আজঃ শুক্রবার ২০ জুন, ২০২৫

আজকের দিনটি অনেক গর্বের ও আনন্দের দিন বলে উল্লেখ করলেন: প্রধানমন্ত্রী।

ঢাকা অফিস:

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি হস্তান্তরের দিনটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং আনন্দের দিন বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সফল পরিণতি লাভ করছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি শান্তি রক্ষায় ব্যবহার করবে।

বৃহস্পতিবার বিকালে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে রুশ পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ পারমাণবিক জ্বালানির একটি নমুনা হস্তান্তর করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের হাতে।

ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের কার্যকর সদস্য হওয়ার দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা,

মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ বীর শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে স্মরণ করে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সালাম জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি কৃতজ্ঞতা জানান বন্ধুপ্রতিম রাশান ফেডারেশনের সরকার এবং জনগণের প্রতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধু ১৯৫৬-৫৭ সালে প্রাদেশিক সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতিরোধ এবং গ্রামীণ সহায়তা মন্ত্রী থাকাকালে এ অঞ্চলে উৎপাদনমুখী শিল্পায়নের উপর জোর দিয়ে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছিলেন।

“১৯৬১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে একটি এবং পূর্ববাংলার রূপপুরে একটিসহ মোট দু’টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ৭০ সাল পর্যন্ত নামমাত্র জমি অধিগ্রহণ ছাড়া সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য তারা কিছুই করেনি।”

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সমুদ্র সম্পদ এমনকি খনিজ সম্পদ জাতীয়করণ করেছিলেন এবং বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে আমাদের গ্যাস ফিল্ডগুলো কিনে নিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দিয়েছিলেন।”

বঙ্গবন্ধু বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে প্রস্তাবিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সে অনুযায়ী কিছু কাজও হয়েছিল। দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঘাতকরা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর এই মেগা প্রকল্পটিসহ সকল জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড থেমে যায়।

১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন স্টেটমেন্ট ও পলিসি স্টেটমেন্ট অন পাওয়ার সেক্টর রিফর্মস’ প্রণয়ন ও অনুমোদন করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা জ্বালানি নীতিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করি। ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করি। ‘বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশন প্ল্যান-২০০০’ প্রণয়ন করি। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা- আইএইএর সহযোগিতা চাই।

“বিষয়টি যেহেতু আমাদের কাছে একেবারেই নতুন ছিল, সে কারণে জটিল আইন-কানুন তৈরি করতেই আমাদের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই আমাদের নেওয়া সকল জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি-প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। আবারও হিংসা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বেপরোয়া লুটপাট এবং সেনা শাসনের পুরু আবরণে গণতন্ত্র ঢাকা পড়ে। তবে ২০০৮ সাল থেকে পরপর ৩ দফা সরকারে থাকার কারণেই আমরা আজ বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছি।”

‘রূপকল্প ২০২১’ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টারপ্ল্যান-২০১০’ প্রণয়ন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আবার রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি। বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে। তাছাড়া, আইএইএ শুরু থেকেই আমাদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছে।”

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন পর্যন্ত আপনার সর্বাত্মক সহযোগিতায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।”

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে জ্বালানি সংযুক্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “পরমাণু শক্তি আমরা শান্তি রক্ষায় ব্যবহার করব। আমরা বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রের সাধারণ ও সম্পূর্ণ নির্মূল এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। আমরা ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করেছি এবং একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি।”

যেকোনো দুর্যোগে আমাদের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকটা খেয়াল রেখে এই প্ল্যান্টের ডিজাইন প্রণয়ন এবং নির্মাণকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ব্যবহৃত জ্বালানি ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা রাশান ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি সই করেছি। রাশান ফেডারেশন এসব স্পেন্ট ফুয়েল তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবে।”

অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন ও আরএনপিপি নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. শৌকত আকবর উপস্থিত ছিলেন।

রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার। দুটি ইউনিটে বিভক্ত এ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের কাজ এরই মধ্যে ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ ৭০ শতাংশ এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাশিয়া থেকে দেশে আসে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পরদিনই তা প্রকল্প এলাকায় নেওয়া হয়।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রামে করিডোর ষড়যন্ত্র রুখতে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা।

চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত দেশের সর্বাধুনিক কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলেন করেছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর মোমিন রোডের বৈঠক খানায় আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন।

সম্মেলন থেকে এনসিটিকে ডিপি ওয়ার্ল্ড নামক বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং রাখাইনে তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি এবং এই সিদ্ধান্ত বাতিলে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বক্তারা। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ২০ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত বন্দর সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়, ৩০ জুন চট্টগ্রাম বন্দর গেটে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ।

সংবাদ সম্মেলনে এ এম নাজিম উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্ট ২০২৪-এর গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এনসিটি ইজারার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকার সেই প্রত্যাশা উপেক্ষা করছে। তিনি গত ৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “প্রতিহত” শব্দের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হুমকি দেওয়া গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত অশনিসংকেত।

সভায় বক্তারা জানান, এনসিটি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে আধুনিক ও কৌশলগত কনটেইনার টার্মিনাল, যা সম্পূর্ণভাবে বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এবং বর্তমানে শতভাগ বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। তারা বলেন, এনসিটি ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দিলে দেশের ৪৫% কনটেইনার পরিচালনার ক্ষমতা বিদেশিদের হাতে চলে যাবে, যা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ।তারা আরো বলেন, পতেঙ্গা টার্মিনাল ইতোমধ্যেই সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ের হাতে ইজারা দেওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি, বরং টার্মিনালটির সক্ষমতার ১০-১২ শতাংশও ব্যবহার হচ্ছে না। এনসিটির ক্ষেত্রেও একই পরিণতি আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্মেলনে বক্তারা করিডোর প্রসঙ্গেও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রাখাইনে ‘মানবিক সাহায্য’র নামে করিডোর দেওয়ার গুঞ্জনে বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূরাজনৈতিক সংকটে জড়িয়ে পড়তে পারে। প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে জনমনে আরও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

বক্তারা ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এনসিটি ইজারা বাতিল, পতেঙ্গা টার্মিনালের কার্যকারিতা মূল্যায়ন, করিডোর পরিকল্পনা পরিহার, এবং কৌশলগত বিষয়ে শ্রমিক ও জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএ’র সাবেক সাধারণ

সম্পাদক কাজী নুরুল্লাহ বাহার, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এস কে খোদা তোতন, চট্টগ্রাম স্কপের যুগ্ম সম্পাদক জাহেদ উদ্দিন শাহিন, শ্রমিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলার নেতা মহিন উদ্দিন, বিএফটিইউসি’র চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক কে এম শহিদুল্লাহ এবং বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক বাউ আহাম্মদ ভূঁইয়া প্রমুখ।সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তপন দত্ত, এ এম নাজিম উদ্দিন ও কাজী নুরুল্লাহ বাহার।

ক্রমান্বয়ে স্বাভাভিক হচ্ছে বন্দরের কন্টেইনার জট।

চট্টগ্রাম বন্দরে একের পর এক কন্টেনাই জট ক্রমান্বয়ে স্বাভাভিক হচ্ছে। ঈদুল আজহার ছুটি শেষে বন্দরের কার্যক্রম চলতে থাকায় দু’দিনের মধ্যে কনটেইনার জট পরিস্থিতি আর থাকবে না বলে জানা গেছে। এর আগে ঈদুল আজহার টানা সরকারি ছুটিতে খালাস ঠিকমতো না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৪৫ হাজার কনটেইনারের জট তৈরি হয়েছে।

তবে ছুটি শেষে জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং খালাস আগের নিয়মে ফিরে যাচ্ছে। বন্দরকেন্দ্রিক শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোতে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরুর পর বন্দর থেকে আমদানি কনটেইনার ডেলিভারি এবং রফতানি কনটেইনার প্রবেশের হার বেড়েছে।

বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজারেরও বেশি আমদানি কনটেইনার বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে। এ গতি অব্যাহত থাকলে সর্বোচ্চ ক্রমান্বয়ে কনটেইনার জট পরিস্থিতি আর থাকবে না। বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে) কনটেইনার রাখার জায়গা আছে। তবে ৪০ হাজার টিইইউসের বেশি কনটেইনার ডেলিভারির জন্য বন্দরের ভেতরে অপেক্ষমাণ থাকলে স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে এবং দ্রুত জট পরিস্থিতি তৈরি হয়। গত রোববার কর্মদিবস শুরুর প্রথম দিনেই পুরোদমে ডেলিভারি শুরু হয়েছে। আইসিডিগুলো থেকেও কনটেইনার আসছে। ডেলিভারি রেট বেড়েছে। সোমবারও পুরোদমে কার্যক্রম চলছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ছুটি শেষে খোলার প্রথমদিন রোববার (১৫ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরের অভ্যন্তরে আমদানি-রফতানি পণ্যবোঝাই ও খালিসহ মোট কনটেইনার ছিল ৪৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে)।

সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে ২৪৩৬ টিইইউস কনটেইনার। জেটিতে ১০টি জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস চলছিল। জাহাজগুলোতে মোট ৪২০০ টিইইউস কনটেইনার আছে। এছাড়া জেটিতে প্রবেশের অপেক্ষায় বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে অপেক্ষমাণ আছে আরও ১০টি জাহাজ, যাতে কনটেইনার আছে ১০ হাজার টিইইউস।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ বলেন, সরকারি ছুটির শেষদিন অর্থাৎ গত শনিবার থেকেই বন্দরে কাজের গতি বেড়েছে। স্টেকহোল্ডাররা সবাই কাজে যোগ দিয়েছেন, সবার কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।

জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে গত ৫ জুন থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়, যা ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০দিন ছিল। এত দীর্ঘ ছুটির কারণে বন্দরে অপারেশনাল কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি এবং আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাবের আশঙ্কা করে আসছিলেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। এ আশঙ্কাকে আমলে নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে সম্ভাব্য অচলাবস্থা মোকাবিলায় ১০টি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এ সিদ্ধান্তের আলোকে চট্টগ্রাম বন্দরে শুধুমাত্র ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু এরপর থেকে আগের মতোই ২৪ ঘণ্টা সচল আছে বন্দর।তবে ছুটিতে কলকারখানা বন্ধ থাকায় এবং বেসরকারি ডিপোগুলোতে শ্রমিক সংকটের কারণে কনটেইনার ডেলিভারির হার ‘অস্বাভাবিক’ কমে গিয়েছিল। এতে কনটেইনার খালাসের জন্য নোঙ্গর করা জাহাজকে জেটিতে অতিরিক্ত একদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছিল।

বন্দর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সরকারি ছুটি শুরুর দিন গত ৫ জুন বন্দরে কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছিল ৪ হাজার ১২২ টিইইউস। এদিন জাহাজে রফতানি কনটেইনার তোলা হয়েছিল ৯ হাজার ৭২০ টিইইউস আর আমদানি কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানো হয়েছিল ৫ হাজার ৪১১ টিইইউস।

কিন্তু ঈদুল আজহার আগের দিন ৬ জুন থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। এদিন মাত্র ৫২১ টিইইউস কনটেইনার ডেলিভারি হয়। ঈদের দিন ৭ জুন বিকেল ৪টা থেকে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হলেও বন্দর থেকে কোনো কনটেইনার ডেলিভারি হয়নি। তবে কনটেইনার জাহাজ থেকে ডেলিভারি হয় ৩০৮ টিইইউস।
ঈদের পরদিন ৮ জুনও কোনো কনটেইনার ডেলিভারি হয়নি। ৯ জুন ৪৩১ টিইইউস, ১০ জুন ১ হাজার ৩৮১ টিইইউস, ১১ জুন ১ হাজার ৭৮১ টিইইউস ডেলিভারি হয়।

ঈদের ছুটিতে জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাসের পরিমাণও কমে যায়। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন আমদানি কনটেইনার নামানো হয় ৫ হাজারের মতো। কিন্তু ৫ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৫৪৪ টিইইউস এবং সর্বনিম্ন ২ হাজার ৩১১ টিইইউস আমদানি
কনটেইনার জাহাজ থেকে খালাস হয়। টানা ১০ দিনের ঈদের ছুটির শেষ দিন শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ডে জমে থাকা কনটেইনারের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৪১৬ টিইইউস। এর পরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি বাদে আরও দুই হাজার কনটেইনার জমা হয়। এ হিসেবে বন্দরের ধারণক্ষমতার ৮০ শতাংশ জায়গায় কনটেইনার জমে গেছে।

ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ বলেন, আজ সোমবারও সারাদিন গতিতে ডেলিভারি হচ্ছে। তবে ৪৪ হাজারের বেশি কনটেইনার জমলেও বন্দরের কাজে তেমন প্রভাব পড়েনি। এখন যেভাবে কাজের গতি বেড়েছে, এই জটটাও আশা করছি আর থাকবে না।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ