আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে পেঁয়াজের বাজারে আগুন নেপথ্যে খাতুনগঞ্জের সিন্ডিকেট ব্যাবসায়ীরা

টিটু বড়ুয়া সুরঞ্জিত

বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের বাজারে আগুন, সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ভারত সরকার পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বেঁধে দেয়ার খবর প্রচার হওয়ার পরপরই দেশের পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অতি মুনাফাখোর পাইকারি এই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।

দেশের বাজারে এখনো বাড়তি দামের পেঁয়াজ ঢোকেনি। অথচ এরই মধ্যে আমদানি ও দেশি- দুধরনের পেঁয়াজের দাম রাতারাতি বেড়ে গেছে। খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম এখন ১৪০ টাকা। এমন আকাশচুম্বী দামে আবারও ভোক্তার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে পেঁয়াজ।

খুচরা বাজার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত গত সোমবার দাম হঠাৎ এক লাফে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে যায়। বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত। অথচ গত রবিবারও এ পেঁয়াজ ১১৫ টাকাতে পাওয়া গেছে। অর্থাৎ মাত্র এক রাতের ব্যবধানেই পণ্যটির দাম লাগামছাড়া বেড়েছে, যা বেশির ভাগ ভোক্তার নাগালের বাইরে।

কাজির দেউরি বাজারের ব্যবসায়ী মনির আহমদ বলেন, ‘রোববার ভারতে দাম বেড়েছে- এমন খবরের কারণে পাইকারদের কাছ থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় কিনছি।’ তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ার খবরে আমদানি করা পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে না। দাম বাড়ানোর জন্য মজুত করে রেখেছেন পাইকাররা।

খাতুনগঞ্জের পাইকার লোকমান হোসেন বলেন, ‘পূজার ছুটির কারণে বেশ কয়েকদিন বন্দর বন্ধ ছিল। তখন থেকেই দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি শুরু হয়। এরমধ্যে আমদানি মূল্য বাড়ানোর খবরে বাজার একদম অস্থির হয়ে গেছে। বাজারে পেঁয়াজের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

যদিও ভারতে নতুন দাম ঘোষণার পর সেই পেঁয়াজ এখনও দেশে এসে পৌঁছায়নি। অর্থাৎ আগের দামে আমদানি করা পেঁয়াজই এখন বাজারে, তবুও দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এভাবে অতিরিক্ত দাম বাড়িয়েছেন কতিপয় ব্যবসায়ী। তারা এই কারসাজি করে ভোক্তার পকেট থেকে স্বল্প সময়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাড়তি দামে আমদানি করা পেঁয়াজ আসতে আরও তিন থেকে চারদিন সময় লাগবে। এরমধ্যে বাজারে যত পেঁয়াজ কেনাবেচা হবে, তা আগের দামেই কেনা।
জানা গেছে, ভারতে প্রতি টন পেঁয়াজের দাম ৮০০ ডলার হলে কেজিপ্রতি এর রপ্তানিমূল্য পড়বে ৬৭ রুপি। আগে ভারতের রপ্তানিকারকরা অনির্ধারিত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলেও নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশটির ব্যবসায়ীদের সরকার নির্ধারিত দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে। আগে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তখন থেকেই বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের এক আড়তদার বলেন, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে যেসব পেঁয়াজ রয়েছে সেগুলো বাজার পর্যন্ত আসতে খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা। কিন্তু ভারত রপ্তানিমূল্য বেঁধে দেয়ার ঘোষণার পর থেকে প্রতি কেজিতে অন্তত ৩৫ টাকা মুনাফা করছেন আমদানিকারকরা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। তারা একেক সময় একেক অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করেন। এখন বলছেন, ভারত রপ্তানিমূল্য বাড়িয়েছে তাই দাম বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে যেসব পেঁয়াজ আছে, সেগুলো তো দুই সপ্তাহ আগে আমদানি করা। প্রশাসনের উচিত পেঁয়াজের ক্রয় ও বিক্রয়মূল্য যাচাই করে অভিযান পরিচালনা করা।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

ঠাকুরগাঁওয়ে জিংক ধানের সম্প্রসারণে অগ্রণী কৃষক প্রশিক্ষণ ও বীজ বিতরণ

ঠাকুরগাঁও জেলায় আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউট (IFPRI) হারভেস্ট প্লাস প্রোগ্রামের রিঅ্যাক্টস- ইন প্রকল্পের আয়োজনে জিংক ধানের সম্প্রসারণে অগ্রণী কৃষক প্রশিক্ষণ ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ওয়ার্ল্ড ভিশন ও ইএসডিওর যৌথ পরিচালনায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের হরিহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অগ্রণী কৃষক প্রশিক্ষণ ও বীজ বিতরণ প্রোগ্রামটি অনুষ্ঠিত হয়।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ নাসিরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, হারভেস্টপ্লাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ ওয়াহিদুল আমিন তপু। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, হারভেস্টপ্লাস বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ মজিবর রহমান।

এছাড়াও বক্তব্য দেন, রহিমানপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, মারুফা খাতুন, প্রজেক্ট অফিসার, ওয়ার্ল্ড ভিশন, ইএসডিও রিএক্টস-ইন প্রজেক্ট এর প্রজেক্ট ফোকাল কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল আলম, প্রজেক্ট অফিসার মোঃ আবু তালহা শিশির ও অন্যান্য কর্মকর্তা সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

মানব দেহে জিংকের উপকারিতা, অভাবজনিত লক্ষণ ও জিংকের ঘাটতি মেটানোর উপায়সহ জিংক সমৃদ্ধ ধান ও গমের বিভিন্ন জাত, তাদের উৎপাদন প্রযুক্তি বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা আলোচনায় স্বতস্ফুর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং জিংক ধান ও গম কে মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছাতে তাঁরা এর উৎপাদন ও এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাবেন মর্মে দৃঢ়তা প্রকাশ করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৩৭ জন চাষীকে ৪ কেজি করে মোট ৮৪৮ কেজি ব্রি ধান ১০২ জাতের ভিত্তি ধান বীজ বিতরণ করা হয়।

রিএক্টস-ইন প্রকল্পটি কানাডা সরকারের অর্থায়নে, ওয়ার্ল্ড ভিশন, হারভেস্টপ্লাস, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল এবং ম্যাক গিল বিশ্ববিদ্যালয় কনসোর্টিয়াম এর মাধ্যমে অন্যান্য তিনটি দেশের মতো বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের হারভেস্টপ্লাসের কার্যক্রম গুলি ইএসডিও এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
হারভেস্টপ্লাস ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ বায়োফোর্টিফাইড খাদ্যশস্যেও বিকাশ ও প্রচার করে এবং বায়োফরটিফিকেশন প্রমাণ এবং প্রযুক্তিতে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব প্রদান করে পুষ্টি এবং জনস্বার্থেও উন্নতি করে। হারভেস্টপ্লাস বাংলাদেশে জিংক ধান, জিংক গম এবং জিংক ও আয়রন মসুর এর সম্প্রসারণ এবং অভিযোজনে কাজ করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে আমন মৌসুমে ব্রি ধান ৭২ ও বিনা ধান ২০ এবং বোরো মৌসুমে ব্রি ধান ৭৪, ৮৪, ১০০ ও ১০২ ধানের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে।

চট্টগ্রামে স্কুল ও দোকানে আগুন

চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড থানাধীন কলসি দিঘির পাড় উত্তর রেল গেট এলাকায় একটি কেজি স্কুল ও পাশের দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে হযরত শাহ আলী কেজি স্কুল ও দোকানে আগুন লাগে।

সিইপিজেড ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহাদাত হোসেন জানান, ভোরে খবর পেয়ে সোয়া ৬টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। প্রায় ৪০ মিনিটের চেষ্টায় সকাল পৌনে ৭ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। তবে দ্রুত পদক্ষেপে প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তা জানা যায়নি।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ