আজঃ বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

৩ কোটি টাকার যন্ত্র ক্রয় চট্টগ্রামে চোখে পড়ছে না মশা নিধনের কর্মসূচি

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কোন কর্মসূচী চোখে পড়ছেনা। যার ফলে একের পর এক বাড়ছে চট্টগ্রমে ডেঙ্গু রোগী। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার আগস্টের শেষ দিকে ও সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জুলাই-আগস্টের চেয়ে সেপ্টেম্বর ও আগামী কয়েক মাস ডেঙ্গুর বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। গত বছর জুলাইয়ে আগাম বৃষ্টি হওয়ায় সেবার আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল। তাই মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কারণ এডিস মশা ইতোমধ্যে প্রজননের ক্ষেত্র তৈরি করে ফেলেছে।
এদিকে তেমন কর্মসূচি না থাকলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মশা নিধন কার্যক্রমের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে মশক নিধন বিভাগ। সেখান থেকে ৩ কোটি টাকা খরচও করে ফেলেছে কর্মকর্তারা। কিনেছে মশা নিধন যন্ত্রপাতি ও কীটনাশক।
চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ মোছাম্মৎ এনতেজার ফেরদাওছ বলেন, এডিস মশার প্রজননের মূল মৌসুম শুরু হচ্ছে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। এমনকি সেটি নভেম্বরও ছাড়িয়ে যায় অনেক সময়। চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে আগস্টের শেষে ও সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে। তাই ডেঙ্গুর প্রজনন বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই মশক নিধন কার্যক্রম জোর দেওয়া উচিত।
জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে মশা নিধনের কোনো কর্মসূচিই চোখে পড়ছে না নগরবাসীর। শুরু হয়নি ক্রাশ প্রোগ্রামও। চট্টগ্রামে যখন ডেঙ্গু চোখ রাঙাচ্ছে তখন সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন বিভাগ আক্রান্ত ও মৃত্যুর হারকে নগণ্য বলছে। মশক নিধন বিভাগের মতে, গত বছরের তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কম। আর এটিই তাদের মশা নিধন কার্যক্রমের সফলতা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। এর মধ্যে ৩ কোটি টাকা খরচও করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ফগার মেশিন কেনা হয়েছে ১০টি, একটির দাম পড়েছে ৬৫ হাজার টাকা করে। স্প্রে মেশিন কেনা হয়েছে ১০০টি, প্রতিটি ১২০০ টাকা দামের। ২০ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড, ৪০০ লিটার মুসকোভান কেনা হয়েছে। মুসকোভানের সঙ্গে দেওয়ার জন্য ৭০০ লিটার কালো তেল কেনা হয়েছে। এর আগে মুসকোভানের সঙ্গে ডিজেল কিংবা কেরোসিন কেনা হতো। খরচে সাশ্রয়ী বলে কালো তেল কেনা হয়েছে। এছাড়া লারবিসাইড ৩ হাজার লিটার কেনা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের ওষুধ মজুদ আছে। এসব ওষুধ স্প্রে করার জন্য ৩৫০ জন লোকবল নিয়োজিত আছে।
অন্যদিকে মশক নিধনে সফল হয়েছে বলে দাবি করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন বিভাগ। তাদের দাবি, গত বছর ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করার সুফল এ বছর পাওয়া যাচ্ছে। এ বছরের আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা গতবারের চেয়ে কম।
মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি আরো বলেন, আমরা মশা নিধনে অবশ্যই সফল হয়েছি। তা নাহলে গত বছর জুলাইয়ে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ ও মৃত্যুর হার যেমন ছিল, তার ছিঁটেফোটাও এ বছর নেই।
তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে চারটি ব্লকে ভাগ করে প্রতিদিন মশার প্রজননক্ষেত্রে ওষুধ স্প্রে করা হয়। এটি রুটিন ওয়ার্ক, সারা বছরই করা হয়। আমরা ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা পদ্ধতি সুপারভিশনে রাখি। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যেসব ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বাসা-বাড়ির ৪০০ গজের মধ্যে মশা মারা ওষুধ স্প্রে করে থাকি।
এদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান মতে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত হাজারের ওপরে ছিল। এর মধ্যে জুলাই মাসে ২৩১১ জন, আগস্টে ৩০১১ জন, সেপ্টেম্বরে ৩৮৯২ জন, অক্টোবরে ২৭৭৯ জন, নভেম্বরে ১২৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। তবে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ১৯৮ জন, আগস্ট ২০২ জন এবং সেপ্টেম্বরের ১৪ দিনে আক্রান্ত হয়েছে ২০৪ জন।২০২৩ সালের জুলাইয়ে ১৬ জন, আগস্টে ২১ জন ও সেপ্টেম্বরে ২১ জন ও অক্টোবরে মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে ২ জন এবং সেপ্টেম্বরে এখনও পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এ বছর আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় আগামীতে ডেঙ্গু বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ১৯ নেতাকর্মী গ্রেফতার

চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে ২৪ ঘণ্টায় আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুর ২টা থেকে রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে এদের গ্রেফতার করা হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মাহমুদা বেগম জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও সন্ত্রাসীবিরোধী আইনে ২০ জনকে গ্রেফতার করা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. মাইদুল ইসলাম (৩৫), মো. জাহিদুল ইসলাম প্রকাশ রনি (১৯), শহিদুল আলম (২৭), শামছু আলম ওরফে আলম (৩০), জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রিয়তোষ চৌধুরী (৬২), ইমামুল হক (২৮), মো. পাভেল (৩০), মো. মনিরুজ্জামান রিয়াদ (৩৯), মো. সুমন (২৯), মো. তামজিদ হোসেন (২১), মো. নাঈম গাজী (২১), মো. কচির উদ্দিন

লিটন (৩৮), ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ইশতিয়াক ওয়াসিফ (২৫), রাসেল আহামদ(৩৮), মো. জুয়েল (৩০), মো. ইসমাইল হোসেন (৩৬), মোহাম্মদ ইদ্রিস (৩৬) ও কর্ণফুলী থানার জুলধা ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মো. ইব্রাহিম শরিফ (৪৯)।

দাবি না মেনে কারখানা বন্ধ, সিইপিজেডে শ্রমিকদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া

চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) পোশাক কারখানা বন্ধের ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মালিকপক্ষ তাদের দাবি না মেনে ওই কারখানা বন্ধ করার ঘোষণা দেয়ার ফলে শ্রমিকদের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার সকালে সিইপিজেডের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেড ও এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকদের মধ্যে এ ধাওয়া -পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুই কারখানায় প্যাসিফিক গ্রুপের আওতাধীন। এর মধ্যে প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেড প্যাসিফিক নিট ডিভিশনের আওতাধীন। অন্যদিকে এনএইচটি ফ্যাশন লিমিটেড প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের আওতাধীন। খাদ্য ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর দাবিতে প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেডের শ্রমিকেরা রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। মালিকপক্ষ তাদের দাবি না মেনে ওই কারখানা বন্ধ করার ঘোষণা দেন।

সোমবার সকালে শ্রমিকরা কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা প্যাসিফিক গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদের তাদের সঙ্গে আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু তাদের ডাকে অন্য কারখানার শ্রমিকরা সাড়া না দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হন। তারা ওই কারখানার শ্রমিকদের উদ্দেশ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়েন। এতে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. সুলাইমান বলেন, প্যাসিফিক গ্রুপের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। সমস্যা হয়েছে একটিতে। তারা অন্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে তাদের সঙ্গে আন্দোলনে নামতে বলেছিল। কিন্তু অন্য কারখানার শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ না দেওয়ার জেরে এ ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে আমাদের টিম রয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।

এ বিষয়ে জানতে প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তাহমীরের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

এর আগে রোববার খাদ্য ও চিকিৎসা ভাতাসহ বিভিন্ন বাড়তি সুবিধার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু প্যাসিফিক ক্যাজুয়েলসের শ্রমিকেরা। এরপর রাতে কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্রমিকদের কারখানায় অবৈধভাবে কাজ বন্ধ রাখা এবং অন্যায় দাবি-দাওয়া উত্থাপন করার কারণে ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ ধারা ১২(১) অনুযায়ী সোমবার থেকে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত কারখানার সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ