
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় তিস্তা নদীর পানি বেড়ে ডালিয়া ও দোয়ানি পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে এখন পানি বিপৎসীমার নীচেই রয়েছে। এরই মধ্যে তিস্তা পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
রংপুর ছাড়াও লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা তিস্তার তীরবর্তী এলাকায় বন্যার আশঙ্কা করছে স্হানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড( পাউবো)

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্ট পাউবো জানায়, ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিকাল ৪টায় এটি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। রাত অবধি তা বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর পর্যন্ত উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে তিস্তা নদীর রংপুর কাউনিয়া পয়েন্টে বেলা ৩টার তথ্য অনুযায়ী, সমতল ২৮ দশমিক ২৮ মিটার (বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচে) প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে বৃহস্পতিবার ভোর নাগাদ তা বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাউবো রংপুরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, “উজানে ভারি বর্ষণের কারণে তিস্তাসহ আশপাশের নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাইকিং করে সতর্কতা জারি করে নিম্নাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা মানুষকে সচেতন করছি। কোথাও কোনো সমস্যা হলে পাউবো বোর্ড তা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস দিয়ে মানুষজনের চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকে বৃষ্টির ফলে আগাম জাতের আমন ধান তিস্তার চরে কেটে রাখায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। বন্যার খবর শোনার পর থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেটে রাখা ধান চর থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা। পাশাপাশি কাটতে না পারা আমন ধান ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি বলেন, “আমরা নদী তীরবর্তী মানুষদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছি।”
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, তিস্তা পাড়ের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
পাউবো নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টের প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, “ভারতের উত্তর সিকিমে লোনক হ্রদে ভারি বৃষ্টির জেরে তিস্তা নদীর পানি প্রবল বেগে ভয়াবহ ঢল নেমে আসছে। এর ফলে সিকিমের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। হড়কা বান (আকস্মিক বন্যা) বলা হচ্ছে এটিকে।