আজঃ রবিবার ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

রোগী ও ডাক্তার উভয়কেই সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব আমার -স্বাস্থ্যমন্ত্রী

চট্টগ্রাম ব্যুরো

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন বলেছেন, রোগী যাতে যথাযথ চিকিৎসা পায় সেটা দেখা যেমন আমার দায়িত্ব তেমনি ডাক্তাররাও যাতে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে সুরক্ষা পায় সেটা দেখাও আমার দায়িত্ব। রোগী ও ডাক্তার উভয়কেই সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্বটা আমার। গতকাল শনিবার সকালে চটগ্রামের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত ডাক্তারদের সাথে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আপনারা যদি আমাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করেন তাহলে হাসপাতালের সব সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টা আমার থাকবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান নষ্ট এটা শুনতেও আমার কাছে খারাপ লাগে। ঢাকার পর চট্টগ্রাম বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এগুলো জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করার জন্য প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার আমি করব।
কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেছেন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি অনেক কষ্টে সময় বের করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, ডিজি সবাইকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছি। ওখানে আমরা স্বাস্থ্যখাত নিয়ে প্রেজেন্টেশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়েছিলাম। স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সেখানে বিশ্বস্ত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমরা যে প্রসিডিওর, মডেল তৈরী করেছি সেটা অনুযায়ী কাজ করতে পারলে স্বাস্থ্যখাতে ভালো কিছু হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন আরো বলেন, দেশে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা থাকা সত্বেও মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশেই চিকিৎসা করেন। মাননীয় সংসদ সদস্যরা যার যার স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে যদি চেকআপ করান তাহলে হাসপাতালে চিকিৎসার মান উন্নত হবে। দেশের চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। ফলে মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবে না। সভায় হাসপাতালের বিভিন্ন অসুবিধা ও লোকবল সংকটের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং সীমিত সময়ের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে বলে মন্ত্রী আশ্বাস প্রদান করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাক্তারের নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, একজন চিকিৎসকের জন্য আমি সব ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করতে চাই। মহিলা ডাক্তারদের রাতে ডিউটি করার সময় যাতে কোন ধরনের অসুবিধা না হয় তার আমি জন্য কাজ করছি।
তিনি হাসপাতাল পরিদর্শন প্রসঙ্গে বলেন, আমি গতকাল চট্টগ্রামে একটা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। একটা হাসপাতালে যদি ইমার্জেন্সি ডাক্তার না থাকে, অক্সিজেন সিলিন্ডার খালি থাকে তাহলে তারা রোগীকে কি সেবা দিবে। প্রাইভেট ক্লিনিক অবশ্যই চলবে আমি তার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু তাদেরকে সব নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। সাংবাদিক ভাইদের বলব আমি হাসপাতালে অভিযান চালাই না, পরিদর্শন করি। প্রত্যেকটা রোগী যাতে সুচিকিৎসা পায় সেটা দেখার দায়িত্ব আমার। ডাক্তাররা কিভাবে কাজ করছে, তারা সুরক্ষিত আছে কি না সেটা দেখার জন্য আমি পরিদর্শনে যাই। দেশের চিকিৎসার মান উন্নত করতে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন। তাহলে আমি আশা করি, দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে না গিয়ে বিদেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য দেশে আসবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গাইনি চিকিৎসকরা ঢাকায় চলে যেতে চায় উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন আরো বলেন, সবাই যদি ঢাকায় যেতে চায় তাহলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চলবে কেমন করে? এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটা অনুশাসন দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, যার যেখানে পোস্টিং তার সেখানেই চাকুরি করতে হবে। কেউ যদি যেতে না চায় বা আসতে না চায় তাহলে তাকে বলবা চাকরি ছেড়ে দিতে। যাকে যেখানে পোস্টিং দেয়া হবে সেখানে তাকে যেতেই হবে।
সুন্দরভাবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে যাতে পোস্টিং দিতে পারেন সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কাজ করছেন জানিয়ে বলেন, এটি অনেক বড় সময়সাপেক্ষ কাজ। আমি মাত্র ছয় মাস হলো দায়িত্বে আছি। আপনারা ইতোমধ্যে জানেন আমি ঠিক করেছি ঢাকায় দুইদিনের বেশি থাকব না। সারা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আমি নিজে গিয়ে দেখব।
এর পূর্বে পরিদর্শনের শুরুতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন ইউনিটের সাইট পরিদর্শন করেন। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছি। এটা যেহেতু একনেকে পাস হয়ে গেছে আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যাচ্ছে, আমার ইচ্ছা আছে যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দেশে থাকেন তখনই উনাকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করানোটা। আশা করি উনারা দেশে ফিরে আসলে আমরা এটা করতে পারবো। এই মাসেই এটা করার চেষ্টা করব আর যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করব। কারণ চাইনিজরা কমিটেড যে দেড় বছর থেকে দুই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করবে। একই সাথে আমরা জনবল যন্ত্রপাতি সবনিয়েই একসাথে কাজ করছি। আমি যে রকম শেখ হাসিনা বার্ণ ইনস্টিটিউটে সবগুলো একসাথে করে একদম একদিনে শুরু করতে পেরেছিলাম আমারও টার্গেট হচ্ছে আমরা সবগুলো একসাথে করে চালু করব। এই বার্ন ইউনিট চালু হলে চট্টগ্রাম এবং আশেপাশের জেলা উপকৃত হবে। সবাইকে ঢাকা ছুটতে হবে না।
এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউরোলজি, পেডিয়াট্রিক, শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উক্ত বিভাগে ভর্তিকৃত শিশু এবং তাদের অভিভাবকদের সাথে বিস্তারিত কথা বলেন। বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সদের সাথেও তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলেন।
পরিদর্শনকালে ও মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার, চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরীসহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং সিনিয়র স্টাফ নার্সবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী আসার খবরে পাল্টে গেল হাসপাতালের চিত্র : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যান হাটহাজারীর উপজেলার জোবরা গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে। সেখানে তিনি নিজের ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ পরীক্ষা করেন। এরপর তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। সেখানে সেবা নিতে আসা রোগীরা নানা অভিযোগ করলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী দৃশ্যত সেগুলোর প্রমাণ পাননি। মন্ত্রী আসার খবরে হাসপাতালের চিত্র পাল্টে যায়। ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল শতভাগ। রোগী ও তাদের অভিভাবক এবং স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসক পাওয়া যায় না। পর্যাপ্ত সেবাও মেলে না। পরিদর্শনের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ওভারঅল এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমি খুশি মোটামুটি। ১০১টা নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। আমার মনে হয় এটি একটা ভালো উদাহরণ। এ উদাহরণ যদি সারাদেশে করতে পারি, তাহলে প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ভালো উন্নতি হবে। এখন থেকে আমি পুরো দেশ ঘুরবো। মন্ত্রী হিসেবে তো আমার কিছু কাজ আছে, যখনই ফাঁক পাবো, আমি বেরিয়ে পড়ব। বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যদি ভালো স্বাস্থ্যসেবা পায়, তাহলে ঢাকা শহরে ভিড় হবে না, চট্টগ্রাম শহরেও ভিড় হবে না। এখানে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) দেখলাম এত রোগীর মধ্যে মাত্র ছয়জন ডাক্তার। আমি এগুলো নিয়ে কাজ করছি। এ হাসপাতালকে একশ শয্যায় উন্নীত করার চেষ্টা করব। আমার টার্গেট সবকিছু দেখা, শুধু বেসরকারি হাসপাতাল নয়, সরকারি হাসপাতালও দেখা। আমি মন্ত্রী, আমার কাজ হচ্ছে সারাদেশের মানুষের জন্য। সরকারি চিকিৎসা দেখাও আমার দায়িত্ব, বেসরকারি চিকিৎসা দেখাও আমার দায়িত্ব। মানুষ যেন ভালো চিকিৎসা পায়, সেজন্য আমি মাঠে নেমেছি। এ কার্যক্রম আমি চালিয়ে যাব। প্রান্তিক পর্যায়ে কমিউনিটি, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা- সবখানে আমি যাবো।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চাকুরী স্থায়ী হচ্ছেনা চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মচারীদের, কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

দীর্ঘদিন কাজ করার পরও চাকুরী স্থায়ী না করে নতুন করে জনবল নিয়োগের উদ্যোগে কাফনের কাপড় পরে চট্টগ্রাম ওয়াসার সামনে বিক্ষোভ করেছেন দৈনিক ভিত্তিতে কর্মরত কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম ওয়াসার মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন তারা।
আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) শারমিন আলমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, মামলা থাকার পরও ওয়াসায় দৈনিক ভিত্তিতে কর্মরতদের স্থায়ী না করে উল্টো নতুন করে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন কাজ করার পরও তাদের স্থায়ী না করে নতুন করে জনবল নিয়োগের উদ্যোগ পরিকল্পিত। এসময় তারা অনতিবিলম্বে স্থায়ী নিয়োগের দাবি জানান।

তারা আরও বলেন, ওয়াসার ক্রান্তিকালে আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের বৈধতা দেওয়ার পরে অন্যদের নিয়োগ দিতে হবে। মামলা চলমান থাকার পরও কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে বিজ্ঞপ্তি ছাড়ে। হাইকোর্টকে অমান্য করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রতিবাদে আমরা এখানে মিলিত হয়েছি। বিগত বছরগুলোতেও আমরা বৈষম্যের শিকার ছিলাম এখনও বৈষম্যের শিকার। চট্টগ্রাম ওয়াসায় বিভিন্ন পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত আছেন দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার চাঁদাবাজিসংক্রান্ত নৌপরিবহণ উপদেষ্টার বক্তব্যের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার চাঁদাবাজিসংক্রান্ত নৌপরিবহণ উপদেষ্টার বক্তব্যের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। কারা চাঁদা নেন, তাদের নাম প্রকাশের জন্য উপদেষ্টার প্রতি দাবি জানিয়েছেন তিনি।বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্তবর্তী কমিটির বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

প্রেসক্লাবের কর্ণফুলী হলে এ অনুষ্ঠান হয়।গত সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন তার বক্তব্যে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয় বলে অভিযোগ করেন। যদিও টাকার পরিমাণটি তিনি অনুমানের ভিত্তিতে বলেছেন বলে জানান। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক-বর্তমান কোনো মেয়রের নাম উল্লেখ না করে তিনি ‘মেয়র কম, বন্দররক্ষক বেশি’ এমন মন্তব্যও করেন, যা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নৌপরিবহণ উপদেষ্টার বক্তব্যের পর কিছু পত্রিকা লিখেছে, মেয়ররা নাকি চাঁদার ভাগ পেতেন। আমি তা দেখেই তাৎক্ষণিক উনাকে ফোন করি। তিনি বললেন- অতীতে যারা মেয়র ছিলেন তারা জড়িত ছিলেন। আমি বললাম- তাহলে নাম বলুন, কারা তারা?’অতীতে কারা চাঁদা নিতো, সুনির্দিষ্ট করে বলতে না পারলে চট্টগ্রামে আসতে দেব না, এটা ফোনেই উনাকে বলেছি। আমি চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে সুনির্দিষ্ট নাম পেলে সেই চাঁদাবাজদের প্রতিহত করব। সেই সৎ সাহস আমার আছে।’

তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি তো দূরের কথা, বন্দর নিয়ে আমি কখনো কাউকে ফোন বা তদবির করিনি। প্রতিদিন যদি দুই-আড়াই কোটি টাকা চাঁদা ওঠে, মাসে ৬০ কোটি, বছরে ৭২০ কোটি টাকা হয়। অথচ সিটি করপোরেশনকে ন্যায্য ২০০ কোটি টাকার হোল্ডিং ট্যাক্স দেওয়া হয় না। বন্দরের ভারী মালবাহী ট্রাক-ট্রেইলারের চাপ সড়কের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। আমার রাস্তাগুলো ৭-৮ টন বহনক্ষম। সেখানে ২০-৪০ টনের গাড়ি চলছে। প্রতি বছর ৪০০-৫০০ কোটি টাকা শুধু রাস্তায় খরচ করতে হয়। ন্যায্য ট্যাক্স না দিয়ে উলটো চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হচ্ছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।’সাংবাদিকদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘সাংবাদিকতা হবে বস্তুনিষ্ঠ। যে সাংবাদিকতায় মানুষের চরিত্রহনন হয়, তার দায় সাংবাদিকদেরও নিতে হয়। প্রেসক্লাবের উচিত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।’

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি’র সভাপতিত্বে ও সদস্য গোলাম মওলা মুরাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নগর জামায়াতের সেক্রেটারি নুরুল আমীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, জামায়াত নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, ডা. এ কে এম ফজলুল হক, এনসিপি নেত্রী সাগুফতা বুশরা মিশমা এবং প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি মনসুর, জ্যেষ্ঠ্য সাংবাদিক শামসুল হক হায়দরী, কাজী আবুল মনসুর, মুস্তফা নঈম, সালেহ নোমান, শেখর ত্রিপাঠি, জালাল উদ্দিন চৌধুরী, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, ফারুক আব্দুল্লাহ, ফারুক মুনির, মুজাহিদুল ইসলাম, নিজাম উদ্দিন, মোস্তফা কামাল পাশা, ফরিদ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, লতিফা আনসারি রুনা, সোহাগ কুমার বিশ্বাস, ইবেন মীর, শরিফুল রুকন, মাহফুজুর রহমান, সরোজ আহমেদ, নুরুল আমিন মিন্টু, শাহাদাত হোসেন আবু সায়েম, জহুরুল আলম, আজিজা হক পায়েল, কিরণ শর্মা, আফসানা নুর নওশীন, অভীক ওসমান ও গিয়াস উদ্দিন বক্তব্য দেন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি:
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন বৈশাখী টিভির ব্যুরো প্রধান গোলাম মাওলা মুরাদ।বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাইফুল্লাহ চৌধুরী এ কমিটি ঘোষণা করেন।—

কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি মুস্তফা নঈম, সহ-সভাপতি ডেইজি মওদুদ, যুগ্ম সম্পাদক মিয়া মো. আরিফ, অর্থ সম্পাদক আবুল হাসনাত, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রূপম চক্রবর্তী, ক্রীড়া সম্পাদক রুবেল খান, গ্রন্থাগার সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক হাসান মুকুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফারুক আবদুল্লাহ নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া কমিটিতে কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সালেহ নোমান, রফিকুল ইসলাম সেলিম, সাইফুল ইসলাম শিল্পী এবং আরিচ আহমেদ শাহ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ