
আগামী এক সপ্তাহ খুলনা যশোর বাগেরহাট সাতক্ষীরা
অঞ্চলসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। দিনের
তাপমাত্রা 36-40°C হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সনাতন
চিংড়ি চাষীদের জন্য এই তাপমাত্রা বিপজ্জনক। যাদের
ঘের বা পুকুরের পানির গভীরতা চার ফুটের কম আছে
তাদের পুকুরের পানির তাপমাত্রা 34°C অতিক্রম করতে পারে। খুলনা বাগেরহাট সাতক্ষীরা অঞ্চলের
অধিকাংশ সনাতন চিংড়ি চাষী ঘেরের পানির গভীরতা
২’৫ ফুটের বেশি রাখতে চান না। সেইসাথে অধিকাংশ
খামারি জলজ শেওলা (কাটা শেওলা, ঝাঝি, স্পাইরোগাইরা, বিভিন্ন ধরনের ফিলামেন্টাস এলগি)
দিয়ে ঘের ভরিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। দিনের তীব্র
সূর্যের আলোয় জলজ শেওলা সালোকসংশ্লেসনের জন্য
মাত্রাতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) গ্রহণ করে
এবং পানিতে দ্রবীভূত কার্বন ডাই অক্সাইড শেষ হয়ে
গেলে আয়োনিত বাই কার্বোনেট (HCO3) ভেঙে কার্বন
ডাই অক্সাইডে পরিণত করে গ্রহণ করে। ফলে পানির
এলকালিনিটি দ্রুত কমে যায়। দিনে পানির পিএইচ রাতে ৭’৬ এবং দিনে ৯’৫ অতিক্রম করে। চিংড়ি পিএইচ এরওঠানামা ০’৫ এর বেশি সহ্য করতে পারে না। অন্যদিকেপানির তাপমাত্রা ৩৩°C অতিক্রম করলে চিংড়ির পেশিতে পীড়নে কারনে চিংড়ি শরীর বেকিয়ে দুর্বলভাবে(Mussel cramp) চলাফেরা করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে চিংড়ির মড়ক দেখা দেয়।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ঘেরের জলজ
শেওলার পরিমাণ কোনোভাবেই ৩০% অতিক্রম করতে
দেওয়া যাবে না অর্থাৎ ঘেরের শ্যাওলা তুলে ফেলে দিতে
হবে। পানির পিএইচ সকাল সাতটায় বিকেল তিনটায়
মেপে দেখতে হবে। পিএইচ ০’৫ এর বেশি ওঠানামা করলে খুব সকালে বা সন্ধ্যায় একর প্রতি ১২-২৫ কেজি
(পানির গভীরতা অনুযায়ী)ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ও
৪-৬ কেজি সোডিয়াম বাই কার্বোনেট (খাওয়ার সোডা)
প্রয়োগ করতে হবে। এলকালিনিটি ৬০ পিপিএম এর
কম হলে ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে পানির গভীরতা বাড়াতে
হবে এলকালিনিটি ৮০ পিপিএম এর বেশি হলে জোয়ারের পানি দিয়ে পানির গভীরতা বাড়াতে হবে।
চিংড়ির Mussel cramp দেখা গেলে একর প্রতি ৪-৬
কেজি পটাসিয়াম ক্লোরাইড অথবা এমওপি সার
(১-১’৫ পিপিএম হারে) সন্ধ্যায় পানিতে গুলে প্রয়োগ করতে হবে। ঘেরে ব্যপকভাবে চিংড়ি মড়ক দেখা দিলে
চিংড়ি ধরে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। রোগাক্রান্ত
চিংড়ি চিকিৎসার জন্য অকারণ টাকা করলে আর্থিক
ক্ষতির সম্ভাবনা খুব বেশি।
শুভ কামনা সকল চিংড়ি ও মাছ চাষীদের জন্য।