আজঃ শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

দিনাজপুর:

ফুলবাড়ীতে গোখাদ্যের চড়া দামের প্রভাব পড়ছে কোরবানির হাটে

অধ্যাপক অমর চাঁদ গুপ্ত অপু, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় কোরবানির পশু প্রস্তুতে করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় খামারিরা। তবে গোখাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় এবার লোকসানের আশঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। প্রান্তিক এসব খামারির দাবি, গোখাদ্যের এমন উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়ছে এবারের কোরবানির হাটে।

স্থানীয় খামারি, গরু ব্যবসায়ী ও পালনকারীরা বলছেন, এক বছর ধরে গোখাদ্যের দাম বাড়তে বাড়তে তা নাগালের বাইরে চলে গেছে। এর ওপর কোরবানির হাটকে সামনে রেখে এ দাম আরও বাড়তে শুরু করেছে। ভুসি, কাঁচা ঘাস, খড়, খৈল, চিটাগুড়, ধানের কুড়া, খুদসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম আগের বছরের তুলনায় দেড় থেকে দ্বিগুণ বেড়েছে। এর কারণে এবার গরুর প্রত্যাশিত দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

ফুলবাড়ী পৌর এলাকার স্বজনপুকুরের আমিন এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপক মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘কোরবানির হাটকে সামনে রেখে খামারে বিভিন্ন জাতের শতাধিক গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। একেকটির আকার ভেদে ৬০ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রির ইচ্ছা রয়েছে। অন্য বছরগুলোয় এ সময়ে খামার এসে দরদাম করলেও এবার ব্যাপারীরা খুব কম আসছেন। শুনেছেন, এবার গরম্ন পালন (উৎপাদন) হয়েছে বেশি। তারপরও বেশি দামে গোখাদ্য খাইয়ে শেষ পর্যন্ত ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে কি না, চিন্তায় রয়েছেন।’

চিন্তিত গরম্নর মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও। কোরবানির হাটকে সামনে রেখে প্রায় ২০ বছর ধরে গরুর ব্যবসা করে আসছেন ফুলবাড়ী পৌর এলাকার কাঁটাবাড়ী গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, এবার ফুলবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায় তুলনামূলকভাবে গরুর সংখ্যা বেশি। তবে গোখাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে গরু পালনের খরচ অনেকাংশে বেড়েছে। তাই কোরবানির লাভ করা নিয়ে ভয়ে আছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। গত বছর ১০টি গরু কিনে ঢাকার বিভিন্ন কোরবানির হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। কিন্তু এবার বাজার অনিশ্চিত এবং গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় মাত্র ৫ থেকে ৭টি গরু কিনে ঢাকায় পাঠানোর কথা ভাবছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলায় এবার কোরবানির উপযোগী পশুর সংখ্যা ২০ হাজার ১০৫টি। কিন্তু উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১৭ হাজার ২১২টি।

ফলে উপজেলায় চাহিদার চেয়ে ২ হাজার ৮৯৩ টি পশু বেশি রয়েছে। এতে ষাঁড় রয়েছে ৮ হাজার ৫১১ টি, বলদ ১ হাজার ৯৮ টি, গাভি ১ হাজার ৮৩৫টি, মহিষ ১২টি, ছাগল ৮ হাজার ১২৩ টি ও ভেড়া ৫২৬ টি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার উপজেলাটিতে কোরবানি উপযোগী মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ২০ হাজার ১০৫টি। উপজেলায় এবারের কোরবানির জন্য সব মিলিয়ে ১৭হাজার ২১২টি গবাদিপশুর চাহিদা থাকলেও পালন করা হয় ২০ হাজার ১০৫টি। অর্থাৎ ২ হাজার ৮৯৩টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। উদ্বৃত্ত পশুগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাবে।

গত বছরগুলোর তুলনায় ফুলবাড়ীতে এবার কোরবানির পশুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে জানান, উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘উপজেলায় এবারের কোরবানির জন্য সব মিলিয়ে ১৭ হাজার ২১২টি গবাদিপশুর চাহিদা থাকলেও পালন করা হয় ২০ হাজার ১০৫টি। অর্থাৎ ২হাজার ৮৯৩টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। উদ্বৃত্ত পশুগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাবে। চড়া গোখাদ্যের কারণে এবার খামারিদের গবাদিপশু পালনে ব্যয় অনেক বেড়েছে। তাই উপযুক্ত দাম না পেলে খামারিদের লোকসান হবে।’

এদিকে ফুলবাড়ী ও এর আশপাশের পশুর হাটগুলোয় কোরবানির আগেই তুলনামূলক চড়া দামে গরু বিক্রি হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও গরম্নর ব্যাপারীরা। তাদের মধ্যে অনেক ব্যাপারী উপজেলার বাড়ী বাড়ী ঘুরে গরু কিনতে শুরু করেছেন। তারা পশুর হাটগুলো থেকেও গরম্ন কিনছেন। মৌসুমি ব্যাপারীরা এসব গরম্ন কিনছেন মূলত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের কোরবানির হাটে বেশি দামে বিক্রির আশায়।

সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় পশুর হাট বলে পরিচিত ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী আমবাড়ী হাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গরুর সরবরাহ তুলনামূলকভাবে কম এবং দামও কিছুটা চড়া। হাটে থাকা গরুর ব্যাপারী ও হাট কমিটির সদস্যরা জানান, গোখাদ্যের অস্বাভাবিক দামের কারণে এবার খামারিদের গরু পালনের খরচ অনেক বেড়েছে। এ কারণে হাটে গরম্ন এনে পালনকারীরা বেশি দাম চাইছেন। আবার বেশির ভাগ খামারি ও গরু পালনকারী কোরবানির সময় দাম আরও বাড়তে পারে এ ধারণা করে হাটে এখনই কোনো গরম্ন আনছেন না। তাই হাটে গরুর আমদানি কম।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

রাণীশংকৈলে কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদের উদ্বোধন 

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে রবি ২০২৪-২৫ মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় বোরো ধান (উফশী) সমলয় ব্লক প্রদর্শনীর রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।  কাশিপুর ইউনিয়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর আয়োজনে ৫০ একর জমিতে চারা রোপণের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হয়। 

এসময় ইউএনও রকিবুল হাসান এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম, কৃষি প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন, জামায়াতের সেক্রেটারি রজব আলী, কৃষক আফজাল হোসেন আফাজ প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি অফিসার সহিদুল ইসলাম বলেন,সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদে উৎপাদন খরচের অতিরিক্ত সময় ও ব্যয়ের  হাত থেকে রক্ষা করতে যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদ ভূমিকা রাখছে।কৃষিতে যান্ত্রিকীকায়ণের ফলে সমলয় চাষাবাদে কৃষির উৎপাদন খরচ অর্ধেকের কম নেমে এসেছে ফলে কৃষক লাভবান হচ্ছে।
এ সময় শতাধিক স্থানীয় কৃষক কৃষানি উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উপসহকারী কৃষি অফিসার সাদেকুল ইসলাম।

পাবনার চলনবিলে অপরিকল্পিতভাবে বানিজ্যিক পুকুর খনন

পাবনা জেলার চলনবিলের বিভিন্ন  এলাকার  এ কৃষিজমিতে দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে। জমির উপরিভাগের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। রাতের আধারে কৃষিজমিতে খনন করা হচ্ছে পুকুর। প্রতি বছর কৃষিজমির বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে বানিজ্যিক পুকুর খননে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় কিছু কিছু অসাধু ব্যক্তি আবাদি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে ভেকু মেশিন দিয়ে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। ইটভাটার মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের অর্থের লোভ দেখিয়ে তিন-চার ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুরে পরিনত করছে।
১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রন আইন ( সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে।
এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই বছরের কারাদন্ড দেয়ার বিধান আছে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সাথে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
জেলার ৯টি উপজেলায় অবাধে চলছে জমির মাটি কাটার ঘটনা। মাটি কাটা হচ্ছে স্কেভেটরে (ভেকু মেশিন)। পরে ট্রাকে করে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায়। ভাঙ্গুড়া,ফরিদপুর  চাটমোহর,বেড়া, সুজানগর, সাঁথিয়া,আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী উপজেলায় কৃষিজমি কেটে বানিজ্যিক পুকুর খনন করা হয়েছে। এরমধ্যে আটঘড়িয়া সাঁথিয়া  ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে, হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরেই ভাঙ্গুড়া,ফরিদপুর, চাটমোহর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী,সাঁথিয়া, সুজানগর বেড়া উপজেলা এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ফসলী জমিতে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে।
 সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রেণি পরিবর্তন করে আবাদযোগ্য জমিতে পুকুর খননের সুযোগ নেই আইনে। তারপরও এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি নানান কৌশলে পুকুর খনন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিল ও নিচু এলাকাগুলোকে অনাবাদি বিংবা এক ফসলি দেখিয়ে পুকুর খনন করছেন তারা।
পুকুর খনন বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা সদর  উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি ও  নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্যাট  মোঃ মুরাদ হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে পুকুর খনন করা যাবে না। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান চলমান আছে। ইতিমধ্যে অনেককে জরিমানাসহ আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ