আজঃ শুক্রবার ১৪ মার্চ, ২০২৫

মৌলভীবাজার জেলার ভোটের খবর:

মৌলভীবাজার ২ আসনে নাদেলের নৌকা-সলমান র’ ট্রাক মুখোমুখি।

তিমির বনিক মৌলভীবাজার:

আর সবে মাত্র ৮টি রাত পেরোলেই দেখা মিলবে ভোটের-বার দিনটি রোববার ৭ জানুয়ারি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সেই সকালের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে স্নায়ুচাপের সাথে বাড়ছে নখ কামড়ানো উত্তেজনাও।
দিন ঘনিয়ে আসায় উৎসব মুখর পরিবেশ পাড়া-মহল্লায়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থী আর সমর্থকেরা ছুটছেন ভোটারদের কাছে। এরমধ্যে কথার জমাট লড়াই ভোটের মাঠে। প্রচার-প্রচারণায় প্রতিদিনই চলছে বাহাস। ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে ভোটের সমীকরণ।

এমন অবস্থা মৌলভীবাজার-২ আসনে। এই আসনে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তবে মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সফি আহমদ সলমান ও তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীনের মধ্যে। এ তিন প্রার্থীর মধ্যে প্রচার-প্রচারণায় বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সফি আহমদ সলমানের মধ্যে চলছে কথার লড়াই। প্রচার সভার বক্তব্যে একজন আরেকজনকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য রাখছেন। এতে বাড়ছে উত্তাপ।অন্যদিকে নিরব প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন। পৌষের দুপুরে গত সোমবার কাদিপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দিনের প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যান নাদেল। এদিন বিকেলে স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চলাকালে পথসভায় বক্তব্য দেন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।বক্তব্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর (সফি আহমদ) বিভিন্ন সভায় দেওয়া সমালোচনামূলক বক্তব্যের কড়া জবাব দেন নাদেল। সরাসরি নাম না বললেও তার বক্তব্য যে স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সফি আহমদ সলমানকে ইঙ্গিত করে, তা স্পষ্টতই বুঝা গেছে। নাদেল বলেন, বিভিন্ন মানুষকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কোনো নেতাকর্মী, ভোটারকে যদি হুমকি দেওয়া হয়, কারও দিকে যদি আঙুল তোলা হয়, সেই আঙুলের ঠিকানা কোথায় হবে; এই ৭ তারিখ তা আমরা দেখিয়ে দেব।
আমরা উন্নয়ন চাই, শান্তি চাই। আমরা সন্ত্রাস চাই না। আমরা মান-সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ আছে? কুলাউড়া উপজেলা সদরের কাছের একটি ইউনিয়ন কাদিপুর। এই ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছি। সদরের কাছের একটি ইউনিয়ন। বেশিরভাগ রাস্তা এখনও কাঁচা। মানুষের কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই।‘‘যারা বছরের পর বছর আপনাদের ভোট নিয়েছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা কী করেছেন। সেটা আমার চেয়ে আপনারা ভালো জানেন।’ ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন নাদেল।

পথসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে নাদেল বলেন, আমরা পর পর তিনটা নির্বাচনে কুলাউড়ায় ট্রেন মিস করেছি। বাংলাদেশ আজকে কোথায়। আমাদের কুলাউড়া কোথায়! সারাদেশ এগিয়েছে, আর আমরা পেছনে পড়ে আছি। এই কারণে আজকে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, যারা জীবনে নৌকায় ভোট দেননি। তারাও আজকে নৌকায় সমর্থন জানিয়েছেন।’’নাদেল বলেন, ‘‘বিগত ইউনিয়ন নির্বাচন বলেন, উপজেলা নির্বাচন বলেন; অনেক অনিয়ম হয়েছে। অনেক কিছু হয়েছে। আমরা কি আবারও এগুলো দেখতে চাই? যারা বিগত নির্বাচনগুলোর মতো চিন্তাভাবনা করছেন, তাদের বলছি। তারা নিজেদেরকে সংশোধন করুন। ভোটারদের ভয় দেখিয়ে নয়, হুমকি দিয়ে নয়। মানুষের ভোট, মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলুন। এই কুলাউড়ার মানুষকে হুমকি দিয়ে ভোট আদায় করা যাবে না।
কোনো কোনো জায়গায় পায়ে ধরেন। আবার আরেকটা হাত ঘাড়ের ওপর রাখেন। এইগুলো মানুষ বুঝে গিয়েছে। গুন্ডামি, জমি দখল, আমানতের টাকা খেয়ানত। অনেক মানুষ সহ্য করেছে। অনেক সম্মানিত মানুষ অসম্মানিত হয়েছে। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সময় হয়েছে কুলাউড়ার মানুষ জবাব দেবে। ৭ তারিখের অপেক্ষায়। এই জনপদ কোনো সন্ত্রাসী বা কোনো বাটপারের কাছে যাবে না।’’অপরদিকে এরআগের দিন এক সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সফি আহমদ সলমান বলেন, ‘‘বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সমাবেশে আমাকে কটাক্ষ করা হচ্ছে। আমার সমর্থকদের হুমকি-ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমি কুলাউড়ার নাগরিক। কুলাউড়ায় আমার জন্ম। আমি বা আমার অনুসারী কাউকে কুলাউড়ায় উঠতে দেবেন না। এমন কোনো বাবার সন্তান এ মাটিতে জন্ম গ্রহণ করে নাই।‘‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই। আর যদি এ ধরনের কথা শুনি, যেখানে শুনবো সেখানেই ঠেকিয়ে দেবো।’’গত মঙ্গলবার এক সভায় সফি আহমদ সলমান বলেন, ‘‘এবার এম এম শাহিন সাহেবও আসছেন। তিনি প্রথমে আসলেন ফুটবল মার্কা নিয়ে,
এরপর ধানের শীষ, এরপর নৌকা নিয়ে। এবার বিএনপির জম, তৃণমূল মূল বিএনপির পাট (সোনালী আঁশ) মার্কা নিয়ে।‘‘আরেকজন এসেছেন। তার বাবার বাড়ি কুলাউড়ার কৌলা গ্রামে। জন্ম সিলেটে। রাজনীতি সিলেটে। থাকেন সিলেট এবং ধানমন্ডিতে। দায়িত্ব তার ময়মনসিংহ বিভাগে।’’সফি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘বিগত দিনে যাদের ভোট দিয়েছেন। তাদের পেয়েছেন? বন্যা গেলো, করোনা গেলো। ট্রেন দুর্ঘটনা গেলো। ভয়বাহ দুর্যোগে তাদের পেয়েছেন। বর্তমান-সাবেক এমপি কেউ নেই। কুলাউড়ার জনগন যেনো আল্লার হাওলা।‘‘আমি আপনাদের সন্তান। আমি এখন জীবন সায়াহ্নে। আমাকে ভোট দিয়ে কুলাউড়ার ভাগ্যাকাশ থেকে দুর্যোগের ঘনঘটাটা সরিয়ে দিন। আমাকে নির্বাচিত করুন। আমি আপনাদের পাশে থাকব।’’আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে কারা ঘিরে রেখেছে, দেখছেন। একটা দালাল চক্র। একটা চাটুকার চক্র। আপনারা ভোট দিবেন, ভোট চলে যাবে ময়মনসিং। ভোট দিবেন প্রার্থী চলে যাবে ঢাকা। আর কুলাউড়ার মানুষ এই দালালদের কপ্পরে থাকতে হবে।’’গত বুধবারের সভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এক প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আজকে এই দলে, কালকে ওই দলে। তার পরেরদিন আরেক দলে। আপনি একদল করবেন, তালাক দিবেন। এরপরে আরেক দল করবেন, তালাক দিবেন। তালাকনামা মানুষের সামনে ছিড়ে ফেলবেন।
আবার সেই বউ নিয়ে ঘুরাফেরা করবেন। লজ্জা শরমতো থাকা উচিত। এরকম নিলজ্জ লোক কুলাউড়ায় দুই চারটা আছে।’’‘‘আওয়ামী লীগ করেছি। আপনাদের দোয়া ভালোবাসায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করছি। সেই দায়িত্ব পালন করাটাকেও নিয়েও কেউ কেউ কটাক্ষ করেছেন। কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করায় আমার এলাকার জন্য ভালো কিছু করার সুযোগ আছে। এটাকে নিয়েও যদি কটাক্ষ করা হয়। আরও অনেক কিছু তো বলা যেত।’’নাদেল বলেন, ‘‘কিছু কিছু মানুষ আছে আমাদের সমাজে, দুই মাস-চার মাস পর পর মোবাইল নম্বর বদলায়। মোবাইল নম্বর পাল্টায়। মানুষের কাছ থেকে টাকা নিলো। সেই টাকা ফেরত দিবে না। চাকরির কথা বলে নিবে। মামলার তদবিরের কথা বলে নিবে বা অন্য কথা বলে। সেই কাজ টা করার জন্য নেয়নি। হজম করার জন্য নিয়েছে। যারা কিছু দিন পর পর যারা নম্বর বদলায় তাদের কি বলে? বাটপার…।’’মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-২ আসন। এ আসনের ১৩টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭২। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৩৫ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৭ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১০৩।২০০১ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৮ পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। তাই এবার আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো দলের মনোনয়ন পান দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।এখানে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন (সোনালী আঁশ) নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমান (ট্রাক)। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তিনি ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিজয়ী হন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মতিন (কাঁচি), জাতীয় পার্টির আব্দুল মালিক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এনামুল হক মাহতাব (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের আছলাম হোসাইন রহমানী (মিনার) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মো. কামরুজ্জামান সিমু (কুলা) প্রতিকে নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

দীর্ঘ ১বছর ২ দিন পর মুক্তি পেলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর শাহ মিজান।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাবেক আমীর শাহ মু.মিজানুর রহমান সোমবার (০৩ মার্চ) সকালে কুমিল্লা কারাগার থে‌কে মু‌ক্তি পেয়েছেন।
বিষয়টি বিকেলে নিশ্চিত করেছেন দলটি উপজেলা কাশিনগর সেক্রেটারি মাওলানা শাহআলম ।
তিনি জানান, ২০২৪ সালের ০২ মার্চ আওয়ামী লীগের সাজানো আলোচিত বাসে আগুন দিয়ে ৮ জনকে পুড়িয়ে হত্যার মামলার মিথ্যা অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শুধু তাই নয় ওনাকে ৬৯টি মিথ্যা মামলার আসামী করা হয়েছে। শাহ মিজানকে স্বাগত জানাতে শত শত নেতাকর্মী মোটরসাইকেল ও গাড়ীর শোভাযাত্রা করেছে।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে শাহ মিজানকে স্বাগত জানান জামায়াতে ইসলামীর কুমিল্লা মহানগর সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান। সহকারী সেক্রেটারি হোসাইন আহম্মেদ, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল হোসাইন, কাশিনগর ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা শাহআলম। শাহ মিজানকে শত শত নেতাকর্মী মোটরসাইকেল ও গাড়ীর শোভাযাত্রা করে কাশিনগর বাজারে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই সময় কাশিনগর ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মহাসিন কবিরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন কাশিনগর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, কাশিনগর ইউনিয়ন শ্রমিক কল্যাণের সহসভাপতি হাজী আবুল কাশেম, ইউনিয়ন যুব বিভাগের সভাপতি ইয়াকুব আলী প্রমুখ।

কাশিনগর বাজারে সংক্ষিপ্ত পথসভায় শাহ মু.মিজানুর রহমান বলেন চৌদ্দগ্রামে বাসে আগুন দিয়ে হত্যার মামলার মিথ্যা অভিযোগে আমার তিন ভাইকে আসামি করা হয়েছে। আজ জালিমের হাত থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে। চৌদ্দগ্রাম মাটি ও মানুষের প্রিয় নেতা ডা.সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ভাইয়ের নেতৃত্ব নতুন করে সারা দেশের ন্যায় চৌদ্দগ্রামকে জানানো হবে ইনশাআল্লাহ।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে হাজারো সংস্কারে লাভ নেই ।

দেশের গণতন্ত্রের অর্ডার ফিরিয়ে আনতে গণমাধ্যমকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

গণমাধ্যমের গুরুত্বের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তারা গত ১৬ বছর অনেক কষ্টের মধ্যে থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। একটি মুক্ত বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করে আমরা গণতান্ত্রিক ঐক্যের পথে চলছি। এ সময় আগামী দিনের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই গণমাধ্যমের সকলকে সাবধানে থাকতে হবে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জণ্য গণমাধ্যমকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিকেলে নগরীর চট্টগ্রাম ক্লাবে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) এর দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের আহবায়ক ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুইয়া, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শামীম, বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী।

আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাস্তায় থেকে জনগণের সামনে সঠিক চিত্র তুলে ধরেছে। তাই আগামী দিনগুলোতে গণতন্ত্রের যে সংগ্রাম চলছে, সেটিকে সফল করার জন্য, জনগণের মালিকানা, নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাংবাদিকদের সবার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে আগামীর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো, গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনবো, মানুষের রাজনৈতিক সাংবিধানিক অর্ডার ফিরিয়ে আনবো। দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ পরষ্পর সম্মানবোধ রেখে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি পরিবর্তনে একযোগে কাজ করতে হবে।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে অন্য সংস্কার করে কোনো লাভ নেই বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে না পারি তাহলে হাজারো সংস্কার করে কোনো লাভ হবে না। তাই রাজনীতিতের সহনশীলতা থাকতে হবে। ভিন্ন মত থাকলেও অপরপক্ষকে সম্মান জানাতে হবে। এটাই হবে বিএনপির রাজনীতি, তারেক রহমানের রাজনীতি। এ রাজনীতি নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।

দেশের মানুষ নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মূল স্তম্ভ হচ্ছে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনা। গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার একমাত্র পথ। আর তার বাহক হচ্ছে, দেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি, নির্বাচন। এর অপেক্ষায় রয়েছে দেশের মানুষ। একেকটি দিন অতিবাহিত হচ্ছে অগণতান্ত্রিক পরিবেশে। যেখানে জনগণের প্রতিনিধি দেশ পরিচালনা করছেন, যেখানে জনগণের দৈনন্দিন সুখ দুখের কথা শোনা, সেই দায়িত্বপূর্ণ জনগণের কাছে জবাবদিহি এ রকম একটি সরকারের অপেক্ষায় সবাই রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের যুবক সমাজ যারা গত তিন নির্বাচনে নিজেদের ভোট প্রয়োগ করতে পারে নাই তাদের ভোট প্রয়োগের অপেক্ষা, নির্বাচিত প্রতিনিধির অপেক্ষায়, নির্বাচিত সরকারে অপেক্ষায় এবং দায়বদ্ধ সরকারের প্রতিক্ষায় জনগণ আছে।

নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য এবং গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। যাদের জনসমর্থন নেই, যারা জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না তারা বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়ে জনগণের মনে সংশয় সৃষ্টি করছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশের জনগণ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। জনগণ এখন গণতন্ত্র, সুশাসন ও মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। তাই জাতীয় নির্বাচনই হবে জনগণের প্রতিনিধি নির্ধারণের একমাত্র পথ। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে দেশনায়ক তারেক রহমানের ৩১ দফা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে সত্য তুলে ধরা যায় না। আর সত্য লিখা না গেলে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকলে পাঠক বা দর্শক প্রত্যাখ্যান করে।

আবদুল হাই শিকদার বলেন, সাংবাদিকদের বিবেকের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে। অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা, তথ্য সন্ত্রাস পরিহার করে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে হবে। সঠিক তথ্য জেনে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়, সংবাদ মাধ্যমের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেল। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা।

ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে অনেক সংবাদমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রকাশ করে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা অনেক সময় নিজেদের কাজের যথার্থতা প্রমাণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। গুজব, মিথ্যা তথ্যে সমাজ তথা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বাড়াচ্ছে। তাই সাংবাদিকদের আরো সচেতন হতে হবে।

কাদের গণি চৌধুরী বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হলেও, এটি এখন বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সামনে যে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ পেশার স্বাধীনতা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনি ও ক্ষমতামুখী সাংবাদিকতা সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বড্ড অন্তরায় সৃষ্টি করছে। তাই সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, প্রেস ক্লাবের সদস্য গোলাম মওলা মুরাদ ও মিয়া মোহাম্মদ আরিফের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইফতার মাহফিল আয়োজক কমিটির আহবায়ক শামসুল হক হায়দরী, বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাব অন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ, প্রেস ক্লাব অন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য মুস্তফা নঈম।

উপস্থিত ছিলেন-বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ হাসিব আজিজ, সিডিএ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার নুরুল করিম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ইদ্রিস মিয়া, সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম আহবায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম হোসাইনী, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, বিএনপি নেতা ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, ইদ্রিস আলী, কামরুল ইসলাম, সাঈদ আল নোমান, বিএফইউজে সহ সভাপতি খাইরুল বশর, বিজিএমইএ প্রথম সহ সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, জেলা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির আহবায়ক মকবুল কাদের চৌধুরী, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. সরওয়ার আলম, ড্যাব চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালী, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি প্রকৌশলী জানে আলম সেলিম, প্রকৌশলী মো. ওসমান, জিয়া পরিষদ চট্টগ্রাম এর সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান মোহাম্মমদ জসিম প্রমুখ।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ