আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

চসিকের দুই কর্মকর্তা পেটালেন ব্যবসায়ীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীর গায়ে হাত তোলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম এবং প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. লতিফুল হক কাজমী। গত শুক্রবার রাতে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওর সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে চসিকের মালিকানাধীন সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটের দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার ব্যবসায়ী মনির হোসেন বাপ্পী ওই সমিতির প্রচার সম্পাদক।
জানা গেছে, ওই মার্কেটে চসিকের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মালেকের একটি দোকান আছে। দোকানটি তিনি এক ব্যবসায়ীকে ভাড়া দিয়েছিলেন। সাত মাস আগে ওই ব্যবসায়ী দোকানে তালা দিয়ে চলে যান।
মার্কেটের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা মালেকের কাছে গিয়ে দাবি করেন, ওই দোকানি অনেকের টাকা মেরে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। জামানতের টাকা থেকে মালেককে সেই টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু মালেক এ দাবি না মেনে দোকানটি আবার ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। আবদুল মালেক পরে সিটি কর্পোরেশনের দ্বারস্থ হন। এরপর দোকান বুঝিয়ে দিতে গেলে মারধরের ঘটনা ঘটে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের দুই কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ও লতিফুল হক কাজমী একটি কার্যালয়ে দু’জনের সঙ্গে আলাপ করছিলেন। তবে ডান পাশে বসা মনির হোসেনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। সেখানে থাকা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ থামানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে রেজাউল করিম আসন ছেড়ে মনির হোসেনের দিকে তেড়ে যান। থাপ্পড় দিতে থাকেন। এরপর লতিফুল হকও চড় থাপ্পড় দেন। পরে সিটি কর্পোরেশনের এক নিরাপত্তা কর্মী লাঠি দিয়ে মারতে মারতে কার্যালয়ের বাইরে নিয়ে যান।
জানতে চাইলে সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান চৌধুরী বলেন, ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের জন্য সমিতিতে বিচার দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছিল। কিন্তু আবদুল মালেক সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ডেকে এনে ক্ষমতা দেখিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে মারধর করেছেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। সমিতির কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তারা। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে সমিতি কার্যালয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আনিছুর রহমান চৌধুরী।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী জানিয়েছেন, মেয়রের নির্দেশে তারা সেখানে গিয়েছিলেন। দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে এক ব্যক্তি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় হয়ত দুয়েকটি চড়-থাপ্পড় দেওয়া হতে পারে। সিটি করপোরেশনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মালেক বলেন, ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী চলে যাওয়ার পর দোকানটি আরও একজনকে ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে ব্যবসায়ী সমিতির লোকজন বাধা দেন। তাদের জামানতের টাকা বুঝিয়ে দিতে বলেন। আরেকজনের টাকা কিভাবে আমি ওদের বুঝিয়ে দেব? তাছাড়া ভাড়ার চুক্তিতে উল্লেখ ছিল ভাড়াটিয়ার দেনা-পাওনার দায়ভার মালিকের ওপর বর্তাবে না। পরে দোকান বুঝে পেতে সিটি কর্পোরেশনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট দোকান বুঝিয়ে দিতে গেলে একজন খুব অসদাচরণ করায় হট্টগোল হয়েছে।
জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সিটি করর্পোরেশনের সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ একটি দোকান মালিককে বুঝিয়ে দিতে গিয়েছিলেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও লতিফুল হক কাজমী। কিন্তু সেখানে দোকান মালিক সমিতির এক সদস্য তাদের বাধা দেন। এসময় সেখানে ধাক্কাধাক্কি হয়। কাউকে মারধর করা হয়েছে এ রকম অভিযোগ কেউ করেনি। সরকারি কাজে কেউ বাধা দিতে পারে না বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।


চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গাঙ্গেয় বদ্বীপের সংগীত ব্যক্তিত্ব যোগী স্বপন কুমার দাশ’র রচিত আধ্যাত্মিক ও দেহতত্ত্ব বিষয়ক গান নিয়ে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাংবাদিক কিরন শর্মার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলক ও প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম এর পরিচালক মো.মাহফুজুল হক। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর প্রখ্যাত সাধক শ্রীমৎ স্বামী সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী’জীকে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ‘খুঁজি তাঁরে’ অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয়।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র ঘোষ (যুদ্ধকালিন কমান্ডার), আব্দুর রহিম (লোক ও মরমি শিল্পী), রূপম ভট্টাচার্য (সাংবাদিক), স ম জিয়াউর রহমান(সাংবাদিক), দিদারুল ইসলাম (সংগীত পরিচালক ও কন্ঠ শিল্পী), তন্দ্রা দাশগুপ্তা, সংগীত শিল্পী সঞ্জয় রক্ষিত সহ প্রমুখ। সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত

ছিলেন পাপিয়া আহমেদ (সংগীত প্রযোজক বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম), অপু বর্মন (সংগীত শিল্পী বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন এবং সংগীত শিক্ষক জেলা শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রাম), অপু সেনগুপ্ত (বিশিষ্ট গীতিকার বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন), দীপ্ত দত্ত সংগীত শিল্পী (বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন)।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন, খ্যাতনামা মরমি কন্ঠ শিল্পী শিমুল শীল, বাউল শিল্পী বাবুল শীল, অভিষেক দাশ, বাউল জুয়েল দ্বীপ, শিউলী চৌধুরী, আনন্দ প্রকৃতি(মো:তৌহিদুল ইসলাম), আধাত্মিক শিল্পী সুরনাথ, কাওয়ালী শিল্পী মেঘলা। ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি প্রতিযোগিতার সেরা কন্ঠ শিল্পী বাঁধন ঘোষ, ইন্দ্রিলা ঘরজা, মিম দাশ, অধরা চৌধুরী রাত্রি, আরাধ্যা মজুমদার, সৈয়দ রাসতিন, অরূপ কুমার শীল, ঊর্মি নাগ সংগীত পরিবেশন করেন।

যন্ত্র সংগীত শিল্পীতে ছিলেন- কীবোর্ডে রুবেল ঘোষ, অক্টোপ্যাডে পাপন, তবলায় উৎস, বাংলা ঢোলে হৃদয় বাঁশিতে নিলয়। সংগীত তত্বাবধানে যোগী স্বপন কুমার দাশ, অনুষ্ঠান তত্বাবধানে মো: মোহসীন(সাধারণ সম্পাদক, ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি সংসদ)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মো: সাইফুর রহমান ও ববিতা ইসলাম।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ