আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ ও সংবিধান সংশোধন: প্রসাঙ্গিক ভাবনা

ড. মো. সফিকুল ইসলাম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী বর্তমান বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধন একটি আলোচিত বিষয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এটি একটি অত্যাবশকীয় দায়িত্ব হয়ে দাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ বিভিন্ন সেমিনার, গোল টেবিল বৈঠক ও আলোচনা সভার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা ও বিষয়বস্তু তুলে ধরেছেন। আমি মনে করি, সরকার ও এ ব্যাপারে সচেতন এবং সচেষ্ট। তবে যত দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া যায় ততই দেশের জন্য মঙ্গল। কেননা, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করবার জন্য সংবিধানকে তার দল ও পরিবারের স্বার্থ সংরক্ষণের দলিলে পরিণত করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে ভয়াবহ নিপীড়নমূলক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। ব্যাপক দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি, আক্রমণাত্মক বক্তব্য, মিথ্যা, প্রতারণা ও অপকৌশলের একটি রাষ্ট্রীয় রূপ দান করেছে যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থক এবং বিরোধী মতের লোকদেরকে গুম, খুন ও নির্যাতনের সকল সীমা অতিক্রম করেছিল। এমতাবস্থায় অকুতোভয় ছাত্রদের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরতন্ত্রের অবসান হয়। এজন্য প্রায় সহস্রাধিক ছাত্র-জনতাকে জীবন দিতে হয়েছে যা দেশে-বিদেশে জুলাই ম্যাচাকার নামে পরিচিত। এ গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনা হচ্ছে বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ যেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সেজন্য আওয়ামী সংবিধান সংশোধন করে সংবিধানকে গণতান্ত্রিকীকরণ ও জনআকাঙক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করা প্রয়োজন। যাহোক, সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন কোন বিষয়গুলো প্রথমেই বিবেচনায় নেওয়া উচিত সে বিষয়ে মতামত দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি।

আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরে হীন দলীয় স্বার্থে সংবিধানের পঞ্চদশ, ষোড়শ, সপ্তদশ সংশোধনীসমূহ সম্পাদন করেছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনীকে বাতিল ঘোষণা করে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরিয়ে নিয়েছিল। যাহোক, এর মধ্যে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। এ সংশোধনী সবচেয়ে বিতর্কিত, গণতন্ত্র, জনগণের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি। বিশেষ করে, এ সংশোধনীর মাধ্যমে ৫০টির বেশী অনুচ্ছেদকে, যার মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙ্গানোর বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত, সংশোধনের অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সংবিধানে জাতীয় সংসদকে সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতিফলন। একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এটাই স্বাভাবিক। অথচ পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের একটি বড় অংশ সংশোধন অযোগ্য ঘোষণা করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সার্বভৌমত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে যা অসাংবিধানিক। এটি মানবাধিকারের পরিপন্থি। কেননা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করতে চাইতে পারে। এটি কোনো ধর্মগ্রন্থ নয় যে পরিবর্তন করা যাবে না। এছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত ৭ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী: “(১) কোন ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায়” (ক) এই সংবিধান বা ইহার কোনো অনুচ্ছেদ রদ, বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা (খ) এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে” তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে। (২) কোন ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত” (ক) কোন কার্য করিতে সহযোগিতা বা উসকানি প্রদান করিলে; কিংবা (খ) কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে” তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে। (৩) এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।” এই অনুচ্ছেদ পাকিস্তানের ১৯৭৩ সালের সংবিধানের ৬(১) অনুচ্ছেদেরই অনেকটা প্রতিস্থাপন। পাকিস্তানের এ সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ”যদি কোনো ব্যক্তি সংবিধানকে ক্ষমতাবলে বাতিল করে, পরিবর্তন করে, অথবা জোর করে বা শক্তি প্রদর্শন করে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র করে, সে ব্যক্তি চরম দেশদ্রোহীতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হবে। (২) কোনো ব্যক্তি (১) ধারায় উল্লিখিত কার্যক্রমের সহায়তা বা উৎসাহ প্রদান করলে, সে ব্যক্তি ও একইভাবে চরম দেশদ্রোহীতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হবে। (৩) সংসদ আইনের মাধ্যমে চরম দেশদ্রোহীদের শাস্তি নির্ধারণ করবে।” কিন্তু, ১৯৭৩ সালের সংবিধান রচনার পর পাকিস্তানে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউল হকের মৃত্যুদণ্ড হয়নি। বরং মৃত্যুদণ্ড হয়েছে সংবিধান প্রণয়নকারী জনাব ভুট্টোর। নিয়তির কী পরিহাস! সুতরাং দেখা যায়, কঠোর শাস্তির বিধান করে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঠেকানো যায় না। একইভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বে জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান ছিল। জাতীয় সংসদের সদস্যগণ স্বপদে বহাল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী করার বিধান নজিরবিহীন। এতে নির্বাচনে যেসব প্রতিদ্বন্দ্বী সংসদ সদস্য নয় তারা বৈষম্যের স্বীকার হয়। সুতরাং, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জরুরি ভিত্তিতে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল বা সংশোধন করা উচিত।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে উচ্চ আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে। কিন্তু, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় তখন ও প্রকাশিতই হয়নি। সংক্ষিপ্ত ও বিভক্ত আদেশে আদালত বলেছিলেন: ”(১) সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী ভবিষ্যতের জন্য বাতিল ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করা হলো। (২) যা সাধারণত আইনসিদ্ধ নয়, প্রয়োজন তাকে আইনসিদ্ধ করে, জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন, এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন ‘এ সকল সনাতন তত্ত্বের¡র ভিত্তিতে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন পূর্বে উল্লিখিত ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে।” অন্যভাবে বলা যায়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ‘প্রসপেকটিভলি’ বা ভবিষ্যতের জন্য অবৈধ ঘোষণা করে রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তার খাতিরে এটি আরও দুই টার্ম রাখার পক্ষে সর্বোচ্চ আদালত মত প্রকাশ করেছেন। তাই আদালতের এ রায়ের অজুহাত দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া দুরূহ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বাতিল আমাদেরকে এক ভয়াবহ সংকটে মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল রাজনৈতিক দলের পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাসের এবং দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়’ জনগণের এমন ধারণারই ফসল। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নজির নেই বললেই চলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে তা সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত না হলেও সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা চলে। আওয়ামী লীগ এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ত্রুটি বিচ্যুতি ও অগণতান্ত্রিক অভিযোগ তুলে বাতিল করলেও তাদের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের উদাহরণ তো সৃষ্টি করতে পারেইনি বরং বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সবচেয়ে বেশী কলুষিত করেছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের এ তিনটি নির্বাচন বাংলাদেশে ইতিহাসে সবচেয়ে জাল-জালাতিপূর্ণ ছিল। যাহোক, এ ব্যবস্থার যে সব ত্রুটিবিচ্যুতি সে সময়কালে দৃশ্যমান হচ্ছিল রাজনৈতিক দলগুলো তারা প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ না করে, উল্টো এর ফাঁক-ফোকর ব্যবহার করে দলীয় স্বার্থ হাসিল করার প্রতিযোগিতার কারণে এ ব্যবস্থাটির যথার্থতা নিয়েই প্রশ্ন তোলার পরিবেশ তৈরি হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কিছু লোকের বক্তব্য ছিল নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। তাই শুধু নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও স্বাধীন করলেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব। বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন দলীয় সরকারের অধীনে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কাজ করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রেই নির্বাচন কমিশনকে সরকারি দলের অঘোষিত নির্দেশনা মেনে কাজ করতে হয়। এর ফলে নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত হয় না। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন হবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা। কিন্তু, বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রাতিষ্ঠানিকরণ (ওহংঃরঃঁঃরড়হধষরুধঃরড়হ) হয়নি। প্রতিষ্ঠানসমূহ আইন ও প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব স্বাধীন ও যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম নয়। তাদেরকে সরকারি দলের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হয়। তা না হলে এসব প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতি থেকে বঞ্চিতকরণ ও বরখাস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের ক্ষমতার পরিধির মধ্যে আইন ও প্রচলিত রীতি অনুযায়ী স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারি দলের অনুকূলে কাজ করা স্বাভাবিক রীতিতে বা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। তাই সরকারি দলের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সকল দল ও প্রার্থীদের জন্য লেবেল প্রেলিং ফিল্ড (খবনবষ চষধুরহম ঋরবষফ) তৈরি হওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান সুবিধা হলো এর নির্দলীয় চরিত্র। এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাগণ দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তিত্ব না হওয়ায় তারা কোনো বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করেন না। তাদের কাছে সব দলই সমান। সব দলের প্রতি এ সরকার সমান আচরণ করতে পারে। নির্বাচনি প্রচারণা, নির্বাচনি আচরণবিধি এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজগুলো এ সরকার পক্ষপাতিত্ব পরিহার করে পেশাদারিত্বের সঙ্গে করতে পারে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ সরকারের অধীনে স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে। তাই আমার প্রস্তাব হচ্ছে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান সংবিধানে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাকে সময়োপযোগী করতে হবে। যেহেতু অতীতে সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ অবসর প্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হওয়ার বিধান থাকায় উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের বয়স বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল সে কারণে উচ্চ আদালতকে সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের বিজ্ঞ/বিশিষ্ট ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নিয়োগ করার বিধান করা যেতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে সরকারের কাজের পরিধি ও মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই উপদেষ্টাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ বজায় রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি “সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং “সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র” বাদ দিয়ে শুধু সমাজতন্ত্র যুক্ত করা হয়। কিন্তু, পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে নির্ধারিত সংবিধানের মূলনীতিসমূহ অনেক বেশী অর্থপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য ছিল। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও মূল্যবোধের সঙ্গে সংহতি পূর্ণ। তাই পঞ্চদশ সংশোধনী সংশোধন করে সংবিধানের পূর্বের মূলনীতি বহাল রাখা যুক্তিযুক্ত। আইন উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে জানা যায় যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে সংবিধান সংশোধন নিয়ে কাজ শুরু করেছে এবং ’সাংবিধানিক সংস্কার’ কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু, সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বিধান সংবিধানে অন্তভর্’ক্তকরণ এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দরকার। কেননা এ সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করলে ও পরবর্তীতে নির্বাচিত আইনসভার অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি.এন.পি) ইতোমধ্যে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা করে এ বিষয়েসমূহে তাদের প্রতিশ্রুতিুতি ব্যক্ত করেছে। তারপর ও আমি মনে করি এ সরকার বি.এন.পি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্বান্ত নিলে এর একটি স্থায়ী সমাধান হবে।
লেখক: অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে : জামায়াত আমির।

ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরদিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অব্যাহত রেখেছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে।

শুক্রবার দুপুর ২টায় ৮ দলের উদ্যোগে আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি আরও বলেন, আমরা ৮ দলের বিজয় চাই না, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। সেই আকাঙ্খার বিজয় হবে কুরআনের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম থেকে ইসলামের বিজয়ের বাঁশি বাজানো হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে কুরআনের বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, গাড়ি দিয়ে পালানোর সাহস তারা হারিয়ে ফেলেছিল। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিকে এই অপকর্মে লাগানোর চেষ্টা করেছিল। দেশের সবকিছু তারা ধ্বংস করেছিল। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ফ্যাসিবাদকে নতুন করে রুখে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।

জামায়াতের আমির বলেন, তারা নিজেদের উন্নয়ন করেছিল। রাস্তাঘাট তৈরি করেছিল রডের বদলে বাঁশ দিয়ে। বাংলাদেশের টাকা লুট করে সিঙ্গাপুরে গিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। শাপলা চত্বরে অসংখ্য মাওলানাকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বলেছিল রঙ দিয়ে শুয়ে ছিল। তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে।
আন্দোলনরত ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে ঘোষণা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ঐক্য আমাদেরকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

৮ দলের প্রধানদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের ইসলামি শক্তিকে কেউ নিস্তব্ধ করতে পারবে না। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামপন্থীদের। এখানে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা কবে না।তিনি বলেন, আসুন আমরা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে চট্টগ্রামকে ইসলামের ঘাঁটি বানাই। চট্টগ্রামের মাটি ইসলামের ঘাঁটি। ৮ দলের এই শক্তি ক্ষমতায় গেলে আপনারই দেশ শাসন করবেন। কারও দাদার শক্তিতে এ দেশ আর চলবে না।

এটিএম আজহার বলেন, বাংলাদশ এমন পর্যায়ে দাঁড়াবে বিদেশিরা এখানে পড়ালেখা করতে আসবে। আসুন আমরা সবাই মিলে সেই দেশ গড়ি।খেলাফতে মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, আগামীতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বিজয়ের মাধ্যমে কোরআনের শাসন শুরু হবে। সোনার বাংলাদেশ দেখা শেষ, ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখা শেষ- এবার আল কোরআনের বাংলাদেশ দেখতে চাই, ইসলামের বাংলাদেশ দেখতে চাই।

তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশে আমাদের অধিকার চাই, মালিকানা কায়েম করতে চাই। গরিব মেহনতী মানুষকে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। ইসলাম যে বৈষম্যহীনের কথা বলা হয়েছে। পুঁজিবাদর অর্থ ব্যবস্থা করব দিয়ে কোরআনের অর্থ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।

মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশে কোরআনের অর্থ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নিজেদের অধিকার ও মালিকানা কায়েম করতে। পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার কবর তৈরি করে সেই ধ্বংস স্তূপের ওপর আল্লাহর কুরআনের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের বিগত দিনগুলো শুধু উন্নয়নের গল্প শুনানো হয়েছে। কিন্তু নিজেরাই হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছে।

সাধারণ কেটে খাওয়া মানুষের কোন পরিবর্তন হয়নি। এই তো উন্নয়ন। বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি হ্যাঁ ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে। এসময় তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
সমাবেশে ৮ দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমির আলহাজ¦ মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম

সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মুন্সি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আলাউল্লাহ আমিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব আল্লামা মুফতি মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আলী উসমান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, খেলাফত মজসিলের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসানুল্লাহ ভূঁইয়া, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আলহাজ¦ শাহজাহান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি রেজাউল আববার, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরী আমির মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চট্টগ্রাম মহানগরী সহ-সভাপতি এডভোকেট আব্দুল মোতালেব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু মুজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা এমদাদ উল্লাহ সোহাইল, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি অধ্যাপক খুরশিদ আলম এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা জিয়াউল হোসাইন।

মশা নিধনে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহার শুরু চসিকের।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রথমবারের মতো মশা নিয়ন্ত্রণে আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু করেছে। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্দেশক্রমে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মো. আশরাফুল আমিন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ শরফুল ইসলাম মাহি, কীটতত্ত্ববিদ রাশেদ চৌধুরী এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মশা নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর আগে গত ২৬ মার্চ নগরীর ১৭ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ডের সৈয়দ শাহ রোডের সামনের খালে পরীক্ষামূলকভাবে বিটিআই লার্ভিসাইড প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে আজ থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিটিআই প্রয়োগ শুরু করল চসিক।

চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ফগিং, লার্ভিসাইড ছিটানো, নালা–নর্দমা পরিষ্কার, আবর্জনা অপসারণ এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের আমেরিকান প্রযুক্তির বিটিআই ব্যবহারে মশার লার্ভা ধ্বংসে আরও কার্যকর ফল পাওয়া যাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

বিটিআই হলো একটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ব্যাকটেরিয়াভিত্তিক লার্ভিসাইড, যা বিশেষভাবে মশা, ব্ল্যাক ফ্লাই ও ফাঙ্গাস গ্ন্যাটের লার্ভা দমনে ব্যবহৃত হয়। এটি পানিতে প্রয়োগ করার পর লার্ভা খাদ্যের সঙ্গে বিটিআই গ্রহণ করে এবং ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদিত ক্রিস্টাল প্রোটিন টক্সিন লার্ভার পরিপাকতন্ত্রে কার্যকর হয়ে তাদের দ্রুত নিধন ঘটায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিটিআই মানুষের শরীর, গৃহপালিত প্রাণী, মাছসহ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর নয়; এমনকি উদ্ভিদ ও জলজ বাস্তুতন্ত্রেও কোনো বিষাক্ত প্রভাব ফেলে না। বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়ার মতো বাহক–বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে এটি একটি নিরাপদ ও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত সমাধান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ