আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন খাতে ট্যারিফ বাড়ানো মানে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

  1. চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেবা খাতের মাশুল বা ট্যারিফ দীর্ঘদিন পর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হচ্ছে। যা সরকারি গেজেট জারির অপেক্ষায় রয়েছে। নৌপরিবহন উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিদর্শনে এসে বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর কথা বলেন। তবে কত শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি তিনি। তবে বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা‘।
  2. বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, তাদের প্রস্তাবের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মাশুল নির্ধারণ করা হচ্ছে। এটি তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। বন্দর ব্যবহারকারীরা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। একবার আলোচনার পর আর এ বিষয়ে তাদের সাথে বসা হয়নি।এক লাফে অনেক বেশি হারে মাশুল বাড়ানোর খবর শুনে বন্দর ব্যবহারকারীরা আশঙ্কা করছেন এর প্রভাব দেশের সামগ্রিক ব্যবসা খাতে পড়বে। সবশেষে মোটাদাগে এর প্রভাব ভোক্তা পর্যায়েই পড়বে বলে মত তাদের।
  3. শিপিং এজেন্টস অ্যাসেসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরে বিভিন্ন লাইনে (খাতে) মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে সেসবের সঙ্গে একমত নই। এখন মাশুল বাড়ানোর সময়ও নয় বলে মনে করি। সবমিলিয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মাশুল নতুন করে বিবেচনা করা উচিত বলে আমি মনে করি। মূলত দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় পণ্য বা কন্টেইনারবাহী জাহাজ আসার পর থেকে সেগুলোকে দেওয়া সেবার বিপরীতে ট্যারিফ বা মাশুল নিয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
  4. মূলত জাহাজ পরিচালনাকারী কোম্পানি, কন্টেইনার পরিচালনাকারী কোম্পানি এবং আমদানি ও রপ্তানিকারকরা এসব মাশুল দিয়ে থাকে। জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে শিপিং এজেন্ট এবং আমদানিকারকদের পক্ষ হয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা এসব মাশুল পরিশোধ করে থাকেন।
    চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ট্যারিফ বা মাশুল বাড়ানোর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তির পর সেটি আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদনের পর গেজেট হবে এবং কখন থেকে সেটি কার্যকর হবে তা গেজেটে বলা থাকবে। ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সেবার মাশুল বাড়ানো হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, এরপর আর বাড়েনি। সবমিলিয়ে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মত বাড়ছে। এর মধ্যে কোনটির কমছে বা কোনটির বাড়ছে।তার দাবি, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানকে হিসাবে নিলে মাশুল ‘খুব বেশি’ বাড়ছে না।
  5. বন্দর সচিব ওমর ফারুক আরো বলেন, বন্দরের সেবার মান বাড়ানোর জন্য মাশুল বাড়ানো হচ্ছে। বন্দরের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাও বেড়েছে। এটি একটি সরকারি সংস্থা। সুযোগ-সুবিধা ও সেবার মান বাড়ানোর জন্য মাশুল বাড়ছে।
  6. বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের এক নেতা বলেন, গত ২ জুন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে বন্দরের মাশুল (ট্যারিফ) হালনাগাদ করার জন্য সভা হয়েছিল। সেখানে বন্দর ব্যবহারকারীরা তাদের মত দিয়েছেন। কিন্তু আর কোনো আলোচনা না করেই চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, এটা দু:খজনক। বর্তমান পরিস্থিতিতে মাশুল বাড়ানো মানে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং এর প্রভাব গিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে পড়বে।
    চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বন্দরের আদায় করা সবধরণের মাশুল ১৯৮৬ সালে নির্ধারণ করা। এরপর ৪০ বছরে নতুন করে মাশুল বাড়ানো হয়নি। শুধু ২০০৭-০৮ অর্থবছরে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় পাঁচটি মূল ট্যারিফ আইটেম বাড়ানো হয়। এর আগে ১৯৯৬ এবং পরে ২০১২ সালে দুই দফা তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যকর হয়নি। ২০২০ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন করে মাশুল বাড়ানোর কাজ শুরু করে এবং স্পেনভিত্তিক একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ট্যারিফ হালনাগাদ করে বন্দরের কাছে ২০২২ সালে জমা দেয়। বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ আলোচনার পর মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাব চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
  7. চট্টগ্রাম বন্দরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বন্দরে ৫২টি খাতে মাশুল আদায় করা হয়ে থাকে। আদায়ের সামঞ্জস্য এনে সেটি ২৩ টিতে আনা হয়েছে।
    বন্দর ব্যবহারকারীদের হিসাবে, ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বর্তমানে ৪৩ ডলারের মত। প্রস্তাবিত নতুন মাশুলে তা হবে ৭০ ডলারের কিছু বেশি। এছাড়া আমদানি করা পণ্যভর্তি কন্টেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে প্রথম চার দিন বিনা মাশুলে রাখা যায়। পরের একদিনে কন্টেইনার প্রতি মাশুল দিতে হয় ৬ ডলার, নতুন হারে তা পড়বে ৬ দশমিক ৯ ডলার।
  8. শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে দেশের শিল্পায়ন, বাণিজ্য ও সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। উন্নয়ন অবশ্যই কাম্য, কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং দেশের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিতকারী।চট্টগ্রাম বন্দর এমনিতেই লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এটির আয়ের অর্থ ব্যয় করে বন্দরের আধুনিকায়ন থেকে শুরু করে সকল ব্যয়ের পরও বিপুল অর্থ সঞ্চিত থাকে। ট্যরিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে বাণিজ্যে ও শিল্পে মন্দা এবং সামস্টিক অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।
  9. তিনি বলেন, ট্যারিফ বাড়ানোর অর্থ হল আমদানি-রপ্তানির খরচ বাড়বে, যা সরাসরি প্রভাব পড়বে পণ্যের বাজারমূল্যে এবং পরোক্ষভাবে এই চাপ গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। বিশেষত যেসব কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য আমদানিনির্ভর সেগুলোর মূল্যবৃদ্ধি দেশের সাধারণ জনগণের ওপর চাপ তৈরি করবে।
    বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, এমনিতেই ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই নানামুখী চাপে রয়েছে এবং ব্যবসা আগের চেয়ে অনেক প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। এর মধ্যে বন্দরের বিভিন্ন খাতে ট্যারিফ বাড়ানো হবে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা‘।
  10. অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল খাত ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে লড়াই করছে। এই অবস্থায় ট্যারিফ বাড়ালে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে এবং রপ্তানিপণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।মাশুল বাড়লে ব্যবসার খরচ বাড়বে এবং এর প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে পড়বে এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।


চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গাঙ্গেয় বদ্বীপের সংগীত ব্যক্তিত্ব যোগী স্বপন কুমার দাশ’র রচিত আধ্যাত্মিক ও দেহতত্ত্ব বিষয়ক গান নিয়ে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাংবাদিক কিরন শর্মার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলক ও প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম এর পরিচালক মো.মাহফুজুল হক। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর প্রখ্যাত সাধক শ্রীমৎ স্বামী সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী’জীকে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ‘খুঁজি তাঁরে’ অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয়।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র ঘোষ (যুদ্ধকালিন কমান্ডার), আব্দুর রহিম (লোক ও মরমি শিল্পী), রূপম ভট্টাচার্য (সাংবাদিক), স ম জিয়াউর রহমান(সাংবাদিক), দিদারুল ইসলাম (সংগীত পরিচালক ও কন্ঠ শিল্পী), তন্দ্রা দাশগুপ্তা, সংগীত শিল্পী সঞ্জয় রক্ষিত সহ প্রমুখ। সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত

ছিলেন পাপিয়া আহমেদ (সংগীত প্রযোজক বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম), অপু বর্মন (সংগীত শিল্পী বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন এবং সংগীত শিক্ষক জেলা শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রাম), অপু সেনগুপ্ত (বিশিষ্ট গীতিকার বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন), দীপ্ত দত্ত সংগীত শিল্পী (বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন)।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন, খ্যাতনামা মরমি কন্ঠ শিল্পী শিমুল শীল, বাউল শিল্পী বাবুল শীল, অভিষেক দাশ, বাউল জুয়েল দ্বীপ, শিউলী চৌধুরী, আনন্দ প্রকৃতি(মো:তৌহিদুল ইসলাম), আধাত্মিক শিল্পী সুরনাথ, কাওয়ালী শিল্পী মেঘলা। ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি প্রতিযোগিতার সেরা কন্ঠ শিল্পী বাঁধন ঘোষ, ইন্দ্রিলা ঘরজা, মিম দাশ, অধরা চৌধুরী রাত্রি, আরাধ্যা মজুমদার, সৈয়দ রাসতিন, অরূপ কুমার শীল, ঊর্মি নাগ সংগীত পরিবেশন করেন।

যন্ত্র সংগীত শিল্পীতে ছিলেন- কীবোর্ডে রুবেল ঘোষ, অক্টোপ্যাডে পাপন, তবলায় উৎস, বাংলা ঢোলে হৃদয় বাঁশিতে নিলয়। সংগীত তত্বাবধানে যোগী স্বপন কুমার দাশ, অনুষ্ঠান তত্বাবধানে মো: মোহসীন(সাধারণ সম্পাদক, ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি সংসদ)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মো: সাইফুর রহমান ও ববিতা ইসলাম।

তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে : জামায়াত আমির।

ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরদিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অব্যাহত রেখেছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে।

শুক্রবার দুপুর ২টায় ৮ দলের উদ্যোগে আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি আরও বলেন, আমরা ৮ দলের বিজয় চাই না, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। সেই আকাঙ্খার বিজয় হবে কুরআনের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম থেকে ইসলামের বিজয়ের বাঁশি বাজানো হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে কুরআনের বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, গাড়ি দিয়ে পালানোর সাহস তারা হারিয়ে ফেলেছিল। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিকে এই অপকর্মে লাগানোর চেষ্টা করেছিল। দেশের সবকিছু তারা ধ্বংস করেছিল। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ফ্যাসিবাদকে নতুন করে রুখে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।

জামায়াতের আমির বলেন, তারা নিজেদের উন্নয়ন করেছিল। রাস্তাঘাট তৈরি করেছিল রডের বদলে বাঁশ দিয়ে। বাংলাদেশের টাকা লুট করে সিঙ্গাপুরে গিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। শাপলা চত্বরে অসংখ্য মাওলানাকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বলেছিল রঙ দিয়ে শুয়ে ছিল। তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে।
আন্দোলনরত ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে ঘোষণা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ঐক্য আমাদেরকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

৮ দলের প্রধানদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের ইসলামি শক্তিকে কেউ নিস্তব্ধ করতে পারবে না। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামপন্থীদের। এখানে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা কবে না।তিনি বলেন, আসুন আমরা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে চট্টগ্রামকে ইসলামের ঘাঁটি বানাই। চট্টগ্রামের মাটি ইসলামের ঘাঁটি। ৮ দলের এই শক্তি ক্ষমতায় গেলে আপনারই দেশ শাসন করবেন। কারও দাদার শক্তিতে এ দেশ আর চলবে না।

এটিএম আজহার বলেন, বাংলাদশ এমন পর্যায়ে দাঁড়াবে বিদেশিরা এখানে পড়ালেখা করতে আসবে। আসুন আমরা সবাই মিলে সেই দেশ গড়ি।খেলাফতে মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, আগামীতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বিজয়ের মাধ্যমে কোরআনের শাসন শুরু হবে। সোনার বাংলাদেশ দেখা শেষ, ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখা শেষ- এবার আল কোরআনের বাংলাদেশ দেখতে চাই, ইসলামের বাংলাদেশ দেখতে চাই।

তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশে আমাদের অধিকার চাই, মালিকানা কায়েম করতে চাই। গরিব মেহনতী মানুষকে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। ইসলাম যে বৈষম্যহীনের কথা বলা হয়েছে। পুঁজিবাদর অর্থ ব্যবস্থা করব দিয়ে কোরআনের অর্থ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।

মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশে কোরআনের অর্থ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নিজেদের অধিকার ও মালিকানা কায়েম করতে। পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার কবর তৈরি করে সেই ধ্বংস স্তূপের ওপর আল্লাহর কুরআনের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের বিগত দিনগুলো শুধু উন্নয়নের গল্প শুনানো হয়েছে। কিন্তু নিজেরাই হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছে।

সাধারণ কেটে খাওয়া মানুষের কোন পরিবর্তন হয়নি। এই তো উন্নয়ন। বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি হ্যাঁ ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে। এসময় তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
সমাবেশে ৮ দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমির আলহাজ¦ মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম

সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মুন্সি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আলাউল্লাহ আমিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব আল্লামা মুফতি মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আলী উসমান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, খেলাফত মজসিলের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসানুল্লাহ ভূঁইয়া, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আলহাজ¦ শাহজাহান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি রেজাউল আববার, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরী আমির মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চট্টগ্রাম মহানগরী সহ-সভাপতি এডভোকেট আব্দুল মোতালেব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু মুজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা এমদাদ উল্লাহ সোহাইল, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি অধ্যাপক খুরশিদ আলম এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা জিয়াউল হোসাইন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ