আজঃ শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

তিস্তার ধূ-ধূ বালুচরে রবিশস্য চাষে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।

মো: আনোয়ার ডিমলা নিলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারী ও লালমনিরহাট দুই জেলায় প্রবাহিত তিস্তা নদীর ধু-ধু বালুচরে এখন সবুজের হাসি। যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। আর এ চকচকে বালুতে রবিশস্য চাষ করে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন তিস্তা পাড়ের কৃষকরা।নীলফামারীর ডিমলা ও তৎসংলগ্ন জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা হাজার হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের রবি শস্য চাষ করা হচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সাথে নুড়ি পাথর, কাকনযুক্ত বালি ও মাটি বয়ে আসায় দ্রুত তিস্তার তলদেশ ভরাট হয়ে গিয়ে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। বালুর সাথে পলি মাটির স্তর পড়ে এসব চরকে আবাদী করে তুলছে তিস্তা পারের মানুষ । পলি মিশ্রিত এসব চরে ভুট্টা, কাউন, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, বরবটি, মিষ্টি আলু, বাদাম, করলা, বেগুন, পুঁই শাক, লাউ শাক সহ বিভিন্ন রবিশস্য চাষের ধুম পড়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসব চরে রবিশস্য চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। আর তাই যতদুর চোখ যায় এসব চরাঞ্চল শুধু সবুজ আর সবুজ।চরঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জনা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমে তিস্তার চরে আমন ধান চাষ হয়নি। আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এলাকার কৃষকেরা তিস্তার চরে বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য চাষ করেছেন ।ডিমলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের চর এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম ও হাফিজুল ইসলাম জানান, ধান, গম আবাদ করলে যে লাভ হয়, তার চেয়ে দ্বিগুণ লাভ হয় রবিশস্যে। বিশেষ করে ভুট্টা চাষ করে বেশি লাভ হয়ে। প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ মণ পর্যন্ত ভুট্টা হয়। যার মূল্য প্রায় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। আর ব্যয় হয় বিঘা প্রতি ১০-১২ হাজার টাকা। ভুট্টা ঘরে তোলার সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সব ভুট্টা চাষি বেশ লাভবান হবেন।গোলমুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর বেড়ি বাঁধ এলাকার কৃষক আমিনুর রহমান জানান, আগে তিস্তার চরাঞ্চলের জমিগুলো পতিত ছিল। অন্য ফসলের আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় এসব জমিতে ফসল ফলানো হয়নি। এখন আধুনিক পদ্ধতিতে এসব চরে বিভিন্ন ফসল চাষ করা হচ্ছে। এতে ভালো ফলন এবং দামও পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।এ উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চল গুলোতে এ বছর রবিশস্যের ব্যাপক চাষ হয়েছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকায় প্রতিটি চরাঞ্চলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। জলঢাকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি এবং ডিমলাউপজেলার ৫টি ইউনিয়ন তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের চরের জমিতে বিভিন্ন প্রকার রবি শস্যের চাষ করেছেন। রবি শস্যকে ঘিরে নদী গর্ভে নিঃস্ব হওয়া হাজার হাজার মানুষ এখন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। তিস্তার নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় জেগে উঠা ছোট বড় চরগুলোয় নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলো বাঁচার তাগিদে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে ধুধু বালু চাষে। আর এসব চরে কৃষকেরা এখন রবি শস্য চাষ করে জীবিকার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছেন। এক্ষেত্রে এসব চাষীদের বিনামূল্যে সার-বীজ দিয়ে সহায়তাও করা হয়েছে। গত বন্যায় আমন ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় যে সমস্ত জমি পতিত ছিল সেগুলোতে আগাম জাতের রবিশস্য চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছে।জলঢাকা উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন আহমেদ এবং ডিমলা উপজেলার কৃষি অফিসার সেকেন্দার আলী জানিয়েছে, তিস্তার বুক চিরে জেগে ওঠা চরগুলোতে পলি মিশ্রিত মাটি থাকায় এগুলোতে পেয়াজ, রসুন, ভুট্টা, কাউন, মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, মিষ্টি আলুর ফলন বেশ ভালো হয় তাই কৃষকরা এসব ফসল চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কম খরচে অধিক ফলন পাওয়ায় এবং লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা আবাদের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন কৃষকরা

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

রাণীশংকৈলে কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদের উদ্বোধন 

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে রবি ২০২৪-২৫ মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় বোরো ধান (উফশী) সমলয় ব্লক প্রদর্শনীর রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।  কাশিপুর ইউনিয়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর আয়োজনে ৫০ একর জমিতে চারা রোপণের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হয়। 

এসময় ইউএনও রকিবুল হাসান এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম, কৃষি প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন, জামায়াতের সেক্রেটারি রজব আলী, কৃষক আফজাল হোসেন আফাজ প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি অফিসার সহিদুল ইসলাম বলেন,সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদে উৎপাদন খরচের অতিরিক্ত সময় ও ব্যয়ের  হাত থেকে রক্ষা করতে যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদ ভূমিকা রাখছে।কৃষিতে যান্ত্রিকীকায়ণের ফলে সমলয় চাষাবাদে কৃষির উৎপাদন খরচ অর্ধেকের কম নেমে এসেছে ফলে কৃষক লাভবান হচ্ছে।
এ সময় শতাধিক স্থানীয় কৃষক কৃষানি উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উপসহকারী কৃষি অফিসার সাদেকুল ইসলাম।

পাবনার চলনবিলে অপরিকল্পিতভাবে বানিজ্যিক পুকুর খনন

পাবনা জেলার চলনবিলের বিভিন্ন  এলাকার  এ কৃষিজমিতে দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে। জমির উপরিভাগের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। রাতের আধারে কৃষিজমিতে খনন করা হচ্ছে পুকুর। প্রতি বছর কৃষিজমির বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে বানিজ্যিক পুকুর খননে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় কিছু কিছু অসাধু ব্যক্তি আবাদি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে ভেকু মেশিন দিয়ে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। ইটভাটার মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের অর্থের লোভ দেখিয়ে তিন-চার ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুরে পরিনত করছে।
১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রন আইন ( সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে।
এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই বছরের কারাদন্ড দেয়ার বিধান আছে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সাথে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
জেলার ৯টি উপজেলায় অবাধে চলছে জমির মাটি কাটার ঘটনা। মাটি কাটা হচ্ছে স্কেভেটরে (ভেকু মেশিন)। পরে ট্রাকে করে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায়। ভাঙ্গুড়া,ফরিদপুর  চাটমোহর,বেড়া, সুজানগর, সাঁথিয়া,আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী উপজেলায় কৃষিজমি কেটে বানিজ্যিক পুকুর খনন করা হয়েছে। এরমধ্যে আটঘড়িয়া সাঁথিয়া  ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে, হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরেই ভাঙ্গুড়া,ফরিদপুর, চাটমোহর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী,সাঁথিয়া, সুজানগর বেড়া উপজেলা এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ফসলী জমিতে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে।
 সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রেণি পরিবর্তন করে আবাদযোগ্য জমিতে পুকুর খননের সুযোগ নেই আইনে। তারপরও এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি নানান কৌশলে পুকুর খনন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিল ও নিচু এলাকাগুলোকে অনাবাদি বিংবা এক ফসলি দেখিয়ে পুকুর খনন করছেন তারা।
পুকুর খনন বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা সদর  উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি ও  নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্যাট  মোঃ মুরাদ হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে পুকুর খনন করা যাবে না। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান চলমান আছে। ইতিমধ্যে অনেককে জরিমানাসহ আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ