
একটি হত্যাকান্ড প্রতিটি মানুষকে ব্যথিত করেছে। দলবদ্ধ ভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে তাদের নিলর্জ উন্মাদনার বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছে। তাও আবার ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ হত্যাকাণ্ড জাতির জন্য লজ্জার। জাতি হিসেবে আমাদের মাথা হেট হয়ে গেছে। খুব কষ্ট হচ্ছে এই হলের এরকম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেখে। যে হলের নাম বাংলার বাঘ শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের নামের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। আমি যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু মাধ্যমিকে পড়াুয়া এক সহপাঠী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুবাদে অনেক সময় কাটিয়েছি হলে। আড্ডা দিয়েছি অনেক সময় ঐবন্ধুটির সাথে ফজলুল হক হলে । এ লোমহর্ষক হত্যাকান্ড দেখে সেই বন্ধুটিও খুব কষ্ট পেয়েছেন বলে আমার মনে হয়। তোফাজ্জল হত্যায় যে বা যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে সাজা দেওয়া উচিত। রাজনৈতিকভাবে কোন পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য কিংবা দোষ চাপানোর চেষ্টা করে কোন লাব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দোষীদের চিহ্নিত করা কঠিন কাজ নয়। এরই মধ্যে গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আদালতে। যেকোনো হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কেউ এগিয়ে না এলেও রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হয়। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কি আমরা কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। আমরা কি আইয়ামে জাহেলিয়া যুগে প্রবেশ করছি? নাকি অতি উৎসাহী কিছু লোক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এসব করে চলেছে। নাকি পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপর এসকল দ্বায় চাপিয়ে দেয়ার আয়োজন হচ্ছে। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ন্যায় বিচার পাইয়ে দেয়ার কথা বলেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। একই দিনে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। একই দিন দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আমরা সব সময় সোচ্চার। বিবেকের তাড়নায় তাড়িত শিক্ষার্থীরা ঠিকই এর প্রতিবাদ করেছে। বিচার চেয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর দেশে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে থাকে এটা সত্য। দেশ স্বাধীনের পরও কিছু বিক্ষিপ্ত পরিস্থিতির জন্ম নেয়। এটিকে দীর্ঘ সময় জিইয়ে রাখা রাস্ট্র ব্যবস্হার জন্য হুমকিস্বরুপ। দায়িত্বপ্রাপ্ত রায়। অতীতে অপরাধ করে অনেকেই পার পেয়েছে। এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শাস্তি পাওয়ার নজিরও রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা, মনে হয় এটিই প্রথম ঘটেছে।জানতে পারলাম সেই ছেলেটি মানসিক ভারসাম্যহীন।
আবার এ কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটির মামাতো বোনের কাছে ২ লক্ষ টাকা মোবাইল ফোনে চেয়েছে কোন একজন। স্বাধীনতা পর যখন যে সরকার ছিল প্রত্যেকেই ক্ষমতায় যাওয়ার আগে মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানুষের মৌলিক অধিকার দেয়ার কথা বলেছে। বিগত সরকারগুলো সে কথাটা কতটুকু পালন করেছে, তা আমরা গণমাধ্যম কর্মীরা দেখেছি। আমরা কখনো কখনো কথা বলেছি। আবার কখনো কখনো গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করার কালা কানুন করার জন্য কথা বলতে পারিনি। । সব সময়ই আমাদের হাত চেপে ধরা হয়েছে। কালা কানুনের মাধ্যমে আমাদের কলম চলতে দেয়া হয়নি। একদিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, আবার অন্যদিকে গণ মানুষের কথা বলতে গিয়েও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত আইনের জন্য বলতে পারিনি। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকের তাড়নায় তাড়িত ছাত্ররা প্রতিবাদ করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইন প্রয়োগকারি বাহিনীর কাছে তুলে দিয়েছে। অভিযুক্ত একজনকে বলতে শুনলাম আবেগের তাড়নায় মেরেছি।আমরা যে জীবন দিতে পারি না, কেড়ে নিতেও পারিনা। একথা সবাইকে বুঝতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার। এ মহাবিদ্যা পিঠের শিক্ষার্থীরাই বেশি রাষ্ট্র পরিচালনার নেতৃত্ব দিয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছে বিগত দিনে । তোফাজ্জল হত্যার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান অনেকটা নামিয়ে দিয়েছে মাত্র কজন ছাত্র। অপরাধের সাথে যেই জড়িত তাদের শাস্তি দিতে হবে। দলীয় পরিচয় সামনে না আনার চেয়ে বিচারের মুখোমূখি করা জরুরী। আরো এক লজ্জার বিষয় হলো কোন এক পুলিশ কর্মকর্তা নাকি ভাত খাইয়ে যা করার তাই করতেন। ঐ পুলিশ কর্মকর্তাকে অনুসরণ করেছে বলে, অনেকে মনে করেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের ফুটেছে দেখতে পেলাম প্রথমে তোফাজ্জলকে খুব আদর করে খাওয়ালেন। তারপর নিলজ্জভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করলেন তোফাজ্জলকে। আমরা কি বিগত দিনের খারাপ সংস্কৃতি ধারণ করব, নাকি ওই খারাপ সংস্কৃতি বাদ দিব?আমাদের আর পিছনের দিকে নয়, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। অপরাধকে অনুসরণ নয়, অপরাধমুক্ত করতে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।














