আজঃ সোমবার ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে তীব্র লোডশেডিং বিপর্যস্ত জনজীবনে স্বস্তি দিতে জাতীয় গ্রিড থেকে দ্রুত বিদ্যুত সরবরাহ বাড়ানোর দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র মাহে রমজানের আগে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বারংবার নগরবাসীতে আশ্বস্ত করেছিলো সেবা সার্ভিসের কোন সংকট হবে না। কিন্তু মাস পেরুনের আগেই চট্টগ্রামে ইফতার-সেহরিতেও নিস্তার নেই, তীব্র্ লোডশেডিং। নগরীতে দিনে ৬-৮ ঘণ্টা, গ্রামে ১০-১২ ঘণ্টার বেশি ভয়াবহ লোডশেডিং এ বিপর্যস্ত জনজীবন। বিদ্যুত বিভাগ বলছে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমেছে। আর সেকারনে চট্টগ্রামে দৈনিক ৩শত থেকে ৪ শত মেগাওয়াট ঘাটতি থাকছে সবসময়। রমজানের শুরু থেকে শুরু হয়েছে ওয়াসার পানি সংকট ও লবনাক্তা। এখন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে বিদ্যুতের চরম লোডশেডিং। পুরো দিনে বার থেকে চৌদ্দ বার লোডশেডিং হচ্ছে। অনেক সময় ঘন্টায় দুই থেকে তিন বারও লোডশেডিং, যা তীব্র গরমে জনজীবনকে চরম অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এঅবস্থায় বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে চট্টগ্রামে জরুরিভাবে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুত সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ।

১ এপ্রিল ২০২৪ চট্টগ্রামে ভয়াবহ লোডশেডিং এ বিপর্যস্ত জনজীবনে স্বস্তি আনতে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুত সরবরাহ বাড়ানোর দাবিতে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।

বিবৃতিতে নেতৃবন্দ বলেন, বিদ্যুত বিভাগ একসময় লোডশেডিং শব্দটি বাদ দিয়ে বিদ্যুত লাইনে ত্রুটি বা বিদ্যুৎ বিভ্রাট ব্যবহার করলেও গ্রীষ্মকাল শুরুর সময়ে ভয়াবয় আকারে লোডশেডিং এর ফিরে এসেছে। যার কারণে চট্টগ্রামের বাকলিয়া ও কল্পলোক আবাসিক এলাকা, পাথরঘাটা, স্টেডিয়াম, ষোলশহর, কালুরঘাট, বাকলিয়া, মাদারবাড়ি, আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাহাড়তলী, খুলশী, রামপুর, নিউমুরিং বিদ্যুৎ বিতরন কেন্দ্রগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং করছে। নগরীর বাইরে ফৌজদারহাট, হাটহাজারী, মোহরা, বাড়বকুন্ড, সন্দ্বীপ, পটিয়া, সাতকানিয়া, দোহাজারী, বাশখালীতে ঘণ্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। একইভাবে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার বিতরণ বিভাগ এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এলাকাগুলোতেও ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়ের কারনে গ্রামাঞ্চলের মানুষের জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত। দিন-রাত মিলিয়ে কোথাও কোথাও ছয় থেকে আট ঘণ্টা, কোথাও ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একসময় বিদ্যুত বিভাগ থেকে বলা হয়েছিলো বিদ্যুত উৎপাদন উদ্বৃৃত্ত আছে। যার কারনে ভাড়া ভিত্তিক ও কুইকরেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোকে বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে বাধ্য হয়েছিলো। যার ফলে বিদ্যুত উৎপাদনে সরকারের  ভর্তুকির বোঝা ও খরচের পাল্লা দিন দিন বেড়েগেছে। যার পুরো দায়ভারই জনগনকে বহন করতে হচ্ছে। সরকার প্রতিনিয়তই ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ালেও জনগনের নিরবিছিন্ন বিদ্যুত প্রাপ্তির বিষয়টি সুদর পরাহত হচ্ছে। চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)র তথ্য অনুযায়ী  চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় এক হাজার ২৮০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৯০০ মেগাওয়াট। ফলে প্রতিনিয়তই চট্টগ্রামে লোডশেডিং হচ্ছে ৩ শত ৮০ থেকে ৪ শত ২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন বিদ্যুতের লোডশেডিং ও বিদ্যুত বিভ্রাট নিয়ে সরকারি তথ্য গোজামিলে ভরপুর, প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ এবং অনেক বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। যেখানে মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে মানুষের জীবনজীবিকার খরচ বাড়িয়ে জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বেসরকারী ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের নামে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে উৎপাদন সক্ষমতার অধিক মূল্য দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

ভাঙ্গুড়ায় ধর্ষণ মামলায় স্কুল ছাত্রীর কথিত প্রেমিক গ্রেফতার

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ধর্ষণ মামলায় নবম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীর কথিত প্রেমিক কে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। কথিত প্রেমিকের নাম বুলবুল (২০)। তিনি উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের চাচকিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী ফকিরের ছেলে।রবিবার(৭ ডিসেম্বর) সকালে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে চাচকিয়া বিলের মধ্য নিয়ে গিয়ে ওই স্কুল ছাত্রী কে তার প্রেমিক বুলবুল সহ বন্ধুরা মিলে দলবদ্ধ ভাবে ধর্ষণ করে।

এ ঘটনায় শনিবার রাতে ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে ভাঙ্গুড়া থানায় ধর্ষণ মামলা রজ্জু করেন। মামলায় তথিত প্রেমিক বুলবুল সহ ৪ জন কে আসামি করা হয়।

ধর্ষণের খবর পেয়ে এএসপি সার্কেল (চাটমোহর) আবু বক্কার সিদ্দিক ও থানার ওসি মোঃ শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

জানা গেছে, ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর সঙ্গে বুলবুল এর প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। ঘটনার দিন গত শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে ওই স্কুল ছাত্রীকে চাচকিয়া বিলের মধ্যে ডেকে নিয়ে গিয়ে বুলবুল তার বন্ধু সোহানুজ্জামান ও তাওহিদ মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এসময় তারা মেয়েটির অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে এবং ঘটনাটি কাউ কে জানালে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরদিন শনিবার দুপুরে ঘটনা জানার পর ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত বুলবুল কে দুপুরে পাবনা আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে। মেয়েটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাবনা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

সাঘাটায় নবযোগদানকৃত ইউএনও আশরাফুল কবীরকে সাংবাদিকদের ফুলেল শুভেচ্ছা

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় নবযোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুল কবীরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। বৃহস্পতিবার সকালে ইউএনও কার্যালয়ে এ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।

সাংবাদিকরা ইউএনওকে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানান এবং সাঘাটার সার্বিক উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁর সাফল্য কামনা করেন। এসময় ইউএনও আশরাফুল কবীর সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা গ্রহণ করে বলেন,
“সাঘাটার উন্নয়ন ও জনসেবার মানোন্নয়নে প্রশাসন ও গণমাধ্যম পরস্পরের পরিপূরক। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”তিনি আরও বলেন,সাঘাটা উপজেলার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তুলতে চাই। এ কাজে গণমাধ্যমের গঠনমূলক ভূমিকা অব্যাহত থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকরা নতুন ইউএনওর সঙ্গে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা, প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং স্থানীয় সমস্যাবলি নিয়ে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় মহলে ধারণা করা হচ্ছে, ইউএনও আশরাফুল কবীরের যোগদানে সাঘাটা উপজেলায় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল হবে এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে নতুন দিগন্ত যুক্ত হবে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ