
অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। গতকাল বুধবার সকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক দিনমনি শর্মা’র সাথে মতবিনিময়ে উক্ত আহবান জানান তিনি।
এসময় সুজন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের সকল শহরে বেড়ে চলেছে বহুতল ভবনের সংখ্যা। আমরা উন্নয়ন নিশ্চিত করেছি, এখন আমাদের এই উন্নয়নকে টেকসই উন্নয়নে পরিণত করতে হবে। আমাদের ভবনগুলোকে সর্বাগ্রে নিরাপদ করতে হবে। সেজন্য অগ্নি নিরাপত্তা কঠোরভাবে প্রতিফলনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে ভবন অনুমোদনের সময় ফায়ার সার্ভিস সনদ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। যে সকল ভবন ইতিমধ্যে নির্মিত হয়েছে অথচ ফায়ার সার্ভিস সনদ গ্রহণ করেনাই সে সকল ভবনে ফায়ার সার্ভিস সনদ গ্রহণে বাধ্য করতে হবে। রাস্তায় ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানো আছে, অথচ আগুন লাগলে পানির সাপোর্ট পাওয়া যায় না। ওয়াসার সাথে আলোচনা করে ফায়ার হাইড্রেন্টে সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহ রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তিনি বলেন, নগরীতে এক সময় অনেকগুলো জলাশয় ছিলো যেগুলো আগুন নিভানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। কিন্তু দখলে, দুষণে অনেকগুলো জলাশয় বিলীন হয়ে গিয়েছে। যে সকল জলাশয় অবশিষ্ট রয়েছে সেগুলো যাতে কোন অবস্থাতেই কেউ ভরাট করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় দৃষ্টি রাখারও অনুরোধ জানান তিনি। প্রয়োজনে সিডিএ’র মাধ্যমে অবশিষ্ট জলাশয়গুলো অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, নগরীর জহুর হকার্স মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, তামা কুন্ডি লেইনসহ অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাজারগুলোতে নিয়মিত অগ্নি নির্বাপক মহড়া চালানো উচিত। সরু গলির কারণে এসব মার্কেটে আগুন লাগলে তা নিভানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। এতে করে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। পাশাপাশি এসব মার্কেটে নিজস্ব অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও অনুরোধ জানান তিনি। এছাড়া বর্তমান সময়ে এলপিজি সিলিন্ডার দুর্ঘটনার হার আশংকাজনক হারে বেড়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তিকে। এলপিজি সিলিন্ডার জ্বালানি হিসেবে সহজলভ্য হওয়ায় দিন দিন বিপদের কারণ হয়ে উঠছে এটি। ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশের ব্যবহার, পরিবহন ও মজুদ করার নিয়ম না মানার কারণেই এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারে ঝুঁকি বাড়ছে। তাই ফায়ার সার্ভিসকে এক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার আহবান জানান তিনি। পাশাপাশি এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার, পরিবহন, মজুদ এসব বিষয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। এছাড়া নিম্নমানের এলপিজি সিলিন্ডার যাতে কোনভাবেই বাজারে আসতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহবান জানান তিনি। নগরীর অগ্নিঝুঁকি কমাতে সকল সংস্থা এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা খোরশেদ আলম সুজনের। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক দিনমনি শর্মা সুজনকে তাঁর দপ্তরে স্বাগত জানান। তিনি সুজনের উত্থাপিত প্রস্তাবনার সাথে সহমত পোষন করেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলেই দেশে কল-কারখানা এবং বহুতল ভবনের সংখ্যা বাড়ছে। তবে যেভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সে তুলনায় পর্যাপ্ত লোকবল এবং আধুনিক অগ্নি নির্বাপন সামগ্রীর অভাব রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের। নগরায়নের ফলে এখন শহরে জলাশয়ের খুবই অভাব। পর্যাপ্ত জলাশয় না থাকার ফলে অগ্নি নির্বাপনে ফায়ার সার্ভিসের পানির উপর অধিকাংশ সময় নির্ভর করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে রাস্তায় ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকলেও পানি থাকে না। দেখা যায় যে, সিডিএ ভবনের অনুমোদন দিয়েছে কিন্তু রাস্তা সরু, আবার পর্যাপ্ত জায়গা না রেখেই অনেক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব জায়গায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে না পারায় আগুনের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। নিজস্ব ম্যাজিষ্ট্রেট না থাকার কারণে কোথাও অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া অতি উৎসাহী জনগনও অগ্নি নির্বাপনে একটি বড়ো বাঁধা বলে উল্লেখ করেন তিনি। ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশের ব্যবহারের ফলে এলপিজি সিলিন্ডার দুর্ঘটনার হার বাড়ছে বলে জানান তিনি। নগরীর অগ্নিঝুঁকি কমাতে সকল সংস্থাকে এক ছাদের নীচে এসে কাজ করতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক দিনমনি শর্মা। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক এমডি আবদুল মালেক, নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, আব্দুর রহমান মিয়া, সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন, মো. শাহজাহান, মো. সেলিম প্রমূখ।