আজঃ বুধবার ১২ মার্চ, ২০২৫

চট্টগ্রামে ওয়াসার প্রকল্পে ‘লুটের ফাঁদ’ দুদকের জালে উপজেলা চেয়ারম্যান।

এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম:

বানিজ্য নগরী:

চট্টগ্রামে ওয়াসার প্রকল্পে সরকারি জমি অধিগ্রহণে ৫ কোটি টাকা ‘লুটের ফাঁদ’ বানানো সেই উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ফেঁসে যাচ্ছেন। সঙ্গে নাম এসেছে তার ছেলে মোহাম্মদ সরোয়ার করিমের ও। এরই মধ্যে তাদের সম্পদ বিবরণী জারির সুপারিশ করে দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে দুদকের চট্টগ্রাম অফিস।

জানা যায়, রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ থেকে পাঠানো অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে জমা হয়েছে। দুদক প্রধান কার্যালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুই কোটি ৬৯ লাখ ৮ হাজার ৪৩৩ টাকার অবৈধ আয়ের তথ্য পেয়েছে দুদক। দুদকের ভাষায় ওই অবৈধ আয়কে ‘জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দুদকের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রেজাউল করিম চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মরহুম আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। ১৯৮১ সালে ফার্নিচার ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ওই ব্যবসা চলমান ছিল। ১৯৯৭ সালে বালি সরবরাহ ব্যবসা শুরু করেন, যা এখনো চলমান। ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ উপ-নির্বাচনে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।প্রতিবেদনের শেষাংশে উল্লেখ করা হয়, ‘অনুসন্ধানকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, রেজাউল করিম ও ছেলে মোহাম্মদ সরোয়ার করিমের নামে ২;কোটি ৭৬ লাখ ৬৬ হাজার ২শ টাকা স্থাবর সম্পদ এবং ২৮ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৩ কোটি ৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৭০ টাকার সম্পদ রয়েছে। তিনি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা পারিবারিক ব্যয়সহ অন্য ব্যয় করেছেন। ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৭ হাজার ৭৭০ টাকা। এসব সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৮৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩৭ টাকা। এক্ষেত্রে তার গ্রহণযোগ্য মোট আয়ের চেয়ে অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৬৯ লাখ ৮ হাজার ৪৩৩ টাকা বেশি, যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এমতাবস্থায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয় এবং তাদের নামে-বেনামে আর ও সম্পদ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বিধায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা মোতাবেক সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির সুপারিশ করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হলো। দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৬৬ হাজার ২শ টাকার স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১৫টি রেজিস্ট্রি করা দলিলের নাম ও কেনা জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ১০টি দলিলে ১০৩ দশমিক ৫৪৫ শতক জমি রেজাউল করিম নিজের নামে কিনেছেন। যার মূল্য তিনি দেখিয়েছেন দুই কোটি ৪৪ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৪ টাকা। রেজিস্ট্রি খরচসহ ওই জমির মূল্য দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ২ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার ২শ টাকা। অন্যদিকে ৫৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় কেনা ৮৯ দশমিক ৩০ শতক জমি ৫ দলিলে রেজিস্ট্রি হয় ছেলে মোহাম্মদ সরোয়ার করিমের নামে। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বোয়ালিয়া মেরিন সার্ভিস অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন নামে চারটি ব্যাংক হিসাবে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭০ টাকা জমা রয়েছে। পাশাপাশি রেজাউল করিমের নিজের নামে ২৪ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়। জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের বোয়ালখালীর পূর্ব গোমদণ্ডী মৌজায় অধিগ্রহণের জমি অস্বাভাবিক মূল্যে হস্তান্তর করে দলিল গ্রহিতাদের বিরুদ্ধে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শন করে অবৈধভাবে লাভবান হওয়াসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুদক। ২০২৩ সালের ৯ মার্চ তারিখে দুদক প্রধান কার্যালয়ের ০৪.০১.১৫০০.৬২২.০১.০৩৮.২৩.চট্ট-১/৯৫০৭ পত্রের আলোকে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদারকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর রেজাউল করিম ও তার স্ত্রী সন্তানদের নামে সম্পদ আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা জুয়েল মজুমদার বিভিন্ন তপসিলি ব্যাংক, ডাক বিভাগ, বিআরটিএ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, বোয়ালখালী ভূমি অফিস, চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে চিঠি দেন। পরবর্তীসময়ে এসব সরকারি দপ্তর থেকে পাওয়া কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সত্যতা পায় দুদক। এরপর আরও সম্পদ আছে কি না, যাচাই করার জন্য সম্পদ বিবরণী জারির সুপারিশ করে প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাৎ বলেন, ‘বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান একটি গোপনীয় বিষয়। এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়। ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। এলাকায় তিনি ‘রাজা’ নামে পরিচিত। এর আগে ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় রেজাউল করিম তার মালিকানাধীন কৃষি জমির পরিমাণ দেখান ১০৩ দশমিক ৫৪৫ শতক। যার মূল্য তিনি দেখিয়েছেন ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৪ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রেজাউল করিম রাজা এসব জমির পুরোটাই কিনেছেন ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ মাসের মধ্যে। ৮টি আলাদা দাগের সব জমিই বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদণ্ডী মৌজায় পাশাপাশি লাগানো। বোয়ালখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মীরা পাড়া এলাকায় অবস্থান এসব কৃষিজমির। ওই জায়গায়ই হওয়ার কথা ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসার দেড় হাজার কোটি টাকার ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের গোমদণ্ডী অংশের ওয়াটার রিজার্ভার। যেখান থেকে পুরো বোয়ালখালী পৌরসভায় পানি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। ওয়াসার প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, পূর্ব গোমদণ্ডী মৌজার বিএস ১৫১৮৮,১৫১৯৫ এবং বিএস ১৫২১৪,১৫২১৯ মোট ১৩ দাগে ২ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণ করার কথা ছিল। এর মধ্যে ৮ দাগে ১ একরের বেশি জায়গা কিনে নেন রেজাউল করিম রাজা। পাশাপাশি তার কেনা জমিগুলোর পাশেই পরবর্তীসময়ে ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকায় ৪টি দলিলে ২৫ দশমিক ৪৫ শতক জমি কেনা হয় ছেলে সরোয়ার করিমের নামে। এসব কৃষিজমি পূর্ব গোমদণ্ডী এলাকায় হলেও রেজাউল করিম রাজার বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার একেবারে শেষপ্রান্তের শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে। এ বিষয়ে ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, প্রকল্পের বিষয়ে দুদক আমাদের কাছ থেকে কিছু জানতে চায়নি। জমি অধিগ্রহণটা জেলা প্রশাসন রিলেটেড। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে জমি অধিগ্রহণ করে দেওয়া হয়। ওখানে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা আমাদের জানার কথা নয়। এর আগে তিনি বলেছিলেন, পূর্ব গোমদণ্ডী মৌজায় পানির রিজার্ভারটি করার প্রকল্প প্রস্তাবনা ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে গোমদণ্ডীতে রিজার্ভার না করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বাতিল করে আমাদের চিঠি দিয়েছে। বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা বলেন, ‘আমার কোনো গোপন সম্পদ নেই। দুদক আমার বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। তারা (দুদক) আমার কাছে যে যে ডকুমেন্ট চেয়েছিল,সবই জমা দিয়েছি। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

জীবন সংগ্রামের অবিচল যোদ্ধা: ৮০ বছরের বৃদ্ধ আবুল হাসেম এখনো চালাচ্ছেন রিকশা

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার চৌদ্দগ্রাম বাজারের এক চিরপরিচিত দৃশ্য—৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ রিকশাচালক আবুল হাসেম। প্রচণ্ড রোদ, শীত, বৃষ্টি—কোনো কিছুই তাকে থামাতে পারেনি। রমজানের রোজা রেখে, মাথার ওপর প্রখর সূর্য, তারপরও রিকশা চালিয়ে জীবিকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

পৌরসভার গোমারবাড়ির বাসিন্দা আবুল হাসেম ছয় সন্তানের জনক। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আজ তিনি ও তার স্ত্রী একা। চার মেয়ে বিয়ে করে স্বামীর সংসারে, আর দুই ছেলে—আরচ মিয়া ও আবু তাহের—নিজেদের পরিবার নিয়ে আলাদা থাকেন। অথচ বৃদ্ধ মা-বাবার খোঁজ নেওয়ার সময় তাদের নেই।

কেন এত বৃদ্ধ বয়সেও রিকশা চালাচ্ছেন? জানতে চাইলে আবুল হাসেম বলেন,
“আমার আর আমার স্ত্রীর খাবার, ওষুধসহ সব খরচ আমাকেই চালাতে হয়। প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়, যা দিয়ে আমাদের সংসার মোটামুটি চলে। সন্তানেরা কেউ খোঁজ নেয় না। তাই বাধ্য হয়েই রিকশা চালাচ্ছি। যতদিন বেঁচে থাকি, চাই না কারও কাছে হাত পাততে বা ভিক্ষা করে খেতে। আল্লাহর কাছে শুধু এই দোয়া করি, যেন নিজের পরিশ্রমেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চলতে পারি।”

একসময় সংসার ও সন্তানদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করা এই মানুষটিকে আজ তার নিজের রোজগারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। সমাজের প্রতিটি মানুষেরই উচিত তার মতো প্রবীণদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, তাদের দেখভালের দায়িত্ব নেওয়া। কারণ, আজকের তরুণরাও একদিন বৃদ্ধ হবে, আর তখন সমাজ যেমন ব্যবহার করবে, সেটাই তাদের প্রাপ্য হয়ে উঠবে।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে হাজারো সংস্কারে লাভ নেই ।

দেশের গণতন্ত্রের অর্ডার ফিরিয়ে আনতে গণমাধ্যমকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

গণমাধ্যমের গুরুত্বের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তারা গত ১৬ বছর অনেক কষ্টের মধ্যে থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। একটি মুক্ত বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করে আমরা গণতান্ত্রিক ঐক্যের পথে চলছি। এ সময় আগামী দিনের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই গণমাধ্যমের সকলকে সাবধানে থাকতে হবে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জণ্য গণমাধ্যমকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিকেলে নগরীর চট্টগ্রাম ক্লাবে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) এর দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের আহবায়ক ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুইয়া, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শামীম, বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী।

আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাস্তায় থেকে জনগণের সামনে সঠিক চিত্র তুলে ধরেছে। তাই আগামী দিনগুলোতে গণতন্ত্রের যে সংগ্রাম চলছে, সেটিকে সফল করার জন্য, জনগণের মালিকানা, নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাংবাদিকদের সবার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে আগামীর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো, গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনবো, মানুষের রাজনৈতিক সাংবিধানিক অর্ডার ফিরিয়ে আনবো। দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ পরষ্পর সম্মানবোধ রেখে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি পরিবর্তনে একযোগে কাজ করতে হবে।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে অন্য সংস্কার করে কোনো লাভ নেই বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে না পারি তাহলে হাজারো সংস্কার করে কোনো লাভ হবে না। তাই রাজনীতিতের সহনশীলতা থাকতে হবে। ভিন্ন মত থাকলেও অপরপক্ষকে সম্মান জানাতে হবে। এটাই হবে বিএনপির রাজনীতি, তারেক রহমানের রাজনীতি। এ রাজনীতি নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।

দেশের মানুষ নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মূল স্তম্ভ হচ্ছে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনা। গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার একমাত্র পথ। আর তার বাহক হচ্ছে, দেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি, নির্বাচন। এর অপেক্ষায় রয়েছে দেশের মানুষ। একেকটি দিন অতিবাহিত হচ্ছে অগণতান্ত্রিক পরিবেশে। যেখানে জনগণের প্রতিনিধি দেশ পরিচালনা করছেন, যেখানে জনগণের দৈনন্দিন সুখ দুখের কথা শোনা, সেই দায়িত্বপূর্ণ জনগণের কাছে জবাবদিহি এ রকম একটি সরকারের অপেক্ষায় সবাই রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের যুবক সমাজ যারা গত তিন নির্বাচনে নিজেদের ভোট প্রয়োগ করতে পারে নাই তাদের ভোট প্রয়োগের অপেক্ষা, নির্বাচিত প্রতিনিধির অপেক্ষায়, নির্বাচিত সরকারে অপেক্ষায় এবং দায়বদ্ধ সরকারের প্রতিক্ষায় জনগণ আছে।

নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য এবং গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। যাদের জনসমর্থন নেই, যারা জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না তারা বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়ে জনগণের মনে সংশয় সৃষ্টি করছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশের জনগণ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। জনগণ এখন গণতন্ত্র, সুশাসন ও মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। তাই জাতীয় নির্বাচনই হবে জনগণের প্রতিনিধি নির্ধারণের একমাত্র পথ। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে দেশনায়ক তারেক রহমানের ৩১ দফা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে সত্য তুলে ধরা যায় না। আর সত্য লিখা না গেলে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকলে পাঠক বা দর্শক প্রত্যাখ্যান করে।

আবদুল হাই শিকদার বলেন, সাংবাদিকদের বিবেকের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে। অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা, তথ্য সন্ত্রাস পরিহার করে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে হবে। সঠিক তথ্য জেনে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়, সংবাদ মাধ্যমের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেল। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা।

ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে অনেক সংবাদমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রকাশ করে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা অনেক সময় নিজেদের কাজের যথার্থতা প্রমাণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। গুজব, মিথ্যা তথ্যে সমাজ তথা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বাড়াচ্ছে। তাই সাংবাদিকদের আরো সচেতন হতে হবে।

কাদের গণি চৌধুরী বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হলেও, এটি এখন বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সামনে যে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ পেশার স্বাধীনতা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনি ও ক্ষমতামুখী সাংবাদিকতা সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বড্ড অন্তরায় সৃষ্টি করছে। তাই সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, প্রেস ক্লাবের সদস্য গোলাম মওলা মুরাদ ও মিয়া মোহাম্মদ আরিফের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইফতার মাহফিল আয়োজক কমিটির আহবায়ক শামসুল হক হায়দরী, বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাব অন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ, প্রেস ক্লাব অন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য মুস্তফা নঈম।

উপস্থিত ছিলেন-বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ হাসিব আজিজ, সিডিএ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার নুরুল করিম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ইদ্রিস মিয়া, সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম আহবায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম হোসাইনী, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, বিএনপি নেতা ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, ইদ্রিস আলী, কামরুল ইসলাম, সাঈদ আল নোমান, বিএফইউজে সহ সভাপতি খাইরুল বশর, বিজিএমইএ প্রথম সহ সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, জেলা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির আহবায়ক মকবুল কাদের চৌধুরী, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. সরওয়ার আলম, ড্যাব চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালী, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি প্রকৌশলী জানে আলম সেলিম, প্রকৌশলী মো. ওসমান, জিয়া পরিষদ চট্টগ্রাম এর সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান মোহাম্মমদ জসিম প্রমুখ।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ