আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

কালুরঘাট সেতুতে গাড়ি চলতে পারে জুন-জুলাইয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী জুন বা জুলাইয়ে কালুরঘাট সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। গত সপ্তাহে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীর তাণ্ডবে কালুরঘাট সেতুর ৯ ও ১০ নম্বর স্প্যানে কর্ণফুলী নদীতে নোঙর করা একটি লাইটার জাহাজ বেপোরোয়া গতিতে ধাক্কা দেয়। এতে সেতুর আন্ডার স্ল্যাং গার্ডার, ওয়াকওয়ে ও রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা সারাতে আরো মাস খানেক সময় লাগবে। সব মিলিয়ে পুরো সংস্কারকাজ শেষ করে গাড়ি চলাচল শুরু করতে দুই মাস লেগে যেতে পারে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত বলেন, কোন দিন থেকে গাড়ি চলবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, জুন-জুলাই থেকে গাড়ি চলতে পারে। তবে এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য (চট্টগ্রাম-৮) আবদুচ ছালাম বলেন, আমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কথা হয়েছে। শিগগিরই সংস্কারকাজ শেষ হবে। কোরবানির ঈদের আগেই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরুর আগে বড় মাথাব্যথার কারণ ছিল শতবর্ষী জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু। ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে সেতুর ওপর যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে। শুরুতে তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যানচলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে ৫ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে ট্রেন চলাচল শুরু করে দেওয়া হয়। এরপর দফায় দফায় ঘোষণা দিয়েও সেতুটি যানচলাচলের উপযোগী করে তুলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এটি নিয়ে খুব একটা ‘মাথাব্যথা’ দেখা যাচ্ছে না সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিদের।
সূত্রে জানা গেছে, কালুরঘাট সেতুর বিকল্প হিসেবে বর্তমানে দেওয়া হয়েছে তিনটি ফেরি। এর মধ্যে একটি বিকল। বাকি দুটির মধ্যে প্রায় সময় অচল হয়ে পড়ে একটি। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দুপারের চালক-যাত্রীদের। এপার থেকে ওপারে যেতে যেমন সময় বেশি লাগে, ঠিক তেমনি রোদ বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণে সেতুটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। ২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুদফা সেতু বন্ধ রেখে সংস্কার করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। সেই সময়ও অন্যান্য যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি চালু করা হয়েছিল। ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতু সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। ১৯৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে বন্দরনগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয় উপজেলা ও কক্সবাজার-বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।
এ প্রসঙ্গে ভোক্তাদের জাতীয় সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সময়ক্ষেপণ করা মানে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেওয়া। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা উচিত। তারা যদি এভাবে কাজের সময় বাড়াতেই থাকে; তাহলে মানুষের দুর্ভোগের পাল্লাও বাড়বে। এছাড়া সময় যেভাবে বাড়বে তেমনি খরচও বাড়বে। এ প্রকল্পের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা যদি সঠিক সময়ে কাজ শেষ না করেন; তাহলে জনগণের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি রাষ্ট্রের-সরকারেরও লোকসান হচ্ছে। কেননা, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়া মানে খরচ বেড়ে যাওয়া।
সেতুর সংস্কারে জোড়াতালির কাজেও ঠিকমতো যোগান দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন কালুরঘাট সেতুর দাবিতে আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, সেতু নির্মাণে যেমন দীর্ঘসূত্রতা, সংস্কার কাজেও ঠিক তেমনি দীর্ঘসূত্রতা।
বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আব্দুল মোমিন বলেন, দিনের পর দিন কাজ পেছাচ্ছে। এতে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে। বিকল্প হিসেবে যে ফেরি দেওয়া হয়েছে তাতেও কম ভোগান্তি নেই। প্রাণহানিসহ দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ভোলায় জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত ।

দ্বীপজেলা ভোলার আধুনিক সাহিত্য সংগঠন জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে ।গতকাল ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যায় ভোলা সদরের গঙ্গাকীর্তি হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগারে অনুষ্ঠিত জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সাধারণ সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম এর সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র প্রভাষক কবি রিপন শান, জাতীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট ভোলা জেলা শাখার সদস্য সচিব প্রভাষক কবি মিলি বসাক, জলসিঁড়ির সদস্য সচিব কবি মহিউদ্দিন মহিন, জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জলসিঁড়ির সংগঠক কবি নীহার মোশারফ, আবৃত্তিশিল্পী সমাজসেবক মীর মোশারেফ অমি প্রমুখ ।

সভায় উপস্থিত সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম কে সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সাংবাদিক কবি রিপন শানকে নির্বাহী সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সংগঠক মহিউদ্দিন মহিনকে সাধারণ সম্পাদক, কবি গবেষক কবি নীহার মোশারফ কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫- ২০২৭ গঠন করা হয়েছে ।

কমিটির সহ-সভাপতিগণ হচ্ছেন- সিনিয়র প্রভাষক কবি মিলি বসাক, কবি মোঃ জুলফিকার আলী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গণ হচ্ছেন- কবি আল মনির, আবৃত্তিশিল্পী মীর মোশারেফ অমি । অর্থ ও দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি বিলকিস জাহান মুনমুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি শাহনাজ পারুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাংবাদিক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ আরিফ । নির্বাহী সদস্যগণ হচ্ছেন- অধ্যক্ষ কবি এম এস জালাল বিল্লাহ, কবি দিলরুবা জ্যাসমিন, কবি চৌধুরী সাব্বির আলম এবং কবি এরশাদ সোহেল ।

আসছে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার বিকেল ৪ টায় ভোলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য জলসিঁড়ির মাসিক সাহিত্য সভায় নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ