আজঃ বুধবার ১২ মার্চ, ২০২৫

চট্টগ্রাম পুলিশের সাবেক এএসপি’র চারতলা বাড়ি, স্ত্রীকে সাজিয়েছেন বুটিক্স ব্যবসায়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিল্প পুলিশের (চট্টগ্রাম) সাবেক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আবুল হাশেম (৬১) ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত-১ কার্যালয়ে ওই দম্পতির বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছেন চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত-২ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ। এরমধ্যে একটি মামলায় সাবেক এএসপি মো. আবুল হাশেমকে এবং আরেকটি মামলায় আসামি করা হয়েছে তার স্ত্রীকেও।
১৯৮৮ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে চাকরিতে যোগ দেয়া মো. আবুল হাশেম প্রায় ৩৪ বছরের কর্মজীবনে অনেক অবৈধ অর্থ বানিযেছেন। এই সময়ের মধ্যে চাকরির প্রভাব খাটিয়ে নিজের ‘আখের ঘুছিয়েছেন’ তিনি। অবৈধ উপায়ে আয়ের টাকা দিয়ে নগরের পাঁচলাইশে গড়েছেন চারতলা বাড়ি। ‘গোপন আয়’ ঢাকতে স্ত্রীকে সাজিয়েছেন বুটিক্স ব্যবসায়ী। তবুও শেষমেষ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ফাঁসতেই হলো এই দম্পতিকে।
মো. আবুল হাশেমের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান থানার গশ্চি গ্রামের গুরা মিয়া সেক্রেটারি বাড়ি। তিনি এবং তার স্ত্রী তাহেরিনা বেগম (৫১) বর্তমানে খুলশী থানার পলিটেকনিক্যাল কলেজ রোডের রূপসী হাউজিংয়ে বসবাস করেন।
দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর দুদকের উপ-পরিচালক আতিকুল আলম বলেন, মামলায় শিল্প পুলিশের (চট্টগ্রাম) সাবেক (এএসপি) আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকা সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখলে রাখায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া অন্য মামলায় তাহেরিনা বেগম দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৬ লাখ ৮৪ হাজকর ৩৬৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন রেখে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৪৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৬ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখলে রাখায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় এবং তার স্বামী আসামি মো. আবুল হাশেম পুলিশে চাকুরিরত অবস্থায় অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দ্বারা পারস্পরিক যোগসাজশে স্ত্রী তাহেরিনা বেগমের নামে সম্পদ অর্জন ও সম্পদ স্ত্রী কর্তৃক ভোগ দখলে রাখতে সহযোগিতা করার দায়ে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, শিল্প পুলিশের (চট্টগ্রাম) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। এর প্রেক্ষিতে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর এই দম্পতিকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়। পরে এই দম্পতি ২৭ নভেম্বর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সম্পদ বিবরণীতে সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তা মোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। কিন্তু দুদক যাচাইকালে তার নামে ১ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার ৮৩০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পায়। অর্থাৎ তিনি মোট ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন।
আবুল হাশেমের পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬৫০ টাকা। কিন্তু এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে দুদক গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছে ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫৬ টাকা। অর্থাৎ তিনি তার আয়ের ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকা গোপন করেছিলেন।
একই সময়ের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে আবুল হাশেমের স্ত্রী তাহেরিনা বেগম স্থাবর-অস্থাবরসহ মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮৪৬ টাকা সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু দুদক যাচাই করে তার স্থাবর-অস্থাবর মোট সম্পত্তি পেয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ২১২ টাকার। অর্থাৎ তাহেরিনা বেগম তার সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর-অস্থাবর মোট ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকা গোপন করেছেন।
তাহেরিনা বেগম ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত নগরের সান মেরন স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। এছাড়া বুটিক্স ব্যবসায় তিনি আয় দেখিয়েছেন ২২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। অথচ এই ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো লাইসেন্সও তিনি দেখাতে পারেননি। আবার, ব্যবসা শুরুর সময় মূলধন ৯ লাখ টাকা উল্লেখ করলেও সেই টাকার উৎসেরও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তিনি ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষে ব্যবসার সাথে টিউশান বাবদ ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৫শ টাকা আয় দেখিয়েছেন। তার মোট গ্রহণযোগ্য দেনা ৩৭ লাখ ৫ হাজার ২২৮ টাকা।
দেনা বাদ দিলে সাবকে এই পুলিশ কর্তার স্ত্রীর মোট সম্পদের পরিমাণ ৮৯ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮৪ টাকা। এরসাথে পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় যোগে মোট অর্জিত সম্পদ দাঁড়ায় ১ কোটি ৩ লাখ ৯১ হাজার ১২৪ টাকায়। অথচ এই সম্পদের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৮ টাকা। অর্থাৎ ৪৩ লাখ ৩২ হাজার টাকার সম্পদ তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্জন করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের রুপসী হাউজিং পলিটেকনিক্যাল কলেজ রোডে ২০১৩-১৪ সালে যে চারতলা বাড়ি তার ও তার স্বামী আবুল হাশেমের যৌথ নামে নির্মাণ করা হয়েছে তখন সেই ভবন তৈরিতে বিনিয়োগে তাহেরিনা বেগমের বৈধ আয়ের উৎস ছিলো না। স্বামী আবুল হাশেমের চাকরিরত অবস্থায় অবৈধ উপায়ে যে টাকা আয় করেছেন সেই টাকাতেই ওই চারতলা ভবন যৌথ নামে নির্মাণ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

টিসিবি পণ্য পাচারের সময় আটক ১ জন

রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল কলোনি এলাকায় একটি বড় ধরনের টিসিবি পণ্য পাচারের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের হাতে আটক হয় ডিলারের এক সহযোগী, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে টিসিবি পণ্যের কিছু অংশ পাচারের সাথে জড়িত থাকার। স্থানীয়দের অভিযোগ, ডিলার নিজেই এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত, ফলে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে।

পাচারকৃত পণ্যগুলোর মধ্যে ২ লিটারের ৫ বোতল তেল এবং ৫ কেজি চিনি উদ্ধার হয়। স্থানীয়রা এই পণ্যগুলো পাচার করার সময় হস্তক্ষেপ করেন এবং পরে টিসিবির প্রতিনিধি শফিউল ইসলামের উপস্থিতিতে সেগুলো পুনরায় ট্রাকে তুলে খোলা বাজারে বিতরণ করা হয়। এ ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে চন্দ্রিমা থানা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম জনি পরিস্থিতি শান্ত করেন।

এদিকে, স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, টিসিবির পণ্য বিতরণে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং ডিলার নিজ এলাকার লোকজন কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে পণ্য বিতরণ করছেন, ফলে সাধারণ মানুষ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা জানান, রমজান মাসে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিসিবি পণ্য না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।

ঘটনাস্থলে থাকা টিসিবির প্রতিনিধি শফিউল ইসলাম জানান, হাতেনাতে তেল ও চিনি সহ এক ব্যক্তিকে আটক করে স্থানীয়রা। এ বিষয়ে উধ্বর্তন কতৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা নিবেন। শফিউল ইসলাম বলেন, শিরোইল কলোনি সার গুদাম চত্বরে ৪০০ জনের জন্য টিসিবি পণ্য বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে রয়েছে দুই কেজি ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা, দুই লিটার তেল ও ৫০০ গ্রাম খেজুর। প্যাকেজ মুল্য ৫৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো. তোজাম্মেল হোসেন সরকার (তাজেল) বলেন, তিনি অসুস্থ থাকায় সরাসরি পয়েন্টে যাননি এবং পয়েন্ট পরিচালনার দায়িত্ব তিনি লিপি নামক একজন নারী কর্মচারীকে দিয়েছেন। তবে, তিনি এ ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী নন বলে দাবি করেছেন।

এ ঘটনায় রাজশাহী ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) আঞ্চলিক উপ-পরিচালক মো. আতিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি ভিডিও পেয়েছেন এবং স্থানীয়দের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগও পেয়েছেন। তিনি নিশ্চিত করেন যে, ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিএমপি কোতোয়ালি থানার অভিযানে একজন গ্রেফতার

সিএমপি কোতোয়ালি থানার অভিযানে একজন গ্রেফতার হয়েছে।

সিএমপি’র দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মহোদয় এর সার্বিক দিক-নির্দেশনায়, সহকারী পুলিশ কমিশনার(কোতোয়ালি জোন) এর তত্ত্বাবধানে কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মোঃ আব্দুল করিম এর নেতৃত্বে ১০ মার্চ এস আই (নিঃ) নওশের কোরেশি , ইনচার্জ আসকার দীঘি পুলিশ ফাঁড়ি, এএসআই( নি:) ,ফিরোজ আলী এএসআই (নিঃ) জসীম উদ্দিন সহ সিআর ৫৭৫/১৭ এর সাজা পরোয়ানাভুক্ত আসামি মো: এনামুল করিম শহীদুল্লাহ (৪৫) পিতা:মৃত সালাম চৌধুরী, সাং- আসকার দীঘির দক্ষিণপাড়, থানা:কোতোয়ালি চট্টগ্রাম কে কোতোয়ালি থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করেন। আসামীকে গ্রেফতার পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দকরন প্রক্রিয়াধীন।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ