
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ‘তলে তলে আপস’ হওয়ার বিষয়ে তোলপাড় করা বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জানিয়েছেন, আপস শব্দে তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কোন্নয়ন বুঝিয়েছেন। আর ‘তলে তলে’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন ‘পাবলিক খায়’ বলে।
দুই দিন আগে দলীয় এক সমাবেশে দেওয়া তুমুল আলোচিত বক্তব্যের বিষয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। এই ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, আমিনবাজারের জনসভায় সেই বক্তব্যে তিনি ‘ভুল কিছু বলেননি’।

‘তলে তলে আপস হয়ে গেছে’- বলতে কী বুঝিয়েছে, জানতে চাইলে কাদের বলেন, “তলে তলে আপস মানে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন বা আমাদের সম্পর্ক ভালো আছে, আমি সেটা বুঝাতে চেয়েছি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আপস শব্দটি নেতিবাচক হিসেবে ব্যবহার হয়। ‘তলে তলে’ শব্দটি বাংলায় নেতিবাচক অন্থে গোপন কোনো কিছুর নির্দেশ করে। এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “‘তলে তলে’ যে বলি, সেটা পাবলিক খায়। সেজন্যই তো বলি- ‘খেলা হবে’।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের বড় বড় দেশ ও শক্তির নানামুখি তৎপরতা নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকার আমিনবাজারে আওয়ামী লীগের জনসভায় বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রয়োগ এবং আরও নিষেধাজ্ঞার গুঞ্জনের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “কোথায় স্যাংশন, কোথায় ভিসা নীতি! তলে তলে আপস হয়ে গেছে, আপস হয়ে গেছে। দিল্লি আছে, আমেরিকারও দিল্লিকে দরকার। আমরা আছি, দিল্লিও আছে। দিল্লি আছে, আমরাও আছি। শত্রুতা কারও কাছে না, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব।
“শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা, ভারসাম্য সবার সঙ্গে করে ফেলেছে, আর কোনও চিন্তা নাই। নির্বাচন যথাসময়ে হবে। অক্টোবর থেকে শুরু, খেলা হবে…। এই মাস থেকে শুরু, খেলা হবে…। আগামী মাসে সেমি ফাইনাল, জানুয়ারিতে ফাইনাল। বিএনপি এখন ফাউল করতেছে। ফাউল করলে হলুদ কার্ড, ফাউল করলে আবার লাল কার্ড। খেলা নিয়ে ফাউল করা চলবে না।
পরদিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগ নেতাকে আক্রমণ করে বক্তব্য রাখেন। তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, “গতকাল ওদের (আওয়ামী লীগের) সাধারণ সম্পাদক সাহেব বললেন, দিল্লি আছে, আমরাও আছি, আমরা আছি, দিল্লি আছে। বাহ! প্রশ্নটা হচ্ছে কী বলতে চেয়েছেন?
‘‘দিল্লি কি আপনাদের অপকর্মগুলোতে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে তোমার এবারও করতে থাক? বলছে যে দরকার নাই নির্বাচনের? দিল্লি কি বলেছে যে, বাংলাদেশে জোর করে নির্বাচন ঘোষণা কর? তাহলে পরিষ্কার করে বলেন।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের দেশে গুজব এবং অপপ্রচারের জন্য বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে আমাদের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক অবনতির দিকে, আমাদের সম্পর্ক খারাপ। এ ধরনের একটি গুজব এবং অপপ্রচার ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। সম্পর্ক খারাপ এ বিষয়টি আমাদের দেশে সার্বিক অবস্থা রাজনীতিতে এ মুহূর্তে কাম্য নয়।”
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেশটির নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে যে বৈঠক করেছেন, সেটি নিয়েও কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “এই বৈঠকের বিষয়ে এক সপ্তাহ পর্যন্ত কেউ জানে না। তাহলে তলে তলে অনেক কিছু হচ্ছে আমি যে কথা বলেছি, আমি তো ভুল বলিনি।
“জো বাইডেনের (আমেরিকার প্রেসিডেন্ট) সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার কন্যা যে সেলফি তুলেছেন তখনও তো কিছু কথা হয়েছে। সেটা তো এখন বলাবলি হচ্ছে। এটা তো আর প্রকাশ্যে হয়নি।
“এটা কোনো কাগজেও আসেনি, মিডিয়ায়ও আসেনি। সুতরাং তলে তলে আপস মানে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন বা আমাদের সম্পর্ক ভালো আছে, আমি সেটা বুঝাতে চেয়েছি।