আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম পুলিশের সাবেক এএসপি’র চারতলা বাড়ি, স্ত্রীকে সাজিয়েছেন বুটিক্স ব্যবসায়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিল্প পুলিশের (চট্টগ্রাম) সাবেক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আবুল হাশেম (৬১) ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত-১ কার্যালয়ে ওই দম্পতির বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছেন চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত-২ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ। এরমধ্যে একটি মামলায় সাবেক এএসপি মো. আবুল হাশেমকে এবং আরেকটি মামলায় আসামি করা হয়েছে তার স্ত্রীকেও।
১৯৮৮ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে চাকরিতে যোগ দেয়া মো. আবুল হাশেম প্রায় ৩৪ বছরের কর্মজীবনে অনেক অবৈধ অর্থ বানিযেছেন। এই সময়ের মধ্যে চাকরির প্রভাব খাটিয়ে নিজের ‘আখের ঘুছিয়েছেন’ তিনি। অবৈধ উপায়ে আয়ের টাকা দিয়ে নগরের পাঁচলাইশে গড়েছেন চারতলা বাড়ি। ‘গোপন আয়’ ঢাকতে স্ত্রীকে সাজিয়েছেন বুটিক্স ব্যবসায়ী। তবুও শেষমেষ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ফাঁসতেই হলো এই দম্পতিকে।
মো. আবুল হাশেমের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান থানার গশ্চি গ্রামের গুরা মিয়া সেক্রেটারি বাড়ি। তিনি এবং তার স্ত্রী তাহেরিনা বেগম (৫১) বর্তমানে খুলশী থানার পলিটেকনিক্যাল কলেজ রোডের রূপসী হাউজিংয়ে বসবাস করেন।
দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর দুদকের উপ-পরিচালক আতিকুল আলম বলেন, মামলায় শিল্প পুলিশের (চট্টগ্রাম) সাবেক (এএসপি) আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকা সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখলে রাখায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া অন্য মামলায় তাহেরিনা বেগম দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৬ লাখ ৮৪ হাজকর ৩৬৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন রেখে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৪৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৬ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখলে রাখায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় এবং তার স্বামী আসামি মো. আবুল হাশেম পুলিশে চাকুরিরত অবস্থায় অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দ্বারা পারস্পরিক যোগসাজশে স্ত্রী তাহেরিনা বেগমের নামে সম্পদ অর্জন ও সম্পদ স্ত্রী কর্তৃক ভোগ দখলে রাখতে সহযোগিতা করার দায়ে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, শিল্প পুলিশের (চট্টগ্রাম) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। এর প্রেক্ষিতে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর এই দম্পতিকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়। পরে এই দম্পতি ২৭ নভেম্বর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সম্পদ বিবরণীতে সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তা মোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। কিন্তু দুদক যাচাইকালে তার নামে ১ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার ৮৩০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পায়। অর্থাৎ তিনি মোট ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন।
আবুল হাশেমের পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬৫০ টাকা। কিন্তু এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে দুদক গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছে ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫৬ টাকা। অর্থাৎ তিনি তার আয়ের ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকা গোপন করেছিলেন।
একই সময়ের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে আবুল হাশেমের স্ত্রী তাহেরিনা বেগম স্থাবর-অস্থাবরসহ মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮৪৬ টাকা সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু দুদক যাচাই করে তার স্থাবর-অস্থাবর মোট সম্পত্তি পেয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ২১২ টাকার। অর্থাৎ তাহেরিনা বেগম তার সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর-অস্থাবর মোট ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকা গোপন করেছেন।
তাহেরিনা বেগম ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত নগরের সান মেরন স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। এছাড়া বুটিক্স ব্যবসায় তিনি আয় দেখিয়েছেন ২২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। অথচ এই ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো লাইসেন্সও তিনি দেখাতে পারেননি। আবার, ব্যবসা শুরুর সময় মূলধন ৯ লাখ টাকা উল্লেখ করলেও সেই টাকার উৎসেরও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তিনি ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষে ব্যবসার সাথে টিউশান বাবদ ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৫শ টাকা আয় দেখিয়েছেন। তার মোট গ্রহণযোগ্য দেনা ৩৭ লাখ ৫ হাজার ২২৮ টাকা।
দেনা বাদ দিলে সাবকে এই পুলিশ কর্তার স্ত্রীর মোট সম্পদের পরিমাণ ৮৯ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮৪ টাকা। এরসাথে পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় যোগে মোট অর্জিত সম্পদ দাঁড়ায় ১ কোটি ৩ লাখ ৯১ হাজার ১২৪ টাকায়। অথচ এই সম্পদের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৮ টাকা। অর্থাৎ ৪৩ লাখ ৩২ হাজার টাকার সম্পদ তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্জন করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের রুপসী হাউজিং পলিটেকনিক্যাল কলেজ রোডে ২০১৩-১৪ সালে যে চারতলা বাড়ি তার ও তার স্বামী আবুল হাশেমের যৌথ নামে নির্মাণ করা হয়েছে তখন সেই ভবন তৈরিতে বিনিয়োগে তাহেরিনা বেগমের বৈধ আয়ের উৎস ছিলো না। স্বামী আবুল হাশেমের চাকরিরত অবস্থায় অবৈধ উপায়ে যে টাকা আয় করেছেন সেই টাকাতেই ওই চারতলা ভবন যৌথ নামে নির্মাণ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ