আজঃ শনিবার ১৭ মে, ২০২৫

ইছামতীর গর্ভে সীমান্তবর্তী জমি,ছোট হচ্ছে দেবহাটা উপজেলা

দেবহাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ

ফেরদৌসী বেগমের ৪০ বছরের সংসার। ভাতশালা গ্রামের ইছামতী পাড়ের বাসিন্দা এই নারী গত চার দশকে চোখের সামনে বসতবাড়ি, মাছের ঘের, খেলার মাঠ, মাছভরা পুকুর, চাষের জমি নদীগর্ভে বিলীন হতে দেখেছেন। এবার ভাঙতে বসেছে তাঁর বসতবাড়ি। এ নিয়ে অনিশ্চয়তা রাতের ঘুম ছুটে গেছে তাঁর!
ইছামতীর গর্ভে ফেরদৌসী বেগমের মতো অনেক কিছুই হারিয়েছেন রফিকুল ইসলাম। প্রায় তিন বছরের ব্যবধানে তিনি হারিয়েছেন পূর্বপুরুষের কবরস্থান, মৎস্য ঘেরসহ অনেক জমি। চোখের সামনে বিলীন হতে দেখেছেন আব্দুল গফ্ফার সরদার, আব্দুর রউফসহ পাটনিদের বসতবাড়ি। একসময় নদীর দুই পাড়ের বেড়িবাঁধে বসে দুই দেশের মানুষ খোশগল্প করতেন। আজ সেই স্থান নদীগর্ভে। নদী বড় হতে হতে এপার থেকে ওপারে তাকালে ঝাপসা লাগে। নদীপাড়ের মানুষের যেখানে পারিবারিক কবরস্থান ছিল, তার বিপরীতে ছিল ভারতের জালালপুর ট্যাঁক নামক এলাকা। সেখানে এখন বিস্তীর্ণ চর। আর গোয়ালাটি, স্বৈতপুর, শাকচূড়া এলাকা বসবাসের উপযোগী হয়ে পড়েছে। আর বাংলাদেশের ভাতশালা, কোমরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার নদীর পাড় ক্রমেই ভেঙে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক ভাতশালা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমানের বাড়ির প্রাচীর, গোয়ালঘরের দেয়ালে বড় ফাটল দেখে দেয়। সেই সঙ্গে নদীপাড়ের মাটি ধসে গিয়ে মূল বাঁধ চৌচির হয়ে গেছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা পরিদর্শনে এসে দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিয়ে যায়। পরে কিছু বালুর বস্তা ফেলে কোনো রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বাঁধ রক্ষায় এটি কিছুই নয় বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যে পরিমাণ বরাদ্দ হয়, তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয় না। কোনো কাজই ঠিকঠাক করা হয় না, এ কারণে বছরের পর বছর ভাঙছে নদী। নদীর পাড় রক্ষায় যে বস্তা ব্যবহার করা হয় তা টেকসই হয় না।

আরও অভিযোগ রয়েছে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলে ভাগ্য খোলে অনেকেরই। আর তাই ভেঙে যাওয়ার আগে কাজও শুরু হয় না। ফলে নদী পাড়ের মানুষের দুর্ভোগ কোনো কালে ঘুচবে বলে কেউ আর আশা করেন না!

বাংলাদেশ-ভারত সীমানা ইছামতী নদী সাতক্ষীরা জেলার গা ঘেঁষে বয়ে গেছে। জেলার একমাত্র সীমান্তবর্তী নদী এটি। ইছামতী জেলার কয়েকটি বহমান নদীর মধ্যে অন্যতম। আর এই নদীর বড় একটি অংশ এলাকাজুড়ে রয়েছে দেবহাটা উপজেলা। কিন্তু বর্তমানে সর্বনাশা রূপ নিয়েছে ইছামতী। প্রতিবছর ইছামতীতে দেখা দেয় তীব্র ফাটল ও ভাঙন। নদীভাঙনের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, ঠেলা জাল, অবৈধভাবে নদীর পাড় ঘেঁষে ছোট-বড় মৎস্য ঘের ও পুকুর খননের কারণেই ইছামতীর ভাঙন দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এর ফলে দেবহাটা সীমান্তে ইছামতীর পাড়ের গ্রামগুলোর জনসাধারণ প্রতিনিয়ত উদ্বেগ আর আতঙ্কের মধ্য দিন কাটাচ্ছেন। বালু উত্তোলনের ফলে দেবহাটা সদর ইউনিয়নের রাজনগর ও চর দেবহাটা মৌজা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ২৪টি মৌজার স্থলে বর্তমানে আছে ২২টি।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে নদীর বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যায় পাঁচ-ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ধান, মৎস্য ঘের, খামার, বাড়ির আঙিনা ডুবে যায়। এরপর ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিবছরই ইছামতীর দেবহাটা সীমান্তে ছোট-বড় ভাঙন দেখা দেয়। প্রায় প্রতিবছর সংস্কারও হয়। কিন্তু তাতে তেমন কোনো লাভ হয় না।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপা রানী সরকার বলেন, ইছামতী নদী দুই দেশের সীমান্তবর্তী হওয়ায় নদীর মাঝখান থেকে উভয় দেশের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। আর এতে বাংলাদেশের পাড়ের জমি নদীতে বিলীন হয়ে নদীর অংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জমি কমছে। অপর দিকে ভারতের পাড়ের জমি বেড়ে চলেছে। এভাবে এই সীমান্তে বাংলাদেশ ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে।

বাঁধ নির্মাণে ও সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) মাহাবুব রহমান বলেন, বিভিন্ন কারণে নদীভাঙন দেখা দেয়। আর নদীভাঙন রক্ষায় যেভাবে শিডিউল করা হয় সেভাবে কাজ হয়। কোনো অনিয়ম হয় না।

এদিকে, চলতি বছরের গত ১০ মার্চ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আগামী পয়লা বৈশাখ থেকে নতুনভাবে বালুমহাল ইজারা নিতে একটি শ্রেণি বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করছে বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

শিবগঞ্জে খুনের আসামীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে প্রকাশ্য দিবালোকে গোলাম আজম হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুলের সামনে ৬নং ওয়ার্ডবাসীর ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

গোলাম আজমকে হত্যার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও আসামিদের কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ১৮ রমজান (১৯ মার্চ) বিকেলে কুখ্যাত সন্ত্রাসী মো. আলমগীর ও তার সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা চালায় গোলাম আজমের ওপর। পরিবারের সামনেই তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। তাকে উদ্বার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ২২ মার্চ রাতে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় জামায়াত কর্মী গোলাম আজম। পরদিন তার বাবা আব্দুল খালেক শিবগঞ্জ থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু ঘটনার এক মাস ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও একজন আসামিও আটক করেনি পুলিশ।

বক্তারা আরোও জানান, আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। উল্টো আসামিরা এখনও নিহতের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। এনিয়ে মামলা করে উল্টো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারটি। মানববন্ধনে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আসামি আটক না হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।

গোলাম আযমের বোন খালেদা বেগম জানান, এপর্যন্ত একজন আসামিও গ্রেফতার হলো না, কি করছে পুলিশ? এখনও আমাদের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা শুধুমাত্র ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। খুনিদের ফাঁসি ছাড়া আমরা আর কিছুই চাইনা।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্কার জেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন মেহেদী, শিবগঞ্জ পৌর শাখার সভাপতি এসএম মহিউদ্দিন, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আসলাম-উদ-দৌলা, নিহত জামায়াত কর্মী গোলাম আজমের বাবা আব্দুল খালেক, মা রহিসা বেগম, বোন খালেদা বেগম, স্ত্রী হালেমা খাতুন, স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াহেদ আলীসহ এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কিবরিয়া বলেন, গোলাম আজম হত্যা মামলার আসামিদের ধরতে আমরা নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শিগগিরই সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সব আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবিতে রেলপথ অবরোধ।

রাজশাহী থেকে ঢাকার পথে চলাচল করা সব আন্তঃনগর ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চালুর দাবিতে রেলপথ অবরোধ, মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঢাকাস্থ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতির আয়োজিত কর্মসূচীতে আন্দোলনকারীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন প্লাটফর্মে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানার নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে অংশ নেয়।

এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহীগামী ‘মল্লিকা কমিউটার’ ট্রেনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এতে ট্রেনটি ছাড়তে প্রায় ৩০ মিনিট দেরি হয়

এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিল্প ও বণিক সমিতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম, জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম বুলবুল, সাবেক সংসদ সদস্য লতিফুর রহমান, সুজনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন জুয়েল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান, শিল্প ও বণিক সমিতির সহসভাপতি খাইরুল ইসলাম এবং পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর শাহনেওয়াজ খান সিনা বক্তব্য দেন।

তারা বলেন, রাজশাহী থেকে যেসব আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়, সেসব ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চালু করতে হবে। সেইসঙ্গে রহনপুর রেলবন্দর, আমনুরা জংশন রেলস্টেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন আধুনিকীকরণের দাবি জানান তারা।

দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামীতে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন মাস্টার মোহা. ওবায়দুল্লাহ বলেন, অবরোধ সম্পর্কে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচির কারণে ১২৮ ডাউন মল্লিকা কমিউটার ট্রেনটি সোয়া ১০টার পরিবর্তে ১০টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যায়।

তবে আন্দোলনকারীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করার আহ্বান জানান তিনি।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ