূরক। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”তিনি আরও বলেন,সাঘাটা উপজেলার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তুলতে চাই। এ কাজে গণমাধ্যমের গঠনমূলক ভূমিকা অব্যাহত থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকরা নতুন ইউএনওর সঙ্গে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা, প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং স্থানীয় সমস্যাবলি নিয়ে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় মহলে ধারণা করা হচ্ছে, ইউএনও আশরাফুল কবীরের যোগদানে সাঘাটা উপজেলায় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল হবে এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে নতুন দিগন্ত যুক্ত হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে হাল্ট প্রাইজ ২০২৫ রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম।

হাল্ট প্রাইজ ২০২৫/২৬ সনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে নিবন্ধন বুথ, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন এবং ক্লাস প্রমোশন চালু করা হয়েছে। এ বছর প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিগত ও দলীয়—উভয়ভাবেই অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। ব্যক্তিগত নিবন্ধন ১০ ডিসেম্বর (বুধবার) এবং দলীয় নিবন্ধন ১৫ ডিসেম্বর (সোমবার) তারিখে সমাপ্ত হবে।

এবারের প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ থিম “আনলিমিটেড”-যা শিক্ষার্থীদের জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর উদ্ভাবনী সমাধান উপস্থাপন করার সুযোগ করে দিচ্ছে।এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের সৃজনশীলতা এবং উদ্যোক্তা দক্ষতার মাধ্যমে দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন, অসমতা এবং শিক্ষার মতো বৈশ্বিক সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান উপস্থাপন করতে পারবেন। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্ল্যাটফর্ম যেখানে সীমাহীন চ্যালেঞ্জের ভিত্তিতে তাদের ধারণাগুলোকে বাস্তবায়নে রূপ দেওয়া যাবে।

এ বছরের ক্যাম্পাস ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ অনিক, চিফ অব স্টাফ কাজী মুহাইমিনুল ইসলাম মুনাজ এবং চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট কারিন সাফফানা—তাদের নেতৃত্বে প্রতিযোগিতাটি সফলভাবে আয়োজনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

প্রতিযোগিতায় ২–৪ সদস্যের দল অংশ নিতে পারবে এবং সকল অংশগ্রহণকারীর বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে। প্রতিটি দলে অন্তত একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা বাধ্যতামূলক। দলের অন্যান্য সদস্য যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অংশগ্রহণ করতে পারবে।এছাড়া এ বছর দল না থাকলেও শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগতভাবে নিবন্ধন করতে পারবেন; পরবর্তীতে তাদের নিয়ে দল গঠন করা হবে।

রেজিস্ট্রেশন বুথ অথবা অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমে দলীয় অথবা ব্যক্তিগতভাবে নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধনে কোনো ফি নেই।দলীয় সদস্যরা যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আসুন না কেন, প্রতিযোগিতায় তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ