আজঃ সোমবার ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে ওয়াসার প্রকল্পে ‘লুটের ফাঁদ’ দুদকের জালে উপজেলা চেয়ারম্যান।

এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম:

বানিজ্য নগরী:

চট্টগ্রামে ওয়াসার প্রকল্পে সরকারি জমি অধিগ্রহণে ৫ কোটি টাকা ‘লুটের ফাঁদ’ বানানো সেই উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ফেঁসে যাচ্ছেন। সঙ্গে নাম এসেছে তার ছেলে মোহাম্মদ সরোয়ার করিমের ও। এরই মধ্যে তাদের সম্পদ বিবরণী জারির সুপারিশ করে দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে দুদকের চট্টগ্রাম অফিস।

জানা যায়, রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ থেকে পাঠানো অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে জমা হয়েছে। দুদক প্রধান কার্যালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুই কোটি ৬৯ লাখ ৮ হাজার ৪৩৩ টাকার অবৈধ আয়ের তথ্য পেয়েছে দুদক। দুদকের ভাষায় ওই অবৈধ আয়কে ‘জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দুদকের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রেজাউল করিম চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মরহুম আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। ১৯৮১ সালে ফার্নিচার ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ওই ব্যবসা চলমান ছিল। ১৯৯৭ সালে বালি সরবরাহ ব্যবসা শুরু করেন, যা এখনো চলমান। ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ উপ-নির্বাচনে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।প্রতিবেদনের শেষাংশে উল্লেখ করা হয়, ‘অনুসন্ধানকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, রেজাউল করিম ও ছেলে মোহাম্মদ সরোয়ার করিমের নামে ২;কোটি ৭৬ লাখ ৬৬ হাজার ২শ টাকা স্থাবর সম্পদ এবং ২৮ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৩ কোটি ৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৭০ টাকার সম্পদ রয়েছে। তিনি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা পারিবারিক ব্যয়সহ অন্য ব্যয় করেছেন। ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৭ হাজার ৭৭০ টাকা। এসব সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৮৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩৭ টাকা। এক্ষেত্রে তার গ্রহণযোগ্য মোট আয়ের চেয়ে অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৬৯ লাখ ৮ হাজার ৪৩৩ টাকা বেশি, যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এমতাবস্থায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয় এবং তাদের নামে-বেনামে আর ও সম্পদ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বিধায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা মোতাবেক সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির সুপারিশ করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হলো। দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৬৬ হাজার ২শ টাকার স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১৫টি রেজিস্ট্রি করা দলিলের নাম ও কেনা জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ১০টি দলিলে ১০৩ দশমিক ৫৪৫ শতক জমি রেজাউল করিম নিজের নামে কিনেছেন। যার মূল্য তিনি দেখিয়েছেন দুই কোটি ৪৪ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৪ টাকা। রেজিস্ট্রি খরচসহ ওই জমির মূল্য দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ২ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার ২শ টাকা। অন্যদিকে ৫৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় কেনা ৮৯ দশমিক ৩০ শতক জমি ৫ দলিলে রেজিস্ট্রি হয় ছেলে মোহাম্মদ সরোয়ার করিমের নামে। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বোয়ালিয়া মেরিন সার্ভিস অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন নামে চারটি ব্যাংক হিসাবে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭০ টাকা জমা রয়েছে। পাশাপাশি রেজাউল করিমের নিজের নামে ২৪ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়। জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের বোয়ালখালীর পূর্ব গোমদণ্ডী মৌজায় অধিগ্রহণের জমি অস্বাভাবিক মূল্যে হস্তান্তর করে দলিল গ্রহিতাদের বিরুদ্ধে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শন করে অবৈধভাবে লাভবান হওয়াসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুদক। ২০২৩ সালের ৯ মার্চ তারিখে দুদক প্রধান কার্যালয়ের ০৪.০১.১৫০০.৬২২.০১.০৩৮.২৩.চট্ট-১/৯৫০৭ পত্রের আলোকে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদারকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর রেজাউল করিম ও তার স্ত্রী সন্তানদের নামে সম্পদ আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা জুয়েল মজুমদার বিভিন্ন তপসিলি ব্যাংক, ডাক বিভাগ, বিআরটিএ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, বোয়ালখালী ভূমি অফিস, চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে চিঠি দেন। পরবর্তীসময়ে এসব সরকারি দপ্তর থেকে পাওয়া কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সত্যতা পায় দুদক। এরপর আরও সম্পদ আছে কি না, যাচাই করার জন্য সম্পদ বিবরণী জারির সুপারিশ করে প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাৎ বলেন, ‘বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান একটি গোপনীয় বিষয়। এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়। ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। এলাকায় তিনি ‘রাজা’ নামে পরিচিত। এর আগে ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় রেজাউল করিম তার মালিকানাধীন কৃষি জমির পরিমাণ দেখান ১০৩ দশমিক ৫৪৫ শতক। যার মূল্য তিনি দেখিয়েছেন ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৪ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রেজাউল করিম রাজা এসব জমির পুরোটাই কিনেছেন ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ মাসের মধ্যে। ৮টি আলাদা দাগের সব জমিই বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদণ্ডী মৌজায় পাশাপাশি লাগানো। বোয়ালখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মীরা পাড়া এলাকায় অবস্থান এসব কৃষিজমির। ওই জায়গায়ই হওয়ার কথা ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসার দেড় হাজার কোটি টাকার ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের গোমদণ্ডী অংশের ওয়াটার রিজার্ভার। যেখান থেকে পুরো বোয়ালখালী পৌরসভায় পানি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। ওয়াসার প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, পূর্ব গোমদণ্ডী মৌজার বিএস ১৫১৮৮,১৫১৯৫ এবং বিএস ১৫২১৪,১৫২১৯ মোট ১৩ দাগে ২ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণ করার কথা ছিল। এর মধ্যে ৮ দাগে ১ একরের বেশি জায়গা কিনে নেন রেজাউল করিম রাজা। পাশাপাশি তার কেনা জমিগুলোর পাশেই পরবর্তীসময়ে ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকায় ৪টি দলিলে ২৫ দশমিক ৪৫ শতক জমি কেনা হয় ছেলে সরোয়ার করিমের নামে। এসব কৃষিজমি পূর্ব গোমদণ্ডী এলাকায় হলেও রেজাউল করিম রাজার বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার একেবারে শেষপ্রান্তের শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে। এ বিষয়ে ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, প্রকল্পের বিষয়ে দুদক আমাদের কাছ থেকে কিছু জানতে চায়নি। জমি অধিগ্রহণটা জেলা প্রশাসন রিলেটেড। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে জমি অধিগ্রহণ করে দেওয়া হয়। ওখানে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা আমাদের জানার কথা নয়। এর আগে তিনি বলেছিলেন, পূর্ব গোমদণ্ডী মৌজায় পানির রিজার্ভারটি করার প্রকল্প প্রস্তাবনা ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে গোমদণ্ডীতে রিজার্ভার না করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বাতিল করে আমাদের চিঠি দিয়েছে। বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা বলেন, ‘আমার কোনো গোপন সম্পদ নেই। দুদক আমার বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। তারা (দুদক) আমার কাছে যে যে ডকুমেন্ট চেয়েছিল,সবই জমা দিয়েছি। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় গভীর রাতে স্বর্ণের দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমণিষা বাজারে বুধবার গভীর রাতে একদল দুর্ধর্ষ ডাকাত দল চার-পাঁচ টি স্বর্ণের দোকানে ও একটি বাড়িতে ডাকাতি করে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অষ্টমণিষা বাজারের শ্রী রতন কুমার কর্মকার, তপন কুমার কর্মকার, উত্তম কুমার কর্মকার, ইউসুফ আলী ও আত্তাব আলীর স্বর্ণের দোকানগুলোর তালা ভেঙে দুর্বৃত্ত ডাকাত দল প্রায় ৩০/৩২ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়। পরে ডাকাত দল রতন কুমার কর্মকারের বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে তার স্ত্রী ও ছেলে রঞ্জন কর্মকার কে মারধর করে আরও ১০ ভরি স্বর্ণ ও ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাত দল।

শ্রী রঞ্জন কুমার কর্মকার বলেন,একটি ডাকাত দল বাজারে নেমে দুই নৈশপ্রহরীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রথমেই বেঁধে ফেলেন।রতন কর্মকার বলেন, ‘ডাকাতেরা বাড়িতে ঢুকতেই আমি তিন তলায় উঠে প্রতিবেশীদের ফোন করি। কিন্তু কেউ আসেনি। পরে দীপকে ফোন করলেও বের হতে পারেনি, কারণ তার দরজার সামনে দুইজন অস্ত্রধারী দাঁড়িয়ে ছিল।’

তারপর প্রায় ১০-১২ জনের একটি ডাকাত দল প্রথমে স্বর্ণের দোকানগুলোতে হামলা চালায় এবং কিছুক্ষণ পরে তারা তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে সবাইকে অস্ত্রের মুখে স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা সব লুট করে। তার মা স্বর্ণের গহনা খুলে দিতে দেরি করলে তাকে অনেক মারধর করে। রঞ্জন কর্মকার বাধা দিলে তাকেও বেদম প্রহার করা হয়। দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের হাতে দুইটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র সহ সাপল,লোহার রড ছিলো বলে তারা জানান।

স্থানীয়রা আরও জানান,দুর্ধর্ষ ডাকাত দল স্পিডবোট যোগে গভীর রাতে বাজারে এসে স্বর্ণের দোকানগুলোতে ডাকাতি করে গুমানী নদীর ভাটির দিকে চলে যায়।

খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া সার্কেল) আবু বকর সিদ্দিক, পাবনা ডিবির ওসি রাশিদুল ইসলাম, ডিবির একটি টিম এবং ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কারা জড়িত, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন।’

পাবনা ডিবি পুলিশের ওসি রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কাজ। খুব শিগগিরই ডাকাত চক্রকে গ্রেপ্তার করা হবে।’অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।’

অংশ নিয়েছে প্রায় ৬০০ প্রতিযোগী চট্টগ্রামে এনআইটি উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায়

বিজ্ঞানমনষ্ক শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের মুরাদপুরস্থ’ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি)’র উদ্যোগে ১১তম বারের মতো “এনআইটি উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা-২০২৫” এনআইটি’র অডিটোরিয়ামে শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ কারীগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্কভিউ হসপিটাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. এটি. এম. রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট অধ্যক্ষ মো কামাল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন এনআইটি’র চেয়ারম্যান আহসান হাবিব।

প্রতিযোগিতায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ২৬৪টি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনীমূলক প্রকল্প প্রর্দশিত হয়। এতে প্রায় ৬০০ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন বলেন, আজকের এই প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র একটি বিজয়ীর খোঁজ নয়, বরং এটি আমাদের সবার জন্য একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সকলেই নতুন কিছু শিখেছে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় উদ্ভাবন নিয়ে আসার অনুপ্রাণিত হয়েছে। প্রতিযোগীতায় শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে, আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। প্রত্যেকটি প্রকল্পই আলাদা এবং একেকটি নতুন চিন্তার প্রতিফলন। উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা শুধু একটি ইভেন্ট নয়; এটি হলো কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির সবচাইতে কার্যকর মঞ্চ।

ড. এটি. এম. রেজাউল করিম বলেন,দক্ষতা একজন মানুষকে কর্মবাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং তাকে স্বনির্ভর করতে সাহায্য করবে। উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের সেই দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কার্যকরী সমস্যা সমাধানের রুপরেখা তৈরী করে। অধ্যক্ষ মো কামাল হোসেন বলেন, এই প্রতিযোগিতায় উত্থাপিত সাশ্রয়ী ও টেকসই সমাধানগুলো কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম। আমাদের তরুণরা প্রমাণ করেছেন যে তাদের মেধা ও সৃজনশীলতাই দেশকে ‘আধুনিক বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের মূল চালিকাশক্তি।


ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির চেয়ারম্যান আহসান হাবিব বলেন, উদ্ভাবন শুধু প্রযুক্তির খেলনা নয়, উদ্ভাবন হল মানুষের জীবনকে সহজ ও অর্থপূর্ণ করার হাতিয়ার। আজকের এই ছোট ছোট ধারণাগুলোই আগামী দিনের বড় বড় শিল্প ও সামাজিক পরিবর্তনের বীজ বপন করছে।প্রতিযোগীতায় মোট ২৬৪ টি প্রজেক্ট অংশ নেয়। প্রজেক্ট সমুহকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে বিভিন্ন মানদন্ডে বিচার বিশ্লেষণ করার জন্য মূল্যায়ন দলে ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. এ. কে. এম. মাঈনুল হক মিয়াজী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. এইচ.এম

. এ আর মারুফ,চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান মো. দিদারুল আলম মজুমদার। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর সিভিল ডিপার্টমেন্ট প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মো জাহাঙ্গীর আলম, কম্পিউটার বিভাগের চীফ ইন্সট্রাক্টর প্রকৌশলী মেহেদী, ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ চীফ ইন্সট্রাক্টর প্রকৌশলী সুজিত কুমার বিশ্বাস, মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এর চীফ ইন্সট্রাক্টর প্রকৌশলী নুরুননবী।

বিচারক প্যানেল প্রজেক্ট সমুহ মূল্যায়ন সম্পন্ন করেন। মূল্যায়নে প্রাপ্ত নাম্বারের ভিত্তিতে টপ টেন নির্ধারণ করে পুরস্কার হিসেবে ১ম,২য় ও ৩য় স্থান অর্জন কারীর মধ্যে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৩০ হাজার ও ২০ হাজার নগদ অর্থ ও ক্রেস্ট পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া ইমার্জিং প্রজেক্ট হিসেবে চতুর্থ থেকে ১০ম স্থান অর্জনকারীদেরও ৫ হাজার নগদ অর্থ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সমাপনী পর্বে সকল অংশগ্রহণকারীকে সনদ বিতরণ করা হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ