
আমি ডাঃ উদয় শংকর রায়( উত্তম কুমার)। আমার জন্ম চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়ন ও লালানগর গ্রামে।আমাদের বাড়ীটা আমার
বাবার নামে খ্যাত। আমার বাবা মাষ্টার তেজেন্দ্র লাল রায়। আমার বাবার পরিবার আমরা তিন ভাই ও তিন বোন আমি ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় এবং ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়।আমি ঐ পরিবারে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেকটা গর্বিত মনে করি।তিনি বৃটিশ আমলে চট্টগ্রাম শহরের প্রবর্তক সঙ্ঘ স্কুলে পড়াশুনা করতেন তখন আমার বাবার চাল চলন-হাব-ভাব দেখে বৃটিশ সরকার আমার বাবাকে রায় উপাধিতে ভূষিত করেন।বৃটিশের তৈরী এই প্রবর্তক সঙ্ঘ স্কুলটিকে জেল স্কুল বলা হত।এই স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়ম-নীতি শিখানোও হত। স্কুলের যাবতীয় কর্মকাণ্ড শৃঙ্খলা মতো পরিচালিত হতো।কথাগুলো আমার বাবার মুখেই শুনেছি। স্মৃতির পাতায় গেথে রেখেছিলাম বলেই তা আজ সর্ব সমক্ষ্যে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।আমার বাবা মাষ্টার তেজেন্দ্র লাল রায় প্রবর্তক সঙ্ঘ স্কুল থেকে থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করে বোয়ালখালীতে কানুনগো পাড়া কলেজে পড়াশুনা করতেন।। সেই সময় নিয়মিত পড়াশুনা করে সেই কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। অতপর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেন। গ্রামে বাড়িতে যখন গিয়েছিলেন। তদানিন্তন আমলে আমার বাবাকে অনেক লোকজন দেখতে গিয়েছিলেন।
তখন গ্রামে খুব একটা গ্রেজুয়েট ছিল না বললেই চলে।
১৯৪২ ইংরেজিতে যখন মাষ্টার আশরাফ আলী তালুকদার ঐসময় উত্তর রাঙ্গুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেই মাষ্টার আশরাফ আলী তালুকদার
আমার ঠাকুর দাদা রজনী কান্ত নাথ মহোদয়ের কাছে এই কথা বলেছিলেন,- আপনার ছেলে গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেছে এটা শুধু আপনার একার গর্ব না, এই গর্ব অত্র গ্রামের গর্ব। এই সমগ্র রাঙ্গুনিয়া থানার অধিবাসীদের গর্বের বিষয় বলে আমি মনে করি।
আপনি যদি আপনার ছেলেকে আমাদের প্রতিষ্ঠিত উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার অনুমতি দেন তাহলে খুবই ভালো হবে। অত্র এলাকার ছেলে মেয়েরা শিক্ষা লাভ করতে পারবে।।প্রত্যুত্তরে আমার ঠাকুর দাদা রজনী কান্ত নাথ মহোদয় বলেছিলেন আমার ঘরে আলো জ্বলবে আর সবার ঘর অন্ধকার থাকবে সেটা আমি কখনো চাই না। তখন আমার ঠাকুর দাদা বলেছিলেন আমার ছেলে উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়েে বিনা টাকায় শিক্ষা দান করবে।সেই সময় আমার ঠাকুর দাদা রজনী কান্ত নাথ (মহাজন) নানিয়া চর বাজারে মুদি দোকান করতেন।সেই সময় মুদি দোকান করে অনেক সম্পদশালী হয়েছেন। তদানিন্তন আমলে বাবার অমতে
ছেলে মেয়েরা কিছুই করতে পারতো না।অর্থাৎ ছেলে মেয়ে মা বাবার বাধ্য ছিল। সেই থেকে আমার বাবা সুদীর্ঘ জীবন এই স্কুলে বিনা বেতনে শিক্ষা প্রদান করেছিলেন।শিক্ষকতা করার সময়কালে বাড়ির কাছে আমাদের দুই অংশীদারত্বের পুকুরের পাড়ে। ১৯৪৩ ইং
সালে আমার বাবার একক উদ্যোগে গ্রামের লোকজনের সহযোগিতায় একটা মাটিয়া কোটা তৈরী করেন। সেই মাটিয়া কোটার নামকরণ করেছিেলেন লালানগর বালিকা বিদ্যালয়। আমার বাবার নিজের অর্থায়নে স্কুলের যাবতীয় সরঞ্জামাদি ব্যবস্থা করেছিলেন।তখন থেকেই স্কুলের যাবতীয় কর্মকাণ্ড আমার বাবাই করে এসেছিলেন। সুদীর্ঘ বছর পর যখন স্কুলটা সরকারি করণ হলো তখন কতগুলো স্বার্থান্বেষী মানুষের চক্ষুশূল হওয়ার কারণে থানা অফিসারকে উৎকোচ দিয়ে রাতের অন্ধকারে জোর করে স্কুল গৃহটি ভেঙ্গে আমাদের বাড়ি পূর্ব পাশের সিকদার পুকুর পাড়ে নিয়ে গিয়ে রাতারাতি প্রতিস্থাপন করেন।তারপর ওখানেই সরকার কর্তৃক প্রদত্ত স্কুলটি পাকা দালানকোঠা নির্মিত হয়।আমার বাবার অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার প্রতিফলনকে দূবৃত্তরা জোর খাটিয়ে নিয়ে গেছে।কথায় আছে জোর যার মুল্লুক তার।অর্থাৎ Might is Right. তাই আমার ভাষায় বলি, কার ঘরে কে থাকে, কার গাড়ি কে চালায়,কার অধিকার কে ছিনিয়ে নিয়ে ভোগ করে।এটাই বড়ই৷ পরিতাপের বিষয়। এসবের বিচার সৃষ্টি কর্তার হাতে ন্যস্ত রইলো। মানুষের আাদালতে বিচার যদি সুষ্ঠু নাহি হয়। স্রষ্টার বিচার সুষ্ঠু হবে জেনো সুনিশ্চয়।
এছাড়াও ধামাইর হাট সংলগ্ন ভি,এইচ,ডি মিলন সঙ্ঘ
ক্লাবটিও আমার বাবার উদ্যোগে লালানগর ও রাজানগর গ্রামের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গের সহযোগিতায় তদানিন্তন আমলে প্রতিষ্ঠা লাভ হয়।আমার বাবার মুখে শুনেছিলাম তাদের নাম।প্রথমে ভূমি দাতা আহম্মদ কবির চৌধুরীর নাম না বললে নয়।উনি যদি সর্বাগ্রে ভূমি দান না করতেন, তাহলে আমার বাবার নেওয়া উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্য্যবশিত হতো বলে আমার সুদৃঢ় ধারনা। এই ক্লাবটির প্রতিষ্ঠা লগ্নে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের নাম উল্লেখ করছি, সর্বশ্রী
১. আহম্মদ কবির চৌধুরী, ২ মাষ্টার তেজেন্দ্র লাল রায়. ৩.ডাক্তার সতীশ চন্দ্র দাশ.৪ মাষ্টার দলিলুর রহমান.৫.মাষ্টার নুরুল হুদা,৬ বিমল দেওয়ানঞ্জী.৭.চিত্ত
দেওয়ানঞ্জী.৮.ডাক্তার বিনয় রঞ্ন দাশ। আরও অনকে
যাদের নাম আমার বিস্মরণ হয়েছে।এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠা সম্পাদক ছিলেন আমার বাবা মাষ্টার তেজেন্দ্র লাল রায়। এই ক্লাবে একটি লাইব্রেরীও ছিল। লাইব্রেরীটা ছিল আমার মায়ের ছদ্মনামে, স্মৃতিরেখা পাবলিক লাইব্রেরী। আমার প্রায়শই কলিকাতা যেতেন।তখন ছিল অবিভক্ত পাক্ ভারত। কলিকাতা থেকে বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকের লেখা কবিতার বই, গল্পের বই,ও উপন্যাসের বই নিয়ে এসে এই লাইব্রেরীতে দান করেছেন,তার কোন ইয়ওা নেই। আমার বাবা ছিলেন সাহিত্য প্রেমী ও সাংস্কৃতিক মনা মানুষ। এই লাইব্রেরীর বই পড়ে গ্রামের অনেক মানুষ জ্ঞান সম্পদে সমৃদ্ধি লাভ করেছেন। এই ক্লাবে একটা থিয়েটার মঞ্চ ছিল।এই মিলন সঙ্ঘ ক্লাবের সদস্য ও অনেক বছরে তিনটি বই মঞ্চস্থ হতো খুব ঝাঁকঝমক ভাবে। এই থিয়েটার দেখার জন্য অনেক দূর দূরান্ত থেকে মানুষের সমাগম হতো। আমিও ছোট অবস্থায় আমার বাবার অভিনয় দেখেছি এবং আমিও দুই তিনটা বইয়ে অভিনয় করেছি। বড়ই পরিতাপের বিষয়,এখন এই ভি,এইচ,ডি মিলন সংঙ্ঘ ক্লাব ও স্মৃতিরেখা পাবলিক লাইব্রেরীটার আজ অবহেলিত হয়ে জরাজীর্ণ ও অভিভাবক হীনতায় পড়ে আছে।এখনও এই প্রতিষ্ঠানের জায়গাটা প্রতিষ্ঠা সম্পাদক হিসেবেই আমার বাবার নামেই দলিলটি রয়েছে।
