আজঃ সোমবার ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে থানা হাজতে আসামির আত্যাহত্যায় স্বজনদের আহাজারি

চট্টগ্রামে চান্দগাঁও থানার হাজতে মামলার আসামির অস্বাভাবিক মৃত্যু

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রামে থানা হাজতে সাত মামলার এক আসামির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মো. জুয়েল (২২)। গতকাল বুধবার ভোর ৬টা ২৫ মিনিটের দিকে নগরের চান্দগাঁও থানার হাজতখানায় এ ঘটনা ঘটে। ডাকাতি ও ছিনতায় মামলায় গ্রেফতারের ৬ ঘণ্টার মাথায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। জুয়েল চান্দগাঁও খেজুরতলা এলাকার মৃত আব্দুল মালেক প্রকাশ আব্দুল মাবুদের ছেলে।
পুলিশ জানায়, আসামি জুয়েলকে রাত ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে নগরের কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর চান্দগাঁও থানার হাজতে রাখা হলে সেখানেই তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, কোতোয়ালী থানায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে দায়ের হওয়া একটি অস্ত্র মামলায় আদালতের পরোয়ানামূলে চান্দগাঁও থানা পুলিশ জুয়েলকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে। নিয়ম অনুযায়ী, রাতে তাকে থানা হাজতে রাখা হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করার কথা ছিল।
থানায় গিয়ে দেখা গেছে, হাজতখানার ভেতরে দেয়ালের সঙ্গে লাগোয়া একপাশে আধাদেয়াল ঘেরা একটি শৌচাগার আছে। এর ওপরে আছে ভেন্টিলেটর। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, পরণের শার্ট খুলে শৌচাগারের আধাদেয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে প্রথমে জুয়েল শার্টের এক হাত ভেন্টিলেটরের সঙ্গে বাঁধেন। নিচে ঝুলে থাকা হাতটি গলায় পেঁচিয়ে তিনি ঝুলে পড়েন। মিনিটখানেকের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে যান।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর জানান, রাতভর হাজতে জুয়েল একাই ছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে ডিউটি অফিসার গিয়ে হাজতে তার সঙ্গে কথা বলেন। ভোর ৫টা ২৫ মিনিট থেকে ৬টা পর্যন্ত ডিউটি অফিসার ও হাজতরক্ষীর সঙ্গে জুয়েলের হাজতের সামনে দফায় দফায় কথা হয়। ভোর ৬টা ২৪ মিনিট থেকে ৬টা ২৭ মিনিটের মধ্যে তাকে ভেন্টিলেটরের সঙ্গে শার্ট বেঁধে ঝুলে পড়তে দেখা যায় সিসি ক্যামেরায়। ‘ভোরে ডিউটি অফিসার ও সেন্ট্রি যখন জুয়েলের কাছে যায়, তখন সে জানায়, সকালে নাস্তা খাওয়ার পর সে একটি ওষুধ খায়, কিন্তু ওষুধের নাম সে জানে না। এজন্য তাকে তার ভগ্নিপতি সাগরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে দেয়ার জন্য বলেন। ডিউটি অফিসার তাকে মোবাইলে কথা বলে দেন। ছয়টার পর হাজতখানার সামনে থেকে ডিউটি অফিসার ও সেন্ট্রি চলে যান। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর সেন্ট্রি পরিবর্তন করা হয়। সকাল সাতটায় নতুন সেন্ট্রি দায়িত্ব গ্রহণ করে পাঁচ মিনিট পর গিয়ে দেখেন, জুয়েল ঝুলে আছে। তখনও রাতের ডিউটি অফিসারই দায়িত্বরত ছিলেন।
জুয়েলের বোন সালমা বেগম বলেন, সকালে পুলিশের ফোন থেকে কল করে জুয়েল প্রথমে আমার বড় বোনের সঙ্গে কথা বলে। এরপর আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলে তার জন্য ওষুধ নেয়ার কথা জানায়। আমি ও আমার স্বামী সকাল সাতটার একটু পরে ওষুধ নিয়ে থানায় আসি। আমাদের নয়টা পর্যন্ত এখানে (ডিউটি অফিসারের কক্ষ) বসিয়ে রাখে পুলিশ। দুই ঘণ্টা পর পুলিশ আমাদের একটি ভিডিও দেখায়। সেখানে দেখি, আমার ভাই তার শার্ট খুলে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।এদিকে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট থানায় গিয়ে লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করে। পুলিশের পক্ষ থেকেও আলাদাভাবে সুরতহাল করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদনে শুধুমাত্র গলায় ফাঁসজনিত জখমের চিহ্ন ছাড়া অস্বাভাবিক আর কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) মো. জাহাঙ্গীর।
পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনবছর আগে জুয়েল মাদক সেবন, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিলেন। সাত-আটমাস আগ থেকে অপরাধ কর্মকাণ্ড ছেলে প্রথমে টানা রিকশা চালাতে শুরু করে। এরপর সম্প্রতি তার ভগ্নিপতি রুবেলসহ মিলে ব্যাটারি চালিত রিকশা (ইজিবাইক) চালাতে শুরু করেন। নগরীর কোরবানিগঞ্জ এলাকায় একটি গ্যারেজ থেকে ইজিবাইক ভাড়া নিয়ে চালাতেন।
গত ২৫ জুন রাত সাড়ে এগারোটার দিতে যাত্রী নিয়ে যান নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার লইট্যাঘাট এলাকায়। সেখানে জুয়েলকে বেধড়ক পিটিয়ে রিকশা ছিনিয়ে নেয় একদল দুর্ব্ত্তৃ। এ ঘটনা গ্যারেজ মালিককে জানানোর পর তিনি কোনোভাবে ছিনতাইয়ের ঘটনা বিশ্বাস করেননি। তিনি এক লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
সালমা বেগম আরো বলেন, এক লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা মালিককে দিতে হবে শুনে জুয়েল পাগলের মতো হয়ে যায়। এত টাকা কোত্থেকে দেবে, বারবার শুধু একথা বলে টেনশন করতো। আমি, আমার বোন ও জুয়েলের স্ত্রী মিলে ত্রিশ হাজার টাকা জোগাড় করি। সেটা নিতে প্রথমে রাজি হয়নি গ্যারেজ মালিক। জুয়েলকে ডেকে নিয়ে গ্যারেজে আটকে মারধর করে। পরে সেই টাকা রেখে প্রতিদিন দুইশ টাকা করে কিস্তি দাবি করে। ‘বাসায় ফিরে জুয়েল প্রথমে একবার নিজের রুমে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আমার মা দেখে তাকে কোনোমতে রক্ষা করে। এরপর বাসার বাইরে টয়লেটে ঢুকে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তখন আমার বোন এবং অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা দেখে তাকে বের করে আনে।
পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রথমে ছিনতাইকারীদের এবং পরবর্তীতে গ্যারেজ মালিকের মারধরের কারণে জুয়েল অসুস্থ হয়ে পড়েন। ব্যাথায় কাতর জুয়েল কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ওষুধ সেবন করে আসছিলেন।
এদিকে বেলা বারোটার দিকে থানার সামনে যান জুয়েলের মা, স্ত্রীসহ আরও কয়েকজন স্বজন। তারা থানার সামনে আহাজারি করছিলেন। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তার মা মিনারা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে সুস্থ অবস্থায় এনেছেন আপনারা। সে হাসিমুখে আপনাদের সাথে এসেছে। সে কেন মারা যাবে ? তাকে আমার কাছে ফেরত দেন। আমি আমার ছেলেকে জীবিত ফেরত চাই। তাদের সামনে দিয়ে লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। অ্যাম্বুলেন্স যাত্রার সময় আহাজারিরত স্বজনরা সামনে শুয়ে সেটা কিছুক্ষণ আটকে রাখেন। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে লাশ মর্গে নিয়ে যায়।এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে চান্দগাঁও থানার ওসি জাহিদুল কবীর জানিয়েছেন।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি এবং অস্ত্র আইনে মোট ৭টি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় আমরা জিডি করেছি। ম্যাজিস্ট্রেট এসে সুরতহাল করে লাশের পোস্টমর্টেমের জন্য মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

বোয়ালখালীতে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে ৩২ টি চেক বিতরণ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের উদ্যোগে বোয়ালখালীতে ৩২ টি বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠানে চেক বিতরণ করা হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় শাকপুরা প্রজ্ঞাবংশ বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ উপলক্ষে এক সভা বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ট্রাষ্টি রূবেল বড়ুয়া হৃদয় এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন- চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ঐক্য ফ্রন্ট বোয়ালখালী উপজেলা শাখার সভাপতি পল্টু কান্তি বড়ুয়া ও সমাজকর্মী রাজীব বড়ুয়ার উপস্থাপনায় এতে আশির্বাদক ছিলেন- শাকপুরা সার্বজনীন তপোবন বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত বসুমিত্র মহাস্থবির, ভদন্ত বিপস্সী মহাথের, ভদন্ত পরমানন্দ মহাস্থবির, ভদন্ত দীপানন্দ থেরো। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন -চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব আজিজুল হক চেয়ারম্যান,

জেলার সদস্য মোঃ শওকত আলম, বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক হাজী ইছহাক চৌধুরী, সাবেক সদস্য সচিব হামিদুল হক মান্নান চেয়ারম্যান, পৌরসভা বিএনপি সাবেক আহবায়ক শহীদুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক প্রচার সম্পাদক সরোয়ার আলমগীর, বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, শওকত আলী চেয়ারম্যান, আবদুল আওয়াল মঞ্জু, শাকপুরা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আজম খান, পৌরসভা বিএনপি নেতা হাজী আবু আকতার, বোয়ালখালী উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোঃ ইকবাল হোসেন, প্যানেল চেয়ারম্যান হাসান চৌধুরী, শ্রমিক দল নেতা মোঃ মোঃ ইলিয়াসসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ,

বোয়ালখালী সম্মিলিত বৌদ্ধ পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী জয়সেন বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ ঐক্য ফাউন্ডেশন বোয়ালখালী উপজেলা শাখার সভাপতি বিকাশ বড়ুয়া, বৈদ্যপাড়া পঞ্চরত্ন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি দেশপ্রিয় বড়ুয়া, প্রদীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ঐক্য ফ্রন্ট মহানগর-জেলা ও উপজেলা শাখার নেতা কমল জ্যোতি বড়ুয়া,তাপস বড়ুয়া , সুমন বড়ুয়া, রনি বড়ুয়া চৌধুরী, বিপ্লব বড়ুয়া, প্রকৌশলী দিক্ষিত বড়ুয়া, অর্ণব বড়ুয়া,সুমন বড়ুয়া ছোটন বড়ুয়া,পিপলু বড়ুয়া সহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার/ মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ বলেছেন- বাংলাদেশ সম্প্রতির মেলবন্ধ, এদেশে সকল ধর্মের সহবস্থান ছিল -আছে- থাকবে। তাই ধর্মীয় সৌহার্দ্য বজায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এরিই ধারাবাহিকতায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট আমাকে নির্বাচিত করুন আমি আপনাদের সকলের আশির্বাদ প্রার্থী। তিনি এসময় বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ট্রাস্টি রূবেল বড়ুয়ার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন এখন সরকারী টাকা দপ্তরে গিয়ে আনতে হয়না, রূবেল বড়ুয়াই সরকারী টাকা নিয়ে আপনাদের নিকট হাজির। তার এ কর্মযজ্ঞকে আপনাদের আশির্বাদে রাখতে হবে।

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় গভীর রাতে স্বর্ণের দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমণিষা বাজারে বুধবার গভীর রাতে একদল দুর্ধর্ষ ডাকাত দল চার-পাঁচ টি স্বর্ণের দোকানে ও একটি বাড়িতে ডাকাতি করে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অষ্টমণিষা বাজারের শ্রী রতন কুমার কর্মকার, তপন কুমার কর্মকার, উত্তম কুমার কর্মকার, ইউসুফ আলী ও আত্তাব আলীর স্বর্ণের দোকানগুলোর তালা ভেঙে দুর্বৃত্ত ডাকাত দল প্রায় ৩০/৩২ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়। পরে ডাকাত দল রতন কুমার কর্মকারের বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে তার স্ত্রী ও ছেলে রঞ্জন কর্মকার কে মারধর করে আরও ১০ ভরি স্বর্ণ ও ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাত দল।

শ্রী রঞ্জন কুমার কর্মকার বলেন,একটি ডাকাত দল বাজারে নেমে দুই নৈশপ্রহরীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রথমেই বেঁধে ফেলেন।রতন কর্মকার বলেন, ‘ডাকাতেরা বাড়িতে ঢুকতেই আমি তিন তলায় উঠে প্রতিবেশীদের ফোন করি। কিন্তু কেউ আসেনি। পরে দীপকে ফোন করলেও বের হতে পারেনি, কারণ তার দরজার সামনে দুইজন অস্ত্রধারী দাঁড়িয়ে ছিল।’

তারপর প্রায় ১০-১২ জনের একটি ডাকাত দল প্রথমে স্বর্ণের দোকানগুলোতে হামলা চালায় এবং কিছুক্ষণ পরে তারা তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে সবাইকে অস্ত্রের মুখে স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা সব লুট করে। তার মা স্বর্ণের গহনা খুলে দিতে দেরি করলে তাকে অনেক মারধর করে। রঞ্জন কর্মকার বাধা দিলে তাকেও বেদম প্রহার করা হয়। দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের হাতে দুইটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র সহ সাপল,লোহার রড ছিলো বলে তারা জানান।

স্থানীয়রা আরও জানান,দুর্ধর্ষ ডাকাত দল স্পিডবোট যোগে গভীর রাতে বাজারে এসে স্বর্ণের দোকানগুলোতে ডাকাতি করে গুমানী নদীর ভাটির দিকে চলে যায়।

খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া সার্কেল) আবু বকর সিদ্দিক, পাবনা ডিবির ওসি রাশিদুল ইসলাম, ডিবির একটি টিম এবং ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কারা জড়িত, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন।’

পাবনা ডিবি পুলিশের ওসি রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কাজ। খুব শিগগিরই ডাকাত চক্রকে গ্রেপ্তার করা হবে।’অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।’

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ