
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ তেইশ বছর আন্দোলন, লড়াই, সংগ্রাম এবং অতঃপর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্ধয় ঘটে । বঙ্গবন্ধুর আকাক্সক্ষা ছিল বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। সেই লক্ষেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ গরীব দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক টানা ১৫ বছর ক্ষমতাসীন থাকায় এ জাতির সবচেয়ে বড় সাফল্য অর্জিত হলেও সামাজিক বৈষম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি নির্মূল হয়নি। আগামী জাতীয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মত বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার প্রতিষ্ঠা করে সামাজিক বৈষম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিকে সমূলে উৎপাটনের প্রত্যয় ধারণ করে জনগণের কাছে আমাদেরকে যেতে হবে। তিনি আজ শনিবার সকালে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, বিএনপি নির্বাচনী ট্রেন মিস করে এখন আবোল-তাবোল বকছে। তারা অবরোধ হরতালের নামে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। চোরাগুপ্ত হামলায় পরিবহনে আগুন দিচ্ছে, গ্যাস সিলিন্ডার কাটার দিয়ে রেললাইন কেটে ফেলছে। তাই এই দলটি কিছুতেই গণতান্ত্রিক দল নয়। এটা একটি আন্ডারগ্রাউন্ড গুপ্ত ঘাতকের আস্তানা। এ আস্তানাকে অবশ্যই গুরিয়ে দেয়া হবে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধু যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন এবং সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন তা তিনি করে যেতে পারেননি। বাংরাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মারা তাঁকে সপরিবারে খুন করেছে। এরপর বাংলাদেশ পাকিস্তানী ভাবধারায় নিমর্জ্জিত হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা ৬ বছর নির্বাসন শেষে দেশে ফিরে এসে দল ও জাতির হাল ধরেছেন এবং ১৯৯৬ সালে নৌকা প্রতীকের বিজয়ের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতায় এসে দেশকে পাকিস্তানী ভাবধারার কবল থেকে উদ্ধার করেন। এরপর ২০০১ সালে সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করলে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী নিজামী ও মুজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়ে তাদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেন। এ লজ্জা রাখি কোথায়। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে জাতিকে যে উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন তা অকল্পনীয়। আমরা অনেক সূচকে পাকিস্তানকে অনেক আগেই পিছনে ঠেলে দিয়েছি। ভারত একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পন্ন দেশ। বেশকিছু সূচকে আমরা ভারতের চেয়ে এগিয়ে। অচিরেই ভারতে বিভিন্ন সূচকে আরো বেশি পিছনে ফেলে দেয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিএনপি জেনে গেছে নির্বাচন হবে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবেই। বিএনপি নেতা মঈন খান বলেছেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ৫ দিনও ঠিকবে না, এটা পাগলের প্রলাপ। যারা বিদেশী প্রভুর পা ধরে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল তাদের প্রভুরাও বুঝে গেছে বিএনপি শিকড়হীন পরগাছা। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ এবং তার গঠনতান্ত্রিক সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাড়াও নৌকামুখী আরো একাধিক সংগঠন রয়েছে। আওয়ামী লীগসহ এ সকল সংগঠনের নেতাকর্মী ও আত্মীয় স্বজন এবং ঘনিষ্ঠজনরা ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হলে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হবে। তাই কে নির্বাচনে আসুক বা না আসুক সেটা বড় কথা নয়; ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতির ঢল থাকলে প্রমাণ হবে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ইনশাল্লাহ হবেই। চট্টগ্রাম-০৯ আসনে নৌকা প্রতীক প্রার্থী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের আইন ও বিধিমালায় সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে, কোন রাজনৈতিক দল পর পর যদি দুইটি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে ঐ দলের নিবন্ধন বাতিল হবে। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন করেনি, ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচন করতে বাধ্য হয়। ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও তারা বর্জন করেছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা যদি না আসে তাহলে তাদের নিবন্ধন থাকবে না। তাই তারা ঐ নির্বাচনে আসতে বাধ্য হবে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলহাজ নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ এমপি, শিক্ষা মানব সম্পদ সম্পাদক জালাল উদ্দিন ইকবাল, নির্বাহী সদস্য আবুল মনসুর, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, ড. নিছার উদ্দিন মঞ্জু, মোহাম্মদ জাবেদ, রোটারিয়ান হাজী মো. ইলিয়াস, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের রুহুল আমিন তপন, মো. এরশাদ উল্লাহ, জাফরুল হায়দার সবুজ, সাইফুল আলম বাবু, চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা যুবলীগের আহŸায়ক সায়েরা বানু রুশনী। সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা শেখ মোহাম্মদ ইসহাক, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ হাসান মাহমুদ শমসের, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাজী মো. হোসেন, মহিলা সম্পাদিকা জোবাইরা নার্গিস খান, ইঞ্জিনিয়ার মানস রক্ষিত, উপসম্পাদক শহিদুল আলম, নির্বাহী সদস্য বখতিয়ার উদ্দিন খান প্রমুখ। এছাড়া ১৫টি থানা, ৪৪ সাংগঠনিক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে অস্থায়ী শহীদ মিনারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।