আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে

চট্টগ্রামে বেসরকারি প্রায় ৬০০ প্রতিষ্ঠানে রোগী ভর্তি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোগীদের সীমাহীন ভোগান্তি

চট্টগ্রামে বেসরকারি পর্যায়ে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি ২৪ ঘন্টা চলবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম জেলার নেতারা। গতকাল থেকে জেলা ও মহানগরীতে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মিলিয়ে প্রায় ৬০০ প্রতিষ্ঠানে রোগী ভর্তি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। পাঁচ হাজারেরও বেশি চিকিৎসক চেম্বার বন্ধ রেখে ব্যক্তিগতভাবে কোনো রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন না। এদিকে বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকায় শত, শত রোগী ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। অনেক রোগী ও তাদের স্বজনদের সকাল থেকে বিভিন্ন ল্যাব ও ক্লিনিকের সামনে অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। রোগীর চাপ বেড়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোতেও।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে নগরীর পাঁচলাইশে শেভরণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটির মূল ফটক বন্ধ করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ফটকের সামনে নগরীর বাইরে থেকে আসা কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনকে অপেক্ষারত দেখা গেছে। কক্সবাজার থেকে শেভরণে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে আসা বাসন্তী রায় নামে মধ্যবয়সী এক নারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতাল বন্ধ থাকবে, এটা জানতাম না। ডাক্তার প্রদীপ স্যার আজ (মঙ্গলবার) সকালে টাইম দিয়েছিলেন। টাইম বরাবর যাতে আসতে পারি, সে জন্য সোমবার কক্সবাজার থেকে হালিশহরের আনন্দবাজারে মেয়ের বাসায় চলে আসি। ভোরে উঠে এখানে এসেছি। এখন দেখছি হাসপাতাল বন্ধ, তাহলে আমাকে টাইম দিল কেন? ব্রেস্ট টিউমার রোগে আক্রান্ত এক নারীকে নিয়ে তার স্বামী আসেন শেভরণ ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মী তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না। ওই নারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাটহাজারী থেকে এসেছি। এই রোদের মধ্যে কত কষ্ট হয়েছে।
সুমন রায় নামে এক রোগী বুকে ব্যাথা নিয়ে সোমবার রাতে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। চিকিৎসক তাকে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পরীক্ষা দেন। সকালে নগরীর জামালখানে প্রথমে সেনসিভ এবং পরে ল্যাব এক্সপার্টে গিয়ে তিনি পরীক্ষা করাতে ব্যর্থ হন। সুমন জানালেন, দুই ল্যাবে দায়িত্বরত কর্মীরা তাকে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন।
নগরীর মেহেদিবাগে ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. লিয়াকত আলী খান বলেন, সকাল থেকে অনেক রোগী এসেছে। আমরা একজনও ভর্তি করিনি। সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমাদের এখানে যারা আগে থেকে ভর্তি আছেন, তাদের আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি।
বিএমএ, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফয়সল ইকবাল চৌধুরী বলেন, আমাদের দাবি একেবারে সুনির্দিষ্ট। ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আজকের (মঙ্গলবার) পর আমরা আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করব।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী জানিয়েছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে। এ অবস্থায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে চিকিৎসা সেবায় কোনো ব্যতয় না ঘটে, সেটা জোরালোভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ১০ এপ্রিল রাতে পটিয়া পৌরসভায় বেসরকারি ‘পটিয়া জেনারেল হাসপাতাল লিমিটেডে’ কর্তব্যরত চিকিৎসক রক্তিম দাশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে চিকিৎসা দিতে দেরি করার অভিযোগ তুলে তাকে বেধড়ক পেটায় দলটির কিছু নেতাকর্মী। এরপর ১৪ এপ্রিল সকালে নগরীর ও আর নিজাম রোডে বেসরকারি মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে হামলার শিকার হন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক রিয়াজ উদ্দিন শিবলু। চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক শিশুর মৃত্যুর পর উত্তেজিত লোকজন চিকিৎসককে মারধর করে।
এর প্রতিবাদে গত সোমবার বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চিকিৎসক রক্তিম দাশের ওপর হামলাকারী ছৈয়দ চেয়ারম্যানসহ আসামিদের গ্রেফতার এবং মেডিকেল সেন্টারে রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর ওপর হামলার মূল আসামিসহ জামিন পাওয়া আসামিদের জামিন বাতিল ও অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সকল প্রকার প্রাইভেট প্র্যাকটিস (ব্যক্তিগত চেম্বার, হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নতুন রোগীর সেবা) বন্ধ থাকবে। বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক এ পূর্বদিনের ভর্তি রোগীর চিকিৎসা সেবা চলবে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পূর্বের রোগীর রিপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া যাবে, কোনো প্রকার নতুন রোগী এন্ট্রি বা সেবা দেওয়া যাবে না।
বিএমএ, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফয়সল ইকবাল চৌধুরী বলেন, বিএমএর নিবন্ধিত প্রায় পাঁচ হাজার চিকিৎসক আছেন। জেলা ও মহানগরীতে বিভিন্ন প্রাইভেট চেম্বারে উনারা সেবা দেন। বিএমএর কর্মসূচি অনুযায়ী সবাই একযোগে চেম্বারে চিকিৎসা বন্ধ রেখেছেন। বিএমএর সদস্য হননি এমন অনেক চিকিৎসকও চেম্বারে চিকিৎসা দেন। তারাও আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে চেম্বার বন্ধ রেখেছেন।
চট্টগ্রাম প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী খান বলেন, সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে নিবন্ধিত ৫৮০টি বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ল্যাব আছে। সবগুলোতেই জরুরি সেবা ছাড়া অন্য কোনো সেবা দেওয়া হচ্ছে না। তবে যেসব রোগী আগে থেকে ভর্তি আছেন, তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট (ড্যান), চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. চন্দন দাশ বলেন, শুধু বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার নয়, বিভিন্ন এনজিও যেসব হাসপাতাল পরিচালনা করে, তারাও কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে ২৪ ঘন্টার জন্য সেবা বন্ধ রেখেছেন। তবে সরকারি হাসপাতাল চালু আছে, সেখানে চিকিৎসকেরা দায়িত্ব পালন করছেন। ল্যাবে জরুরি স্যাম্পল সংগ্রহ করা হচ্ছে, তবে রিপোর্ট পাওয়া যাবে কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রামে কাস্টমস কর্মকর্তাদের গাড়িতে হামলার সময় ‘গুলি কর, গুলি কর’ শব্দ

P চট্টগ্রাম মহানগরের কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার উপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডবলমুরিংয় থানাধীন সিডিএ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কে চৌধুরী সুপারশপের সামনে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা হঠাৎ প্রাইভেটকার থামিয়ে চাপাতি দিয়ে গাড়ির গ্লাস ভাঙে এবং ‘গুলি কর, গুলি কর’ চিৎকার করে প্রাণনাশের ভয় দেখায়।হামলার শিকার হলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বদরুল আরেফিন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে হামলার শিকার রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, অফিস যাওয়ার পথে হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে একটি মোটরসাইকেলে তিনজন এসে আমাদের গাড়ির গতিরোধ করে। তারপর তারা চাপাতি দিয়ে গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলে। এসময় একজন আরেকজনকে বলতে থাকেন, ‘গুলি কর, গুলি কর’। পরে প্রাণ বাঁচাতে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়াতে থাকি। তিনি আরও বলেন, হামলাকারীদের তিনজনের মধ্যে দুজন হেলমেট পরিহিত ছিল, আকেরজন হেলমেট পরেনি। হামলার পর তারা মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, গত অক্টোবরে তার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে হুমকি দেয়া হয়। পরে বন্দর থানায় নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। এর একমাস পরেই এই হামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পশ্চিম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূঁইয়া বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ফুটেজ পর্যালোচনা করে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। একটি মোটরসাইকেলে তিনজন এসে হামলা চালিয়েছে। প্রাথমিক ধারণা, এটি পূর্ব শত্রুতার জেরে ভয়ভীতি দেখানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। যদিও হামলার সময় ‘গুলি কর, গুলি কর’ চিৎকার করা হয়েছিল, কোনো গুলি করা হয়নি। আমরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। এই ঘটনায় এখনও মামলা দায়ের হয়নি; কাস্টমস কর্মকর্তারা চাইলে মামলা করতে পারেন, নতুবা পুলিশ মামলার প্রক্রিয়া শুরু করবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার এইচ এম কবির বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আমাদের দুজন কর্মকর্তা কাস্টমস গোয়েন্দা অফিস থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে যাওয়ার পথে তাদের উপর হামলা হয়েছে। তাদের গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। এ ধরনের হামলা আমাদের জন্য শঙ্কার বিষয়। আমরা আশা করি রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দিবে।

সামুদ্রিক নিরাপত্তা হচ্ছে আরও শক্তিশালী আইওরিস প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতীয় কেন্দ্রবিন্দুর দায়িত্ব দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে। সামুদ্রিক তথ্য আদান-প্রদানের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম আইওরিসে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে চট্টগ্রাম বন্দর। এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে বলে দাবি বন্দর কর্তৃপক্ষের।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ইইউ’র এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন।

জাতীয় ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, কাস্টমস, মৎস্য বিভাগসহ সব সামুদ্রিক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জোরদার করবে। এতে দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী হবে।তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অবস্থান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তা রক্ষায় এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জানা গেছে, ক্রিমারিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। এর আওতায় পরিচালিত আইওরিস প্ল্যাটফর্মে বর্তমানে বিশ্বের ৫৭টি দেশের ১৫০টির বেশি সংস্থা যুক্ত রয়েছে।

এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বেসামরিক ও সামরিক সামুদ্রিক সংস্থাগুলো নিরাপদভাবে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।আরও জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে সিপিএ দেশের নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক সংস্থাকে নিয়ে একটি আন্তঃসংস্থা প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আইওরিস ব্যবহারের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, গত ১৮-২০ নভেম্বর ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত ক্রিমারিও-এর তৃতীয় নীতিনির্ধারণী বৈঠকেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে।

প্রসঙ্গত, আইওরিস একটি নিরাপদ ওয়েবভিত্তিক তথ্য বিনিময় ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে জাহাজের অবস্থান নির্ণয়, দুর্ঘটনার তথ্য আদান-প্রদান, মানচিত্রভিত্তিক বিশ্লেষণ এবং সমন্বিত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। জলদস্যুতা, অবৈধ মাছ ধরা, চোরাচালান এবং সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধেও এই প্ল্যাটফর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ