আজঃ বুধবার ১২ মার্চ, ২০২৫

চট্টগ্রাম মহানগরে পাঁচ বছর পর অবশেষে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণে প্রক্রিয়া শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাগরিকায় আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের বিষয়ে চসিক ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে
ছবি-৫- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ‘নগর ভবন’ নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর নগরে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণে প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। সাগরিকা পশুর হাটের পশ্চিম পাশে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) এক একর জায়গায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের বিষয়ে চসিক ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর উপস্থিতিতে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ হালালভাবে পশু জবাই হবে এ স্মার্ট কসাইখানায়। এ কসাইখানায় জবাই করা পশুর মাংসে রক্ত-পানি জমে থাকবেনা বিধায় ক্রেতারা মাংস কিনে লাভবান হবেন।
মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর জানতে পারি বিভিন্ন জটিলতায় এই প্রকল্পের বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে সমস্যাগুলো নিরসণ করায় এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে।
জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে আধুনিক এই কসাইখানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে নগরের যেখানে-সেখানে পশু জবাই বন্ধ হবে। এতে পরিবেশ দূষণ কমে আসবে। রোগবালাই আছে এমন গরু জবাই করা বন্ধ হবে। বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রক্রিয়াকৃত মাংস খেতে পারবে চট্টগ্রামবাসী।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার চান। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সচেতন জনগণ এই কসাইখানা থেকে জবাই করা পশুর মাংসই খেতে চাবেন। কারণ, এ কসাইখানায় সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মাংস প্রক্রিয়া যাবে। রোগ-জীবাণু ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাবে এ কসাইখানা।এছাড়া এখানে জবাই করা পশুর চামড়াও থাকবে একদম নিখুঁত।
চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর মোবারক আলী, চসিকের ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমি, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, আইন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহীন উল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জসিম উদ্দিনসহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, চসিক ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ ও প্রতিনিধিবৃন্দ এবং ক্যাবের নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গৃহীত চার হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন’ (দি লাইভস্টক এন্ড ডেইরি ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট–এলডিডিপি) শীর্ষক প্রকল্প ২০১৮ সালে ৮ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)’র সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের জন্য চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তিনটি সেমি অটো এবং ২০টি জেলায় একটি করে আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণ অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। এসব কসাইখানার জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৭৩৩ কোটি। তবে বর্তমানে এ ব্যয় আরো বাড়তে পারে বলে প্রকল্প সংশ্লিস্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আধুনিক কসাইখানাটিকে ঘিরে নগরে গবাদী পশু সংক্রান্ত বড় মাপের একটি ইনস্টিটিউশন গড়ে তোলা হবে। এতে থাকবে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আইসোলেশন, স্মার্ট স্টকিং স্পেস সুবিধা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, রক্ত ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট শৃঙ্খলা। ছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় ৫ তলা বিশিষ্ট ভবন এবং জবাই এরিয়া করা হবে। পশুর নাড়িভুড়িসহ শিং ফেলে না দিয়ে বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা থাকবে এই কসাইখানার আওতায়। এ কসাইখানায় পশু জবাই করার আগে একজন পশু চিকিৎসক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখবেন জবাইয়ের জন্য আনা পশুর। জবাইয়ের পর সেই মাংসও পরীক্ষা করা হবে। পশুর রক্তকে পোলট্রি ফিডে রুপান্তর করা হবে। পশুর অন্যান্য বর্জ্যগুলোও রিসাইক্লিং করা হবে। এই কসাইখানায় একদিনে জবাই করা যাবে ১০০ পশু এবং অপেক্ষায় রাখা যাবে ৩০০ পশু।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ কাজ শেষ হলে নগরের যেখানে-সেখানে পশু জবাই বন্ধ হবে। এতে পরিবেশ দূষণ কমে আসবে। রোগ-বলাই আছে এমন গরু জবাই করা বন্ধ হবে। প্রকল্পের আওতায় যেখানে মাংস বিক্রি করা হবে সেখানে পৌঁছে দেয়ার জন্য কুলভ্যান ক্রয় করা হবে। এই ভ্যানে করেই মাংসগুলো পৌঁছে দেয়া হবে।
জানা গেছে, একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদনের এরপর দ্রুততম সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এর আগে এ কসাইখানা নির্মাণে চান্দগাঁও পুরাতন থানা এলাকায় ৮৮ শতক জায়গার প্রস্তাব করে চসিক। তবে ওই ভূমির পাশে থাকা একটি স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা থেকে এতে আপত্তি জানায়। এতে জটিলতা তৈরি হয়। তখন সাথে সাথে চসিকও বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা করতে পারেনি। ফলে আটকে যায় প্রকল্পের কাজ। পরবর্তীতে সাগরিকা পশুর হাট সংলগ্ন জায়গাটি বাছাই করে চসিক। এটি পছন্দ হয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরেরও। এ বিষয়ে চসিকের স্টেট অফিসার মো. রেজাউল করিম বলেন, সাগরিকা গরুর বাজারের পশ্চিম পাশে এক একর জায়গায় কসাইখানা হবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

টিসিবি পণ্য পাচারের সময় আটক ১ জন

রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল কলোনি এলাকায় একটি বড় ধরনের টিসিবি পণ্য পাচারের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের হাতে আটক হয় ডিলারের এক সহযোগী, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে টিসিবি পণ্যের কিছু অংশ পাচারের সাথে জড়িত থাকার। স্থানীয়দের অভিযোগ, ডিলার নিজেই এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত, ফলে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে।

পাচারকৃত পণ্যগুলোর মধ্যে ২ লিটারের ৫ বোতল তেল এবং ৫ কেজি চিনি উদ্ধার হয়। স্থানীয়রা এই পণ্যগুলো পাচার করার সময় হস্তক্ষেপ করেন এবং পরে টিসিবির প্রতিনিধি শফিউল ইসলামের উপস্থিতিতে সেগুলো পুনরায় ট্রাকে তুলে খোলা বাজারে বিতরণ করা হয়। এ ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে চন্দ্রিমা থানা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম জনি পরিস্থিতি শান্ত করেন।

এদিকে, স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, টিসিবির পণ্য বিতরণে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং ডিলার নিজ এলাকার লোকজন কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে পণ্য বিতরণ করছেন, ফলে সাধারণ মানুষ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা জানান, রমজান মাসে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিসিবি পণ্য না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।

ঘটনাস্থলে থাকা টিসিবির প্রতিনিধি শফিউল ইসলাম জানান, হাতেনাতে তেল ও চিনি সহ এক ব্যক্তিকে আটক করে স্থানীয়রা। এ বিষয়ে উধ্বর্তন কতৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা নিবেন। শফিউল ইসলাম বলেন, শিরোইল কলোনি সার গুদাম চত্বরে ৪০০ জনের জন্য টিসিবি পণ্য বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে রয়েছে দুই কেজি ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা, দুই লিটার তেল ও ৫০০ গ্রাম খেজুর। প্যাকেজ মুল্য ৫৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো. তোজাম্মেল হোসেন সরকার (তাজেল) বলেন, তিনি অসুস্থ থাকায় সরাসরি পয়েন্টে যাননি এবং পয়েন্ট পরিচালনার দায়িত্ব তিনি লিপি নামক একজন নারী কর্মচারীকে দিয়েছেন। তবে, তিনি এ ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী নন বলে দাবি করেছেন।

এ ঘটনায় রাজশাহী ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) আঞ্চলিক উপ-পরিচালক মো. আতিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি ভিডিও পেয়েছেন এবং স্থানীয়দের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগও পেয়েছেন। তিনি নিশ্চিত করেন যে, ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিএমপি কোতোয়ালি থানার অভিযানে একজন গ্রেফতার

সিএমপি কোতোয়ালি থানার অভিযানে একজন গ্রেফতার হয়েছে।

সিএমপি’র দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মহোদয় এর সার্বিক দিক-নির্দেশনায়, সহকারী পুলিশ কমিশনার(কোতোয়ালি জোন) এর তত্ত্বাবধানে কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মোঃ আব্দুল করিম এর নেতৃত্বে ১০ মার্চ এস আই (নিঃ) নওশের কোরেশি , ইনচার্জ আসকার দীঘি পুলিশ ফাঁড়ি, এএসআই( নি:) ,ফিরোজ আলী এএসআই (নিঃ) জসীম উদ্দিন সহ সিআর ৫৭৫/১৭ এর সাজা পরোয়ানাভুক্ত আসামি মো: এনামুল করিম শহীদুল্লাহ (৪৫) পিতা:মৃত সালাম চৌধুরী, সাং- আসকার দীঘির দক্ষিণপাড়, থানা:কোতোয়ালি চট্টগ্রাম কে কোতোয়ালি থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করেন। আসামীকে গ্রেফতার পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দকরন প্রক্রিয়াধীন।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ