আজঃ শুক্রবার ১৪ মার্চ, ২০২৫

রূপগঞ্জে গাজী টায়ারসের কারখানায় আগুনে নিখোঁজ ১৭৬ জন

মাহাবুবুর রহমান রনি, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি:

 নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে গাজী গ্রæপের টায়ার তৈরির কারখানায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের ঘটনায় অন্তত ১৭৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। গতকাল ২৬আগস্ট সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত ১৭৬ জন নিখোঁজের তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট চেষ্টা করে। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত গাজী টায়ারস কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
কারখানার গেইটে নিখোঁজদের খুঁজতে আসা স্বজনরা জানায়, গত ২৫আগষ্ট রবিবার গাজী গ্রæপের টায়ার তৈরির কারখানায় লুটপাটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা  কারখানায় ছুটে আসেন। এর পর তারা আর বাড়ি ফিরে যায়নি। নিখোঁজদের মধ্যে মুড়াপাড়া দরিকান্দী গ্রামের মামুন, জহিরুল, জাকির হেসেন, স্বধীন, ইব্রাহিম, তারাবো পৌরসভার বরপা গ্রামের স্বপন, আসাদ, সোহাগ, আবু সাঈদ, মানিক, রতন, বকুল, জিন্নাত, মৈকুলী গ্রামের রাজ, ছাব্বির, ফয়েজ, সুজন। তাদের বয়স ১৫বছর থেকে ৪০ বছর বয়স। অন্যদের নাম পাওয়া যায়নি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, আমরা নিখোঁজদের একটি খসড়া তালিকা করেছি। এ মুহূর্তে তা যাচাই-বাছাইয়ের কোনো সুযোগ নেই। স্বজনরা যারা দাবি করছেন তাদের নাম ঠিকানা লিখে রাখছি। সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত এ তালিকায় ১৭৬ জনের নাম লেখা হয়েছে। নিখোঁজের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তবে তারা কেউ কারখানার শ্রমিক নন। সবাই বহিরাগত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গত ২৫ আগস্ট রাত ১০টায় গাজী টায়ার কারখানার ছয়তলা ভবনের নিচতলায় এই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে শত শত মানুষ এসে সেখানে জড়ো হন। খবর পেয়ে ১০টা ৩৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ শুরু করে।
পর্যায়ক্রমে ডেমরা, কাঁচপুর, আদমজী, ইপিজেড ও কাঞ্চন ফায়ার স্টেশন থেকে একে একে যোগ দেয় ১২টি ইউনিট। ভবনটির ভেতরে আটকা পড়ে অনেক লোক। অবকাঠামোগত ও ভেতরে থাকা টায়ার উৎপাদনের দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারটি জটিল হয়ে পড়ে। আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কিছুই ধারণা করা যায়নি।
ওই সময় থেমে থেমে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনায় আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। আটকা পড়াদের পরিবার-পরিজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে কারখানা এলাকা। তাতে আশপাশের এলাকায় শিল্প কারখানা ও এলাকার লোকজনের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি রূপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও কাজ করে।
গত ২৪ আগষ্ট রাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, গাজী গ্রæপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তারের পর নারায়ণগঞ্জের আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। খবর পেয়ে সর্বশ্রেণির মানুষ কারখানাটিতে গণহারে লুটপাট চালায়। আগুন লাগার সময়ও লুট করতে কারখানার ভেতরে গিয়ে ৪/৫ শতাধিক মানুষ ভেতরে আটকা পড়েন। এসময় দুইতলা ও তিন তলার জানালা দিয়ে অনেকেই নিচে লাফিয়ে পড়েন। অন্যরা বের হতে পারেনি।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, অবকাঠামোগত ও ভেতরে থাকা টায়ার উৎপাদনের দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা ও ভেতরে আটকাপড়াদের উদ্ধারের ব্যাপারটি জটিল হয়ে পড়ে। কী কারণে আগুন লেগেছে তা জানা যায়নি। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর এর কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
আগুন লাগার পর শত শত মানুষ গাজী টায়ার কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে মেশিনপত্র ও আসবাবপত্র ও উৎপাদিত পণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী লুটপাট করে নিয়ে যেতে শুরু করে। একপর্যায়ে লুটপাট চালাতে গিয়ে ৪/৫ শতাধিক মানুষ ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে উঠে পড়েন। সেখান থেকেও লুটপাট শুরু হয়। রাত ১০টার দিকে ভবনের নিচতলায় দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আগুন পুরো ছয়তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তখন ভেতরে আটকে পড়া অনেকেই আর বের হতে পারেননি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের ১২টি ইউনিট কাজ করে। রাজধানীর সিদ্দিকবাজার থেকে টিটিএল মেশিন এনে কারখানার ওপর থেকে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। ছয়তলা ভবনটির অধিকাংশ ফ্লোরে প্লাস্টিক, রাবার ও কেমিকেলসহ বিভিন্ন ধরণের দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল। যে কারণে এগুলো জ্বলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুন নেভানো খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ভবনের ভেতর থেকে আহত ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ভেতরে কি পরিমাণ মানুষ আটকা পড়েছিলেন তা কেউ বলতে পারেনি।
খবর পেয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আহসান মাহমুদ রাসেল, বাংলাদেশ সেনাবহিনীর একটি প্রতিিিনধি দল, বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ জেলা সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান হাবিব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য ও ব্যাবসায়ীদের সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, গাজী টায়ারের মালিক সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতিক গ্রেফতার হয়েছে। প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। তার এই কারখানায় রূপগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৪/১৫ সহ্রাধিক শ্রমিক কর্মচারী চাকরি করেন। কারখানায় আগুন, লুটপাট ও হতাহতের ঘটনায় বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত থাকলে সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। কারখানাটি টিকিয়ে রাখার জন্য সকলকে এগিয়ে আসা উচিত।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

নেত্রকোনায় উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি।

নেত্রকোনার পূর্বধলায় জাতীয় পরিচয় পত্র পরিসেবা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের হতে সংবিধিবদ্ধ নতুন কমিশনে হস্তান্তরের কূট পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স এসোসিয়েশনের উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচন অফিসের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।কর্মসূচির নাম ‘স্ট্যান্ড ফর এনআইডি’। এই কর্মসূচিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সকাল ১১ টা থেকে বেলা দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি করেন।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, সাংবিধানিক অধিকার যেন খর্ব না হয়। নির্বাচন কমিশনে এনআইডি ডাটাবেইজ নামে কিছু নেই। আছে ভোটার ডাটাবেইজ। বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে এনআইডি দেয়া হয়। ভোটার তালিকা থেকে এনআইডি ডাটাবেজ আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই।জাতীয় পরিচয় পত্র অন্য কোথাও স্থানান্তর  হলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে যা বিনামূল্যে নির্বাচন কমিশনের জনবল করে দিচ্ছে।এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. নাজমুল ইসলাম, সহকারী নির্বাচন অফিসার মুহাম্মদ আব্দুল মালেক, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আব্দুল কুদ্দুস ও অফিস সহায়ক মো. তোফাজ্জল হোসেন সহ আরো অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।

আমরা তোমাকে ভুলবো না আছিয়া।

আমি যখন সংবাদে জানতে পারলাম, আছিয়া মারা গেছে। ঠিক তখনই দুমড়ে, মুচড়ে গেলাম আমি । একদম কাচের মতো টুকরো, টুকরো হয়ে গেলাম। জীবনের সাথে যুদ্ধ করে আর ঠিকে থাকা হলো না ছোট আছিয়ার। কি কারণে আমরা আজ আছিয়া কে হারালাম??? কি অন্যায়?? কি দোষ??? কি ত্রুটি ছিলো ৩য় শ্রেণীতে পড়া ছোট এই আছিয়ার??? একটাও প্রশ্নের উত্তর আমি খুজে পেলাম না। কেন

আমরা এই ছোট আছিয়ার নিরাপত্তা দিতে পারিনি??? হিংস্র কিছু মানুষ রুপী পশুর নির্মম নির্যাতনের শিকার হলো আমাদের ছোট আছিয়া। যে আছিয়া স্কুলে
যাওয়ার কথা, হেসে খেলে মুক্ত বাতাসে তার এলোমেলো চুল উড়ানোর কথা, সেই আছিয়ার কেন এই নিষ্ঠুর পরিনতি??

আমরা কি পারবো, দ্রুত সময়ের মধ্যে, আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে ?? ৩য় শ্রেণির ছাত্রী ছিলো আমাদের আছিয়া। আমরা তোমায় ভুলবো না আছিয়া। আকাশে জ্বলজ্বল করে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আমাদের হৃদয়ে চীর স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমাদের আছিয়া।

আমরা আর কোন আছিয়াকে হারাতে দেব না। আমাদের সমাজের এই ছোট সোনামনিদের, নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে ।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ