আজঃ বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

কুড়িগ্রাম:

কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে দিশেহারা শতশত পরিবার

নুরুন্নবী সরকার কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

Oplus_131072

কুড়িগ্রাম:

‘নদী ভাঙছে। বাড়ি নাই, ঘর নাই। হামার একটেও জায়গা নাই। মাইনষের বাড়িত যাবার নাগছি। ছাগল-গরু সউগ মাইনষের বাড়িত থোয়া নাগবে।’ বলেই মুখে কাপড় গুঁজে কান্না শুরু করেন বিভা রানী। মুখ লুকিয়ে ডুকরে কাঁদতে থাকেন। তিস্তার ভাঙনে বিভা রানী বসতভিটা হারিয়েছেন। নতুন করে বসতি গড়ার জায়গা নেই।

বিভা রানী কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা কালিরহাট গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর নিবারণের স্ত্রী। আগ্রাসী তিস্তার ভাঙনে তার বসতভিটার অর্ধেকেরও বেশি বিলীন হয়েছে। শেষ রক্ষা হবে না জেনে ঘর ও অন্যান্য উপকরণ সরিয়ে নিচ্ছিলেন। শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে এমন পরিস্থিতিতে কথা হয় তার সঙ্গে।

বিভা জানান, পরম যত্নে সাজানো সংসার তিস্তার ভাঙনে মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে গেছে। তারা অসহায়, নিরুপায়। বেদনার সেই কথা বলতে গিয়ে কষ্ট সংবরণ করতে পারেননি। কেঁদে ফেলেন। বিভা রানীর সেই কান্না রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়িত্বশীলদের কানে পৌঁছায় না। তিস্তার স্রোতের শব্দে সেখানেই মিলিয়ে যায়।

শুক্রবার বিদ্যানন্দের কালিরহাট বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শুধু বিভা রানী নন, তার প্রতিবেশী অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ ঘর ভেঙে উপকরণ স্কুলের আঙিনায় রেখেছেন, কেউবা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার বাড়ির বিছানাপত্র নিয়ে বাজারের দোকানের ভেতর অনিশ্চিত সংসার পেতেছেন।

গ্রামটির কয়েকশ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনের হুমকিতে দাঁড়িয়ে আছে শতাধিক পরিবার, কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, পাকা সড়কসহ কালিরহাট বাজার। তিস্তা ভাঙতে ভাঙতে অনেক পরিবারের আঙিনায় এসে পৌঁছেছে। যদি সর্বনাশা তিস্তার অনুগ্রহ হয়, যদি শেষ রক্ষা হয়, এমন আশায় অনেকে ভাঙনের কিনারে অপেক্ষারত।

এমনই একটি পরিবার বানেশ্বর-ভারতী রানী দম্পতির। পাকা সড়কের কাছে তিস্তার ভাঙনের মুখে থেকেও এখনও বসতি সরাননি। তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আঙিনায় বসে কলা গাছের মজ্জা আর কাঁঠালের বীজ দিয়ে দুপুরে খাবারের তরকারি প্রস্তুত করছিলেন ভারতী। সেই দৃশ্য ভারতীদের আর্থিক সামর্থ্যের জানান দিচ্ছিল। পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে ভারতী বলেন, ‘অবস্থা খারাপ। নদী ভাঙতেছে। অল্প এখনার জন্য আটক হয়া আছি। (নদী) দয়া করি যদি ফির ছাড়ি দেয়, এই আশায় আছি। না হইলে ঘর সরান লাগবে। কিন্তু জায়গা জমি নাই।’

ভারতীর সঙ্গে কথা বলার সময় পাশ দিয়ে শো শো শব্দের তীব্র স্রোতে বয়ে চলছিল টইটম্বুর তিস্তা। নদীতীরের বাসিন্দারা অনেকে বসতি সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ গাছপালা কাটছেন, কেউবা ভাঙনের কিনারে থাকা ক্ষেত থেকে পাট কেটে নিচ্ছেন। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, ‘ভাঙন রক্ষায় কাজ শুরু হবে কবে?’

তিস্তাতীরের বাসিন্দা ফজলুল হক ঘরবাড়ি ভেঙে ট্রাক্টরে করে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছিলেন। প্রবীণ এই বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা অসহায়। বাড়িঘর সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমি ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছি। এর আগে সাড়ে ৬ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন ভিটাটাও যাচ্ছে। ভাঙন রোধে আজ কাজ করে, কাল কাজ করে বলেও কাজ করছে না। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের এলাকাটা রক্ষা করেন। নাহলে কয়েকশ পরিবার বিলীন হয়ে যাবে।’

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সেফারুল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে একের পর এক পরিবারের বসতি বিলীন হচ্ছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সোনার জুম্মা এলাকা থেকে মৌলভীপাড়া পর্যন্ত তীরবর্তী শতাধিক পরিবার ভাঙনের হুমকিতে দাঁড়িয়ে আছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘তিস্তায় ভাঙন চলছে। বিদ্যানন্দের কালিরহাট বাজারের ভাটির দিকে ভাঙনের তীব্রতা বেশি। মন্ত্রী মহোদয়কে (পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী) বিষয়টি জানানোর পর প্রতিরক্ষা কাজের অনুমতি পাওয়া গেছে। আমরা আপাতত ২০০ মিটার স্থানজুড়ে জিও ব্যাগ ফেলবো। দু-একদিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’

তবে কত পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর পাউবো ‘জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ’ শুরু করবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

রাণীশংকৈলে কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদের উদ্বোধন 

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে রবি ২০২৪-২৫ মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় বোরো ধান (উফশী) সমলয় ব্লক প্রদর্শনীর রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।  কাশিপুর ইউনিয়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর আয়োজনে ৫০ একর জমিতে চারা রোপণের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হয়। 

এসময় ইউএনও রকিবুল হাসান এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম, কৃষি প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন, জামায়াতের সেক্রেটারি রজব আলী, কৃষক আফজাল হোসেন আফাজ প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি অফিসার সহিদুল ইসলাম বলেন,সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদে উৎপাদন খরচের অতিরিক্ত সময় ও ব্যয়ের  হাত থেকে রক্ষা করতে যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদ ভূমিকা রাখছে।কৃষিতে যান্ত্রিকীকায়ণের ফলে সমলয় চাষাবাদে কৃষির উৎপাদন খরচ অর্ধেকের কম নেমে এসেছে ফলে কৃষক লাভবান হচ্ছে।
এ সময় শতাধিক স্থানীয় কৃষক কৃষানি উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উপসহকারী কৃষি অফিসার সাদেকুল ইসলাম।

পাবনার চলনবিলে অপরিকল্পিতভাবে বানিজ্যিক পুকুর খনন

পাবনা জেলার চলনবিলের বিভিন্ন  এলাকার  এ কৃষিজমিতে দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে। জমির উপরিভাগের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। রাতের আধারে কৃষিজমিতে খনন করা হচ্ছে পুকুর। প্রতি বছর কৃষিজমির বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে বানিজ্যিক পুকুর খননে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় কিছু কিছু অসাধু ব্যক্তি আবাদি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে ভেকু মেশিন দিয়ে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। ইটভাটার মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের অর্থের লোভ দেখিয়ে তিন-চার ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুরে পরিনত করছে।
১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রন আইন ( সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে।
এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই বছরের কারাদন্ড দেয়ার বিধান আছে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সাথে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
জেলার ৯টি উপজেলায় অবাধে চলছে জমির মাটি কাটার ঘটনা। মাটি কাটা হচ্ছে স্কেভেটরে (ভেকু মেশিন)। পরে ট্রাকে করে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায়। ভাঙ্গুড়া,ফরিদপুর  চাটমোহর,বেড়া, সুজানগর, সাঁথিয়া,আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী উপজেলায় কৃষিজমি কেটে বানিজ্যিক পুকুর খনন করা হয়েছে। এরমধ্যে আটঘড়িয়া সাঁথিয়া  ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে, হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরেই ভাঙ্গুড়া,ফরিদপুর, চাটমোহর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী,সাঁথিয়া, সুজানগর বেড়া উপজেলা এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ফসলী জমিতে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে।
 সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রেণি পরিবর্তন করে আবাদযোগ্য জমিতে পুকুর খননের সুযোগ নেই আইনে। তারপরও এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি নানান কৌশলে পুকুর খনন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিল ও নিচু এলাকাগুলোকে অনাবাদি বিংবা এক ফসলি দেখিয়ে পুকুর খনন করছেন তারা।
পুকুর খনন বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা সদর  উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি ও  নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্যাট  মোঃ মুরাদ হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে পুকুর খনন করা যাবে না। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান চলমান আছে। ইতিমধ্যে অনেককে জরিমানাসহ আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ