আজঃ মঙ্গলবার ২৪ জুন, ২০২৫

কুড়িগ্রাম:

কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে দিশেহারা শতশত পরিবার

নুরুন্নবী সরকার কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

Oplus_131072

কুড়িগ্রাম:

‘নদী ভাঙছে। বাড়ি নাই, ঘর নাই। হামার একটেও জায়গা নাই। মাইনষের বাড়িত যাবার নাগছি। ছাগল-গরু সউগ মাইনষের বাড়িত থোয়া নাগবে।’ বলেই মুখে কাপড় গুঁজে কান্না শুরু করেন বিভা রানী। মুখ লুকিয়ে ডুকরে কাঁদতে থাকেন। তিস্তার ভাঙনে বিভা রানী বসতভিটা হারিয়েছেন। নতুন করে বসতি গড়ার জায়গা নেই।

বিভা রানী কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা কালিরহাট গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর নিবারণের স্ত্রী। আগ্রাসী তিস্তার ভাঙনে তার বসতভিটার অর্ধেকেরও বেশি বিলীন হয়েছে। শেষ রক্ষা হবে না জেনে ঘর ও অন্যান্য উপকরণ সরিয়ে নিচ্ছিলেন। শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে এমন পরিস্থিতিতে কথা হয় তার সঙ্গে।

বিভা জানান, পরম যত্নে সাজানো সংসার তিস্তার ভাঙনে মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে গেছে। তারা অসহায়, নিরুপায়। বেদনার সেই কথা বলতে গিয়ে কষ্ট সংবরণ করতে পারেননি। কেঁদে ফেলেন। বিভা রানীর সেই কান্না রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়িত্বশীলদের কানে পৌঁছায় না। তিস্তার স্রোতের শব্দে সেখানেই মিলিয়ে যায়।

শুক্রবার বিদ্যানন্দের কালিরহাট বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শুধু বিভা রানী নন, তার প্রতিবেশী অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ ঘর ভেঙে উপকরণ স্কুলের আঙিনায় রেখেছেন, কেউবা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার বাড়ির বিছানাপত্র নিয়ে বাজারের দোকানের ভেতর অনিশ্চিত সংসার পেতেছেন।

গ্রামটির কয়েকশ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনের হুমকিতে দাঁড়িয়ে আছে শতাধিক পরিবার, কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, পাকা সড়কসহ কালিরহাট বাজার। তিস্তা ভাঙতে ভাঙতে অনেক পরিবারের আঙিনায় এসে পৌঁছেছে। যদি সর্বনাশা তিস্তার অনুগ্রহ হয়, যদি শেষ রক্ষা হয়, এমন আশায় অনেকে ভাঙনের কিনারে অপেক্ষারত।

এমনই একটি পরিবার বানেশ্বর-ভারতী রানী দম্পতির। পাকা সড়কের কাছে তিস্তার ভাঙনের মুখে থেকেও এখনও বসতি সরাননি। তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আঙিনায় বসে কলা গাছের মজ্জা আর কাঁঠালের বীজ দিয়ে দুপুরে খাবারের তরকারি প্রস্তুত করছিলেন ভারতী। সেই দৃশ্য ভারতীদের আর্থিক সামর্থ্যের জানান দিচ্ছিল। পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে ভারতী বলেন, ‘অবস্থা খারাপ। নদী ভাঙতেছে। অল্প এখনার জন্য আটক হয়া আছি। (নদী) দয়া করি যদি ফির ছাড়ি দেয়, এই আশায় আছি। না হইলে ঘর সরান লাগবে। কিন্তু জায়গা জমি নাই।’

ভারতীর সঙ্গে কথা বলার সময় পাশ দিয়ে শো শো শব্দের তীব্র স্রোতে বয়ে চলছিল টইটম্বুর তিস্তা। নদীতীরের বাসিন্দারা অনেকে বসতি সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ গাছপালা কাটছেন, কেউবা ভাঙনের কিনারে থাকা ক্ষেত থেকে পাট কেটে নিচ্ছেন। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, ‘ভাঙন রক্ষায় কাজ শুরু হবে কবে?’

তিস্তাতীরের বাসিন্দা ফজলুল হক ঘরবাড়ি ভেঙে ট্রাক্টরে করে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছিলেন। প্রবীণ এই বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা অসহায়। বাড়িঘর সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমি ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছি। এর আগে সাড়ে ৬ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন ভিটাটাও যাচ্ছে। ভাঙন রোধে আজ কাজ করে, কাল কাজ করে বলেও কাজ করছে না। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের এলাকাটা রক্ষা করেন। নাহলে কয়েকশ পরিবার বিলীন হয়ে যাবে।’

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সেফারুল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে একের পর এক পরিবারের বসতি বিলীন হচ্ছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সোনার জুম্মা এলাকা থেকে মৌলভীপাড়া পর্যন্ত তীরবর্তী শতাধিক পরিবার ভাঙনের হুমকিতে দাঁড়িয়ে আছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘তিস্তায় ভাঙন চলছে। বিদ্যানন্দের কালিরহাট বাজারের ভাটির দিকে ভাঙনের তীব্রতা বেশি। মন্ত্রী মহোদয়কে (পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী) বিষয়টি জানানোর পর প্রতিরক্ষা কাজের অনুমতি পাওয়া গেছে। আমরা আপাতত ২০০ মিটার স্থানজুড়ে জিও ব্যাগ ফেলবো। দু-একদিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’

তবে কত পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর পাউবো ‘জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ’ শুরু করবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

মাছের পোনা ছাড়লেন কর্নেল তানভীর হোসেন।

মাছের পোনা ছাড়লেন কর্নেল তানভীর হোসেন ।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে দুটি পুকুরে বিভিন্ন প্রজাণতির মাছের পোনা অবমুক্ত করেছেন, কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল তানভীর হোসেন। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার ও কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি পরিদর্শন শেষে তিনি এ কার্যক্রমে অংশ নেন।

পুকুর দুটিতে রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প এবং পাঙ্গাসসহ নানা প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক জনাব কামাল হোসেন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোঃ শাহ আলম খান এবং কারা বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

পোনা অবমুক্ত শেষে কর্নেল তানভীর হোসেন বলেন, “স্থানীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে আমরা সরকারের আয়ের নতুন পথ তৈরি করছি। এই পুকুরে উৎপাদিত মাছ বন্দীদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হবে, যা সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ে সহায়ক হবে এবং কারাগারকে খাদ্যে স্বনির্ভর করে তুলবে।”
তিনি আরও বলেন, “কারাগার শুধু শাস্তির নয়, এটি সংশোধনের স্থান। এখানে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বন্দীরা প্রশিক্ষণ পাচ্ছে, যা তাদের সামাজিক পুনর্বাসনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।”

এ সময় রাজশাহী বিভাগের ডিআইজি প্রিজন জনাব কামাল হোসেন বলেন, “কারাগার ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও আত্মনির্ভরশীল করতে আমরা নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। মাছচাষসহ বিভিন্ন কৃষিকাজ, বৃক্ষরোপণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এরই অংশ।”

কারাগার পরিদর্শনকালে কর্নেল তানভীর হোসেন একটি লিচু গাছ রোপণ করেন এবং বন্দী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি কারাগারের সার্বিক পরিবেশ, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

কারা প্রশাসনের এই উদ্যোগ বন্দীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার পাশাপাশি সরকারি ব্যয় কমাতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভবিষ্যতেও আর অন্যান্য গঠনমূলক অনেক ভাল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে ।

লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৮৪৩ মেট্টিক টন চাহিদা-সরবরাহ দুইটাই স্বাভাবিক।

পশু কোরবানীকে সামনে রেখে প্রতি বছর ঈদুল আজহায় লবনের চাহিদা বাড়ে। বিশেষ করে কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা ইতোমধ্যে লবন মজুদ করেছেন। এবার লবনের চাহিদা ও সরবরাহ দুইটিই বেশী থাকায় লবনের ঘাটতি হবেনা বলে জানা গেছে।

একই সাথে দামও রয়েছে নিয়ন্ত্রণে।এবার চাহিদা অনুযায়ী লবণের মজুদ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রয়েছে। তাছাড়া অপরিশোধিত লবণের মজুদও পর্যাপ্ত রয়েছে। এদিকে লবণের দামও রয়েছে নিয়ন্ত্রণে। সরকার এ বছর প্রতি কেজি লবণের দাম নির্ধারণ করেছে ১২-১৫ টাকা। তবে বিসিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাঠ পর্যায়ে এখন প্রতিমণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এ দর ছিল ২০০ টাকা।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সদর, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও ও টেকনাফে ৫৯ হাজার ৯৯ একর এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা ও পটিয়ায় ১০ হাজার ৮৯ একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়েছে। চাষির সংখ্যা ৪১ হাজার ৩৫৫ জন। গত বছর একই এলাকায় লবণ উৎপাদন হয় ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরুল কবীর বলেন, এবার লবণ সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। চামড়া ব্যবসায়ীরা গত মাস থেকেই লবণ নেওয়া শুরু করেছে। প্রায় ৩০ হাজার টনের মতো বিক্রি হয়েছে। চাহিদা বাড়লে অনেক সময় দামও কিছুটা বাড়ে। তবে এবার চাহিদা ও সরবরাহ-দুটোই ভালো রয়েছে। তাই ঈদের সময় লবণের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক থাকবে। এ বছর চট্টগ্রামে প্রতি বস্তা (৭৪ কেজি) লবণ বিক্রি হচ্ছে ৮১০-৮৫০ টাকায়।

এদিকে লবণের দাম স্থিতিশীল থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম চামড়া আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বলেন, লবণের দাম কমায় চামড়া কেনা ও সংরক্ষণে আমাদের সুবিধা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ লবণ কিনেছি। বাকি লবণ কেনার প্রক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য মতে, চট্টগ্রাম জেলায় কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে লবণের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৮৪৩ মেট্রিক টন। এবছর লবণ মজুদ আছে ৬ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন। এছাড়া অপরিশোধিত লবণের মজুদ রয়েছে ৬৬ হাজার মেট্রিক টন, যা দিয়ে সারাদেশের লবণের চাহিদার একটি বিরাট অংশ পূরণ করা যাবে।

বিসিক কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টন। গত ২০২৩-২৪ মৌসুমে লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন। সরকারিভাবে এ বছর দেশে লবণের চাহিদা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার টন।

বিসিক চট্টগ্রাম জেলার উপ মহাব্যবস্থাপক এস এম এম আলমগীর জানান, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে যে পরিমাণ পশু কোরবানি হবে তার রেশিও অনুযায়ী লবণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। সে অনুযায়ী লবণের মজুদ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রয়েছে। ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া অপরিশোধিত লবণের মজুদও পর্যাপ্ত রয়েছে।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ