
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে বিখ্ষোভ করেছেন কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা কর্মচারীরা। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পদত্যাগ, প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসাব ও নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাসপাতালের সামনে এ বিক্ষোভে যোগ দেন বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এসময় তারা ১৪ দফা দাবি তুলে ধরেন এবং এসব দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এদিকে, আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন হাসপাতালের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা, এক পরিচালকসহ চার জন।
বিক্ষোভরত আবদুস সালাম শাওন নামে এক কর্মচারী বলেন, অবৈধভাবে সভাপদি পদে বসে জাহাঙ্গীর চৌধুরী তার আত্মীয়স্বজনদের ভালো ভালো পদে বসিয়েছেন। তার ভাতিজাদের কাউকে এডমিন অফিসার কাউকে অ্যাকাউন্ট অফিসারের দায়িত্ব দিয়েছেন বৈষম্য করে। যতক্ষণ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর চৌধুরী প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৩১ কোটি টাকার হিসাব দিবে না ততক্ষণ রোগীদের কষ্ট না দিয়েই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ চালিয়ে যাব।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের মুখে এইদিন হাসপাতালের এক পরিচালকসহ চারজন কর্মকর্তা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তারা হলেন—প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমান উল্লাহ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল, প্রধান নীরিক্ষা কর্মকর্তা ইয়াছিন চৌধুরী এবং পরিচালক নওশাদ আজগর চৌধুরী।
জানা গেছে, জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও তার আত্মীয়করণ থেকে ডায়াবেটিক হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মুক্তি, স্বাধীনভাবে কাজ করা এবং ২৪ বছরের প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসাব, প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আলাদা আলাদা পাশ বই,
চিকিৎসক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থেকে প্রগতি ইন্সুরেন্সের নামে কেটে নেয়া টাকার হিসাব এবং লভ্যাংশসহ আমাদের টাকা ফেরত, দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবিকা নির্বাহ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। তারপরও জাহাঙ্গীর চৌধুরী গত ১০ বছর যাবত কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোন বেতন ভাতা বৃদ্ধি করেননি। অবিলম্বে বেতন ভাতা বৃদ্ধি করাসহ ১৪ দফা দাবি তুলে ধরেন।
এর আগে গত বছরের ২৫ জানুয়ারি দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীসহ কমিটির সব সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এর পর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মোস্তফা মোস্তাকুর রহিম খানকে। তবে তিনি দায়িত্ব নিয়েও সাত দিনের মাথায় অব্যাহতি নেন। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট এম এ জাফর জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ ও দুর্নীতির অভিযোগ আসে স্বাস্থ্য বিভাগে। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের পয়লা জানুয়ারি চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিতে তৎকালীন বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সমুন বড়ুয়াকে সভাপতি রাখা হয়েছিল। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সমাজসেবা অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল হায়দারকে সদস্য করা হয়েছিল।